জ্ঞানান্ধদের সুদূর চিন্তা
ঐ যুগ সম্বন্ধে ইসলামের এই সকল তথাকথিত মুজাহিদদের চিন্তা ভাবনা খুবই অদ্ভুত। তাহারা খৃষ্টধর্ম ও ইংরেজ সাম্রাজ্যের স্বার্থ সংরক্ষণের অপবাদ একজন এইরূপ ব্যক্তির উপর আরোপ করিয়াছে, যিনি ইংরেজদের খোদাকেই মারিয়া ফেলিয়াছেন এবং খৃষ্টধর্মের উপর এইরূপ আঘাত হানিলেন যে, খৃষ্টধর্মকে অতঃপর নিজের জান বাঁচানোই দায় হইয়া পড়িল। ইহাই কি আহমদীয়াতের দুশমনদের দৃষ্টিতে ইংরেজ সরকারের কৌশলগত পন্থা যে তাহাদের মহান স্বার্থের হিফাযত ও খৃষ্টধর্মকে জোরদার করার জন্য তাহারা হযরত মসীহ মওউদ আলাইহেস সালামের উপর ভরসা করিয়াছিল এবং খৃষ্টান সরকারের মূলকে মজবুত ও দৃঢ় করার জন্য তাঁর (আঃ) নিকট আশা করিয়াছিল? এই উদ্দেশ্যে কি ইংরেজরা নিজেদের হাতে এইরূপ একটি বৃক্ষ লাগাইয়াছিল, যিনি সর্ব প্রথমে এই কাজ করিলেন যে, তাহাদের খোদার একমাত্র কল্পিত পুত্রের সম্বন্ধেই এই ঘোষণা করিয়া দিলেন যে, তিনি স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করিয়াছেন এবং এইরূপে ক্রুশকে ভাঙ্গিয়া টুকরা টুকরা করিয়া দিলেন এবং খৃষ্টধর্মের বিরুদ্ধে এইরূপ একটি মহান জেহাদ আরম্ভ করিলেন যে, উহা কেবলমাত্র ভারতেই সীমাবদ্ধ রহিল না, বরং সমগ্র বিশ্বে বিস্তৃত হইয়া পড়িতে লাগিল এবং আজও বিস্তার লাভ করিয়া চলিয়াছে? আশ্চর্য্যের ব্যাপার, কেহ নাই যে বুদ্ধি–জ্ঞান প্রয়োগ করে? এই অপবাদ সম্বন্ধে চিন্তা করিলেই জানা যাইবে যে, ইহার সহিত আহমদীয়াতের দূরতম সম্পর্কও নাই। কিন্তু জ্ঞান–বুদ্ধি প্রয়োগ করিলে তবেতো জানা যাইবে। এই অপবাদ তো কেবলমাত্র মস্তিষ্ক প্রসূত ও সুকল্পিত। অবশেষে এতটুকু ভাবিয়া দেখাতো উচিত যে, তাহারা যে কথা বলিতেছে, উহার ফল কি দাঁড়াইবে? ইংরেজরা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য হযরত মির্যা গোলাম আহমদ সাহেব কাদিয়ানীকে দাঁড় করাইয়াছে এবং তিনি এই কাজ করিলেন যে, ইংরেজদের ধর্মের উপর আক্রমণ শুরু করিয়া দিলেন এবং ইংরেজ সাম্রাজ্যের স্বার্থের সহিত যে সকল বস্তু জড়িত ছিল, সেই গুলিকে নিশ্চিহ্ন করিয়া দিতে আরম্ভ করিলেন। ইংরেজরা তো খুবই গভীর চালবাজ শাসক। তাহারা রাজনীতি খুব উত্তমরূপেই বুঝিত। তাহারা কেবলমাত্র নিজেদের স্বার্থ সম্বন্ধেই সজাগ ছিল না, বরং তাহারা ইহাও জানিত যে, কিভাবে উহা অর্জন করা যায়। এই কারণেই ইংরেজরা নিজেদের কূটনীতি ও সতর্কতার মাধ্যম্যে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ করায়ত্ত করিয়া লইয়াছিল এবং ইহা ঐ যুগ ছিল, যখন কিনা ইংরেজদের ক্ষমতার সূর্য মধ্যগগণে দেদীপ্যমান ছিল। বস্তুতঃ বলা হইত যে ইংরেজ সাম্রাজ্য এত বিস্তৃত যে, ইহাতে সূর্য অস্ত যায় না। পূর্ব হইতে পশ্চিমে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে একটি মুহূর্তও এইরূপ আসিত না, যখন কিনা তাহাদের সূর্য অস্ত যাইত। রাজনৈতিক চালে এইরূপ হুশিয়ার জাতির প্রতি এইরূপ বাজে ধারণা আরোপ করা এমন একটি ব্যাপার, যাহার সহিত বুদ্ধি–জ্ঞানের দূরতম কোন সম্পর্কও নাই।
আপনার উত্তর যোগ করুন
আপনার উত্তরটি একজন এডমিন রিভিউ করে অনুমোদন করবেন।