আপত্তির জবাব

মহা সুসংবাদ

ইমাম মাহ্‌দী (আ.) ও প্রতিশ্রুত মসীহ্-এর আবির্ভাব সম্বন্ধে কতিপয় ভবিষ্যদ্বাণী

(ক) আল্লাহ্ তা’লা পবিত্র কুরআন করীমে সূরা নূরের সপ্তম রুকূ’তে বলছেনঃ

وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ مِنكُمْ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِى ٱلْأَرْضِ كَمَا ٱسْتَخْلَفَ ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ ٱلَّذِى ٱرْتَضَىٰ لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُم مِّنۢ بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًۭا ۚ يَعْبُدُونَنِى لَا يُشْرِكُونَ بِى شَيْـًۭٔا ۚ وَمَن كَفَرَ بَعْدَ ذَٰلِكَ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْفَـٰسِقُونَ

“তোমাদের মাঝে যারা ঈমান আনে এবং পুণ্য কাজ করে, তাদের সঙ্গে আল্লাহ্ তা'লা অঙ্গীকার করেছেন যে, নিশ্চয় তিনি পৃথিবীতে তাদের মধ্যে খেলাফত প্রতিষ্ঠিত করবেন যেভাবে তিনি খেলাফত প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদের [হযরত রসূল করীম (সা.)-এর পূর্ববর্তী উম্মতসমূহের] মধ্যে এবং নিশ্চয় আল্লাহ্ তাদের জন্য সুদৃঢ় করে দিবেন তাদের ধর্মকে যা তিনি তাদের জন্য মনোনীত করেছেন এবং ভীত হবার পর তাদেরকে তৎপরিবর্তে নিরাপত্তা দিবেন। তারা আমার ইবাদত করবে, আমার সাথে তারা কাউকেও শরীক করবে না এবং তারপর যারা অস্বীকার করবে, তারা দুষ্কৃতকারী হবে।” (সূরা আন্ নূর: ৫৬)

এ আয়াতে আল্লাহ্ তা’লা মুসলমান জাতির সাথে অঙ্গীকার করেছেন যে, তাদের পূর্ববর্তী জাতি বনী ইসরাঈলের মধ্যে যেভাবে হযরত মূসা (আ.)-এর মৃত্যুর পর তাঁর শরীয়তকে পরিচালিত করার জন্য খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ও পর্যায়ক্রমে বহু খলীফা হয়েছিলেন এবং তের শত বছর পর চতুর্দশ শতাব্দীর শিরোভাগে বনী ইসরাঈলের চরম অধঃপতনের সময় তাদেরকে উদ্ধার করার জন্য হযরত মূসা (আ.)-এর খলীফা হিসেবে হযরত ঈসা (আ.) আবির্ভূত হয়েছিলেন, অনুরূপভাবে كَمَا (সদৃশ) শব্দে বর্ণিত সাদৃশ্য অনুযায়ী হযরত নবী করীম (সা.)-এর ইন্তেকালের পরও খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ঈমানদার ও সৎকর্মশীলদের মধ্যে পর্যায়ক্রমে খলীফা হতে থাকবে। এমনকি মুসলমান জাতির চরম অধঃপতন এবং খ্রিষ্ট-ধর্মের কুপ্রভাবে মারাত্মক অবক্ষয়ের যুগে দীন ইসলামকে পুনর্জীবিত করার উদ্দেশ্যে এবং দুর্বলতা ও ভয় ভীতি দূর করে তাদেরকে শান্তি ও নিরাপত্তা দান করার জন্য এই উম্মত হতে ঈসা সদৃশ এক খলীফা মনোনীত হবেন এবং তাঁর পর নবুওয়াতের পদ্ধতিতে পুনরায় খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে। যেমন হযরত নবী করীম (সা.) এরশাদ করেছেন:

عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ عَنِ حُذَيْفَة قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَكُونُ النُّبُوَّةُ فِيكُمْ مَا شَاءَ اللهُ أَنْ تَكُونَ ثُمَّ يَرْفَعُهَا إِذَا شَاءَ أَنْ يَرْفَعَهَا ثُمَّ تَكُونُ خِلَافَةٌ عَلَى مِنْهَاجِ النُّبُوَّةِ فَتَكُونُ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ تَكُونَ ثُمَّ يَرْفَعُهَا إِذَا شَاءَ اللهُ أَنْ يَرْفَعَهَا ثُمَّ تَكُونُ مُلْكًا عَاضًا فَيَكُونُ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَكُونَ ثُمَّ يَرْفَعُهَا إِذَا شَاءَ أَنْ يَرْفَعَهَا ثُمَّ تَكُونُ مُلْكًا جَبْرِيَّةً فَتَكُونُ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ تَكُونَ ثُمَّ يَرْفَعُهَا إِذَا شَاءَ أَنْ يَرْفَعَهَا ثُمَّ تَكُونُ خِلَافَةً عَلَى مِنْهَاجِ النُّبُوَّةِ ثُمَّ سَكَتَ

হযরত নু’মান বিন বশীর হুযায়ফা হতে বর্ণনা করেছেন যে- “হযরত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে নবুওয়াত ততক্ষণ পর্যন্ত বর্তমান থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্ তা’লা চাইবেন অতঃপর, আল্লাহ্ তা’লা তা উঠিয়ে নিবেন। এরপর নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তা ততক্ষণ পর্যন্ত বর্তমান থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্ চাইবেন, অতঃপর, আল্লাহ্ তা’লা তা উঠিয়ে নিবেন। তখন যুলুম, অত্যাচার ও উৎপীড়নের রাজত্ব কায়েম হবে। তা ততক্ষণ পর্যন্ত বর্তমান থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্ চাইবেন, অতঃপর আল্লাহ্ তা’লা তা উঠিয়ে নিবেন। তখন তা অহংকার ও জবরদস্তিমূলক সাম্রাজ্যে পরিণত হবে, এবং তা ততক্ষণ পর্যন্ত বর্তমান থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্ চাইবেন, অতঃপর আল্লাহ্ তা’লা তা উঠিয়ে নিবেন। তখন নবুওয়াতের পদ্ধতিতে (অর্থাৎ মাহদী মাহুদ ও মসীহ্ মাওউদ আলায়হেস সালাম-এর আগমনের পর) পুনরায় খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে। অতঃপর, হযরত আকদাস (সা.) নীরব হয়ে গেলেন।” (আহ্‌মদ-বায়হাকী)

(গ) কুরআন করীমে সূরা জুমুআর وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ [এবং (তিনি তাকে আবির্ভূত করবেন) তাদের মধ্য হতে অন্যদের মধ্যেও যারা এখন পর্যন্ত তাদের সঙ্গে মিলিত হয় নি। (সূরা জুমু’আ: ৪)

উক্ত আয়াতের অবতরণ সম্বন্ধে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كُنَّا جُلُوسًا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأُنْزِلَتْ عَلَيْهِ سُورَةُ الْجُمُعَةِ وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ قَالَ قُلْتُ مَنْ هُمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَلَمْ يُرَاجِعْهُ حَتَّى سَأَلَ ثَلَاثًا وَفِينَا سَلْمَانُ الْفَارِسِيُّ وَضَعَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَهُ عَلَى سَلْمَانَ ثُمَّ قَالَ لَوْ كَانَ الْإِيمَانُ عِنْدَ الثَّرَيَّا لَنَالَهُ رِجَالٌ أَوْ رَجُلٌ مِنْ هَؤُلَاءِ

“আমরা হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লামের নিকট বসেছিলাম। তখন সূরা জুমুআ’ যার মধ্যে ‘ওয়া আখারিনা মিনহুম লাম্মা ইয়ালহাকু বিহিম’ আয়াত আছে, অবতীর্ণ হল। বর্ণনাকারী বললেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হে আল্লাহ্ রসূল! তারা কে (যারা এখনও আমাদের সঙ্গে মিলিত হন নি)? কিন্তু তিনি এর কোন উত্তর দেন নাই, এমন কি তিনবার জিজ্ঞাসা করা হল। তখন সালমান ফারসীও আমাদের মধ্যে ছিলেন। হযরত রসূলুল্লাহ্ (সা.) সালমান ফারসী (রা.)-এর উপর হাত রেখে বললেন, ঈমান সুরাইয়া নক্ষত্রে চলে গেলেও তাঁদের (পারস্য বংশোদ্ভূত) এক বা একাধিক ব্যক্তি তথা হতে তাকে নামিয়ে আনবে।” (বুখারী-কিতাবুত-তফসীর, ২য় খণ্ড, ১৯৩২ ইং সনে মিশরে মুদ্রিত ও প্রকাশিত)

উপরোক্ত হাদীস ও পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলি দ্বারা প্রকাশ্য দিবালোকের ন্যায় প্রমাণিত হচ্ছে যে, দুনিয়াতে যে যুগে প্রকৃত ঈমান থাকবে না তখন পারস্য বংশীয় বিশেষ ব্যক্তি দুনিয়াতে ঈমানকে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করবেন। তিনি হলেন ইমাম মাহ্‌দী (আ.) বা প্রতিশ্রুত মসীহ। বস্তুতঃ ইমাম মাহ্‌দী ও প্রতিশ্রুত মসীহ্ হওয়ার দাবিদার হযরত মির্যা গোলাম আহ্‌মদ (আ.) পারস্য বংশীয় ছিলেন এবং তাঁর মাধ্যমে সারা বিশ্বে ইসলামের প্রচার ও প্রাধান্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে প্রতিশ্রুত রুহানী খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

(ঘ) হযরত রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

يُوشِكُ مَنْ عَاشَ مِنْكُمْ أَنْ يَلْقَى عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ إِمَامًا مَهْدِيًّا وَحَكَمًا عَدْلًا فَيَكْسِرُ الصَّلِيبَ وَيَقْتُلُ الْخِنْزِيرَ وَيَضَعُ الْجِزْيَةَ وَتَضَعُ الْحَرْبُ أَوْزَارَهَا

“তোমাদের (মুসলমানদের) মধ্যে যারা জীবিত থাকবে তারা দেখতে পাবে ঈসা ইবনে মরিয়মকে ন্যায়-বিচারক ইমাম মাহ্‌দী রূপে। তিনি ক্রুশ (মতবাদ) ধ্বংশ করবেন এবং শূকর (আধ্যাত্মিকভাবে গালমন্দকারী এবং নির্লজ্জ ব্যক্তিদের বুঝায়) নিধন করবেন ও ধর্ম-যুদ্ধ রহিত করবেন।” (মুসনাদ আহ্‌মদ বিন হাম্বল)

(ঙ) হযরত রসূলে করীম (সা.) বলেছেনঃ

وَلَا الْمَهْدِيُّ إِلَّا عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ

“মাহ্‌দী ঈসা ইবনে মরিয়ম ব্যতিরেকে অপর কেউ নন।” (সুনানে ইবনে মাজা, বাবু সিদ্দাতুয্যামান)

(চ) হযরত রসূলে করীম (সা.) বলেছেন:

كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا نَزَلَ ابْنُ مَرْيَمَ فِيكُمْ وَأَمَّكُمْ

“তোমাদের অবস্থা তখন কেমন হবে, যখন ইবনে মরিয়ম তোমাদের মধ্যে আবির্ভূত হয়ে তোমাদের ইমামতি করবেন।” (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান)

উপরোক্ত হাদিসগুলি হতে বুঝা গেল হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.) ও ঈসা ইবনে মরিয়ম এক ও অভিন্ন ব্যক্তি।
হযরত ইমাম মাহদী (আ.)-কে মান্য করার গুরুত্ব

পূর্ব বর্ণিত আয়াত ও হাদীস অনুযায়ী, ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর খেলাফতকে অবশ্যই মান্য করতে হবে। এ সম্বন্ধে নিম্নে কয়েকটি হাদীস উদ্ধৃত করা হল:

(ক) হযরত রসূলে করীম (সা.) বলেছেন:

فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَبَايِعُوهُ وَلَوْ حَبْوًا عَلَى الثَّلْجِ فَإِنَّهُ خَلِيفَةُ اللَّهِ الْمَهْدِيُّ

“যখন তোমরা তাঁকে দেখতে পাবে তাঁর হাতে বয়আত করবে, যদি বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়েও যেতে হয়, নিশ্চয় তিনি আল্লাহ্ খলীফা আল-মাহ্‌দী।” (সুনানে ইবনে মাজা, বাবু খুরুজুল মাহদী)

(খ) হযরত রসূলে করীম (সা.) বলেছেন:

ثُمَّ يَجِيءُ خَلِيفَةُ اللَّهِ المَهْدِيُّ فَإِذَا سَمِعتُم بِهِ فَأْتُوهُ فَبَايِعُوهُ ، فَإِنَّهُ خَلِيفَةُ اللَّهِ المَهْدِيُّ

“অতঃপর আল্লাহ্ তা’লার খলীফা ইমাম মাহদী আসবেন, তোমরা তাঁর আগমন বার্তা শুনা মাত্রই তাঁর নিকট হাজির হয়ে বয়আত করবে।” (মিসবাহ্ যুজাজা, হাশিয়া ইবনে মাজা, বাবু খুরুজুল মাহদী)

উপরোক্ত হাদীসগুলি দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, ইমাম মাহদী (আ.)-এর সংবাদ পাওয়া মাত্র তাঁর নিকট বয়আত করা হযরত রসূলে করীম (সা.)-এর নির্দেশানুযায়ী অবশ্য কর্তব্য বা ফরয।

(গ) এতদ্ব্যতীত, তিনি তাঁর উম্মতকে ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর উপর ঈমান আনতে এবং তার নিকট সালাম পৌঁছাতে বলেছেনঃ

وَيُؤْمِنُ بِهِ مَنْ أَدْرَكَهُ فَمَنْ أَدْرَكَهُ مِنْكُمْ فَلْيُقْرِئُهُ مِنِّي السَّلَامَ

“তোমাদের মধ্যে যে কেউ ইমাম মাহদীকে পাবে, তাঁর উপর ঈমান আনবে এবং তাঁকে আমার সালাম পৌঁছিয়ে দিবে।” (কনযুল উম্মাল)

যেহেতু, হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.) সকল ধর্মের উপর ইসলামকে জয়যুক্ত করার উদ্দেশ্যে, কুরআনের শিক্ষাকে বিশ্বমানবের মাঝে প্রতিষ্ঠা, প্রচার ও সম্প্রসারণের বিরাট দ্বায়িত্ব পালন করবেন এবং অন্যান্য ধর্মের অযৌক্তিকতা ও অসারতা প্রতিপন্ন করে ইসলামের বিজয় নিশ্চিত করবেন সেহেতু, রসূলে মকবুল (সা.), ইমাম মাহ্‌দী (আ.) কে সাহায্য করা ও তাঁর আহ্বানে সাড়া দেওয়াকে প্রত্যেক মুসলমানের উপর ওয়াজিব (অবশ্য কর্তব্য) বলে ঘোষণা করেছেন।

তিনি (সা.) বলেছেন:

وَجَبَ عَلَى كُلِّ مُؤْمِنٍ نَصْرُهُ أَوْ قَالَ إِجَابَتُهُ

“প্রত্যেক মুসলমানের উপর ওয়াজিব হবে সর্বতোভাবে ইমাম মাহদীর সাহায্য করা অথবা বলেছেন, তাঁর ডাকে সাড়া দেয়া।” (সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুল মাহ্‌দী)
হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-কে না মানার পরিণাম

হযরত রসূলে করীম (সা.) বলেছেন:

(ক)
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ مَاتَ بِغَيْرِ إِمَامٍ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً
“যে ব্যক্তি যামানার ইমামকে না মেনে মারা যাবে, সে জাহেলিয়াতের (অজ্ঞতার) মৃত্যুবরণ করবে। (মুসনাদ আহ্‌মদ বিন হাম্বল)

(খ)
وَمَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِي عُنُقِهِ بَيْعَةٌ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً
“যে ব্যক্তি যামানার ইমামের হাতে বয়আত না করে ইহলোক ত্যাগ করেছে, সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করেছে।” (সহীহ মুসলিম)

(গ)
مَنْ أَطَاعَنِي فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ عَصَى اللَّهَ وَمَنْ أَطَاعَ أَمِيرِي فَقَدْ أَطَاعَنِي وَمَنْ عَصَى أَمِيرِي فَقَدْ عَصَانِي
“যে ব্যক্তি আমার এতায়াত (আনুগত্য স্বীকার) করে, নিশ্চয় সে আল্লাহ্ তা’লার এতায়াত করে। যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করে, নিশ্চয় সে আল্লাহ্ তা’লার অবাধ্যতা করে। যে ব্যক্তি আমার আমীরের এতায়াত করে, নিশ্চয় সে আমার এতায়াত করে। যে ব্যক্তি আমার আমীরের অবাধ্যতা করে, নিশ্চয় সে আমার অবাধ্যতা করে। (বুখারী, মুসলিম ও মিশকাত)

(ঘ)
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أُمَّتِي مَا أَتَى عَلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ حَتَّى إِنْ كَانَ مِنْهُمْ مَنْ أَتَى أُمَّهُ عَلَانِيَةً لَكَانَ فِي أُمَّتِي مَنْ يَصْنَعُ ذَلِكَ وَإِنَّ بَنِي إِسْرَائِيلَ تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلَّا مِلَّةً وَاحِدَةً قَالُوا وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي
“হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর হতে বর্ণিত হয়েছে- হযরত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় আমার উম্মতের উপরও সে সকল অবস্থা আসবে যেরূপ বনী ইসরাঈলের উপর এসেছিল। উভয়ের মধ্যে এক জুতার সাথে অপর জুতার ন্যায় সাদৃশ্য থাকবে, এমনকি তাদের মধ্য হতে যদি কেউ প্রকাশ্যে নিজ মাতার নিকট গমন করে থাকে তদ্রূপ আমার উম্মতের মধ্যেও এমন ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করবে যে এরূপই করবে। বনী ইসরাঈলতো ৭২ ফিরকায় (দলে) বিভক্ত হয়েছিল, আমার উম্মত ৭৩ ফিরকায় বিভক্ত হবে। তাদের প্রত্যেকেই জাহান্নামে যাবে কেবল মাত্র এক ফিরকা ব্যতীত।’ তাঁরা (সাহাবাগণ) বললেন, “হে আল্লাহ্ রসূল! সেই ফিরকা কোনটি?” তিনি বললেন, “আমি এবং আমার সাহাবাগণ যে পথে আছে সেই পথে যে ফিরকা থাকবে।” (তিরমিযী, কিতাবুল ঈমান)

হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মুখ-নিঃসৃত বাণী সূর্য হতেও উজ্জ্বল এবং সত্য, কোন মু’মিন তাঁর (সা.) বাণীকে অবহেলা করে এড়িয়ে যেতে পারে না। বলা বাহুল্য, হুযূর আকদাস (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী এ উম্মতের মধ্যে ৭৩ ফিরকা হয়ে গিয়েছে। প্রত্যেকেই নিজ নিজ ফিরকাকে সত্য ও মুক্তি প্রাপ্ত ফিরকা বিশ্বাস করে গর্ব ও আনন্দ বোধ করে। যেমন আল্লাহ্ তা’লা বলেন:

فَتَقَطَّعُوا أَمْرَهُم بَيْنَهُمْ زُبُرًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ . فَذَرْهُمْ فِي غَمْرَتِهِمْ حَتَّى حِينٍ

“কিন্তু তারা নিজেদের ধর্মকে খণ্ড বিখণ্ড করে নিয়েছে। (এবং বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে।) প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা কিছু আছে তা নিয়ে আনন্দিত। সুতরাং তুমি তাদেরকে কিছুকালের জন্য তাদের ভ্রান্ত বিশ্বাসের মধ্যে ছেড়ে দাও।” (সূরা মুমিনূন: ৫৪-৫৫)

প্রকৃতপক্ষে কেবলমাত্র একটি ফিরকাই সত্য ও মুক্তি-প্রাপ্ত হবে। এ বিষয়ের মীমাংসা স্বয়ং নবী করীম (সা.) করে দিয়েছেন এবং এ সত্য ও মুক্তি-প্রাপ্ত ফিরকাকে চিনবার জন্য এই মাপ-কাঠিও উম্মতের হাতে তুলে দিয়েছেন- যে ফিরকা নবী করীম (সা.) ও তাঁর সাহাবাগণের পথে পরিচালিত হবে এবং তাঁদের কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করবে কেবল সেই ফিরকাই সত্য ও মুক্তি-প্রাপ্ত হবে। সাহাবাদের পথ ও কার্যাবলীর দৃষ্টান্ত এ ছিল যে, যতদিন নবী করীম (সা.) সাহাবাদের মধ্যে ছিলেন ততদিন তারা তাঁকে সর্বান্তঃকরণে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে অনুসরণ করে গিয়েছেন, এবং হুযূর আকদাস (সা.)-এর ইন্তেকালের পরক্ষণেই তাদের মধ্যে-

১। খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যার মাধ্যমে সাহাবাগণ একতা-শৃঙ্খলা ও পারস্পরিক মহব্বতের ভিত্তিতে এক শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হয়েছিলেন এবং খলীফার নেতৃত্বাধীনে তাঁরা পারস্য, সিরিয়া, ইরাক ও মিশর প্রভৃতি দেশ জয় করে ইসলামী পতাকার ছায়াতলে এনে এক স্বর্গ-রাজ্যে পরিণত করেছিলেন।
২। তাদের একটি কেন্দ্র ছিল।
৩। তাদের বায়তুল মাল ছিল।
৪। খলীফাকে পরামর্শ দেয়ার জন্য মজলিসে শূরা (পরামর্শ সভা) ছিল।
৫। তাদের মধ্যে পরম ভ্রাতৃত্ববোধ ছিল এবং একে অপরের জন্য প্রিয় হতে প্রিয়তর বস্তু এমনকি জীবন পর্যন্ত কুরবান করতেন।
৬। তারা ইসলাম প্রচারে নিয়োজিত থাকতেন।

বর্তমান যুগে প্রতিশ্রুত ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত জামা’তে আহ্‌মদীয়া ছাড়া কোন ফিরকার মধ্যে সাহাবাদের এই গুণাবলীর সমাবেশ আছে বলে কেউ দাবি করতে পারে না। সম্মানিত পাঠকবৃন্দের জন্য এস্থলে চিন্তার খোরাক রয়েছে।

উপরোক্ত কুরআনের আয়াত ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, প্রতিশ্রুত মসীহ ও ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-কে মান্য না করলে, আল্লাহ্ তা’লা এবং হযরত রসূলে করীম (সা.)-এর আদেশ অমান্য করার অপরাধে অপরাধী হতে হবে এবং সত্য ফিরকা অবলম্বন না করলে আল্লাহ্ শাস্তি ভোগ করতে হবে।
হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.) কখন আবির্ভূত হবেন?

(ক) আল্লাহ্ তা’লা কুরআন করীমে সূরা আস্ সাজদার প্রথম রুকূ’তে বলেছেনঃ
يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ أَلْفَ سَنَةٍ مِّمَّا تَعُدُّونَ
“তিনি (আল্লাহ্) আকাশ হতে পৃথিবীর দিকে (কুরআনী শরীয়াত প্রতিষ্ঠার জন্য) ব্যবস্থা পরিচালনা করেন। অতঃপর, তা তাঁর (আল্লাহ্) দিকে উঠে যাবে এক দিনে, যা তোমাদের গণনায় এক হাজার বছর।” (সূরা আস্ সাজদা: ০৬)

(খ) হযরত রসূলে করীম (সা.) বলেছেনঃ
خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ يَفْشُو الْكَذِبُ حَتَّى يَشْهَدَ الرَّجُلُ وَلَا يُسْتَشْهَدُ وَيَحْلِفَ الرَّجُلُ وَلَا يُسْتَحْلَفُ
“মানুষের মাঝে আমার শতাব্দী সর্বোৎকৃষ্ট, তারপর তার সন্নিহিতগণ, তারপর তার সন্নিহিতগণ, অতঃপর, মিথ্যার প্রাদুর্ভাব হবে।” (তিরমিযী, কিতাবুশ্ শাহাদাত)

(গ) হযরত রসূলে করীম (সা.) বলেছেনঃ
عَنْ أَبِي قَتَادَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْآيَاتُ بَعْدَ الْمِائَتَيْنِ
“আবি কাতাদাহ বর্ণনা করেছেন যে, হযরত রসূল করীম (সা.) বলেছেন, ইমাম মাহ্‌দী সম্পর্কিত লক্ষণ সমূহ সেই ২০০ বছর পরে দেখা দিবে, যা হাজার বছর পরে আসবে।” (মিশকাত)

এর সমর্থনে হযরত মোল্লা আলী কারী (রহ.) লিখেছেন-
أَيْ بَعْدَ الْمِائَتَيْنِ بَعْدَ الْأَلْفِ وَ هُوَ الْوَقْتُ لِظُهُورِ الْمَهْدِيِّ
“সেই দু’শত বছর পরে, যা হাজার বছর পর আসবে, তাই ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর যাহির হওয়ার সময়।” (মিরকাত, শারহে মিশকাত)

(ঘ) হযরত রসূলে করীম (সা.) বলেছেন:
إِنَّ اللَّهَ يَبْعَثُ لِهَذِهِ الْأُمَّةِ عَلَى رَأْسِ كُلِّ مِائَةِ سَنَةٍ مَنْ يُجَدِّدُ لَهَا دِينَهَا
“নিশ্চয় আল্লাহ্ তা’লা প্রত্যেক শতাব্দীর শিরোভাগে এ উম্মতের জন্য এমন মহাপুরুষকে আবির্ভূত করবেন, যিনি তাদের জন্য ধর্মকে সঞ্জীবিত করবেন।” (আবু দাউদ, কিতাবুল মালাহিম, মিশকাত-কিতাবুল ইলম, পৃষ্ঠা-৩৬)

কুরআনের উপরোক্ত আয়াত ও উল্লিখিত হাদীসগুলির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ইসলামের প্রথম তিনশ’ বছর এর প্রতিষ্ঠার শ্রেষ্ঠতম যুগ। অতঃপর, যদিও যথাবিধি প্রত্যেক শতাব্দীর শিরোভাগে মুজাদ্দিদ আবির্ভূত হতে থাকবেন, তথাপি পরবর্তী এক হাজার বছরে শরীয়ত আল্লাহ্ দিকে উঠে যাবে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, হযরত রসূলে করীম (সা.)-এর তিনশ’ বছরের পর চতুর্থ শতাব্দী হতে ক্রমাবনতির ধারায় ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষ ভাগ পর্যন্ত ইসলাম আল্লাহ্ দিকে উঠে যাবে অর্থাৎ ইসলামের চরম অধঃপতন ঘটবে। অতঃপর, ইসলামের পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কোন মহাপুরুষের আবির্ভাব হওয়া একান্ত প্রয়োজনীয় এবং এটাই হযরত ইমাম মাহদী (আ.)-এর আগমনের সময়। অর্থাৎ, হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীর প্রারম্ভে হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর আবির্ভাব হওয়ার কথা। সাহেবে-কাশ্‌ফ ওলী-আল্লাহ্‌গণও ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর আবির্ভূত হবার সময় এটাই নির্ধারণ করেছেন। তাঁরা বলেছেন যে, তেরশ’ চল্লিশ হিজরী অতিক্রম করবে না। বস্তুতঃ হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.) ১৩০৬ হিজরীতে দাবি করেন। তাঁর পূর্ণ নাম হযরত মির্যা গোলাম আহ্‌মদ (আ.)।

লক্ষ্যনীয় যে, উক্ত হিজরী চতুর্দশ শতাব্দী অতিক্রম করে পঞ্চদশ শতাব্দীরও প্রায় দশ বছর (বর্তমানে ৪১ বছর) অতিবাহিত হতে চলল। বস্তুতঃ যথাসময়ে আবির্ভূত মহাপুরুষকে গ্রহণ করা প্রত্যেকের কর্তব্য।
হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর নাম, বংশ ও জন্মস্থান

হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর নাম, বংশ ও জন্মস্থান সম্বন্ধে হাদীসে বহু বিবরণ আছে এবং সেগুলিকে নিয়ে মতভেদও আছে। কিন্তু এ মতভেদের মধ্য দিয়েও হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর সঠিক পরিচয়ের প্রকাশ অনেক হাদীসে আছে, যেগুলি পড়লে তাঁর সত্যতা সম্বন্ধে আর কোন সন্দেহ থাকে না। আমরা নিম্নে সে সম্বন্ধে কতিপয় হাদীস তুলে দিলামঃ

(ক)
و در بعض روایات نام او احمد شود
অর্থাৎ কতিপয় হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, “ইমাম মাহদীর নাম ‘আহ্‌মদ’ হবে।” (হুজাজুল কেরামা, ৩৫৬ পৃ.)

(খ) আর একটি হাদীসে আছেঃ المَهْدِيُّ مِن عِتَرَتِي مِن ولدِ فَاطِمَة
“ইমাম মাহ্‌দী ফাতেমার বংশ থেকে হবেন।” (কনযুল উম্মাল)

(গ) আর এক হাদীসে এসেছেঃ
قَالَ عَلِيٌّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ وَنَظَرَ إِلَى ابْنِهِ الْحَسَنِ فَقَالَ إِنَّ ابْنِي هَذَا سَيِّدٌ كَمَا سَمَّاهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَسَيَخْرُجُ مِنْ صُلْبِهِ رَجُلٌ يُسَمَّى بِاسْمِ نَبِيِّكُمْ يُشْبِهُهُ فِي الْخُلُقِ وَلَا يُشْبِهُهُ فِي الْخَلْقِ ثُمَّ ذَكَرَ قِصَّةً يَمْلَأُ الْأَرْضَ عَدْلًا 1
“(হযরত) আলী (রা.) তদীয় পুত্র (হযরত) হাসান (রা.)-এর প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, 'আমার এ পুত্র সৈয়দ (সরদার), যেরূপে রসূলুল্লাহ্ (সা.) তার নামকরণ করেছেন। অবশ্যই তার আওলাদ হতে এমন এক ব্যক্তির প্রকাশ ঘটবে, যে তোমাদের নবীর নামে আখ্যায়িত হবে এবং চরিত্র ও আধ্যাত্মিকতায় তাঁর অনুরূপ হবে। জন্ম ও দৈহিক গঠনে তাঁর অনুরূপ হবে না।” অতপর, হযরত আলী (রা.) ঐ ব্যক্তির ন্যায় বিচারের কথা উল্লেখ করে বললেন: “ভূ-পৃষ্ঠ ন্যায়বিচারে ভরে যাবে।” (সুনানে আবু দাউদ-কিতাবুল ফিতান; ইবনে মাজা-বাবু খুরুজুল মাহদী)

নোটঃ হযরত মির্যা গোলাম আহ্‌মদ (আ.) যিনি ইমাম মাহ্‌দী হবার দাবি করেছেন, তিনি পারস্য বংশীয়, কিন্তু তাঁর পূর্বপুরুষগণের মধ্যে অনেকের দাদী সৈয়্যদা ছিলেন। তাঁদের নামের আসল অংশ আহ্‌মদ। এটা রসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর নাম। যথা, সূরা আস্ সাফ-এ বর্ণিত আছে ‘ইসমুহু আহ্‌মদ’ (তাঁর নাম আহ্‌মদ হবে)। হযরত আহ্‌মদ (আ.)-এর জীবনী পাঠ করলে দেখবেন যে, তিনি চরিত্রে এবং আধ্যাত্মিকতায় হযরত রসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর অনুরূপ ছিলেন।

(ঘ) হযরত রসূলে করীম (সা.) বলেছেনঃ
أُبَشِّرُكُمْ بِالْمَهْدِي يُبْعَثُ فِي أُمَّتِي عَلَى اخْتِلَافٍ مِنْ النَّاسِ وَزَلَازِلَ
“আমি তোমাদেরকে মাহদীর সুসংবাদ দিচ্ছি। তিনি আমার উম্মতের মধ্যে এমন সময়ে আবির্ভূত হবেন, যখন মানুষের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিবে এবং বহু ভূমিকম্প হবে।” (নাজমুস সাকিব, ২য় খণ্ড, ১১ পৃ.)

নোটঃ হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.) যাহির হবার সময় শিয়া, সুন্নী, হানাফী, হাম্বলী, মালেকী, শাফেয়ী, বেরেলবী, দেওবন্দী, আহলে হাদীস, ওহাবী প্রভৃতি বিভিন্ন ফিরকা এবং মানব জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে মতবিরোধের উদ্ভব এবং ঘন ঘন ভূমিকম্পের ঘটনাও সকলেরই জানা আছে।

(ঙ) আর এক হাদীসে আছেঃ
يَخْرُجُ رَجُلٌ مِنْ وَرَاءِ النَّهْرِ يُقَالُ لَهُ الْحَارِثُ بْنُ حَرَّاثٍ وَجَبَ عَلَى كُلِّ مُؤْمِنٍ نَصْرُهُ أَوْ قَالَ إِجَابَتُهُ
“মাহ্‌দী (আ.) নদী অববাহিকার স্থান হতে আবির্ভূত হবেন এবং বড় জমিদার বংশীয় হবেন।” (আবু দাউদ-কিতাবুল মাহ্‌দী)

নোটঃ বিয়াস (বিপাশা) নদী থেকে ৯ মাইল দূরে কাদিয়ান অবস্থিত। হযরত আহ্‌মদ (আ.) এই কাদিয়ান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং তিনি বড় জমিদার বংশীয়ও ছিলেন।

(চ) অন্য এক হাদীসে আছেঃ يَخْرُجُ الْمَهْدِيُّ مِنَ الْقَرْيَةِ يُقَالُ لَهَا كَدَعَةٌ
“মাহ্‌দী (আ.) ‘কাদেয়া’ নামক গ্রাম হতে আবির্ভূত হবেন।” (জাওয়াহেরুল আসরার, ৫৬ পৃ.)

নোটঃ ভাষা ভেদে শব্দের উচ্চারণে প্রভেদ হয়। এখানে ‘কাদেয়া, কাদীয়ানকে নির্দেশ করেছে যা হযরত ইমাম মাহদী মির্যা গোলাম আহ্‌মদ (আ.)-এর জন্মস্থান এবং পূর্ব পাঞ্জাবে অবস্থিত।

(ছ) আরও বর্ণিত আছে:
و در ارشاد المسلمین گفته مولود وی در دبی باشد آن را کرعه گویند
“এরশাদুল মুসলেমীন নামক গ্রন্থে আছে যে, ইমাম মাহ্‌দী (আ.) ‘কারেআ’ নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করবেন। (হুজাজুল কিরামা, ৩৫৮ পৃ.)

নোটঃ পাঞ্জাব ও সিন্ধুর মিলিত অংশের নাম ‘কারেআ’। (মাহে-নও, চৈত্র সংখ্যা, ১৩৬৪ বঙ্গাব্দ)

(জ) হযরত রসূলে করীম (সা.) বলেছেন:

كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا نَزَلَ ابْنُ مَرْيَمَ فِيكُمْ وَإِمَامُكُمْ مِنْكُمْ
“তোমরা কত সৌভাগ্যশালী হবে, যখন তোমাদের মধ্যে মরিয়মের পুত্র আগমন করবেন এবং তিনি তোমাদের মধ্যে হতে তোমাদের ইমাম হবেন।” (বুখারী)

(ঝ)
كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا نَزَلَ ابْنُ مَرْيَمَ فِيكُمْ وَأَمَّكُمْ
“তোমাদের অবস্থা কিরূপ হবে যখন তোমাদের মধ্যে মরিয়ম পুত্র নাযেল হবেন অতঃপর, তিনি তোমাদের ইমামতি করবেন। (মুসলিম-কিতাবুল ঈমান)
বস্তুতঃ হযরত আহ্‌মদ (আ.) হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতেই আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি হযরত রসূলে আকরাম (সা.)-এর পূর্ণতম আধ্যাত্মিক দাঁস এবং ইমাম মাহ্‌দী হিসাবে তিনিই সকল জাতির প্রতিশ্রুত পুরুষ।

হযরত ঈসা (আ.) শুধু বনী ইসলাঈলের নবী হিসেবে وَرَسُولًا إِلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ (সূরা আলে ইমরান: ৫০)। কুরআন, হাদীস এবং ইতিহাস দ্বারা সপ্রমাণিত যে, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন (বিস্তারিত জানার জন্য “ঈসার মৃত্যুতেই ইসলামের জীবন” পুস্তক পাঠ করুন)। সুতরাং উক্ত হাদীসে বর্ণিত ইবনে-মরিয়ম বলতে হযরত ঈসা-ইবনে-মরিয়মের সদৃশ ও গুণে গুণান্বিত মহাপুরুষকে বুঝিয়েছে, যিনি মুহাম্মদী মসীহ্ হয়ে এ উম্মতে আগমন করবেন। যেমন দানশীল ব্যক্তিকে আরবী ভাষার বাগধারায় বলা হয় ‘হাতেম তাঈ’, বীর ও সাহসী ব্যক্তিকে বলা হয় ‘রুস্তম’, তেমনি বিশিষ্ট ফিকাহবিদ আবু ইউসুফকে ‘আবু হানিফা’ বলে অভিহিত করা হয়। গুণাবলীর সাদৃশ্যের কারণে নামের এরূপ অলঙ্কারিক ব্যবহার সকল উন্নত ভাষাতেই বিদ্যমান।
ওফাতে ঈসা (আ.) সম্বন্ধে কতিপয় অভিমতঃ

(১) মিশরের আল-আযহার ইউনিভার্সিটির রেক্টর আল্লামা সেলতুতের অভিমতঃ “খোদা তা’লার সমস্ত মা’মুর-মুরসাল নবী যেভাবে মারা গিয়েছেন, মসীহ্ ঈসা (আ.)-ও ঠিক সেভাবেই মারা গিয়েছেন।” (দেখুন মাজাল্লা আল-আযহার, ফাতওয়া আল্লামা সেলতুত)

(২) আল্লামা মুহাম্মদ আসাস সাহেবের সম্পাদনায় মক্কার মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগের পক্ষ হতে ইংরেজীতে কুরআনের একটি তরজমা বের হয়েছে। এ তরজমা প্রকাশে মক্কার বহু খ্যাতনামা ওলামাগণ অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাতে হযরত ঈসা (আ.) সম্বন্ধে লিখিত আছেঃ “অধিকাংশ মুসলমান যেভাবে বিশ্বাস করে, হযরত ঈসা (আ.)-এর সশরীরে আকাশে যাবার কোন সনদ কুরআন মজীদে নাই। এ সম্বন্ধে মুসলমানগণের মধ্যে অনেক আশ্চর্য গল্প প্রচলিত আছে। কিন্তু সেগুলির কোন সনদ কুরআন বা সহীহ্ হাদীসে পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে মুফাস্সিরগণ যে সব গল্প লিখেছেন তাও সম্পূর্ণ পরিত্যাজ্য।”

(৩) বাংলার বিখ্যাত আলেম মাওলানা আকরাম খাঁ কুরআন মজীদের সূরা আলে-ইমরানের তফসীরের ৩৯ নং টীকায় হযরত ঈসা (আ.)-এর মৃত্যুকে অকাট্যভাবে প্রমাণ করেছেন। তার মধ্য হতে একটি উদ্ধৃতি নিম্নে দেয়া হলঃ
“যতদিন আমি তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলাম ততদিন আমি তাদের তত্ত্বাবধান করেছি; কিন্তু যখন তুমি আমাকে মৃত্যু দিলে, তখন তুমি তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক ছিলে। সেরূপে কিয়ামতের দিন নিজের কতিপয় উম্মত দোযখের দিকে পরিচালিত হতে দেখে হযরত (সা.) দুঃখিত হবেন। তখন আল্লাহ্ তাঁকে সম্বোধন করে বলবেন, ‘মুহাম্মদ! তোমার পরে এরা যে কি সব অনাচার সৃষ্টি করেছে, তাতো তুমি জান না।’ হযরত (সা.) বলেছেন, আল্লাহ্‌র সাধু বান্দা ঈসার ন্যায় আমিও বলব: “যতদিন আমি তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলাম ততদিন আমি তাদের তত্ত্বাবধান করেছি। কিন্তু যখন তুমি আমাকে মৃত্যু দিলে, তখন তুমি তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক ছিলে। (বুখারী-কিতাবুত্ তফ্‌সীর)

(৪) মৌলানা আশরাফ আলী থানবী সাহেব কর্তৃক পবিত্র কুরআনের তফসীরের ভূমিকায় লেখা হয়েছেঃ
“তখন মৌলভী গোলাম আহ্‌মদ কাদিয়ানী (আ.) রুখে দাঁড়ালেন এবং বিশপ লেফ্রাই ও তাঁর সঙ্গীগণকে সম্বোধন করে বললেন, তোমরা যে ঈসা (আ.)-এর কথা বলছো তিনিতো অন্যান্য মানুষের ন্যায় মৃত্যুবরণ করে সমাধিস্থ হয়ে গিয়েছেন, এবং যে ঈসা (আ.)-এর আগমনের সংবাদ আছে, সে ব্যক্তি আমিই। সুতরাং তোমরা যদি পুণ্যবান হও, তাহলে আমাকে গ্রহণ কর। এ পন্থা অবলম্বন করে তিনি লেফ্রাইকে এরূপ নাযেহাল করলেন যে, তার পরিত্রাণের কোন পথ বাকি রইল না। একই উপায়ে তিনি ভারত হতে আরম্ভ করে সুদূর ইংল্যান্ডের পাদ্রীদেরও পরাস্ত করলেন।”

(৫) মাওলানা মওদুদী সাহেব বলেছেনঃ
(ক) “মসীহ্ (আ.)-এর জীবিত থাকা এবং সশরীরে আকাশে উত্তোলিত হওয়া নিশ্চিতভাবে প্রতিপন্ন নয় এবং কুরআনের বিভিন্ন আয়াত হতে এ বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস জন্মে না।” (ইচ্ছরার বক্তৃতা, ২৮ মার্চ, ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দ)
(খ) মাওলানা মওদুদী সাহেবের ‘তরজমায়ে কুরআন মজিদ’-এর (ফালাহ-ই-আ’ম ট্রাষ্ট কর্তৃক প্রকাশিত) সূরা মায়েদার ৫৭নং টীকায় (১৯০ পৃ.) লেখা হয়েছে: “......মসীহ্ (আ.)-এর মৃত্যুর পর প্রথম তিনশ’ বছর পর্যন্ত খ্রিষ্টান জগত এ ধারণার সঙ্গে সম্পূর্ণ অপরিচিত ছিল।
(৬) আল্লামা ইকবাল বলেছেনঃ
“আত্মদীগণের ধর্মীয় বিশ্বাস যে, হযরত ঈসা (আ.) একজন মরণশীল মানুষের ন্যায় মৃত্যুবরণ করেছেন এবং তাঁর দ্বিতীয় আগমণের অর্থ রূহানীভাবে তাঁর মসীল বা সাদৃশ্য আসবেন, অনেকটা যুক্তিসঙ্গত।” (দৈনিক আযাদ, লাহোর, ৬ই এপ্রিল, ১৯০৯ ইং)
(৭) বিখ্যাত ধর্মীয় পুস্তক ‘ইকতেবাসুল আনওয়ার’-এর ৫২ পৃষ্ঠায় লিখিত আছেঃ
و بعضی بر آنند که روح عیسی در مهدی بروز کند و نزول عبارت از میں بروز است
“আওলিয়া ও সুফীদের এক সম্প্রদায় বিশ্বাস করেন যে, ঈসা (আ.)-এর আত্মা (অর্থাৎ তাঁর আধ্যাত্মিক গুণাবলী ও সৌন্দর্যরাশি) মাহ্‌দী (আ.)-এর মধ্যে প্রতিবিম্বাকারে প্রকাশিত হবে। ঈসা (আ.)-এর নাযেল হবার অর্থ হল উক্ত রূপে বুরুষ (অর্থাৎ আত্মিক প্রতিবিম্ব হওয়া)। এটা “লাল মাহ্‌দী ইল্লা ঈসা (ঈসা ব্যতীত কোন মাহ্‌দী নাই)। হাদীস মোতাবেক সাব্যস্ত”।
হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর আবির্ভাবের লক্ষণাবলী

(ক) হাদীসে বর্ণিত আছেঃ

إِنَّ لِمَهْدِينَا آيَتَيْنِ لَمْ تَكُونَا مُنْذُ خَلْقِ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ تَنْكَسِفُ الْقَمَرُ لأَوَّلِ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ وَتَنْكَسِفُ الشَّمْسُ فِي النِّصْفِ مِنْهُ وَلَمْ تَكُونَا مُنْذُ خَلَقَ اللَّهُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ

“নিশ্চয় আমাদের মাহ্‌দীর সত্যতার এমন দুইটি লক্ষণ আছে, যা আকাশ-মণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি অবধি আজ পর্যন্ত অন্য কারও সত্যতার নিদর্শন স্বরূপ প্রদর্শিত হয় নি। একই রমযান মাসে (চন্দ্র গ্রহণের) প্রথম রাত্রে চন্দ্র গ্রহণ হবে এবং (সূর্য গ্রহণের) মধ্যম তারিখে সূর্য গ্রহণ হবে।” (দারকুতনী - ১৮৮ পৃ. এবং আরও ছয়টি প্রসিদ্ধ কিতাবে এ হাদিস বর্ণিত হয়েছে)

উল্লিখিত গ্রহণদ্বয় ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে হয়ে গিয়েছে। আযাদ পত্রিকা উর্দু লাহোর, ৪ঠা ডিসেম্বর ১৮৯৫ খৃষ্টাব্দে, সিভিল এন্ড মিলিটারী গেজেট, লাহোর, ৬ই ডিসেম্বর ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দ মাওলানা শাহ্ রফিউদ্দিন সাহেব লিখিত ‘কিয়ামত নামার’ ভূমিকা (উর্দু) এবং ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত সুরেশ্বর নিবাসী মরহুম মাওলানা জান শরীফ সাহেব প্রণীত ‘মদীনা কলকি অবতারের ছফিনা’ দ্রষ্টব্য।

নোটঃ চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪, এবং ১৫ তারিখের যে কোন রাতে চন্দ্র গ্রহণ এবং ২৭, ২৮ ও ২৯ তারিখের যে কোন দিনে সূর্য গ্রহণ হয়ে থাকে। অতএব, চন্দ্র গ্রহণের প্রথম রাত বলতে চান্দ্র মাসের ১৩ তারিখ এবং সূর্য গ্রহণের মধ্যম দিন বলতে চান্দ্র মাসের ২৮ তারিখকে বুঝায়। চন্দ্রের প্রথম রাতকে চন্দ্র গ্রহণের প্রথম তারিখ মনে করা মারাত্মক ভুল। কারণ ১, ২ এবং ৩ তারিখের চন্দ্রকে আরবীতে হেলাল এবং ৪র্থ তারিখ হতে চন্দ্রকে ‘কমর’ বলা হয়। উপরোক্ত হাদীসে ‘কমর’ শব্দ এসেছে। তদুপরি প্রথম রাতে গ্রহণ হওয়া তো দূরের কথা ঐ দিন অনেকে চাঁদ দেখতেও পায় না।

১৩১১ হিজরীর ১৩ই রমযান মোতাবেক ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে ২১ মার্চ তারিখে সন্ধ্যা ৭টা হতে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত চন্দ্র গ্রহণ হয় এবং ১৫ দিন পরে ২৮ রমযান মোতাবেক ৬ এপ্রিল তারিখে সকাল ৯টা হতে ১১টা পর্যন্ত সূর্য গ্রহণ হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, এ আসমানী নিদর্শন প্রকাশের পূর্বেই হযরত মির্যা গোলাম আহ্‌মদ (আ.) ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দে মসীহ্ এবং মাহ্‌দী হবার দাবি করেছিলেন। এ নিদর্শন প্রকাশের পর দাবি করলে কেউ বলতে পারত যে, তিনি এ নিদর্শনের সুযোগ গ্রহণ করেছেন। প্রকৃত কথা, ঐশী কর্মকাণ্ডের উপর তাঁর কোন হাত ছিল না।

(খ) পূর্বদিকে পুচ্ছ-বিশিষ্ট নক্ষত্র উদিত হবে।

و از انجمد طلوع ستاره دنباله دارست و بارها طلوع کرده

ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর আগমনের লক্ষণ এই যে, তাঁর আগমনের সময় পুচ্ছ-বিশিষ্ট নক্ষত্র (ধূমকেতু) উদিত হবে এবং বার বার উদিত হবে। (হুজাজুল কেরামা পৃ. ৩৪৫) এ পুচ্ছ-বিশিষ্ট নক্ষত্র যথা সময়ে উদিত হয়েছিল। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তার প্রমাণ রয়েছে।

(গ) ইমাম মাহ্‌দী জময জন্মগ্রহণ করবেন। হযরত মহীউদ্দীন ইবনে আরাবী (রাহে.) তদীয় গ্রন্থ ‘ফসুসুল-হিকাম’ পুস্তকে ইমাম মাহ্‌দীর জন্ম সম্বন্ধে লিখেছেন:

آخرُ مَوْلُوْدٍ مَنْ يُوْلَدُ هَذَا النَّوْعِ الْإِنْسَانِي فَهُوَ حَامِلُ أَسْرَارِهِ فَهُوَ خَاتَمُ الْأَوْلَادِ وَ تولد مِنْهُ أُخْتٌ لَه فَتَخْرُجُ قَبْلَهُ وَيَخْرُجُ بَعْدَهَا

“শেষ যুগে এ প্রকারের এক মহা পুরুষ [ইমাম মাহ্‌দী (আ.)] জন্মগ্রহণ করবেন, যিনি শ্রেষ্ঠতম সন্তান এবং বহু রহস্য ও সূক্ষ্ম তত্ত্বজ্ঞানের বাহক হবেন। তিনি এক ভগ্নীসহ জময জন্মগ্রহণ করবেন। তাঁর পূর্বে ভগ্নী ভূমিষ্ঠ হবে এবং পরে তিনি ভূমিষ্ঠ হবেন।” (ফসুসুল হিকাম: প্রথম খণ্ড, পৃ. ৬৭, বৈরূত হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত এবং অনুবাদে- মাওলানা ফাযেল মুহাম্মদ মুবারক আলী ১৩০৮ হিঃ)

উল্লেখযোগ্য যে, হযরত আহ্‌মদ ইমাম মাহ্‌দী (আ.) তাঁর এক ভগ্নীর সাথে জমজ জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমে ভগ্নী ভূমিষ্ঠ হন এবং পরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।



(ঘ) হযরত রসূলে করীম (সা.) শেষ যুগের লক্ষণ বর্ণনা করর বলেছেন:

يُرْفَعَ الْعِلْمُ وَيَظْهَرَ الْجَهْلُ وَيُشْرَبَ الْخَمْرُ وَيَظْهَرَ الزِّنَا وَيَقِلَّ الرِّجَالُ وَيَكْثُرَ النِّسَاءُ وَيَنْقُصُ الْعَمَلُ وَيُلْقَى الشُّحُ وَيَكْثُرُ الْهَرْجُ النَّاسُ يَتَبَايَعُونَ فَلَا يَكَادُ أَحَدٌ يُؤَدِّي الْأَمَانَةَ وَتَكْثُرَ الزَّلَازِلُ يَكْثُرَ فِيكُمْ الْمَالُ وَيَتَطَاوَلَ النَّاسُ فِي الْبُنْيَانِ وَسَادَ الْقَبِيلَةَ فَاسِقُهُمْ، وَكَانَ زَعِيمُ الْقَوْمِ أَرْذَلَهُمْ، وظهرت القينات والمعازف وَلَتُتْرَكَنَّ الْقِلَاصُ فَلَا يُسْعَى عَلَيْهَا

“ধর্মীয় জ্ঞান উঠে যাবে, জাহেলিয়াত (আধ্যাত্মিক অজ্ঞতা) প্রসার লাভ করবে, মদের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে, প্রকাশ্যে ব্যভিচার হবে, পুরুষের সংখ্যা কম হবে এবং স্ত্রীলোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, পুণ্য কাজ কমে যাবে মানুষের মন কৃপণতায় ভরে যাবে, ঝগড়া-বিবাদ বৃদ্ধি পাবে, মারামারি-কাটাকাটি বেশি হবে, ব্যবসায়ীদের মধ্যে ঈমানদারের অভাব হবে, ভূমিকম্প বেশি হবে, ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণ করে মানুষ গৌরব অনুভব করবে, দলের সর্দার ফাসেক (দুর্নীতি পরায়ণ) হবে, জাতির নীচ লোক তাদের নেতা হবে, বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা নারীর প্রাধান্য হবে, উট্সী বেকার হবে, তাতে চড়ে মানুষ দূরদেশে যাতায়াত করবে না।” (বুখারী, মুসলিম, কনযুল উম্মাল ও অন্যান্য হাদীসগ্রন্থ)

উল্লেখযোগ্য যে, এগুলির পূর্ণতা সম্বন্ধে আলোচনার কোন অবকাশ নেই, এসবের পূর্ণতা সকলেই স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করছেন।

(ঙ) হযরত রসূলে করীম (সা.) বলেছেন:

يُوشِكُ أَنْ يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لَا يَبْقَى مِنَ الْإِسْلَامِ إِلَّا اسْمُهُ ، وَلَا يَبْقَى مِنَ الْقُرْآنِ إِلَّا رَسْمُهُ ، مَسَاجِدُهُمْ عَامِرَةٌ وَهِيَ خَرِابٌ مِنَ الْهُدَى ، عُلَمَاؤُهُمْ شَرٌّ مَنْ تَحْتَ أَدِيمِ السَّمَاءِ مِنْ عِنْدِهِمْ تَخْرُجُ الْفِتْنَةُ وَفِيهِمْ تَعُوْدُ

"মানুষের উপর এমন এক সময় আসবে, যখন ইসলাম কেবল নামমাত্র এবং কুরআনের শুধু অক্ষরগুলি অবশিষ্ট থাকবে। তাদের মসজিদগুলি বাহ্যিক আড়ম্বরপূর্ণ হবে, কিন্তু হেদায়াতশূন্য থাকবে। তাদের আলেমগণ আকাশের নিম্নস্থ সকল সৃষ্টজীবের মধ্যে নিকৃষ্টতম জীব হবে। তাদের মধ্য হতে ফেতনা-ফাসাদ উঠবে এবং তাদের মধ্যেই তা ফিরে যাবে।” (বায়হাকী, মিশকাত)

বস্তুতঃ সব যে পূর্ণ হয়েছে, এ সম্বন্ধে বিরুদ্ধবাদীগণেরই অসংখ্য অভিমতের মধ্য হতে কতিপয় অভিমত নিম্নে উদ্ধৃত করছি:

প্রথম অভিমত: “এটা সত্য কথা যে, কুরআন করীম আমাদের মধ্য হতে একেবারে উঠে গিয়েছে। নামে মাত্র আমরা কুরআনের উপর বিশ্বাস রাখি। কিন্তু মনে মনে একে অতি সাধারণ গ্রন্থ বলে জানি।” (আহলে হাদীস’ পত্রিকা, ১৪ জুন, ১৯১২ খ্রিস্টাব্দ)

দ্বিতীয় অভিমত: “এখন ইসলামের মাত্র নাম ও কুরআনের মাত্র অক্ষর অবশিষ্ট রয়েছে। মসজিদগুলি বাহ্যিকভাবে আবাদ, কিন্তু একেবারে হেদায়াতশূন্য। এ উম্মতের আলেমগণ আকাশের নিম্নস্থ সকল জীব হতে নিকৃষ্টতম।” (ইকতারাবাতুস্ সায়াত, ১৩০১ হি: সালে আল্লামা নওয়াব সিদ্দীক হাসান খানের পুত্র আল্লামা আবুল খাইর নূরুল হাসান খান প্রণীত পুস্তুক)

তৃতীয় অভিমত:
“ওয়াযা মে তুম হো নাসারা তমদ্দুন মে হনুদ
ইয়ে মুসলমাঁ হ্যায় জিনহে দেখ’কে শরমায়ে ইয়াহুদ”
অর্থাৎ পোশাক পরিচ্ছদে তোমরা খ্রিষ্টান, সংস্কৃতিতে তোমরা হিন্দু, এতো হল মুসলমান যাদেরকে দেখে ইহুদীরাও লজ্জা পায়। (আল্লামা ইকবাল)

চতুর্থ অভিমত:
“বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে আমরা তখনো পিছে
বিবি তালাকের ফতওয়া খুঁজেছি হাদীস ও ফেকাহ্ চষে” (কাজী নজরুল ইসলাম)
হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর আবির্ভাবের লক্ষণাবলী

(ক) হাদীসে বর্ণিত আছেঃ

إِنَّ لِمَهْدِينَا آيَتَيْنِ لَمْ تَكُونَا مُنْذُ خَلْقِ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ تَنْكَسِفُ الْقَمَرُ لأَوَّلِ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ وَتَنْكَسِفُ الشَّمْسُ فِي النِّصْفِ مِنْهُ وَلَمْ تَكُونَا مُنْذُ خَلَقَ اللَّهُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ

“নিশ্চয় আমাদের মাহ্‌দীর সত্যতার এমন দুইটি লক্ষণ আছে, যা আকাশ-মণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি অবধি আজ পর্যন্ত অন্য কারও সত্যতার নিদর্শন স্বরূপ প্রদর্শিত হয় নি। একই রমযান মাসে (চন্দ্র গ্রহণের) প্রথম রাত্রে চন্দ্র গ্রহণ হবে এবং (সূর্য গ্রহণের) মধ্যম তারিখে সূর্য গ্রহণ হবে।” (দারকুতনী - ১৮৮ পৃ. এবং আরও ছয়টি প্রসিদ্ধ কিতাবে এ হাদিস বর্ণিত হয়েছে)

উল্লিখিত গ্রহণদ্বয় ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে হয়ে গিয়েছে। আযাদ পত্রিকা উর্দু লাহোর, ৪ঠা ডিসেম্বর ১৮৯৫ খৃষ্টাব্দে, সিভিল এন্ড মিলিটারী গেজেট, লাহোর, ৬ই ডিসেম্বর ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দ মাওলানা শাহ্ রফিউদ্দিন সাহেব লিখিত ‘কিয়ামত নামার’ ভূমিকা (উর্দু) এবং ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত সুরেশ্বর নিবাসী মরহুম মাওলানা জান শরীফ সাহেব প্রণীত ‘মদীনা কলকি অবতারের ছফিনা’ দ্রষ্টব্য।

নোটঃ চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪, এবং ১৫ তারিখের যে কোন রাতে চন্দ্র গ্রহণ এবং ২৭, ২৮ ও ২৯ তারিখের যে কোন দিনে সূর্য গ্রহণ হয়ে থাকে। অতএব, চন্দ্র গ্রহণের প্রথম রাত বলতে চান্দ্র মাসের ১৩ তারিখ এবং সূর্য গ্রহণের মধ্যম দিন বলতে চান্দ্র মাসের ২৮ তারিখকে বুঝায়। চন্দ্রের প্রথম রাতকে চন্দ্র গ্রহণের প্রথম তারিখ মনে করা মারাত্মক ভুল। কারণ ১, ২ এবং ৩ তারিখের চন্দ্রকে আরবীতে হেলাল এবং ৪র্থ তারিখ হতে চন্দ্রকে ‘কমর’ বলা হয়। উপরোক্ত হাদীসে ‘কমর’ শব্দ এসেছে। তদুপরি প্রথম রাতে গ্রহণ হওয়া তো দূরের কথা ঐ দিন অনেকে চাঁদ দেখতেও পায় না।

১৩১১ হিজরীর ১৩ই রমযান মোতাবেক ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে ২১ মার্চ তারিখে সন্ধ্যা ৭টা হতে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত চন্দ্র গ্রহণ হয় এবং ১৫ দিন পরে ২৮ রমযান মোতাবেক ৬ এপ্রিল তারিখে সকাল ৯টা হতে ১১টা পর্যন্ত সূর্য গ্রহণ হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, এ আসমানী নিদর্শন প্রকাশের পূর্বেই হযরত মির্যা গোলাম আহ্‌মদ (আ.) ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দে মসীহ্ এবং মাহ্‌দী হবার দাবি করেছিলেন। এ নিদর্শন প্রকাশের পর দাবি করলে কেউ বলতে পারত যে, তিনি এ নিদর্শনের সুযোগ গ্রহণ করেছেন। প্রকৃত কথা, ঐশী কর্মকাণ্ডের উপর তাঁর কোন হাত ছিল না।

(খ) পূর্বদিকে পুচ্ছ-বিশিষ্ট নক্ষত্র উদিত হবে।

و از انجمد طلوع ستاره دنباله دارست و بارها طلوع کرده

ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর আগমনের লক্ষণ এই যে, তাঁর আগমনের সময় পুচ্ছ-বিশিষ্ট নক্ষত্র (ধূমকেতু) উদিত হবে এবং বার বার উদিত হবে। (হুজাজুল কেরামা পৃ. ৩৪৫) এ পুচ্ছ-বিশিষ্ট নক্ষত্র যথা সময়ে উদিত হয়েছিল। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তার প্রমাণ রয়েছে।

(গ) ইমাম মাহ্‌দী জময জন্মগ্রহণ করবেন। হযরত মহীউদ্দীন ইবনে আরাবী (রাহে.) তদীয় গ্রন্থ ‘ফসুসুল-হিকাম’ পুস্তকে ইমাম মাহ্‌দীর জন্ম সম্বন্ধে লিখেছেন:

آخرُ مَوْلُوْدٍ مَنْ يُوْلَدُ هَذَا النَّوْعِ الْإِنْسَانِي فَهُوَ حَامِلُ أَسْرَارِهِ فَهُوَ خَاتَمُ الْأَوْلَادِ وَ تولد مِنْهُ أُخْتٌ لَه فَتَخْرُجُ قَبْلَهُ وَيَخْرُجُ بَعْدَهَا

“শেষ যুগে এ প্রকারের এক মহা পুরুষ [ইমাম মাহ্‌দী (আ.)] জন্মগ্রহণ করবেন, যিনি শ্রেষ্ঠতম সন্তান এবং বহু রহস্য ও সূক্ষ্ম তত্ত্বজ্ঞানের বাহক হবেন। তিনি এক ভগ্নীসহ জময জন্মগ্রহণ করবেন। তাঁর পূর্বে ভগ্নী ভূমিষ্ঠ হবে এবং পরে তিনি ভূমিষ্ঠ হবেন।” (ফসুসুল হিকাম: প্রথম খণ্ড, পৃ. ৬৭, বৈরূত হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত এবং অনুবাদে- মাওলানা ফাযেল মুহাম্মদ মুবারক আলী ১৩০৮ হিঃ)

উল্লেখযোগ্য যে, হযরত আহ্‌মদ ইমাম মাহ্‌দী (আ.) তাঁর এক ভগ্নীর সাথে জমজ জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমে ভগ্নী ভূমিষ্ঠ হন এবং পরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।



(ঘ) হযরত রসূলে করীম (সা.) শেষ যুগের লক্ষণ বর্ণনা করর বলেছেন:

يُرْفَعَ الْعِلْمُ وَيَظْهَرَ الْجَهْلُ وَيُشْرَبَ الْخَمْرُ وَيَظْهَرَ الزِّنَا وَيَقِلَّ الرِّجَالُ وَيَكْثُرَ النِّسَاءُ وَيَنْقُصُ الْعَمَلُ وَيُلْقَى الشُّحُ وَيَكْثُرُ الْهَرْجُ النَّاسُ يَتَبَايَعُونَ فَلَا يَكَادُ أَحَدٌ يُؤَدِّي الْأَمَانَةَ وَتَكْثُرَ الزَّلَازِلُ يَكْثُرَ فِيكُمْ الْمَالُ وَيَتَطَاوَلَ النَّاسُ فِي الْبُنْيَانِ وَسَادَ الْقَبِيلَةَ فَاسِقُهُمْ، وَكَانَ زَعِيمُ الْقَوْمِ أَرْذَلَهُمْ، وظهرت القينات والمعازف وَلَتُتْرَكَنَّ الْقِلَاصُ فَلَا يُسْعَى عَلَيْهَا

“ধর্মীয় জ্ঞান উঠে যাবে, জাহেলিয়াত (আধ্যাত্মিক অজ্ঞতা) প্রসার লাভ করবে, মদের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে, প্রকাশ্যে ব্যভিচার হবে, পুরুষের সংখ্যা কম হবে এবং স্ত্রীলোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, পুণ্য কাজ কমে যাবে মানুষের মন কৃপণতায় ভরে যাবে, ঝগড়া-বিবাদ বৃদ্ধি পাবে, মারামারি-কাটাকাটি বেশি হবে, ব্যবসায়ীদের মধ্যে ঈমানদারের অভাব হবে, ভূমিকম্প বেশি হবে, ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণ করে মানুষ গৌরব অনুভব করবে, দলের সর্দার ফাসেক (দুর্নীতি পরায়ণ) হবে, জাতির নীচ লোক তাদের নেতা হবে, বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা নারীর প্রাধান্য হবে, উট্সী বেকার হবে, তাতে চড়ে মানুষ দূরদেশে যাতায়াত করবে না।” (বুখারী, মুসলিম, কনযুল উম্মাল ও অন্যান্য হাদীসগ্রন্থ)

উল্লেখযোগ্য যে, এগুলির পূর্ণতা সম্বন্ধে আলোচনার কোন অবকাশ নেই, এসবের পূর্ণতা সকলেই স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করছেন।

(ঙ) হযরত রসূলে করীম (সা.) বলেছেন:

يُوشِكُ أَنْ يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لَا يَبْقَى مِنَ الْإِسْلَامِ إِلَّا اسْمُهُ ، وَلَا يَبْقَى مِنَ الْقُرْآنِ إِلَّا رَسْمُهُ ، مَسَاجِدُهُمْ عَامِرَةٌ وَهِيَ خَرِابٌ مِنَ الْهُدَى ، عُلَمَاؤُهُمْ شَرٌّ مَنْ تَحْتَ أَدِيمِ السَّمَاءِ مِنْ عِنْدِهِمْ تَخْرُجُ الْفِتْنَةُ وَفِيهِمْ تَعُوْدُ

"মানুষের উপর এমন এক সময় আসবে, যখন ইসলাম কেবল নামমাত্র এবং কুরআনের শুধু অক্ষরগুলি অবশিষ্ট থাকবে। তাদের মসজিদগুলি বাহ্যিক আড়ম্বরপূর্ণ হবে, কিন্তু হেদায়াতশূন্য থাকবে। তাদের আলেমগণ আকাশের নিম্নস্থ সকল সৃষ্টজীবের মধ্যে নিকৃষ্টতম জীব হবে। তাদের মধ্য হতে ফেতনা-ফাসাদ উঠবে এবং তাদের মধ্যেই তা ফিরে যাবে।” (বায়হাকী, মিশকাত)

বস্তুতঃ সব যে পূর্ণ হয়েছে, এ সম্বন্ধে বিরুদ্ধবাদীগণেরই অসংখ্য অভিমতের মধ্য হতে কতিপয় অভিমত নিম্নে উদ্ধৃত করছি:

প্রথম অভিমত: “এটা সত্য কথা যে, কুরআন করীম আমাদের মধ্য হতে একেবারে উঠে গিয়েছে। নামে মাত্র আমরা কুরআনের উপর বিশ্বাস রাখি। কিন্তু মনে মনে একে অতি সাধারণ গ্রন্থ বলে জানি।” (আহলে হাদীস’ পত্রিকা, ১৪ জুন, ১৯১২ খ্রিস্টাব্দ)

দ্বিতীয় অভিমত: “এখন ইসলামের মাত্র নাম ও কুরআনের মাত্র অক্ষর অবশিষ্ট রয়েছে। মসজিদগুলি বাহ্যিকভাবে আবাদ, কিন্তু একেবারে হেদায়াতশূন্য। এ উম্মতের আলেমগণ আকাশের নিম্নস্থ সকল জীব হতে নিকৃষ্টতম।” (ইকতারাবাতুস্ সায়াত, ১৩০১ হি: সালে আল্লামা নওয়াব সিদ্দীক হাসান খানের পুত্র আল্লামা আবুল খাইর নূরুল হাসান খান প্রণীত পুস্তুক)

তৃতীয় অভিমত:
“ওয়াযা মে তুম হো নাসারা তমদ্দুন মে হনুদ
ইয়ে মুসলমাঁ হ্যায় জিনহে দেখ’কে শরমায়ে ইয়াহুদ”
অর্থাৎ পোশাক পরিচ্ছদে তোমরা খ্রিষ্টান, সংস্কৃতিতে তোমরা হিন্দু, এতো হল মুসলমান যাদেরকে দেখে ইহুদীরাও লজ্জা পায়। (আল্লামা ইকবাল)

চতুর্থ অভিমত:
“বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে আমরা তখনো পিছে
বিবি তালাকের ফতওয়া খুঁজেছি হাদীস ও ফেকাহ্ চষে” (কাজী নজরুল ইসলাম)




কুরআনে বর্ণিত মাপকাঠিতে ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর সত্যতার প্রমাণ, তাঁর দাবির পূর্ববর্তী জীবনের পবিত্রতা:

(ক) কুরআন করীমে সূরা ইউনুসের ২য় রুকু’তে বর্ণিত আছে:
فَقَدْ لَبِثْتُ فِيكُمْ عُمُرًا مِّن قَبْلِهِ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
“নিশ্চয় আমি ইতিপূর্বে তোমাদের মধ্যে এক সুদীর্ঘ জীবন যাপন করেছি, তবুও কি তোমরা বিবেক বুদ্ধি খাটাবে না?” (সুরা ইউনুস: ১৭)
উক্ত আয়াতে হযরত রসূলে করীম (সা.) তাঁর বিরুদ্ধবাদীদেরকে স্বীয় সত্যতার প্রমাণ স্বরূপ তাঁর দাবির পূর্বেকার পবিত্র জীবনকে পেশ করেছেন।

(খ) হাদীস শরীফে এসেছে যে, কুরাইশগণের পক্ষ থেকে আবু লাহাব রসূলে করীম (সা.)-কে সম্বোধন করে তাঁর দাবির পূর্ববর্তী জীবন সম্বন্ধে সাক্ষ্যদান
مَا جَرَّبْنَا عَلَيْكَ إِلَّا صِدْقًا :
“আমাদের অভিজ্ঞতা এটাই যে, আপনি সর্বদা সত্য কথা বলেছেন।” (বুখারী, মুসলিম)

যেহেতু ইমাম মাহ্‌দী (আ.) হযরত রসূলে করীম (সা.)-এর প্রতিনিধি এবং আল্লাহ্ তা’লার প্রত্যাদিষ্ট মহাপুরুষ, অতএব, তাঁর দাবির পূর্বেকার জীবন পবিত্র হওয়া দরকার এবং আবু লাহাব প্রমুখের ন্যায় তাঁর শত্রুগণের রায়ও তাঁর পক্ষে থাকা দরকার। নতুবা কুরআন করীমের মাপকাঠিতে তাঁর দাবি টিকতে পারে না।

হযরত মির্যা গোলাম আহ্‌মদ (আ.) সম্বন্ধে তাঁর ঘোরতর বিরুদ্ধবাদী আহলে হাদীস সম্প্রদায়ের নেতা মৌলভী মুহাম্মদ হুসেন বাটালবী সাহেবের মন্তব্য পড়লে পাঠক সহজেই বুঝতে পারবেন যে, হযরত আহ্‌মদ (আ.)-এর জীবন কত পবিত্র ছিল। তিনি বলেছিলেন:
(১) “বারাহীন আহ্‌মদীয়া গ্রন্থের প্রণেতা মির্যা সাহেবের জীবন ও অবস্থা সম্বন্ধে আমি যতদূর জানি, সম-সাময়িক লোকের মধ্যে খুব অল্প লোকই তা জানেন। মির্যা সাহেব এবং আমি একই অঞ্চলের অধিবাসী।…

এখন আমি বারাহীনে আহ্‌মদীয়া সম্বন্ধে, অতি সংক্ষেপে ও আড়ম্বরহীন ভাষায় মন্তব্য প্রকাশ করছি। আমার মতে এ গ্রন্থ বর্তমান যামানার অবস্থা অনুসারে এমন এক গ্রন্থ যে, এর সমতুল্য গ্রন্থ ইসলামে আজ পর্যন্ত প্রকাশিত হয় নি। এর প্রণেতা (হযরত আহ্‌মদ-আঃ) ইসলামের সেবায় ব্যক্তিগত ও আর্থিক ত্যাগের এবং শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের দিক দিয়ে লেখনী ও বক্তৃতায় এমন দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত যে, এর তুলনা পূর্ববর্তী মুসলমানগণের মধ্যে অতি বিরল।” (ইশা’আতুস সুন্নাহ, ৬ষ্ঠ বর্ষ, ৯ম সংখ্যা)

(২) “বারাহীনে আহ্‌মদীয়ার প্রণেতা বিরুদ্ধবাদী এবং সমর্থনকারী উভয় পক্ষের অভিজ্ঞতা এবং জানা মতে মুহাম্মদীয়া শরীয়তে দৃঢ় প্রতিষ্ঠ, এবং পরহেযগার-মুত্তাকী। (ইশা’আতুস সুন্নাহ, ৬ষ্ঠ বর্ষ, ৯ম সংখ্যা)

এতদ্ব্যতীত, হযরত আহ্‌মদ (আ.) স্বয়ং বিরুদ্ধবাদীগণকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেন:
“কে আছে যে আমার জীবনীতে কোন দোষ বের করতে পারে?” (তাযকেরাতুশ শাহাদাতাঈন)
আজ পর্যন্ত কেউ এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারে নি। এটা অপ্রতিহতভাবে বিদ্যমান।
কুরআনে বর্ণিত মাপকাঠিতে ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর সত্যতার প্রমাণ, তাঁর দাবির পূর্ববর্তী জীবনের পবিত্রতা:

(ক) কুরআন করীমে সূরা ইউনুসের ২য় রুকু’তে বর্ণিত আছে:
فَقَدْ لَبِثْتُ فِيكُمْ عُمُرًا مِّن قَبْلِهِ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
“নিশ্চয় আমি ইতিপূর্বে তোমাদের মধ্যে এক সুদীর্ঘ জীবন যাপন করেছি, তবুও কি তোমরা বিবেক বুদ্ধি খাটাবে না?” (সুরা ইউনুস: ১৭)
উক্ত আয়াতে হযরত রসূলে করীম (সা.) তাঁর বিরুদ্ধবাদীদেরকে স্বীয় সত্যতার প্রমাণ স্বরূপ তাঁর দাবির পূর্বেকার পবিত্র জীবনকে পেশ করেছেন।

(খ) হাদীস শরীফে এসেছে যে, কুরাইশগণের পক্ষ থেকে আবু লাহাব রসূলে করীম (সা.)-কে সম্বোধন করে তাঁর দাবির পূর্ববর্তী জীবন সম্বন্ধে সাক্ষ্যদান
مَا جَرَّبْنَا عَلَيْكَ إِلَّا صِدْقًا :
“আমাদের অভিজ্ঞতা এটাই যে, আপনি সর্বদা সত্য কথা বলেছেন।” (বুখারী, মুসলিম)

যেহেতু ইমাম মাহ্‌দী (আ.) হযরত রসূলে করীম (সা.)-এর প্রতিনিধি এবং আল্লাহ্ তা’লার প্রত্যাদিষ্ট মহাপুরুষ, অতএব, তাঁর দাবির পূর্বেকার জীবন পবিত্র হওয়া দরকার এবং আবু লাহাব প্রমুখের ন্যায় তাঁর শত্রুগণের রায়ও তাঁর পক্ষে থাকা দরকার। নতুবা কুরআন করীমের মাপকাঠিতে তাঁর দাবি টিকতে পারে না।

হযরত মির্যা গোলাম আহ্‌মদ (আ.) সম্বন্ধে তাঁর ঘোরতর বিরুদ্ধবাদী আহলে হাদীস সম্প্রদায়ের নেতা মৌলভী মুহাম্মদ হুসেন বাটালবী সাহেবের মন্তব্য পড়লে পাঠক সহজেই বুঝতে পারবেন যে, হযরত আহ্‌মদ (আ.)-এর জীবন কত পবিত্র ছিল। তিনি বলেছিলেন:
(১) “বারাহীন আহ্‌মদীয়া গ্রন্থের প্রণেতা মির্যা সাহেবের জীবন ও অবস্থা সম্বন্ধে আমি যতদূর জানি, সম-সাময়িক লোকের মধ্যে খুব অল্প লোকই তা জানেন। মির্যা সাহেব এবং আমি একই অঞ্চলের অধিবাসী।…

এখন আমি বারাহীনে আহ্‌মদীয়া সম্বন্ধে, অতি সংক্ষেপে ও আড়ম্বরহীন ভাষায় মন্তব্য প্রকাশ করছি। আমার মতে এ গ্রন্থ বর্তমান যামানার অবস্থা অনুসারে এমন এক গ্রন্থ যে, এর সমতুল্য গ্রন্থ ইসলামে আজ পর্যন্ত প্রকাশিত হয় নি। এর প্রণেতা (হযরত আহ্‌মদ-আঃ) ইসলামের সেবায় ব্যক্তিগত ও আর্থিক ত্যাগের এবং শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের দিক দিয়ে লেখনী ও বক্তৃতায় এমন দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত যে, এর তুলনা পূর্ববর্তী মুসলমানগণের মধ্যে অতি বিরল।” (ইশা’আতুস সুন্নাহ, ৬ষ্ঠ বর্ষ, ৯ম সংখ্যা)

(২) “বারাহীনে আহ্‌মদীয়ার প্রণেতা বিরুদ্ধবাদী এবং সমর্থনকারী উভয় পক্ষের অভিজ্ঞতা এবং জানা মতে মুহাম্মদীয়া শরীয়তে দৃঢ় প্রতিষ্ঠ, এবং পরহেযগার-মুত্তাকী। (ইশা’আতুস সুন্নাহ, ৬ষ্ঠ বর্ষ, ৯ম সংখ্যা)

এতদ্ব্যতীত, হযরত আহ্‌মদ (আ.) স্বয়ং বিরুদ্ধবাদীগণকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেন:
“কে আছে যে আমার জীবনীতে কোন দোষ বের করতে পারে?” (তাযকেরাতুশ শাহাদাতাঈন)
আজ পর্যন্ত কেউ এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারে নি। এটা অপ্রতিহতভাবে বিদ্যমান।
ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর সঙ্গে আলেমগণ শত্রুতা করবে

(ক) আহলে হাদীস ফিরকার বিশিষ্ট নেতা নবাব সিদ্দীক হাসান খাঁ (রহ.) প্রণীত ‘হুজাজুল কিরামাহ্’ গ্রন্থে লিখিত আছেঃ

چوں مہدی علیہ السلام مقاتله بر احیاء سنت و امانت بدعت فرماید علماء وقت کہ خو گر تقلید فقهاء و اقتداء مشالخ واباء خود باشند گویند ایں مرد خانہ انداز دین و ملت ماست و بمخالفت برخیزند بحسب عادت خود حکم بتکفیر و تضلیل وی کنند

“যখন ইমাম মাহ্‌দী সুন্নত কায়েম করার ও বেদাত মিটাবার জন্য সংগ্রাম করবেন, তখন সম-সাময়িক আলেমগণ যারা পূর্ব-পুরুষ ও পীর-পুরোহিতদের অন্ধ অনুকরণে অভ্যস্ত তারা বলবে, এ ব্যক্তি আমাদের ধর্ম নষ্ট করে ফেলছে, এ বলে তাঁর বিরোধিতা করবে এবং চিরাচরিত প্রথানুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে কুফর ও গোমরাহীর ফতওয়া দিবে।” (হুজাজুল কিরামাহ্ ফি আসারিল কিয়ামাহ্, পৃ. ২৬২)

(খ) মুজাদ্দেদ আলফেসানী হযরত আহ্‌মদ সারহিন্দি (রহ.) তাঁর গ্রন্থ মাকতুবাতে লিখেছেন: علماء ظواہر مجتہدات ارا علی نبینا علیہ السلام از کمال دقت و غموض ماخذ افکار نمایند و مخالف کتاب و سنت دانند- 66 “মাহ্‌দী (আ. ) বর্ণিত আধ্যাত্মিক সূক্ষতত্ত্বাবলী বুঝতে না পেরে বাহ্যদর্শী আলেমগণ ঐগুলিকে কিতাব ও সুন্নতের বিরুদ্ধে মনে করবে এবং অস্বীকার করবে।” (মাকতুবাতে ইমাম রাব্বানী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৫৫)

(গ) হযরত মুহীউদ্দীন ইবনে আরাবী (রা. ) লিখেন: إِذَا خَرَجَ هُذَا الْإِمَامُ الْمَهْدِيُّ فَلَيْسَ لَهُ عَدُوٌّ مُبِينٌ إِلَّا الْفُقَهَاءُ خَاصَّةً فَإِنَّمَا لَا يَبْقَىٰ لَهُمْ رِئَاسَةٌ وَلَا تَمِيزُ - “যখন ইমাম মাহ্‌দী (আ.) যাহির হবেন, মৌলবী মওলানাগণই তাঁর প্রধান শত্রু হবে। কেননা তাঁরা মনে করবে যে, তাঁকে মানলে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকবে না এবং জনসাধারণ ও তাদের মধ্যে পার্থক্য উঠে যাবে।” (ফতুহাতে মক্কিয়া, পৃ. ৩৭৩)

আমরা জানি মাওলানা মওদুদী সাহেবও তাঁর ‘সীরাতে সারওয়ারে আলম’ নামক পুস্তকের প্রথম খণ্ডের ৩৮৭ পৃষ্ঠায় ইমাম মাহ্‌দী (আ.)- এর বিরোধিতা সম্বন্ধে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন: “.....তাঁর নতুনত্বের বিরুদ্ধে মৌলভী ও সুফী সাহেবগণ হৈ চৈ শুরু করবেন।……”

এ দিক দিয়ে দেখলেও হযরত আহমদ (আ.) সত্যবাদী বলে প্রমাণিত হন। কারণ তাঁর দাবির সঙ্গে সঙ্গেই আলেমগণ তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়ান, কুফরের ফতওয়া দেন, জনগণকে উত্তেজিত করেন এবং আজ সুদীর্ঘ শতাধিক বছর পরেও বিভিন্ন আকারে বিরোধিতা অব্যাহত রয়েছে।
কৃতকার্য হওয়াই মাহ্‌দী (আ.)-এর সত্যতার প্রধান লক্ষণ

(ক) আল্লাহ্ তা’লা কুরআন করীমের সূরা আন’আমের তৃতীয় রুকু’তে বলেছেনঃ

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِآيَاتِهِ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ

“এবং ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা বড় যালেম কে, যে আল্লাহ্‌র উপর মিথ্যা আরোপ করে অথবা তাঁর নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করে? নিশ্চয় যালেমরা কখনও সফলকাম হয় না।” (সূরা আন’আম: ২২)
এখন বিচার্য বিষয় এই যে, সত্যবাদী কে, তা নিরূপন করা। এর মীমাংসা এ আয়াতে রয়েছেঃ যথা, নিশ্চয় “এরূপ অত্যাচারী কখনও কৃতকার্য হয় না।” সুতরাং এ আয়াত দ্বারা এটাই বুঝাচ্ছে যে, ইমাম মাহ্‌দী হবার মিথ্যা দাবি করে কেউ কৃতকার্য হতে পারে না। অতএব, প্রকৃত মাহ্‌দী (আ.) অস্বীকারকারীগণের বিরোধিতা সত্ত্বেও কৃতকার্য হবেন।

(খ) আল্লাহ্ তা’লা সূরা আনফালের পঞ্চম রুকু’তে বলেছেন:

لِيَهْلِكَ مَنْ هَلَكَ عَن بَيِّنَةٍ وَيَحْيَى مَنْ حَيَّ عَن بَيِّنَةٍ

“যেন তারাই ধ্বংস হয় যারা সুস্পষ্ট যুক্তি প্রমাণের ভিত্তিতে ধ্বংস হবার যোগ্য এবং তারাই টিকে থাকে যারা সুস্পষ্ট যুক্তি প্রমাণের ভিত্তিতে টিকে থাকার যোগ্য।” (সূরা আনফাল: ৪৩)
(গ) আল্লাহ্ তা’লা সূরা মায়েদার অষ্টম রুকু'তে বলেছেন:

فَإِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ

“নিশ্চয় আল্লাহ্‌র দলই এমন যে তারাই বিজয়ী হবে।” (আল মায়েদা: ৫৭)

(ঘ) আল্লাহ্ তা’লা সূরা মুজাদেলার তৃতীয় রুকু’তে বলেছেন:

أَلَا إِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُونَ

“সাবধান! নিশ্চয় শয়তানের দল ক্ষতিগ্রস্ত।” (আল মুজাদেলা: ২০)

এ সকল আয়াত অনুযায়ী যিনি ইমাম মাহ্‌দী হবার দাবি করেছেন তিনি সত্যবাদী হলে তাঁকে কৃতকার্য হতে হবে এবং তাঁর বিরুদ্ধবাদীগণকে অকৃতকার্য হতে হবে।

বস্তুতঃ খোদা তা’লার ফযলে হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.) কৃতকার্য হয়েছেন। আজ শুধু পাক-ভারত-বাংলাদেশ উপমহাদেশেই নয় বরং সমগ্র পৃথিবীতে ২০৭টি দেশে তাঁর দ্বারা ইসলাম প্রচার-কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু মুসলমানগণই নয় বরং পৃথিবীর সকল অঞ্চলে বিভিন্ন ধর্মের প্রায় ২৫ কোটি নর-নারী তাঁকে মাহ্‌দী (আ.) বলে মেনে ও গ্রহণ করে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় লাভ করেছেন এবং করছেন। বিশেষতঃ ত্রিত্ববাদের কেন্দ্র ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকার বহু স্থান এবং অস্ট্রেলিয়ায়ও আজ তাঁরই অনুগামীদের প্রচেষ্টায় ইসলামের পবিত্র আযানের ধ্বনি দৈনিক পাঁচবার ঘোষিত হচ্ছে এবং ইসলামের আধ্যাত্মিক বাহিনী উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাঁর জামা'তের প্রচেষ্টায়ই উপমহাদেশের বাইরে সহস্রাধিক মনোরম মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। তারা প্রায় ৭৫টি ভাষায় কুরআন মজীদের অনুবাদ প্রকাশ করেছে। এই জামা’ত ১৯৮৯ সনে এর শতবর্ষ পূর্তি উৎসব উপলক্ষ্যে ইতোমধ্যে ১১৫টি ভাষায় কুরআন মজীদের বিষয়-ভিত্তিক অনুবাদ প্রকাশ করেছে। এবং ২০০৮ সালের ২৭মে আহ্‌মদীয়া মুসলিম জামাতে প্রতিষ্ঠিত খেলাফতের শতবার্ষিকী অত্যন্ত শান-শওকতের সাথে উদযাপন করেছে। বাংলাদেশে এ জামা’ত প্রতিষ্ঠার শতবার্ষিকী (১৯১৩-২০১৩) উদ্যাপন করেছে ২০১৩ সালে। এ জামা'ত কর্তৃক স্থাপিত MTA-এর মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বে ইসলামের শ্বাশ্বত শান্তির বাণী অব্যাহতভাবে প্রচার করে চলেছে।
হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর কার্য

আপনারা প্রত্যেকেই জানেন, ফল দ্বারাই বৃক্ষ পরিচয় লাভ করে। অতএব, হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-কে পরীক্ষা করতে হবে তাঁর কার্য দ্বারা। যে সকল কার্য সমাধান করার জন্য তাঁর আবির্ভূত হবার কথা কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত আছে ঐ কার্যগুলি তাঁর দ্বারা সমাধান হল কিনা দেখতে হবে। পবিত্র কুরআন করীমে এবং হাদীসসমূহে মাহ্‌দী (আ.)-এর যে সকল কার্যের উল্লেখ আছে তার সারাংশ হল:

(ক) হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.) এসে ইসলামকে পুনরায় শক্তিশালী এবং মুসলমানগণকে নিরাপদ করবেন এবং তাঁর দ্বারা খিলাফত আলা মিন হাজিন নবুওয়াত অর্থাৎ নবুওয়তের পদ্ধতিতে খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ইসলামের বিশ্ব বিজয় হবে।

(খ) প্রচলিত ইসলামের সংস্কার সাধন করে তিনি হযরত রসূলে করীম (সা.) কর্তৃক প্রবর্তিত মৌলিক ইসলাম তথা প্রকৃত ইসলামকে দুনিয়ার সামনে পেশ করবেন। তিনি অকাট্য প্রমাণ এবং ঐশী নিদর্শনসমূহের দ্বারা সারা বিশ্বে ইসলামের সত্যতা প্রচার এবং প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করবেন, যুদ্ধ-বিগ্রহ ও বল প্রয়োগের দ্বারা নয়।

(গ) সপ্তর্ষি মণ্ডলে উত্থিত ঈমানকে তিনি পৃথিবীতে পুনরায় ফিরিয়ে আনবেন এবং মহৎ চরিত্র ও ঐশী নিদর্শনাবলী দ্বারা নাস্তিকতার মরিচা ধৌত করে অন্তরে তৌহীদ ও আল্লাহ্‌র প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করবেন এবং ঈমানকে সঞ্জীবিত করে সাহাবাগণের ন্যায় পবিত্র ও প্রকৃত মু’মেনীনদের জামা'ত গঠন করবেন।

(ঘ) তিনি ক্রুশ ধ্বংস করবেন অর্থাৎ খ্রিষ্টীয় মতবাদ খণ্ডন করবেন।

অতএব, ঐ মহাপুরুষই ইমাম মাহ্‌দী (আ.) যিনি হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীর শিরোভাগে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মত হতে তাঁর রঙ্গে রঙ্গিন হয়ে তাঁর গোলাম হিসেবে তাঁরই আরদ্ধ কাজ সম্পন্ন করার জন্য আবির্ভূত হয়েছেন এবং কুরআন ও হাদীস মতে, উল্লিখিত তাঁর সমস্ত কর্তব্য সমাধান করেছেন এবং তাঁর ইন্তেকালের পরে পরেই তাঁর প্রবর্তিত আত্মদীয়া মুসলিম জামা’তে প্রতিশ্রুত খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং খলীফাগণের নেতৃত্বাধীনে এ জামা’তের দ্বারা ইসলামের প্রাধান্য বিস্তারের অভিযান অব্যাহত গতিতে এগিয়ে চলছে! সেদিন বেশী দূরে নয় যখন আহ্‌মদীয়া মুসলিম জামা’তের প্রচেষ্টার ফলে দুনিয়াতে ধর্ম বলতে কেবলমাত্র ইসলামকেই বুঝাবে এবং সমগ্র দুনিয়ার একজনই নেতা হবেন সৈয়্যদনা হযরত মুহাম্মদ (সা.) এবং ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্’ কলেমা খচিত ঝাণ্ডাই সারা পৃথিবীতে মহা গৌরবে উড্ডীন হবে।
হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর মৃত্যুতে তৎকালীন খ্যাতনামা নেতাদের অভিমত

(ক) পাঞ্জাবের ‘উকিল’ পত্রিকায় প্রকাশিত মাওলানা আবুল কালাম আযাদের অভিমত:

“তিনি এক অতি মহান ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর লেখা এবং কথার মধ্যে জাদু ছিল। তাঁর মস্তিষ্ক মূর্তিমান বিস্ময় ছিল। তাঁর দৃষ্টি ছিল প্রলয়-স্বরূপ এবং কণ্ঠস্বর কিয়ামত-সদৃশ্য। তাঁর অঙ্গুলি সংকেতে বিপ্লব উপস্থিত হত। তাঁর দু'টি মুষ্টি বিজলীর ব্যাটারীর মত ছিল। তিনি ত্রিশ বছর যাবত ধর্ম জগতে ভূমিকম্প ও তুফানের ন্যায় বিরাজমান ছিলেন। তিনি প্রলয়-বিষাণ হয়ে নিদ্রিতগণকে জাগ্রত করতেন। তিনি দুনিয়া হতে বিদায় গ্রহণ করেছেন।

ইসলামের বিরুদ্ধবাদীদের মোকাবেলায় তিনি যেরূপ বিজয়ী জেনারেলের কর্তব্য সম্পাদন করেছেন, তাতে আমরা এ কথা স্বীকার করতে বাধ্য, যে মহান আন্দোলন আমাদের শত্রুগণকে দীর্ঘকাল যাবত বিপর্যস্ত করে রেখেছিল তা যেন ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকে।

খ্রিষ্টান এবং হিন্দু আর্যগণের বিরুদ্ধে মির্যা সাহেব যে সকল পুস্তক রচনা করেছেন, তা সর্বসাধারণের মধ্যে সমাদর লাভ করেছে”। (অমৃতসর হতে প্রকাশিত ১৯০৮ সালের ২০ জুন তারিখে ১ ‘উকিল’ পত্রিকা দ্রঃ)

(খ) দিল্লীর ‘কার্জন গেজেট’ পত্রিকার সম্পাদক মির্যা হায়রাত দেহলভী লিখেছেন :

“আর্যসমাজী ও খ্রিষ্টানগণের মোকাবেলায় মরহুম হযরত মির্যা সাহেব যে ইসলামী খেদমত করেছেন, তা বস্তুতঃই অত্যন্ত প্রশংসাযোগ্য। তিনি মুনাযেরার (ধর্মীয় বিতর্কের) রূপকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছেন এবং হিন্দুস্তানে এক নতুন সাহিত্যের বুনিয়াদ কায়েম করেছেন। একজন মুসলমান হিসেবে এবং গবেষণাকারীরূপে আমি এটা স্বীকার করছি যে, কোন বড় হতে বড় আর্যসমাজী অথবা পাদ্রীর এ ক্ষমতা ছিল না যে, মরহুমের মোকাবেলায় তার মুখ খুলে। যদিও মরহুম পাঞ্জাবী ছিলেন কিন্তু তাঁর কলমে এরূপ অপূর্ব শক্তি ছিল যে, আজ সারা পাঞ্জাবে নয় বরং সমগ্র হিন্দুস্তানে তাঁর পর্যায়ের শক্তিশালী লেখক নেই। তাঁর রচনা নিজ শানে সম্পূর্ণ অপূর্ব এবং বস্তুতঃ তাঁর কোন কোন লেখা পড়লে আত্মবিভোর হতে হয়। তিনি ধ্বংসের ভবিষ্যদ্বাণী, বিরুদ্ধাচারণ এবং কু-সমালোচনার অগ্নিসাগর পার হয়ে আপন পথ পরিষ্কার করেছিলেন এবং উন্নতির উচ্চ মার্গে উপনীত হয়েছিলেন।” (কার্জন গেজেট, দিল্লী, ১লা জুন, ১৯০৮)

আপনার উত্তর যোগ করুন

আপনার উত্তরটি একজন এডমিন রিভিউ করে অনুমোদন করবেন।