মুসলিম জাহানের দুঃখ-কষ্ট এবং পাকিস্তানের তথাকথিত মৌলবীরা
ইহাতে বিজ্ঞ বিচারকগণ এই প্রশ্ন করিয়াছেন যে, যদি এই কথা ঠিক হইবে তাহা হইলে বলুন, ঐ সকল গরীব মুসলমান, যাহারা ভারতে বাস করিতেছে, যদি ভারত সরকার তাহাদের সহিত এই আচরণই করে এবং মনুর বিধান তাহাদের উপর প্রয়োগ করার চেষ্টা করে, তাহা হইলে আপনাদের মতে কি ভারত সরকারের এইরূপ করিবার অধিকার থাকিবে? ইহাতে জমিয়তুল উলামায়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আহমেদ কাদরী সাহেব এই উত্তর দিয়াছিলেন:-
“হিন্দুরা যাহারা ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাহাদের হিন্দু ধর্মের অধীনে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করার অধিকার আছে এবং যদি এই শাসনব্যবস্থায় মনুশাস্ত্রের অধীনে মুসলমানদের সহিত ম্লেচ্ছ বা শূদ্রের মত আচরণ করা হয়, তাহা হইলে ইহাতে আমার কোন আপত্তি থাকিবে না।” (রিপোর্ট, পৃষ্ঠা–২৪৫)
ইহার অর্থ হইল, ভারতবর্ষে মুসলমানদিগকে পাইকারীভাবে হত্যা করা হইলে বা প্যালেস্টাইনে মুসলমানদিগকে বধ করা হইলে, বা পৃথিবীর অন্য কোন দেশে মুসলমানদের উপর কিয়ামত সৃষ্টি করা হইলে মুসলমানরূপে কথিত এই সকল মৌলবীর কণ্ঠ হইতে আপনারা এইরূপ কোন কথা শুনিবেন না, যাহাতে সমবেদনা প্রকাশ করাতো দূরের কথা, দুঃখের সামান্য কোন অনুভূতিও প্রকাশিত হয়। এই সকল ব্যক্তিরা কখনো একটি টু-শব্দও করে নাই যে, অন্যান্য দেশে মুসলমানদের দুঃখ-কষ্টে তাহারা কোন বেদনা অনুভব করিয়াছে। ভারতে মুসলমানদের সহিত যাহা কিছু হইয়া থাকে, তাহাতেও ইহারা নির্বিকার। কেননা, স্বয়ং ইহারা স্বীকার করে যে, ইহাতে তাহাদের কিছু যায় আসে না। যখন ইহারা পাকিস্তানে অমুসলমানদের সহিত এই আচরণ করিতেছে, তখন ইহা স্বাভাবিক যে অমুসলমানদেরও এই অধিকার রহিয়াছে যে, তাহারা নিজেদের দেশে মুসলমানদের উপর যুলুম-নির্যাতন করিবে। অতএব যেখানে তাহাদের জোর চলিবে সেখানে তাহারা জোর খাটাইবে এবং যেখানে হিন্দুদের মুসলমানদের বিরুদ্ধে জোর চলিবে, সেখানে নির্দিধায় তাহাদের জোর চলিবে। ইহাতে তাহাদের কোন পরোয়াই নাই।
মৌলানা মৌদূদী সাহেবকেও আদালতে এই প্রশ্নই করা হইয়াছিল। ইহার উত্তরে তিনি বলিয়াছেন:-
“নিশ্চয় এই ব্যাপারে আমার কোন আপত্তি থাকিবে না; যদি সরকারের এই ব্যবস্থায় মুসলমানদের সহিত ম্লেচ্ছ ও শূদ্রের মত আচরণ করা হয় এবং তাহাদের উপর মনুর আইন প্রয়োগ করা হয় এবং তাহাদিগকে সরকারী চাকুরীতে অংশ দেওয়া না হয় ও তাহাদিগকে আদৌ কোন নাগরিক অধিকার দেওয়া না হয়।” (রিপোর্ট, পৃষ্ঠা–২৪৫)
“হিন্দুরা যাহারা ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাহাদের হিন্দু ধর্মের অধীনে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করার অধিকার আছে এবং যদি এই শাসনব্যবস্থায় মনুশাস্ত্রের অধীনে মুসলমানদের সহিত ম্লেচ্ছ বা শূদ্রের মত আচরণ করা হয়, তাহা হইলে ইহাতে আমার কোন আপত্তি থাকিবে না।” (রিপোর্ট, পৃষ্ঠা–২৪৫)
ইহার অর্থ হইল, ভারতবর্ষে মুসলমানদিগকে পাইকারীভাবে হত্যা করা হইলে বা প্যালেস্টাইনে মুসলমানদিগকে বধ করা হইলে, বা পৃথিবীর অন্য কোন দেশে মুসলমানদের উপর কিয়ামত সৃষ্টি করা হইলে মুসলমানরূপে কথিত এই সকল মৌলবীর কণ্ঠ হইতে আপনারা এইরূপ কোন কথা শুনিবেন না, যাহাতে সমবেদনা প্রকাশ করাতো দূরের কথা, দুঃখের সামান্য কোন অনুভূতিও প্রকাশিত হয়। এই সকল ব্যক্তিরা কখনো একটি টু-শব্দও করে নাই যে, অন্যান্য দেশে মুসলমানদের দুঃখ-কষ্টে তাহারা কোন বেদনা অনুভব করিয়াছে। ভারতে মুসলমানদের সহিত যাহা কিছু হইয়া থাকে, তাহাতেও ইহারা নির্বিকার। কেননা, স্বয়ং ইহারা স্বীকার করে যে, ইহাতে তাহাদের কিছু যায় আসে না। যখন ইহারা পাকিস্তানে অমুসলমানদের সহিত এই আচরণ করিতেছে, তখন ইহা স্বাভাবিক যে অমুসলমানদেরও এই অধিকার রহিয়াছে যে, তাহারা নিজেদের দেশে মুসলমানদের উপর যুলুম-নির্যাতন করিবে। অতএব যেখানে তাহাদের জোর চলিবে সেখানে তাহারা জোর খাটাইবে এবং যেখানে হিন্দুদের মুসলমানদের বিরুদ্ধে জোর চলিবে, সেখানে নির্দিধায় তাহাদের জোর চলিবে। ইহাতে তাহাদের কোন পরোয়াই নাই।
মৌলানা মৌদূদী সাহেবকেও আদালতে এই প্রশ্নই করা হইয়াছিল। ইহার উত্তরে তিনি বলিয়াছেন:-
“নিশ্চয় এই ব্যাপারে আমার কোন আপত্তি থাকিবে না; যদি সরকারের এই ব্যবস্থায় মুসলমানদের সহিত ম্লেচ্ছ ও শূদ্রের মত আচরণ করা হয় এবং তাহাদের উপর মনুর আইন প্রয়োগ করা হয় এবং তাহাদিগকে সরকারী চাকুরীতে অংশ দেওয়া না হয় ও তাহাদিগকে আদৌ কোন নাগরিক অধিকার দেওয়া না হয়।” (রিপোর্ট, পৃষ্ঠা–২৪৫)
আপনার উত্তর যোগ করুন
আপনার উত্তরটি একজন এডমিন রিভিউ করে অনুমোদন করবেন।