আহ্মদীয়াত কি?
আহমদীয়াত কোন রাজনৈতিক সংগঠন নয় কিংবা কোন জাগতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয় নি বরং আল্লাহতা’লার নির্দেশ অনুযায়ী হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আঃ) (১৮৩৫-১৯০৮) ১৮৮৯ সালের ২৩শে মার্চ ভারতের পাঞ্জাবে অবস্থিত লুধিয়ানা নামক স্থানে একটি জামাতের ভিত্তি রচনা করেছিলেন। যার নাম পরবর্তীতে “আহমদীয়া মুসলিম জামাত” রাখা হয়। এই জামাত প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হল ইসলাম ধর্মের সৌন্দর্যকে উল্লেখযোগ্যভাবে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরা এবং সর্বসাধারণকে এ কথা বোঝানো যে, ইসলাম হল শান্তি ও নিরাপত্তার ধর্ম।
পাঠকগণ! আল্লাহতা’লা আহমদীয়াতকে বর্তমান যুগে এই উদ্দেশ্য পূরণের নিমিত্তে প্রতিষ্ঠা করেছেন যে, মোহাম্মদ মোস্তাফা (সাঃ) প্রবর্তিত ধর্মের প্রকৃত শিক্ষাবলী পৃথিবীর সামনে উপস্থাপন করা হোক. আর এই ধর্মের মান্যকারীদের ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা বিশ্বাসসমূহকে ইসলামী শিক্ষাবলীর আলোকেই খণ্ডন করা হোক। ইসলামের অনুপম সৌন্দর্য ও অনিন্দ্যসুন্দর শিক্ষাবলী পৃথিবীর সামনে তুলে ধরা হোক। আর ইসলামের প্রতি জেহাদের নামে খুন ও যুদ্ধ আরোপকদের মিথ্যা দৃষ্টিভঙ্গীগুলোকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে এটা প্রমাণ করা হোক যে, ইসলাম একটি নিরাপত্তা প্রদানকারী ধর্ম এবং এর প্রতিষ্ঠাতা হযরত মোহাম্মদ মোস্তাফা (সাঃ) সমগ্র মানব জাতির জন্য করুণার এক মূর্ত প্রতীক।
মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসের অধঃপতনের ব্যাপারে সত্য সংবাদ প্রদানকারী সৈয়দনা হযরত মোহাম্মদ মোস্তাফা (সাঃ) বহু পূর্বে এক সতর্কতামূলক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, মানুষের উপর এমনও একটা যুগ আসবে যখন ইসলাম কেবলমাত্র নামসর্বস্ব হয়ে যাবে এবং তার প্রকৃত শিক্ষাবলীর উপর আমলকে কার্যতঃ ত্যাগ করে দেওয়া হবে।” (মিশকাত, কিতাবুল ইল্ম)।
আর সেই সঙ্গে এই শুভ সংবাদও প্রদান করেছিলেন যে যদি কখনও ঈমান সপ্তর্ষি মণ্ডলেও চলে যায় তখন প্রতিশ্রুত মসীহ ও মাহদী (আঃ) তা পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে এসে মানুষের হৃদয় ও মনে সংস্থাপিত করবেন।
আহমদীয়া মুসলিম জামাতের ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী আল্লাহতা’লা হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আঃ) কে প্রতিশ্রুত মসীহ ও মাহদী রূপে প্রেরণ করেছেন। তিনি ঘোষণা করেন:-
১) “খোদাতা'লা আমাকে প্রত্যাদিষ্ট করেছেন যেন আমি সেই সমস্ত ভুল-ভ্রান্তিসমূহকে দূর করে প্রকৃত ইসলামকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি।” (আহমদী ও গায়ের আহমদীতে পার্থক্য, পৃষ্ঠা: ১৬)।
২) “যে কাজের জন্য আমি প্রত্যাদিষ্ট হয়েছি তা হলো, আমি যেন খোদা এবং তার সৃষ্টির মাঝে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে পঙ্কিলতার সৃষ্টি হয়েছে তা দূরীভূত করে ভালোবাসা এবং আন্তরিকতার সম্পর্ক স্থাপন করি এবং সত্যের প্রকাশ দ্বারা ধর্মীয় যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করি। যে সব ধর্মীয় সত্য দৃষ্টির আড়ালে বিলুপ্ত সেগুলোকে যেন পুনরায় প্রকাশ করি এবং কু-প্রবৃত্তির তলায় চাপা পড়া আধ্যাত্মিকতাকে যেন জগতে উপস্থাপন করি। খোদার শক্তি যা তাঁর প্রতি মনোনিবেশ অথবা প্রার্থনার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে প্রকাশিত হয় তা কেবল কথায় নয় বরং বাস্তবরূপে এর অবস্থা যেন বর্ণনা করি।” (লেকচার লাহোর, পৃষ্ঠা: ৩৪, প্রথম সংস্করণ)।
আহমদীয়াত (অর্থাৎ প্রকৃত ইসলাম) হলো সেই আধ্যাত্মিক প্রস্রবণ যা আল্লাহতা’লা বর্তমান যুগে মানব জাতির জাগতিক ও আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতার জন্য জারি করেছেন। আহমদীয়া মুসলিম জামাতের পবিত্র প্রতিষ্ঠাতা এই প্রস্রবণ থেকে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য দশটি শর্তের ঘোষণা করে বলেছেন যে, .....(শর্তসমূহের) উপর আমল করে মানুষ শুধু নিজ ইহজগতকেই পাপ থেকে পবিত্র করতে সক্ষম হবে না বরং আল্লাহতা’লার প্রিয় পাত্র হরে উঠে তাঁর ভালোবাসা অর্জনের মাধ্যমে নিজের পরবর্তী জীবনকেও সমৃদ্ধশালী করে তুলতে সক্ষম হবে। স্বল্প পরিসরের কারণে বয়াতের এই শর্তাবলী যার উপর আহমদীয়াতের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত তা বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তন্মধ্যে মাত্র চারটি এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে।
১) বয়াত গ্রহণকারী সর্বান্তঃকরণে অঙ্গীকার করবে যে, এখন হতে কবরে যাওয়া পর্যন্ত শির্ক (খোদাতা'লার সঙ্গে অংশীবাদিতা) হতে পবিত্র থাকবো।
২) সুখে-দুঃখে, সম্পদে-বিপদে সকল অবস্থায় খোদাতা’লার সঙ্গে বিশ্বস্ততা রক্ষা করবো। সকল অবস্থায় তাঁর ফায়সালায় সন্তুষ্ট থাকবো। তাঁর পথে প্রত্যেক লাঞ্ছনা, গঞ্জনা ও দুঃখ কষ্ট বরণ করে নিতে প্রস্তুত থাকবো এবং সর্বাবস্থায় তাঁর মীমাংসা মেনে নেব। কোন বিপদ উপস্থিত হলে পশ্চাদপদ হবো না বরং সম্মুখে অগ্রসর হবো।
৩) আল্লাহতা’লার প্রীতিলাভের উদ্দেশ্যে তাঁর সৃষ্ট জীবের সেবায় যত্নবান থাকবো এবং খোদার দেওয়া নিজ শক্তি ও সম্পদ যথাসাধ্য মানব কল্যাণে নিয়োজিত করবো।
৪) আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ধর্মানুমোদিত সকল আদেশ পালন করার প্রতিজ্ঞায় এই অধমের (অর্থাৎ হযরত মসীহ মাওউদ (আঃ) এর) সঙ্গে যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হলাম, জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাতে অটল থাকবো। এই ভ্রাতৃত্ব বন্ধন এত গভীর ও দৃঢ় হবে যে, দুনিয়ার কোন প্রকার আত্মীয় সম্পর্কের মধ্যে এর তুলনা পাওয়া যাবে না। (ইশ্তেহার তকমীল তবলীগ, ১২ই জানুয়ারী ১৮৮৯)।
পাঠক মণ্ডলী! আহমদীয়াত (অর্থাৎ প্রকৃত ইসলাম) একদিকে যেমন মানুষকে তার প্রভুর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করার যথাসাধ্য প্রচেষ্টা করে, অপর দিকে তেমন মানুষকে প্রত্যেকের সঙ্গে সম্প্রীতি স্থাপনের নির্দেশ দান করে। আহমদীয়া মুসলিম জামাতের পবিত্র প্রতিষ্ঠাতা এবং তাঁর খলিফাগণ নিজেদের শিক্ষাবলীর আলোকে লক্ষ লক্ষ উদ্ভ্রান্ত মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করে নিজ প্রভুর সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এর ফলশ্রুতিতে তারা আল্লাহর নৈকট্যের অনুভূতি লাভ করেছে। আহমদীয়া মুসলিম জামাতের প্রতিষ্ঠাতা বলেন:-
১) আমাদের নীতি হল এই যে, সমগ্র মানব জাতির প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন কর। যদি কেউ তার প্রতিবেশী কোন হিন্দুর বাড়ীতে আগুন লাগতে দেখা সত্ত্বেও না ওঠে যাতে আগুন নেভানোর কাজে সে তাকে সাহায্য করতে পারে, তবে আমি সত্য সত্যই বলছি যে, এমন ব্যক্তি আমার (জামাত) মধ্য হতে নয়। কিংবা আমার অনুরাগীদের মধ্যে কেউ যদি দেখে যে কোন খ্রীষ্টানকে হত্যা করা হচ্ছে আর সে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে না এখন আমি তোমাদের সত্য সত্যই বলছি যে, সে আমাদের মধ্য হতে নয়।” (রূহানী খাযায়েন, খণ্ড: ১২, সিরাজে মুনির পৃষ্ঠা: ২৪)।
২) আমি সমস্ত মুসলমান, খ্রীষ্টান এবং হিন্দু ও আর্যদের কাছে এ কথা প্রকাশ করতে চাই যে, পৃথিবীর কেউই আমার শত্রু নয়। আমি মানব জাতিকে এমনই ভালোবাসি যেমন একজন করুণাময়ী মা তার সন্তানদের ভালবাসে। বরং তার চেয়েও বেশী। আমি শুধুমাত্র সেই সব ভ্রান্ত বিশ্বাসসমূহের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করি যার দ্বারা সত্যের মৃত্যু হয়। মানবজাতির প্রতি সহানুভূতি আমার নৈতিক কর্তব্য এবং মিথ্যা, অংশীবাদিতা, অত্যাচার ও প্রত্যেক নোংরা কাজ, অন্যায়, অসৎ আচরণ ইত্যাদির প্রতি ঘৃণা প্রদান আমার নীতি।” (রূহানী খাযায়েন ১৭তম খণ্ড, আরবাঈন নং-১, পৃষ্ঠা: ৩৪৪)।
আহমদীয়া মুসলিম জামাতের দ্বিতীয় খলিফা (ইমাম) হযরত মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ আহমদ সাহেব (রাঃ) মানবজাতির প্রতি নিজ ভালোবাসার প্রকাশ করতে গিয়ে একটি কবিতায় বলেন:-
“তোমাকে আমি বলব কি - আমি যে কি চাই
বান্দা আমি ঠিকই, কিন্তু খোদাকে আমি পেতে চাই
নেই তো শত্রুতা আমার কারও সঙ্গে
পৃথিবীবাসী সবার আমি ভালো দেখতে চাই।”
আহমদীয়া মুসলিম জামাতের তৃতীয় খলিফা (ইমাম) হযরত মির্যা নাসের আহমদ সাহেব (রহঃ) মানব জাতির প্রতি নিজ ভালোবাসার প্রকাশ জামাতকে এই স্লোগানের মাধ্যমে দিয়েছেন যে, LOVE FOR ALL HATRED FOR NONE অর্থাৎ “ভালোবাসা সবার তরে, ঘৃণা নয় কা’রো পরে”।
আহমদীয়া জামাতের বর্তমান ইমাম হযরত মির্যা মাসরূর আহমদ সাহেব (আইঃ) জামাতকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন যে, :- LOVE FOR HONESTY AND HATRED FOR DISHONESTY অর্থাৎ “ভালোবাসা সততার তরে এবং ঘৃণা শুধু অসৎ এর পরে”। এই প্রবন্ধের শেষ ভাগে এসে যারা আহমদীয়া মুসলিম জামাতের সদস্য নয় সেই সমস্ত মুসলমানদের নিকট আবেদন করা হচ্ছে যে, ইসলাম ধর্ম নিজ অনুসারীদের অপরাপর ধর্মানুরাগীদের প্রতি ভালোবাসার, সহানুভূতির এবং উত্তম আচার ব্যবহারের শিক্ষা দেয়। এই আবেগকে প্রকাশ করা বর্তমান যুগে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের দাবী ও প্রয়োজন এখন অন্যান্যদের হৃদয়ে ইসলাম সম্পর্কে (সৃষ্ট) উদ্ভূত ভুল ধারণাগুলোকে নিজেদের উত্তম চরিত্র দ্বারা দূর করা। যদি মুসলমানরা আজ এমনটি না করে তবে সচেতনে অথবা অবচেতনে তারা অন্যান্যদেরকে ইসলামের শান্তিপূর্ণ শিক্ষাবলী থেকে দূরে নিয়ে যাওয়ার কারণ সাব্যস্ত হয়ে নিজ সৃষ্টিকর্তার ক্রোধের কারণ হয়ে উঠবে। আল্লাহ করুন যেন এমনটা না হয়।
বর্তমান যুগে আহমদীয়া মুসলিম জামাতের পবিত্র প্রতিষ্ঠাতা হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আঃ)-ই ইসলামকে পুনরায় তার স্বমহিমায় উপস্থাপন করেছেন। আপনি জামাতের পত্র-পত্রিকা অধ্যয়ন করুন। আমাদের বিশ্বাস যে এই সেই ধর্ম যার উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে মানুষ খুব সহজেই নিজ সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য ও ভালোবাসা অর্জন করতে পারে এবং নিজ জীবনের উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হতে পারে। দোয়া করি যেন আল্লাহতা’লা আমাদের সবাইকে ইসলামের সত্যতাকে বুঝে নিজ সৃষ্টিকর্তাকে মান্য করার এবং সৃষ্টের প্রতি সহানুভূতি প্রদানের সৌভাগ্য প্রদান করুন। আমিন।
পাঠকগণ! আল্লাহতা’লা আহমদীয়াতকে বর্তমান যুগে এই উদ্দেশ্য পূরণের নিমিত্তে প্রতিষ্ঠা করেছেন যে, মোহাম্মদ মোস্তাফা (সাঃ) প্রবর্তিত ধর্মের প্রকৃত শিক্ষাবলী পৃথিবীর সামনে উপস্থাপন করা হোক. আর এই ধর্মের মান্যকারীদের ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা বিশ্বাসসমূহকে ইসলামী শিক্ষাবলীর আলোকেই খণ্ডন করা হোক। ইসলামের অনুপম সৌন্দর্য ও অনিন্দ্যসুন্দর শিক্ষাবলী পৃথিবীর সামনে তুলে ধরা হোক। আর ইসলামের প্রতি জেহাদের নামে খুন ও যুদ্ধ আরোপকদের মিথ্যা দৃষ্টিভঙ্গীগুলোকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে এটা প্রমাণ করা হোক যে, ইসলাম একটি নিরাপত্তা প্রদানকারী ধর্ম এবং এর প্রতিষ্ঠাতা হযরত মোহাম্মদ মোস্তাফা (সাঃ) সমগ্র মানব জাতির জন্য করুণার এক মূর্ত প্রতীক।
মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসের অধঃপতনের ব্যাপারে সত্য সংবাদ প্রদানকারী সৈয়দনা হযরত মোহাম্মদ মোস্তাফা (সাঃ) বহু পূর্বে এক সতর্কতামূলক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, মানুষের উপর এমনও একটা যুগ আসবে যখন ইসলাম কেবলমাত্র নামসর্বস্ব হয়ে যাবে এবং তার প্রকৃত শিক্ষাবলীর উপর আমলকে কার্যতঃ ত্যাগ করে দেওয়া হবে।” (মিশকাত, কিতাবুল ইল্ম)।
আর সেই সঙ্গে এই শুভ সংবাদও প্রদান করেছিলেন যে যদি কখনও ঈমান সপ্তর্ষি মণ্ডলেও চলে যায় তখন প্রতিশ্রুত মসীহ ও মাহদী (আঃ) তা পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে এসে মানুষের হৃদয় ও মনে সংস্থাপিত করবেন।
আহমদীয়া মুসলিম জামাতের ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী আল্লাহতা’লা হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আঃ) কে প্রতিশ্রুত মসীহ ও মাহদী রূপে প্রেরণ করেছেন। তিনি ঘোষণা করেন:-
১) “খোদাতা'লা আমাকে প্রত্যাদিষ্ট করেছেন যেন আমি সেই সমস্ত ভুল-ভ্রান্তিসমূহকে দূর করে প্রকৃত ইসলামকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি।” (আহমদী ও গায়ের আহমদীতে পার্থক্য, পৃষ্ঠা: ১৬)।
২) “যে কাজের জন্য আমি প্রত্যাদিষ্ট হয়েছি তা হলো, আমি যেন খোদা এবং তার সৃষ্টির মাঝে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে পঙ্কিলতার সৃষ্টি হয়েছে তা দূরীভূত করে ভালোবাসা এবং আন্তরিকতার সম্পর্ক স্থাপন করি এবং সত্যের প্রকাশ দ্বারা ধর্মীয় যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করি। যে সব ধর্মীয় সত্য দৃষ্টির আড়ালে বিলুপ্ত সেগুলোকে যেন পুনরায় প্রকাশ করি এবং কু-প্রবৃত্তির তলায় চাপা পড়া আধ্যাত্মিকতাকে যেন জগতে উপস্থাপন করি। খোদার শক্তি যা তাঁর প্রতি মনোনিবেশ অথবা প্রার্থনার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে প্রকাশিত হয় তা কেবল কথায় নয় বরং বাস্তবরূপে এর অবস্থা যেন বর্ণনা করি।” (লেকচার লাহোর, পৃষ্ঠা: ৩৪, প্রথম সংস্করণ)।
আহমদীয়াত (অর্থাৎ প্রকৃত ইসলাম) হলো সেই আধ্যাত্মিক প্রস্রবণ যা আল্লাহতা’লা বর্তমান যুগে মানব জাতির জাগতিক ও আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতার জন্য জারি করেছেন। আহমদীয়া মুসলিম জামাতের পবিত্র প্রতিষ্ঠাতা এই প্রস্রবণ থেকে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য দশটি শর্তের ঘোষণা করে বলেছেন যে, .....(শর্তসমূহের) উপর আমল করে মানুষ শুধু নিজ ইহজগতকেই পাপ থেকে পবিত্র করতে সক্ষম হবে না বরং আল্লাহতা’লার প্রিয় পাত্র হরে উঠে তাঁর ভালোবাসা অর্জনের মাধ্যমে নিজের পরবর্তী জীবনকেও সমৃদ্ধশালী করে তুলতে সক্ষম হবে। স্বল্প পরিসরের কারণে বয়াতের এই শর্তাবলী যার উপর আহমদীয়াতের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত তা বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তন্মধ্যে মাত্র চারটি এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে।
১) বয়াত গ্রহণকারী সর্বান্তঃকরণে অঙ্গীকার করবে যে, এখন হতে কবরে যাওয়া পর্যন্ত শির্ক (খোদাতা'লার সঙ্গে অংশীবাদিতা) হতে পবিত্র থাকবো।
২) সুখে-দুঃখে, সম্পদে-বিপদে সকল অবস্থায় খোদাতা’লার সঙ্গে বিশ্বস্ততা রক্ষা করবো। সকল অবস্থায় তাঁর ফায়সালায় সন্তুষ্ট থাকবো। তাঁর পথে প্রত্যেক লাঞ্ছনা, গঞ্জনা ও দুঃখ কষ্ট বরণ করে নিতে প্রস্তুত থাকবো এবং সর্বাবস্থায় তাঁর মীমাংসা মেনে নেব। কোন বিপদ উপস্থিত হলে পশ্চাদপদ হবো না বরং সম্মুখে অগ্রসর হবো।
৩) আল্লাহতা’লার প্রীতিলাভের উদ্দেশ্যে তাঁর সৃষ্ট জীবের সেবায় যত্নবান থাকবো এবং খোদার দেওয়া নিজ শক্তি ও সম্পদ যথাসাধ্য মানব কল্যাণে নিয়োজিত করবো।
৪) আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ধর্মানুমোদিত সকল আদেশ পালন করার প্রতিজ্ঞায় এই অধমের (অর্থাৎ হযরত মসীহ মাওউদ (আঃ) এর) সঙ্গে যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হলাম, জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাতে অটল থাকবো। এই ভ্রাতৃত্ব বন্ধন এত গভীর ও দৃঢ় হবে যে, দুনিয়ার কোন প্রকার আত্মীয় সম্পর্কের মধ্যে এর তুলনা পাওয়া যাবে না। (ইশ্তেহার তকমীল তবলীগ, ১২ই জানুয়ারী ১৮৮৯)।
পাঠক মণ্ডলী! আহমদীয়াত (অর্থাৎ প্রকৃত ইসলাম) একদিকে যেমন মানুষকে তার প্রভুর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করার যথাসাধ্য প্রচেষ্টা করে, অপর দিকে তেমন মানুষকে প্রত্যেকের সঙ্গে সম্প্রীতি স্থাপনের নির্দেশ দান করে। আহমদীয়া মুসলিম জামাতের পবিত্র প্রতিষ্ঠাতা এবং তাঁর খলিফাগণ নিজেদের শিক্ষাবলীর আলোকে লক্ষ লক্ষ উদ্ভ্রান্ত মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করে নিজ প্রভুর সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এর ফলশ্রুতিতে তারা আল্লাহর নৈকট্যের অনুভূতি লাভ করেছে। আহমদীয়া মুসলিম জামাতের প্রতিষ্ঠাতা বলেন:-
১) আমাদের নীতি হল এই যে, সমগ্র মানব জাতির প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন কর। যদি কেউ তার প্রতিবেশী কোন হিন্দুর বাড়ীতে আগুন লাগতে দেখা সত্ত্বেও না ওঠে যাতে আগুন নেভানোর কাজে সে তাকে সাহায্য করতে পারে, তবে আমি সত্য সত্যই বলছি যে, এমন ব্যক্তি আমার (জামাত) মধ্য হতে নয়। কিংবা আমার অনুরাগীদের মধ্যে কেউ যদি দেখে যে কোন খ্রীষ্টানকে হত্যা করা হচ্ছে আর সে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে না এখন আমি তোমাদের সত্য সত্যই বলছি যে, সে আমাদের মধ্য হতে নয়।” (রূহানী খাযায়েন, খণ্ড: ১২, সিরাজে মুনির পৃষ্ঠা: ২৪)।
২) আমি সমস্ত মুসলমান, খ্রীষ্টান এবং হিন্দু ও আর্যদের কাছে এ কথা প্রকাশ করতে চাই যে, পৃথিবীর কেউই আমার শত্রু নয়। আমি মানব জাতিকে এমনই ভালোবাসি যেমন একজন করুণাময়ী মা তার সন্তানদের ভালবাসে। বরং তার চেয়েও বেশী। আমি শুধুমাত্র সেই সব ভ্রান্ত বিশ্বাসসমূহের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করি যার দ্বারা সত্যের মৃত্যু হয়। মানবজাতির প্রতি সহানুভূতি আমার নৈতিক কর্তব্য এবং মিথ্যা, অংশীবাদিতা, অত্যাচার ও প্রত্যেক নোংরা কাজ, অন্যায়, অসৎ আচরণ ইত্যাদির প্রতি ঘৃণা প্রদান আমার নীতি।” (রূহানী খাযায়েন ১৭তম খণ্ড, আরবাঈন নং-১, পৃষ্ঠা: ৩৪৪)।
আহমদীয়া মুসলিম জামাতের দ্বিতীয় খলিফা (ইমাম) হযরত মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ আহমদ সাহেব (রাঃ) মানবজাতির প্রতি নিজ ভালোবাসার প্রকাশ করতে গিয়ে একটি কবিতায় বলেন:-
“তোমাকে আমি বলব কি - আমি যে কি চাই
বান্দা আমি ঠিকই, কিন্তু খোদাকে আমি পেতে চাই
নেই তো শত্রুতা আমার কারও সঙ্গে
পৃথিবীবাসী সবার আমি ভালো দেখতে চাই।”
আহমদীয়া মুসলিম জামাতের তৃতীয় খলিফা (ইমাম) হযরত মির্যা নাসের আহমদ সাহেব (রহঃ) মানব জাতির প্রতি নিজ ভালোবাসার প্রকাশ জামাতকে এই স্লোগানের মাধ্যমে দিয়েছেন যে, LOVE FOR ALL HATRED FOR NONE অর্থাৎ “ভালোবাসা সবার তরে, ঘৃণা নয় কা’রো পরে”।
আহমদীয়া জামাতের বর্তমান ইমাম হযরত মির্যা মাসরূর আহমদ সাহেব (আইঃ) জামাতকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন যে, :- LOVE FOR HONESTY AND HATRED FOR DISHONESTY অর্থাৎ “ভালোবাসা সততার তরে এবং ঘৃণা শুধু অসৎ এর পরে”। এই প্রবন্ধের শেষ ভাগে এসে যারা আহমদীয়া মুসলিম জামাতের সদস্য নয় সেই সমস্ত মুসলমানদের নিকট আবেদন করা হচ্ছে যে, ইসলাম ধর্ম নিজ অনুসারীদের অপরাপর ধর্মানুরাগীদের প্রতি ভালোবাসার, সহানুভূতির এবং উত্তম আচার ব্যবহারের শিক্ষা দেয়। এই আবেগকে প্রকাশ করা বর্তমান যুগে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের দাবী ও প্রয়োজন এখন অন্যান্যদের হৃদয়ে ইসলাম সম্পর্কে (সৃষ্ট) উদ্ভূত ভুল ধারণাগুলোকে নিজেদের উত্তম চরিত্র দ্বারা দূর করা। যদি মুসলমানরা আজ এমনটি না করে তবে সচেতনে অথবা অবচেতনে তারা অন্যান্যদেরকে ইসলামের শান্তিপূর্ণ শিক্ষাবলী থেকে দূরে নিয়ে যাওয়ার কারণ সাব্যস্ত হয়ে নিজ সৃষ্টিকর্তার ক্রোধের কারণ হয়ে উঠবে। আল্লাহ করুন যেন এমনটা না হয়।
বর্তমান যুগে আহমদীয়া মুসলিম জামাতের পবিত্র প্রতিষ্ঠাতা হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আঃ)-ই ইসলামকে পুনরায় তার স্বমহিমায় উপস্থাপন করেছেন। আপনি জামাতের পত্র-পত্রিকা অধ্যয়ন করুন। আমাদের বিশ্বাস যে এই সেই ধর্ম যার উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে মানুষ খুব সহজেই নিজ সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য ও ভালোবাসা অর্জন করতে পারে এবং নিজ জীবনের উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হতে পারে। দোয়া করি যেন আল্লাহতা’লা আমাদের সবাইকে ইসলামের সত্যতাকে বুঝে নিজ সৃষ্টিকর্তাকে মান্য করার এবং সৃষ্টের প্রতি সহানুভূতি প্রদানের সৌভাগ্য প্রদান করুন। আমিন।
আপনার উত্তর যোগ করুন
আপনার উত্তরটি একজন এডমিন রিভিউ করে অনুমোদন করবেন।