ইংরেজদের ভারত দখল এবং উহার রাজনৈতিক পটভূমি
অতঃপর, দেখিতে হইবে পরিস্থিতি কি ছিল, যাহার দরুন ইংরেজদের বিপদের কারণ ছিল? আসুন, এখন আমরা ঐ সময়কার পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক পটভূমি বিশ্লেষণ করি, যে সময় ইংরেজরা ভারতবর্ষে প্রবেশ করে এবং এই দেশে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠিত করে। আসুন আমরা আরো দেখি ঐ সময় মুসলমানদের কি ধরণের অবস্থা ছিল এবং তাহাদের ক্ষমতার জৌলুস কতখানি ছিল, যাহার দরুন ইংরেজরা ভীত সন্ত্রস্ত ছিল। মৌলবী মসউদ আলী নাদ্বী সাহেব ঐ যুগের বর্ণনা দিতে গিয়া লিখেন:-
“এই সময় পাঞ্জাবে শিখ রাজত্বের যুগ ছিল। মুসলমান স্ত্রীলোকদের মান–সম্ভ্রম নিরাপদ ছিল না। গরু কুরবানী নিষিদ্ধ ছিল। মসজিদগুলিকে আস্তাবলে পরিণত করা হইয়াছিল। মোট কথা, যুলুমের একটি প্লাবন পঞ্চনদের মুসলিম বসতিকে ভাসাইয়া লইয়া যাইতেছিল। তাহারা চোখে সব কিছু দেখিতেছিল, কিন্তু তাহাদের কর্মশক্তি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হইয়া গিয়াছিল।” (হিন্দুস্তান কি পহেলী তাহরীক, পৃঃ ৪৫)
সমগ্র ভারতবাসী বাঁচিয়াতো ছিল। কিন্তু তাহাদের কর্মশক্তি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হইয়া গিয়াছিল এবং উত্তর হইতে দক্ষিণ প্রান্ত পর্যন্ত মুসলমানদের এই শক্তি ছিল না, যে তাহারা নিজ মুসলমান ভাইদের রক্তের মর্যাদা ঘোষণা করে এবং ঐ সকল লোকদের (অর্থাৎ শিখদের–অনুবাদক) বিরুদ্ধে জেহাদ করে, যাহারা তাহাদের রক্তকে বৈধ ঘোষণা করিয়াছিল। তাহাদের নিকট গরুর রক্ত হারাম ছিল, কিন্তু মুসলমানদের রক্ত হালাল হইয়া গিয়াছিল। তাহাদের নিকট মুসলমান স্ত্রীলোকদের মান–সম্ভ্রমের কোন মূল্যই ছিল না। মুসলমানদের মাতা, ভগ্নি ও কন্যাদের মান–ইজ্জত রক্ষা করার জন্য কেহ আগাইয়া আসে নাই। এই যুগে কে তাহাদিগকে উদ্ধার করিয়া ছিল? ইংরেজ সরকারই তাহাদিগকে উদ্ধার করিয়াছিল। যখন ইংরেজরা এই দেশে আসিল, তখন মুসলমানদের জন্য শান্তি আসিল। তাহা হইলে কি এই মুসলমানদের দ্বারা ইংরেজরা ভীত সন্ত্রস্ত হইতেছিল, যাহারা দিল্লীতে সরকার গঠন করিয়া বসিয়াছিল, কিন্তু দিল্লীও তাহাদের বিরুদ্ধে উৎসব পালন করিতেছিল? সব কয়টি হিন্দু রাজ্য স্বাধীন হইয়া গিয়াছিল। চতুর্দিকে রক্তপিপাসু হিংস্র ব্যাঘ্রের ন্যায় লোকেরা মুসলমান দিগকে যুলুম–নির্যাতনের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করিতেছিল। যাহাদের মধ্যে আত্ম–রক্ষার শক্তিও ছিল না এবং যাহাদের নিকট হইতে মাত্র একটি কোম্পানিই শাসন ক্ষমতা ছিনাইয়া লইয়াছিল, তাহাদিগকে কি ইংরেজরা ভয় করিতেছিল যে, ইহারা তাহাদিগকে নিশ্চিহ্ন করিয়া ফেলিবে? তাহা ছাড়া ইংরেজদের বিরুদ্ধে জেহাদের যৌক্তিকতাই বা কি হইত? একটুখানি তো ভাবুন। ইংরেজ আসিল এবং শিখদের যুলুম হইতে মুসলমানদিগকে উদ্ধার করিল, হিন্দু রাজা এবং মারাঠাদের যুলুম–নির্যাতন ও বলপ্রয়োগ হইতে তাহাদিগকে রক্ষা করিল, এবং অকস্মাৎ মুসলমানেরা উঠিয়া দাঁড়াইল এবং বলিল, ‘আচ্ছা, তোমরা আমাদিগকে বাঁচাইয়াছ; কাজেই তোমাদিগকেতো সায়েস্তা করিতে হইবে এবং শাস্তি দিতে হইবে এবং তোমাদিগকে দেখাইয়া ছাড়িব কিভাবে মজলুমদিগকে বাঁচাইতে হয়।‘ ইহাই কি তোমাদের জেহাদের ধারণা? কিছুটা আক্কেল–বুদ্ধির কথা বল। কিছুটা কাণ্ডজ্ঞান খরচ কর। তোমরা এ কি দাবী করিতেছ? জগতকে তোমরা কিভাবে মুখ দেখাইবে যে, তোমাদের দাবী হইল এই যে, ঐ ইংরেজদের বিরুদ্ধে তোমরা জেহাদ করিতে চাহিতেছিলে, যাহারা শিখদের যুলুম হইতে তোমাদিগকে পরিত্রাণ করিয়াছিল? কিন্তু ব্যাপারটি ঘটিল এমনই যে, ইংরেজরা একজন এইরূপ ব্যক্তির দ্বারা জেহাদ হারাম হওয়ার ঘোষণা করাইয়া দিল, যিনি ছিলেন তোমাদের দুশমন এবং ইংরেজদের এজেন্ট। এই কারণে তোমরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে জেহাদ কর নাই। এইরূপ অযৌক্তিক কথা কি কেহ মানিয়া নিতে পারে?
“এই সময় পাঞ্জাবে শিখ রাজত্বের যুগ ছিল। মুসলমান স্ত্রীলোকদের মান–সম্ভ্রম নিরাপদ ছিল না। গরু কুরবানী নিষিদ্ধ ছিল। মসজিদগুলিকে আস্তাবলে পরিণত করা হইয়াছিল। মোট কথা, যুলুমের একটি প্লাবন পঞ্চনদের মুসলিম বসতিকে ভাসাইয়া লইয়া যাইতেছিল। তাহারা চোখে সব কিছু দেখিতেছিল, কিন্তু তাহাদের কর্মশক্তি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হইয়া গিয়াছিল।” (হিন্দুস্তান কি পহেলী তাহরীক, পৃঃ ৪৫)
সমগ্র ভারতবাসী বাঁচিয়াতো ছিল। কিন্তু তাহাদের কর্মশক্তি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হইয়া গিয়াছিল এবং উত্তর হইতে দক্ষিণ প্রান্ত পর্যন্ত মুসলমানদের এই শক্তি ছিল না, যে তাহারা নিজ মুসলমান ভাইদের রক্তের মর্যাদা ঘোষণা করে এবং ঐ সকল লোকদের (অর্থাৎ শিখদের–অনুবাদক) বিরুদ্ধে জেহাদ করে, যাহারা তাহাদের রক্তকে বৈধ ঘোষণা করিয়াছিল। তাহাদের নিকট গরুর রক্ত হারাম ছিল, কিন্তু মুসলমানদের রক্ত হালাল হইয়া গিয়াছিল। তাহাদের নিকট মুসলমান স্ত্রীলোকদের মান–সম্ভ্রমের কোন মূল্যই ছিল না। মুসলমানদের মাতা, ভগ্নি ও কন্যাদের মান–ইজ্জত রক্ষা করার জন্য কেহ আগাইয়া আসে নাই। এই যুগে কে তাহাদিগকে উদ্ধার করিয়া ছিল? ইংরেজ সরকারই তাহাদিগকে উদ্ধার করিয়াছিল। যখন ইংরেজরা এই দেশে আসিল, তখন মুসলমানদের জন্য শান্তি আসিল। তাহা হইলে কি এই মুসলমানদের দ্বারা ইংরেজরা ভীত সন্ত্রস্ত হইতেছিল, যাহারা দিল্লীতে সরকার গঠন করিয়া বসিয়াছিল, কিন্তু দিল্লীও তাহাদের বিরুদ্ধে উৎসব পালন করিতেছিল? সব কয়টি হিন্দু রাজ্য স্বাধীন হইয়া গিয়াছিল। চতুর্দিকে রক্তপিপাসু হিংস্র ব্যাঘ্রের ন্যায় লোকেরা মুসলমান দিগকে যুলুম–নির্যাতনের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করিতেছিল। যাহাদের মধ্যে আত্ম–রক্ষার শক্তিও ছিল না এবং যাহাদের নিকট হইতে মাত্র একটি কোম্পানিই শাসন ক্ষমতা ছিনাইয়া লইয়াছিল, তাহাদিগকে কি ইংরেজরা ভয় করিতেছিল যে, ইহারা তাহাদিগকে নিশ্চিহ্ন করিয়া ফেলিবে? তাহা ছাড়া ইংরেজদের বিরুদ্ধে জেহাদের যৌক্তিকতাই বা কি হইত? একটুখানি তো ভাবুন। ইংরেজ আসিল এবং শিখদের যুলুম হইতে মুসলমানদিগকে উদ্ধার করিল, হিন্দু রাজা এবং মারাঠাদের যুলুম–নির্যাতন ও বলপ্রয়োগ হইতে তাহাদিগকে রক্ষা করিল, এবং অকস্মাৎ মুসলমানেরা উঠিয়া দাঁড়াইল এবং বলিল, ‘আচ্ছা, তোমরা আমাদিগকে বাঁচাইয়াছ; কাজেই তোমাদিগকেতো সায়েস্তা করিতে হইবে এবং শাস্তি দিতে হইবে এবং তোমাদিগকে দেখাইয়া ছাড়িব কিভাবে মজলুমদিগকে বাঁচাইতে হয়।‘ ইহাই কি তোমাদের জেহাদের ধারণা? কিছুটা আক্কেল–বুদ্ধির কথা বল। কিছুটা কাণ্ডজ্ঞান খরচ কর। তোমরা এ কি দাবী করিতেছ? জগতকে তোমরা কিভাবে মুখ দেখাইবে যে, তোমাদের দাবী হইল এই যে, ঐ ইংরেজদের বিরুদ্ধে তোমরা জেহাদ করিতে চাহিতেছিলে, যাহারা শিখদের যুলুম হইতে তোমাদিগকে পরিত্রাণ করিয়াছিল? কিন্তু ব্যাপারটি ঘটিল এমনই যে, ইংরেজরা একজন এইরূপ ব্যক্তির দ্বারা জেহাদ হারাম হওয়ার ঘোষণা করাইয়া দিল, যিনি ছিলেন তোমাদের দুশমন এবং ইংরেজদের এজেন্ট। এই কারণে তোমরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে জেহাদ কর নাই। এইরূপ অযৌক্তিক কথা কি কেহ মানিয়া নিতে পারে?
আপনার উত্তর যোগ করুন
আপনার উত্তরটি একজন এডমিন রিভিউ করে অনুমোদন করবেন।