ইসলামী জেহাদের বিকৃত ধারণার বিরূদ্ধে আওয়াজ
ইহার তৃতীয় দিকটি হইল এই যে, হযরত মসীহ মওউদ আলাইহেস সালাতু ওয়াস সালাম কোন জেহাদকে হারাম সাব্যস্ত করিয়াছেন? জেহাদের বিভিন্ন দিক রহিয়াছে। উদাহরণস্বরূপ, তলোয়ারের জেহাদ রহিয়াছে, সময়ের কুরবানী পেশ করার জেহাদ রহিয়াছে, ইসলাম প্রচারের জেহাদ রহিয়াছে—ইত্যাদি। ইহা একটি ব্যাপক বিষয়। সুতরাং হযরত মসীহ মওউদ আলাইহেস সালাতু ওয়াস সালাম কোন জেহাদকে হারাম করিয়াছেন? তিনি কি ইসলামী জেহাদের ধারণাকে হারাম করিয়াছেন, নাকি লোকদের জেহাদ সম্বন্ধীয় বিকৃত ধারণাকে হারাম সাব্যস্ত করিয়াছেন? অতএব, যিনি বলিয়াছেন, তাঁর মুখেই শুন এবং চিন্তা কর যে, তিনি কি বলিতেছেন, কোন বস্তুকে হারাম বলিতেছেন এবং কোন বস্তুকে হালাল বলিতেছেন। আমি হযরত আকদাস মসীহ মওউদ আলাইহেস সালাতু ওয়াস সালামের উদ্ধৃতি পড়িয়া শুনানোর পূর্বে উহাতে যে পাদ্রীর উল্লেখ রহিয়াছে, তাহার পটভূমি বলিয়া দিতেছি। তাঁহার (আঃ) যুগে পাদ্রীরা (বিশেষতঃ ঐ সকল পাদ্রী যাহারা মুসলমান হইতে মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী হইয়া ছিল) ইসলামের উপর কঠোর আক্রমণ করিতেছিল এবং বলিতেছিল যে, ইসলাম তলোয়ারের জেহাদের উপর জোর দেয় এবং অন্যদিকে তাহারা ইংরেজ সরকারকে সতর্ক করিতেছিল যে, মুসলমানদিগকে ধ্বংস ও বরবাদ করিয়া দাও এবং তাহাদের মধ্যে উঠিয়া দাঁড়ানোর মত শক্তি শেষ করিয়া দাও। ইহা ছিল ঐ যুগ, যখন কিনা খৃষ্টান পাদ্রীরা মুসলমানদের জেহাদ সম্পর্কিত বিকৃত বিশ্বাসের দরুন, গায়ে পড়িয়া ইংরেজদিগকে উস্কানী দিতেছিল, যদিও ইংরেজদের ভারত বিজয়ের দরুন বেচারী মুসলমানদের মধ্যে কোন আবেগ–উত্তেজনা সৃষ্টি হইতেছিল না। পাদ্রীদের কথা আমি আপনাদিগকে শুনাইব। আপনারা অবাক হইয়া যাইবেন যে, তাহারা কি ভাবিতেছিল এবং কিভাবে ইংরেজদিগকে সম্বোধন করিতেছিল এবং ইংরেজদের নিকট কি নিবেদন করিতেছিল। কিন্তু ইহা পাদ্রীদের একতরফা যুলুমপূর্ণ আক্রমণ ছিল এবং ইহা তাহাদের ইসলাম–দুশমনীর প্রমাণ ছিল। তাহারা চাহিতেছিল যে, এই অজুহাতে মুসলমানদিগকে ভারতবর্ষে পিষিয়া ফেলিবে এবং হিন্দু শক্তির উৎকর্ষ সাধন করিবে এবং ইহার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করিবে। ইহার পাশাপাশি হিন্দুদেরও পন্থা ও কৌশল এই ছিল যে, তাহারা বার বার ইংরেজ শাসকদিগকে সম্বোধন করিয়া তাহাদের মনোযোগ আকর্ষণ করিতেছিল যে, তোমাদের (অর্থাৎ ইংরেজ শাসকদের) আসল বিপদ মুসলমানদের তরফ হইতে আসিবে। কাজেই এই মৃত প্রায় মুসলমানদিগকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করিয়া দাও, বরবাদ করিয়া দাও এবং পুনরায় উঠিয়া দাঁড়ানোর ধারণাও তাহাদের হৃদয় হইতে বাহির করিয়া দাও। আগ্রার জামে মসজিদের প্রাক্তন ওয়াজকারী ও খতিব পাদ্রী ইমাদুদ্দীন, যাহার কথা পূর্বেও উল্লেখ করিয়াছি, তাহার পক্ষ হইতে এই ধরনের অপবাদের উত্তর প্রদান করিতে গিয়া হযরত মসীহ মওউদ আলাইহেস সালাতু ওয়াস সালাম বলেন:-
“এই সমালোচক ইসলামী জেহাদের যে বর্ণনা দিয়াছে এবং ধারণা করিতেছে যে, কুরআন কোন শর্ত ব্যতিরেকে নির্বিচারে জেহাদের জন্য জোর দেয়–ইহার চাইতে অধিক কোন মিথ্যা নাই। কুরআন শরীফ (সুরা হজ্জের ৪০–৪১ নম্বর আয়াত অনুযায়ী—অনুবাদক) কেবলমাত্র ঐ সকল লোকের সহিত যুদ্ধ করার জন্য আদেশ দেয়, যাহারা খোদার বান্দাগণকে তাঁহার ধর্মে প্রবেশ করিতে বাধা দেয় এবং খোদার আদেশ পালনে এবং তাঁহার ইবাদত করিতে বাধা দেয়। কুরআন শরীফ এই সকল লোকের সহিতও যুদ্ধ করার জন্য আদেশ দেয়, যাহারা বিনা কারণে মুসলমানদের সহিত যুদ্ধ করে এবং মোমেনদিগকে তাহাদের গৃহ হইতে ও মাতৃভূমি হইতে বহিষ্কার করে এবং আল্লাহর সৃষ্টিকে বলপূর্বক নিজেদের ধর্মে প্রবেশ করায় এবং ইসলাম ধর্মকে নিশ্চিহ্ন করিতে চায় এবং লোকদিগকে মুসলমান হইতে বাধা দেয়। ইহারাই ঐ সকল লোক, যাহাদের উপর খোদাতায়ালার অভিসম্পাত... এবং যদি তাহারা বিরত না হয়, তাহা হইলে তাহাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা মোমেনদের কর্তব্য।” (নূরুল হক, প্রথম অংশ, পৃষ্ঠা–৪৫, আরবী ভাষ্যের অনুবাদ)
“এই সমালোচক ইসলামী জেহাদের যে বর্ণনা দিয়াছে এবং ধারণা করিতেছে যে, কুরআন কোন শর্ত ব্যতিরেকে নির্বিচারে জেহাদের জন্য জোর দেয়–ইহার চাইতে অধিক কোন মিথ্যা নাই। কুরআন শরীফ (সুরা হজ্জের ৪০–৪১ নম্বর আয়াত অনুযায়ী—অনুবাদক) কেবলমাত্র ঐ সকল লোকের সহিত যুদ্ধ করার জন্য আদেশ দেয়, যাহারা খোদার বান্দাগণকে তাঁহার ধর্মে প্রবেশ করিতে বাধা দেয় এবং খোদার আদেশ পালনে এবং তাঁহার ইবাদত করিতে বাধা দেয়। কুরআন শরীফ এই সকল লোকের সহিতও যুদ্ধ করার জন্য আদেশ দেয়, যাহারা বিনা কারণে মুসলমানদের সহিত যুদ্ধ করে এবং মোমেনদিগকে তাহাদের গৃহ হইতে ও মাতৃভূমি হইতে বহিষ্কার করে এবং আল্লাহর সৃষ্টিকে বলপূর্বক নিজেদের ধর্মে প্রবেশ করায় এবং ইসলাম ধর্মকে নিশ্চিহ্ন করিতে চায় এবং লোকদিগকে মুসলমান হইতে বাধা দেয়। ইহারাই ঐ সকল লোক, যাহাদের উপর খোদাতায়ালার অভিসম্পাত... এবং যদি তাহারা বিরত না হয়, তাহা হইলে তাহাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা মোমেনদের কর্তব্য।” (নূরুল হক, প্রথম অংশ, পৃষ্ঠা–৪৫, আরবী ভাষ্যের অনুবাদ)
আপনার উত্তর যোগ করুন
আপনার উত্তরটি একজন এডমিন রিভিউ করে অনুমোদন করবেন।