আপত্তির জবাব

ইংরেজদের বিরুদ্ধে জেহাদ না করার শরিয়ত-সম্মত কারণ

হযরত সৈয়দ আহমদ সাহেব বেরলবী শহীদ জেহাদ করিয়াছেন এবং জেহাদের জন্য তিনি সীমান্তের দিকে রওয়ানা হইয়াছিলেন এবং তিনি শিখদের সহিতও যুদ্ধ করিয়াছিলেন। তিনি নিশ্চয়ই একজন পবিত্র ব্যক্তি ছিলেন। তিনি মুসলমানদের আত্ম-মর্যাদাকে উদ্বেলিত করিয়াছিলেন। কিন্তু ইংরেজ সরকার সম্বন্ধে তিনি কি মনে করিতেন—এই ব্যাপারে তাহার জীবন চরিত রচয়িতা মোহাম্মদ জাফর খানেশ্বরী কি বলেন তাহা শুনুন। তিনি বড় সাইজে মুদ্রিত “আহমদ বেরলবী (রহঃ)-এর জীবন চরিত” এর ৭১ পৃষ্ঠায় লিখেন:-

“প্রশ্নকারী তাঁহাকে প্রশ্ন করিয়াছিলেন যে, ইংরেজরা ইসলাম ধর্মকে অস্বীকার করে, কিন্তু তাহারা এই দেশের শাসক। আপনি কেন তাহাদের বিরুদ্ধে জেহাদ করিয়া ভারতবর্ষ তাহাদের নিকট হইতে কাড়িয়া নেন না? উত্তরে তিনি বলেন, ইংরেজ সরকার যদিও ইসলামের অস্বীকারকারী, কিন্তু তাহারা মুসলমানদের উপর যুলুম নির্যাতন করে না এবং না তাহাদিগকে ধর্মীয় কর্তব্য পালনে ও ফরজ ইবাদতে বাধা দান করে। আমরা তাহাদের দেশে প্রকাশ্যে বক্তৃতা করি ও ধর্ম প্রচার করি। তাহারা কখনো ইহা নিষেধ করে না এবং এই ব্যাপারে বাধাও দেয় না। আমাদের আসল কাজ হইল খোদার তওহীদ ও সৈয়্যদুল মুরসালিনের জীবনাদর্শ সঞ্জীবিত করা এবং বিনা প্রতিবন্ধকতায় তাহা আমরা করিতেছি। তাহা হইলে আমরা ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে কি কারণে জেহাদ করিব এবং ইসলামী নীতির বিরুদ্ধে কেন আমরা বিনা কারণে উভয় পক্ষের রক্তপাত ঘটাইব? এই সদুত্তর শুনিয়া প্রশ্নকারী চুপ হইয়া গেলেন এবং জেহাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য বুঝিয়া ফেলিলেন।”

কিন্তু এই সকল আলেম, যাহারা আজ আহমদীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার, তাহারা অদ্যাবধি ইহা বুঝিতে পারিল না। আল্লামা শিবলী নোমানী বলেন:-

“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের স্বর্ণযুগ হইতে আজ পর্যন্ত মুসলমানদের এই নীতিই রহিয়াছে যে তাহারা যে সরকারের অধীনে থাকে, সে সরকারের প্রতি তাহারা বিশ্বস্ত ও আজ্ঞানুবর্তী থাকে। ইহা কেবলমাত্র তাহাদের নীতিই ছিল না, বরং ইহা তাহাদের ধর্মীয় শিক্ষাও ছিল। ইহা কুরআন মজীদ, হাদিস, ফেকাহ সব কিছুতে ইঙ্গিতে ও সুস্পষ্টভাবেও উল্লেখিত আছে।” (আজমগড়স্থ মুদ্রণালয়ে ১৯৫৪ খ্রি: প্রকাশিত “মুকালাতে শিবলী” অর্থাৎ মাওলানা শিবলীর রচনাবলী, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা–১৭১)

খাজা হাসান নিজামী সাহেব বলেন:
“জেহাদের বিষয়টি আমাদের এখানে প্রত্যেকটি শিশুও জানে।” (অর্থাৎ যতদিন এই দেশে ইংরেজ শাসন ছিল ততদিন শিশুরাও জেহাদের বিষয়টি জানিত, যাহা হযরত মসীহ মওউদ আলাইহেস সালাতু ওয়াস সালাম বলিতেন। কিন্তু যেদিন হইতে তাহাদের শাসনের অবসান হইল সেদিন হইতে সম্পূর্ণ বিষয়টিরই পরিবর্তন হইয়া গেল এবং এখন প্রত্যেক শিশুকে অন্য কিছু বলা হইতেছে যে, আমাদের পিতা মাতারা এই কথা বলিতেন। প্রত্যেকটি শিশু কি জানিত?)

খাজা সাহেব বলেন:-

“তাহারা জানিত যে যখন কাফেরেরা ধর্মীয় বিষয়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে এবং সত্যনিষ্ঠ ইমাম, যাঁহার নিকট যুদ্ধের পূর্ণ সাজ-সরঞ্জাম ও প্রস্তুতি থাকে, তিনি যদি ফতওয়া দেন, তাহা হইলে সকল মুসলমানের জন্য যুদ্ধ করা অবশ্য কর্তব্য হইয়া যায়। কিন্তু ইংরেজরা না আমাদের ধর্মীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে, না অন্য কোন কাজে এইভাবে হস্তক্ষেপ করে যাহাকে যুলুম বলা যাইতে পারে, না আমাদের নিকট যুদ্ধের সাজ-সরঞ্জাম আছে। এমতাবস্থায় আমরা কখনো কাহারো কথায় যুদ্ধ করিব না এবং নিজেদের জীবনকে বিনাশ করিব না।” (খাজা হাসান নিজামী রচিত পুস্তক “শেখ সুনুছি”, পৃষ্ঠা–১১৭)

আপনার উত্তর যোগ করুন

আপনার উত্তরটি একজন এডমিন রিভিউ করে অনুমোদন করবেন।