আপত্তির জবাব

ইসলামী পরিভাষার অবৈধ ব্যাবহার করেছেন

হযরত মির্যা সাহেব, তথা আহমদীয়া মুসলিম জায়াতের উপর এই অপবাদ দেয়া হয় যে, তাঁরা ইসলামী পরিভাষা যেমন নবী, রসূল, আমীরুল মু’মিনীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাহাবী ইত্যাদি ব্যবহার করে এবং নিজেদের জন্য ‘মুসলমান’ শব্দ প্রয়োগ করে। এভাবে তারা ইসলামের অবমাননা করেছে। এ ধরনের আরও কিছু অপবাদও দেয়া হয়ে থাকে।

উত্তরঃ এই অপবাদগুলির উত্তর গবেষণা-সাপেক্ষ। তাই সুধীগণের জন্য বিস্তারিত উত্তর না দিয়ে ইসলামের সুদীর্ঘ ১৪শত বছরের ইসিহাস ও বই পুস্তক থেকে এর উত্তর দিতে চেষ্টা করব। ফয়সালা পাঠকদের উপর ছেড়ে দিলাম।

নবীঃ

(ক) হযরত রসূলে পাক (সঃ) সাহেবযাদা ইব্রাহীমের মৃত্যুর পর, তাঁর সম্বন্ধে বলেছেন, (এই হাদীসটি আয়াতে খাতামান্নাবীঈন নাযেল হবার তিন বছর পরের)

اما و الله انه لنبى ابن نبئ (الفتاوى الحديثيه ص ١٧٦)

অর্থাৎ খোদার কসম! সে নবী এবং নবীর পুত্র (আলফাতওয়াল হাদীসীয়া, ১৭৬ পৃঃ)।

(খ) ফিরকা ইমামীয়ার তফসীরে কুম্মীতে হযরত ইমাম জাফর সম্বন্ধে লেখা আছেঃ

هذانبي اهل الكوفة (تفسير قمی جلد ۲ ص ۲۸۱)

অর্থাৎ ইনি (হযরত ইমাম জাফর সাদেক) কুফা বাসীর নবী। (তফসীর কুম্মী, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৮১)

(গ) হযরত আকরম (রহঃ) লিখেনঃ

چشتی نبی هندهی (اقتباس الانور ص ۳۳۱)

অর্থাৎ চিশ্‌তী (খাজা মঈনুদ্দীন চিশ্‌তী-রহঃ) হিন্দুস্থানের নবী। (ইকতেবাসুল আনওয়ার, ৩৩১ পৃঃ)।

(ঘ) উপমহাদেশের প্রখ্যাত সূফী হযরত শাহ্ ফরীদগঞ্জ শকর (রহঃ) বলেনঃ

من وليم من عـلـى ومـن نـبـي (حقيقة گلزار صابری ص ۳۹۲)

অর্থাৎ আমি ওলী, আমি আলী, এবং আমি নবী (হাকীকতে গুলজার সাবরী, ৩৯২ পৃঃ)।

(ঙ) হযরত গাওসুল আযম শেখ আব্দুল কাদের জীলানী (রহঃ) লিখেনঃ

اوتى الانبياء اسم النبوة واوتينا اللقب ويسمى صاحب هذا المقام من انبياء الاولياء (الياقيت والجواهر جلد ٢ص ٤٤٤٣)

অর্থাৎ আম্বিয়াদেরকে তো নবীর নাম দেয়া হয়েছে এবং আমাদেরকে এই (নবী) উপাধি দেয়া হয়েছে। আওলিয়াদের মধ্য হতে যারা নবীদের এই মর্যাদার অধিকারী তাদেরকেও এই নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (আল্ ইয়াওয়াকিত ওয়াল্ যাওয়াহের, ২য় খণ্ড, ৪৩-৪৫ পৃঃ)।

(চ) হযরত মাওলানা রূম বলেনঃ

کونبی وقت خویش است اے مرید (مثنوی دفتر پنجم )

অর্থাৎ হে মুরীদ! পীর সমসাময়িক নবী হয় (মসনবী, দফতর পাঁচ)।

(ছ) আল্লামা ইকবাল আঞ্জুমানে হেমায়াতে ইসলামের এক অধিবেশনে মাওলানা হালীর এক নজম শুনানোর পূর্বে এই পংক্তি পড়েনঃ

میں کشور شعر کانبی ھوں گویا
نازل ھے میرے لب په کلام حالی
(باقیات اقبال ص ٢٤٥)

অর্থাৎ আমি যেন কবিতার রাজ্যের নবী। ঠোঁটে হালীর কালাম (বাণী) নাযেল হচ্ছে (বাকিয়াতে ইকবাল, ২৪৬ পৃঃ)।

(জ) সৌদী আরবে মাদ্রাসার পাঠ্য পুস্তক আল্ কেরআতুল আ’দাদীয়ায় এক কবিতার পংক্তি এইরূপ আছেঃ

نبی مثل کنفیوشس - او من ذالك العهد (اخبار رضاء مصطفی ۵ اصفر ۱۳۷۹ ص ۵)

অর্থাৎ (গান্ধী) কনফিউসিয়াসের মতন নবী অথবা তার মর্যাদার সমান (আখবার রেযায়ে ইসতিফা)।

(ঝ) পত্রিকা “আল্ কুয়েত” ১৫ই অক্টোবর, ১৯৭০ সনে জামাল আব্দুল নাসের-এর মৃত্যুতে আরবের বিখ্যাত কবি নাযার কুব্বানীর একটি মর্সিয়া ছেপেছে। তার একটি পংক্তি হলোঃ

قتلناك ........... يا آخر الانبياء

অর্থাৎ যে নবীদের শেষ আমরা তোমাকে হত্যা করেছি।

রসূলঃ

(ক) রসূল অর্থাৎ দূত যেমন সূরা ইউসূফের ৫১তম আয়াতে আছেঃ

وقال الملك ائتوني به فلما جاءه الرسول قال ارجع الى ربك ـ

অর্থাৎ এবং বাদশাহ্ বললো তাকে আমার নিকটে আন। অতঃপর যখন দূত তাঁর নিকট আসল, তখন সে বলল, তুমি তোমার প্রভুর নিকট ফিরে যাও।

(খ) “মেরিলা বিয়ানকো” প্রণীত লিবিয় প্রেসিডেন্ট কর্ণেল গাদ্দাফীর জীবনী, দারুশ্‌শূরা, বৈরুত থেকে ১৯৭০ সনে প্রকাশিত হয়েছে। তার নাম হলো “القذافى رسول الصحراء” “আলকাজ্জাফী রসূলুস সাহ্‌রা”।

(গ) ১৯৫২ সনে শফীক নাক্কাশ বৈরুত থেকে “মুহাম্মাদ আলী আল কায়েদে আযম” নামক পুস্তক প্রকাশ করেন। তাতে কায়েদে আযমকে رسول التوفيق والسلام ‘রসূলুত্‌তাওফীক ওয়াস্‌সালাম’ বলা হয়েছে।

(ঘ) “আল্ মিম্বার” পত্রিকার ১৯৭৬ সনের অক্টোবর সংখ্যায় শাহ ফয়সালকে ‘আর্ রসূল’ বলা হয়েছে।

(ঙ) ১৯৫৭ সনে পণ্ডিত নেহরু যখন সউদী আরবে যান, তখন সরকারীভাবে তাকে ‘রসূলুস সালাম’ বলা হয়।

আমীরুল মু’মেনীনঃ

(ক) প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ আল্লামা মাসল বিন বুরহানুদ্দীন আল্‌হালবী তাঁর পুস্তক সীরাতে হালবীতে লিখেছেন-

قبعث عليهم عبد الله وسماه رسول الله امـيـر الـمـؤمـنـيـن فـهـو أول تسمى في الاسلام يامير المؤمين ثم بعده عمر ابن الخطاب - (سيرة الحلبية جلد نمبر ۳ ص۱۳۹)

অর্থাৎ হুযূর সল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম হযরত আবদুল্লাহ্ বিন যাহশকে সৈন্যদলের সর্দার নিযুক্ত করে পাঠালেন এবং তাঁকে ‘আমীরুল মু’মিনীন’ নাম দিলেন। সুতরাং ইসলামে আমীরুল মু’মিনীনের প্রথম উপাধি হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন যাহশ পেলেন এবং তারপর হযরত ওমর বিন খাত্তাব এই উপাধিতে ভূষিত হলেন। (সীরাতে হালবিয়া, তৃতীয় খণ্ড, ১০৯.পৃঃ)।

(খ) মুকাদ্দমা ইবনে খলদুন থেকে জানা যায় যে, আরবের লোকেরা হযরত রসূলে করীম (সঃ)-কে মক্কার আমীর এবং সাহাবা কেরামগণ হযরত সাআদ বিন আবি ওক্কাস (রাঃ)-কে আমীরুল মু’মিনীন বলতেন (মুকাদ্দামা ইবনে খলদুন উর্দু অনুবাদ, ২৫৮ পৃঃ)।

(গ) হযরত ইমাম মালেক (রহঃ)-কে, হযরত সুফিয়ান সোওরী (রহঃ) কে, হযরত ইমাম বুখারী (রহঃ)-কে এবং হযরত ইমাম দারে কুতনী (রহঃ)-কে ‘আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীস’ বলা হয়ে থাকে। আবু হায়ান গারনাতকে আমিরুল মু’মিনীন ফিন নাহ্ও বলা হয়।

(ঘ) উমাইয়া এবং আব্বসী খলীফাগণের জন্য ‘আমীরুল মু’মিনীন' ব্যবহৃত হতো।

(ঙ) শিয়া সম্প্রদায়ের ‘ফিরকা ইমামীয়া’ আমীরুল মু’মিনীন বলতে শুধু মাত্র হষরত আলী (রাঃ)-কে গণ্য করেন।

(চ) মৌলানা মুহাম্মদ জা’ফর সাহেব থানেশ্বেরী তাঁর পুস্তক سوانح احمدى “সোয়ানেহে আহ্‌মদী” তে হযরত সৈয়্যদ আহমদ সাহেব বেরেলভী এবং হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ ইসমাঈল সাহেব শহীদ দেহলভীর জন্য ‘আমীরুল মু’মিনীন' খেতাব ব্যবহার করেছেন (সোয়ানেহে আহমদী, ১২০পৃঃ)।

(ছ) মাওলানা হাফেয আবদুল্লাহ্ গাজীপুরী তাঁর পুস্তক ‘আল্ হায়াত বা’দাল মুমাতের’ ৫৪৪ পৃষ্ঠায় মৌলভী সৈয়্যদ নযীর হোসেন সাহেব দেহলভীকে ‘আমীরুল মু’মিনীন’ বলেছেন। তিনি লিখেনঃ
هو امام اهل الحديث في زمانه امير المؤمنين في الحديث في اوانه - (الحيات بعد الممات ص ٥٤٤)

অর্থাৎ তিনি তাঁর যুগের “আহলে হাদীসের ইমাম এবং হাদীসের আমীরুল মু’মিনীন” (আল্ হায়াত বা’দাল মুমাত, ৫৪৪পৃঃ)।

(ছ) প্রফেসর ইলয়াস বারনি সাহেব, যিনি আহমদীয়া মুসলিম জামাতের বিরুদ্ধে উপরোক্ত আপত্তি উঠিয়েছেন, তিনি স্বয়ং তার সেই একই পুস্তকের শুরুতে দাক্ষিণাত্যের হায়দ্রাবাদের নিযামকে ‘আমীরুল মু’মিনীন’ উপাধি দিয়েছেন।

উম্মুল মু’মিনীনঃ

(ক) হযরত পীরানে পীর আব্দুল কাদের জীলানী (রহঃ)- এর মাতাকে ‘উম্মুল মু’মিনীন' বলা হয়েছে (গুলদাস্তা এ কারামাত উর্দু)।

(খ) হযরত ফরিদুদ্দীন গাঞ্জশকর (রহঃ), শেখ জামালুদ্দীন হানসুভী (রহঃ)-এর এক “কনীজকে” (দাসীকে) ‘উম্মুল মু’মিনীন' বলেছেন (সেয়ারুল আওলীয়া, উর্দু, ৮৭ পৃঃ)।

মসজিদঃ

(ক) পবিত্র কুরআনে আল্লাহতাআলা বলেনঃ

وان المسجد لله فلا تدعوا مع الله احد (سورة جن (۱۹)

“নিশ্চয় মসজিদসমূহ আল্লাহ্ জন্য সুতরাং আল্লাহ্‌র সাথে কাউকেও শরীক করো না।” (সূরা জীনঃ ১৯)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় “আল্ ফকীহ্” নামক পুস্তকে লিখিত আছে যে, আমীরুল মু’মিনীন (হযরত আলী) বর্ণনা করেছেন, “আল্‌ মাসজিদ” অর্থ সিজদার অঙ্গ সমূহ অর্থাৎ চেহারা, দুই হাত, দুই হাঁটু এবং পায়ের দু’টো বৃদ্ধাংঙ্গুলি। হযরত ইমাম যা’ফর সাদেক (রহঃ) তাঁর ‘তফসীর আয়াশী’তে এবং “তফসীরে কুম্মী”তেও অনুরূপ তফসীর করেছেন (কুরআন মজীদ ৬৮৬ পৃষ্ঠার টীকা দ্রষ্টব্য, অনুবাদক-মাওলানা হাকিম মকবুল আহমদ দেহলভী)।

(খ) “তফসীরে বায়যাভী” ও “তফসীরে হুসেইনী” তে মাসাজিদের তফসীর ‘সিজদার অঙ্গসমূহ’ বলা হয়েছে।

(গ) হযরত রসূলে করীম (সঃ)-এর হাদীসঃ

جعلت لى الارض مسجدا (بخاری)

অর্থাৎ আমার জন্য সারা পৃথিবীর মাটিকে মসজিদ বানানো হয়েছে। এখানে ‘মসজিদ’ শব্দটি ব্যাপকভাবে পৃথিবীকে বুঝানো হয়েছে।

(ঘ) হযরত রসূল করীম (সঃ) ইহুদী ও খৃষ্টানদের ইবাদতের জায়গাকে মাসাজিদ বলেছেন (মসজিদের বহুবচন মাসাজিদ)। তিনি (সঃ) বলেন-

لعنة الله على اليهود والنصارى اتخذوا قبور انبياء هم مساجد - (بخاری جلد ۳ ص (٦٢)

অর্থাৎ ইয়াহুদ এবং নাসারাদের উপর খোদার লা’নত যারা নিজ নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে (বুখারী, তৃতীয় খণ্ড. ৬২ পৃঃ)।

(ঙ) হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আলী বিন খানভী সাহেব তাঁর পুস্তকে লিখেনঃ

مسجد در لغت سجده گاه را گویند و در اصطلاح سالکان مظهر تجلی جمالی را گویند وقیل استانه پیرو مرشد کذافی کشف اللغات (موسوعة الاصطللحات الاسلامية جلد ۳ ص ۲۳۹)

অর্থাৎ অভিধানে মসজিদ সিজদার জায়গাকে বলা হয়। “সালেকদের” (সাধকদের) পরিভাষায় তাজাল্লীয়ে জামালীকে (সৌন্দর্যের বিকাশকে) মসজিদ বলা হয়। তদুপরি পীর ও মুরশেদের আস্তানাকেও কাশ্‌ফুললুগাতে মসজিদ বলা হয়েছে (মাওসেয়াতুল ইসতালাহাতিল ইসলামিয়া, তৃতীয় খণ্ড, ৬৩৯ পৃঃ)।

মুসলমানঃ

(ক) কুরআন মাজীদের আয়াতঃ

الاتعلوا على واتونی مسلمین

অর্থাৎ আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করো না এবং বশ্যতা স্বীকার করে আমার নিকট আসো (সূরা নম্‌লঃ ৩২)। এই আয়াতের “মুসলিমীন” এর অর্থ মুফাস্সেরে ইসলাম হযরত আল্লামা আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মদ আশ্ শিরাজী (রহঃ), হযরত মুসলেহুদ্দীন সা’দী, হযরত শাহ আবদুল কাদের দেহলভী (রহঃ), হযরত মাওলানা সৈয়্যদ মকবুল আহমদ সাহেব দেহলভী, মাওলানা মাহমুদল হাসান সাহেব দেওবন্দী ও মাওলানা আশরাফ আলী সাহেব থান্‌ভী, مطيع (বিনীত, বাধ্য) ও فرما نبردار (বশ্যতা স্বীকারকারী) করেছেন।

(খ) হযরত রসূলে করীম (সঃ) বলেনঃ
المسلم من سلم المسلمون من لسانه ويده (ترمذی)

অর্থাৎ যার জিহ্বা ও হাত হতে মুসলমানগণ নিরাপদে থাকে সে মুসলমান।

(ঘ) মৌলানা আশরাফ আলী থান্‌ভী সাহেবের একটি ফত্‌ওয়া দেখুনঃ

এক মৌলভী সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন যে, “কলেমা না পড়েই কি নামায ফরয হয়ে যাবে?” উত্তরে বললেন, “কলেমা পড়ুক বা না পড়ুক, যখন সংকল্প করেছে এবং ঘোষণা দিয়েছে ‘আমি মুসলমান’, তখন নামায ফরয হয়ে যাবে।” জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘সংকল্প করে নিলেই কি মুসলমান হয়ে যাবে?’ উত্তরে বললেন, ‘জ্বী হ্যাঁ, সংকল্প করে নিলেই মুসলমান হয়ে যাবে।’ (আলইফাযাতুল ইয়াওমিয়া, দ্বিতীয় খণ্ড, ২১ পৃঃ)।

(গ) হযরত বায়েজীদ বুস্তামী (রহঃ) বলেনঃ

سبحن الله لا اله الا الله

অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক, তিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই। একজন ঘোরতর কাফের এই কালাম উচ্চারণ করলে সে মুসলমান হয়ে যায়। (তাযকেরাতুল আওলিয়া, প্রথম খণ্ড, ১৫২-১৫৩ পৃঃ বাংলা)।

(ঙ) শেখুল ইসলাম মাওলানা শাব্বীর আহমদ ওসমানী বলেনঃ আমাদের (কাছে) ‘মুসলিম’ শব্দের অর্থ হলো, যে ইসলামের দাবী করে ও কলেমা পাঠ করে। (খুতবায়ে সাদারাত, ১৫-১৬ পৃঃ)।

(চ) মাওলানা আশরাফ আলী থান্‌ভী সাহেব রসূল (সঃ)-এর নিম্নলিখিত হাদীস উল্লেখ করেনঃ

من صلى صلوتنا واستقبل قبلتنا واكل ذبيحتنا فذالك المسلم ........ الخ

অর্থাৎ যে আমাদের নামায পড়ে, আমাদের কিবলার দিকে কিবলা করে, আমদের যবাইকৃত পশুর মাংস খায় সে মুসলমান। এবং এর ব্যাখ্যায় বলেন. أكل ذبيحتنا ‘আমাদের যবাইকৃত গবাদি পশুর মাংস খায়’ থেকে জানা যায় যে, আহলে ইসলামের যবাইকৃত পশুর মাংস খাওয়াও শায়ায়েরুল্লাহ্ (আল্লাহ্‌র নিদর্শনাবলীর) অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে আরেকটি সূক্ষ্ম ইঙ্গিত রয়েছে যে, আগামীতে এমন এক সময় আসবে যখন কিছু লোকে নামায পড়বে না। শধু যবাইকৃত মাংস খেয়েই মুসলমান হয়ে যাবে। তাদের ইসলামের চিহ্নই এই হবে। নতুবা صلى صلوتنا (যে আমাদের নামায পড়ে) বাক্যের পরে “এদেরকেও অবজ্ঞা করি না।” এই কথা বলার কী দরকার ছিল? (আল্ ইফাযাতুল ইয়াওমিয়া মিনাল ইফাদাতিল কাওসীয়া, প্রথম খণ্ড, ২৩০ পৃঃ)।

সুধী পাঠক বৃন্দ! উপরোক্ত উদ্ধৃতিগুলি পেশ করার পর আমি আহমদীয়া মুসলিম জামাতের ধর্ম-বিশ্বাসকে তুলে ধরে অধ্যায়টিকে শেষ করছি।

আহ্‌মদীয়া মুসলিম জামাতের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মির্যা গোলাম আহমদ ইমাম মাহ্‌দী ও মসীহ মাওউদ (আঃ) তাঁর “আইয়ামুস সুলেহ্” পুস্তকে বলছেনঃ

“আমরা এই কথার উপর ঈমান রাখি যে, খোদাতাআলা ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই এবং সৈয়্যদনা হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সল্লাল্লাহু আলয়হে ওয়া সাল্লাম তাঁর রসূল এবং খাতামুল আম্বিয়া। আমরা ঈমান রাখি যে, ফিরিস্তা, হাশর, জাহান্নাম এবং জান্নাত সত্য এবং আমরা ঈমান রাখি যে, কুরআন শরীফে আল্লাহ্‌তাআলা যা বলেছেন এবং আমাদের নবী সল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম হতে যা বর্ণিত হয়েছে উল্লিখিত বর্ণনানুসারে তা অকাট্য সত্য। আমরা ঈমান রাখি, যে ব্যক্তি এই ইসলামী শরীয়ত হতে বিন্দুমাত্র কম করে অথবা যে বিষয়গুলো অবশ্যকরণীয় বলে নির্ধারিত তা পরিত্যাগ করে এবং অবৈধ বস্তুকে বৈধ করণের ভিত্তি স্থাপন করে সে ব্যক্তি বে-ঈমান এবং ইসলাম বিদ্রোহী। আমি আমার জামাতকে উপদেশ দিতেছি যে, তারা যেন বিশুদ্ধ অন্তরে পরিত্র কলেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ’-এর উপর ঈমান রাখে এবং এই ঈমান লইয়া মরে। কুরআন শরীফ হতে যাদের সত্যতা প্রমাণিত, এমন সকল নবী (আলায়হিমুস-সালাম) এবং কিতাবের উপর ঈমান আনবে। নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত এবং এতদ্ব্যতীত খোদাতাআলা এবং তাঁর রসূল কর্তৃক নির্ধারিত যাবতীয় কর্তব্যসমূহকে প্রকৃতপক্ষে অবশ্য-করণীয় মনে করে এবং যাবতীয় নিষিদ্ধ বিষয়সমূহকে নিষিদ্ধ করিয়া সঠিকভাবে ইসলাম ধর্ম পালন করবে। মোট কথা যে সমস্ত বিষয়ের উপর আক্বিদা ও আমল হিসেবে পূর্ববর্তী বুযর্গানের ইজমা অর্থাৎ সর্ববাদি-সম্মত মত ছিল এবং যে সমস্ত বিষয়কে আহলে সুন্নত জামাতের সর্ববাদি-সম্মত মতে ইসলাম নাম দেয়া হয়েছে উহা সর্বতোভাবে মান্য করা অবশ্য কর্তব্য। যে ব্যক্তি উপরোক্ত ধর্মমতের বিরুদ্ধে কোন দোষ আমাদের প্রতি আরোপ করে সে তাকওয়া এবং সততা বিসর্জন দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটনা করে। কিয়ামতের দিন তার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ থাকবে যে, কবে সে আমাদের বুক চিরে দেখেছিল যে, আমাদের মতে এই অঙ্গীকার সত্ত্বেও অন্তরে আমরা এ সবের বিরোধী ছিলাম? আলা ইন্না লা’নাতাল্লাহে ‘আলাল কাযেবীনা ওয়াল মুফতারিয়ীনা -অর্থাৎ সাবধান! নিশ্চয় মিথ্যাবাদী ও মিথ্যারোপকারীদিগের উপরে আল্লাহ্‌র অভিসম্পাত। (আইয়ামুস সুলেহ্ পৃঃ ৮৬-৮৭)

(পুস্তকঃ অযথা বিভ্রান্তি)

আপনার উত্তর যোগ করুন

আপনার উত্তরটি একজন এডমিন রিভিউ করে অনুমোদন করবেন।