আপত্তির জবাব

কাদিয়ানী ধর্ম থেকে ফিরে এলেন

‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ সাহেব তার ‘গবেষণা’ পত্রের শেষে এসে একটি নতুন বিষয়ের অবতারণা করেছেন। তার বক্তব্য হল, মির্যা সাহেবের মিথ্যাবাদী হবার একটি বড় প্রমাণ হচ্ছে, যারা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছিলেন আর যাদেরকে তিনি তাঁর আস্থাভাজন বলে মনে করতেন তাদের কয়েকজন তাঁকে পরিত্যাগ করে চলে গেছে এবং তাঁকে কাফের ও মিথ্যাবাদী আখ্যা দিয়েছে। তিনি সত্যবাদী হয়ে থাকলে কেউ তাঁকে পরিত্যাগ করত না।

উত্তর: ‘আল্লামা’-র অবগতির জন্য বলছি, সর্বশেষ ও সম্পূর্ণ সত্য ধর্ম ইসলাম আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত এবং স্বয়ং বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি অবতীর্ণ। সবচেয়ে বড় এ সত্যকে আর সর্বশ্রেষ্ঠ এ নবীকে মান্য করার পরও হতভাগাদের একাংশ প্রকাশ্যভাবে ধর্মত্যাগ করেছে তথা ‘মুরতাদ’ হয়েছে। ‘আল্লামা’ এ জামা’ত থেকে সরে যাবার কারণে হযরত মির্যা সাহেবের সত্যতার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যদি তার এই প্রশ্ন সঠিক হয়ে থাকে তাহলে ইসলামের প্রাথমিক যুগে যারা মুরতাদ হয়েছিল তাদের বিষয়টি তিনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? ইহকালীন জীবন যে একটি পরীক্ষা কেন্দ্র আর এ জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মানুষ যে ঈমানের পরীক্ষা দিতে দিতে পার হয় এ বিষয়ে আলেম মাত্রই অবগত আছেন। অতীতেও বহু মানুষএ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে, তদনুযায়ী আহমদীয়াতের প্রাথমিক পর্যায়েও হয়েছে। কিন্তু এতে সত্যবাদীর সত্যতা বা সত্য জামা’তের ঈমান ম্লান হয় না।

কেউ ধর্মত্যাগ করে চলে গেলে মুসলমানদের যে কোন ক্ষতি হবে না একথা উল্লেখ করে মহান আল্লাহ্ কুরআন শরীফে আয়াত নাযেল করে বলেছেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ

হে যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের মধ্য থেকে যে নিজ ধর্ম ত্যাগ করে ফিরে যায় এর বিনিময়ে আল্লাহ্ এমন এক জাতি নিয়ে আসবেন যাদেরকে আল্লাহ্ ভালবাসবেন এবং যারা আল্লাহকে ভালবাসবে। (সূরা মায়েদা: ৫৫-এর প্রথমাংশ)

অতএব ইসলাম গ্রহণ করার পরও যে অভাগারা সত্যপথ পরিহার করতে পারে একথা স্পষ্টভাবে আল-কুরআনেই লেখা আছে। আর একথাও লেখা আছে, এরা ফিরে গেলে সত্য ধর্মের কোন ক্ষতিই হবে না বরং আল্লাহ্ এদের পরিবর্তে নতুন নতুন জাতি ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসবেন। আর এটি সত্য জামাতের লক্ষণ। তাদের একজন ফিরে গেলে আল্লাহ তাদের সংখ্যা কমান না বরং অনেকগুণ বৃদ্ধি করে দেন। অতএব ঐশী জামা’ত তথা খোদার পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠিত সম্প্রদায়ের মাঝেও কোন কোন অভাগা মুরতাদ হতে পারে একথা কুরআন দ্বারা সাব্যস্ত।

‘আল্লামা’-র একটি আপত্তি হল, হযরত মির্যা সাহেব যাদের প্রশংসা করেছেন তারা কীভাবে মুরতাদ হতে পারে? পাঠকবৃন্দ ভালভাবেই জানেন, মহানবী (সা.) সহীহ হাদীসে বলেছেন,

إنما أصحابي كالنجوم ، فبأيهم اقتديتم اهتديتم

নিশ্চয় আমার সাহাবীরা তারকা সদৃশ, এদের যেকোন একজনের অনুসরণ করলেই তোমরা সঠিক পথ পেয়ে যাবে (ইবানাতুল কুবরা লি-ইবন্ বাত্তাহ)। যাদের এত প্রশংসা মহানবী (সা.) নিজে করেছেন তাদের কেউ কি কখনও মুরতাদ হয় নি?

একবার একজন আরব বেদুঈন মদীনায় এসে মুসলমান হবার পর জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। সে এটিকে ইসলাম গ্রহণের কুফল বলে মনে করে এবং প্রকাশ্যে ইসলাম ত্যাগের ঘোষণা দিয়ে মহানবী (সা.)-এর চোখের সামনে মদীনা শরীফ ত্যাগ করে। রসূলুল্লাহ (সা.) তাকে যেতে বাধাও দেন নি অথবা তাকে হত্যাযোগ্য অপরাধীও সাব্যস্ত করেন নি (বুখারী কিতাবুল হাজ্জ, বাব-আল মাদীনাতু তানফীল খুবুস)।

এবার নৈকট্যপ্রাপ্ত একজন সাহাবীর ঘটনা। আব্দুল্লাহ্ বিন সা’দ বিন আবি সারাহ কুরআনের ওহী সংরক্ষণের কাজে লিপিকারের দায়িত্ব পালন করতেন । তিনি কেবল ধর্মত্যাগ করে মুরতাদই হন নি বরং মদীনা ছেড়ে মক্কায় গিয়ে সশস্ত্র আগ্রাসীদের দলে যোগ দেন । মক্কা বিজয়ের দিন তাকে সাধারণ ক্ষমার আওতা বহির্ভূত রাখা হয় । পরবর্তীতে এই অপরাধী হযরত উসমান(রা.)-এর কাছে আশ্রয় নেয় । আর অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাওয়ার কারণে এবং হযরত উসমানের সুপারিশে মহানবী(সা. ) তাকে ক্ষমা করে দেন । কেবল তাই নয়, পরবর্তীতে এই 'সাবেক মুরতাদ' খলীফার পক্ষ থেকে মিশরের গভর্নরের দায়িত্বও পালন করেন (ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনুদিত সীরাতুন নবী-ইবনে হিশাম, ৪ র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৪ ও ৬৫)।

অতএব ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ সাহেবের আপত্তি ধোপে টিকল না। কে মানল আর কে মানল না, কে টিকল আর কে টিকল না সেদিক না তাকিয়ে বুদ্ধিমানরা দাবীদারের দাবী মনোযোগ দিয়ে শুনে কুরআন, সুন্নত ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী তা যাচাই করে সত্য-মিথ্যা পরখ করে। আহমদীরা তাই করেছে এবং এসবই আমাদের কষ্টিপাথর।

৩ নম্বরে উল্লিখিত শামসুদ্দীন মুরতাদ মিস্ত্রী হামিদুদ্দীন সাহেবের ছেলে। ২০০৩ সালে নৈতিক পদস্খলনের কারণে তাকে আহমদীয়া জামা’ত থেকে বের করে দেয়া হলে সে যোগাযোগ ছেড়ে দেয়।

অবশেষে ২০১৩ অর্থাৎ উক্ত বহিষ্কারের ১০ বছরের পর পাকিস্তানী মোল্লা-হুজুররা একে মসীহ মাওউদ (আ.)-এর খান্দানের সদস্য হিসেবে মিথ্যা প্রচারণা চালায়। যাকে আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত অনৈতিক কাজের জন্য বহু বছর বহিষ্কার করেছে আর যে কোথাও ঠাঁই না পেয়ে ধর্মব্যবসায়ী হুজুরদের কোলে আশ্রয় নিয়েছে তাকে নিয়ে গর্ব করা একজন হাক্কানী আলেমের পক্ষে সত্যিই শোভা পায় না।

(পুস্তকঃ হে ‘আল্লামা’! - প্রকৃত ইসলামই আমাদের ঠিকানা)

আপনার উত্তর যোগ করুন

আপনার উত্তরটি একজন এডমিন রিভিউ করে অনুমোদন করবেন।