আপত্তির জবাব

নবুওয়াতের ধারাবাহিকতা

নবুওয়াতের ধারাবাহিকতা বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামা’ত ও আহমদীদের মাঝে কোন বিরোধ নেই। শুধুমাত্র এর ব্যাখ্যাগত সূক্ষ্মতায় মতানৈক্য আছে। মুসলমানদের সকল ফিরকা মহানবী (সা.)-কে খাতামান নবীঈন বলে বিশ্বাস করেও শেষ যুগে একজন নবীর প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকার করে। আমরাও এই প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করি। সকল ফিরকা একমত, মহানবী (সা.) খাতামান নবীঈন হওয়া সত্ত্বেও শেষ যুগে ঈসা নবীউল্লাহ্ কিয়ামতের পূর্বে আগমন করবেন। আমরাও এ বিশ্বাসের সাথে একমত। আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত বলে, পূর্ববর্তী বনী ইসরাঈলী ঈসা (আ.) স্বাভাবিকভাবে নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করে ইন্তেকাল করেছেন তাই তাঁর বাহ্যিক আগমনের অর্থ গ্রহণযোগ্য নয় বরং রূপক অর্থ প্রযোজ্য হবে। আর অন্যান্য ফিরকার দাবী হল, দু’হাজার বছর বয়সী ঈসা-ই এখনও সশরীরে ৪র্থ আকাশে জীবিত আছেন, তাই তিনিই আসবেন। মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) রূপকার্থে সেই প্রতিশ্রুত মসীহ্ হবার দাবী করেছেন। মির্যা সাহেব মহানবী (সা.)-কে বাদ দিয়ে স্বতন্ত্র কোন নবুওয়তের দাবী করেন নি। যারা বলে মির্যা সাহেব স্বতন্ত্র নবুওয়তের দাবী করেছেন তারা মিথ্যা বলে। মির্যা সাহেব তাঁর এক পুস্তকে তার সারা জীবনের লেখার সারাংশ ও মূল মর্ম তুলে ধরেছেন আশা করি এ লেখাটি পড়লে পাঠকের মনে আর কোন সংশয় থাকবে না।

হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) বলছেন,

“যেসব স্থানে আমি নবুওত বা রিসালত অস্বীকার করেছি কেবল ‘স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে আমি শরীয়তবাহক নই’ - এ অর্থেই করেছি আর আমি স্বয়ংসম্পূর্ণ নবীও নই। কিন্তু আমি আমার অনুসৃত রসূল (সা.)-এর কাছ থেকে আত্মিক কল্যাণ লাভ করে আর নিজের জন্য তাঁর নাম লাভ করে তাঁর মধ্যস্থতায় খোদার পক্ষ থেকে অদৃশ্য বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেছি, তবে নতুন কোন শরীয়ত ছাড়া - এ আঙ্গিকে নবী আখ্যায়িত হবার বিষয়টি আমি কখনও অস্বীকার করি নি। বরং এ অর্থেই আল্লাহ্ তা’লা আমাকে নবী ও রসূল নামে ডেকেছেন” (এক গালাতি কা ইযালা, পৃষ্ঠা-৮)।

তিনি আরো বলেন, “এখন মুহাম্মদী নবুওয়ত ছাড়া সমস্ত নবুওত বন্ধ। শরীয়তবাহক কোন নবী আসতে পারে না। শরীয়ত বিহীন নবী হতে পারে তবে কেবল সে-ই যে প্রথমে উম্মতী হবে” (তাজাল্লিয়াতে ইলাহিয়া, পৃষ্ঠা ২৫)।

এক ধরনের নবুওয়তের অস্বীকার, আবার এক ধরনের নবুওতের দাবী করা স্ববিরোধ নয়। যেমন, কেউ যখন বলে, ‘আমি নৌপথে চট্টগ্রাম যাই নি। তবে আমি রেলপথে কয়েকবার চট্টগ্রাম গিয়েছি।’ এ বক্তব্য দু’টির মাঝে কোন স্ববিরোধ নেই। এক ধরনের পথে যাত্রা না করার কথা হয়েছে আবার আরেক ধরনের পথে যাত্রা করে গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা বলা হচ্ছে। আবার আরেকটি অভিব্যক্তি দেখুন, ‘আমি চাকুরীর টাকা দিয়ে এ বাড়িটি কিনি নি। তবে পৈত্রিক সম্পত্তির বিক্রিলব্ধ টাকা দিয়ে এ বাড়িটি ক্রয় করেছি।’ বাড়িটি ক্রয় করার কথা অস্বীকার করা হচ্ছে না কেবল এটি ক্রয় করার মূলধন কীভাবে অর্জিত হল সে বিষয়ে স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে মাত্র। ঠিক এভাবেই হযরত মির্যা সাহেব স্বয়ংসম্পূর্ণ তথা নিজ ব্যক্তিগত গুণে নবুওত অর্জন অস্বীকার করে এসেছেন, শরীয়তবাহক নবুওয়ত লাভের কথাও অস্বীকার করেছেন। কিন্তু মহানবী রসূলুল্লাহ্ হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মধ্যস্থতায় ও আনুগত্যে উম্মতী নবুওয়ত লাভের কথা কখনও অস্বীকার করেন নি। আগাগোড়া তাঁর সমস্ত বক্তব্যের সারাংশ তিনি নিজেই টেনে দিয়েছেন।

(পুস্তকঃ হে ‘আল্লামা’! - প্রকৃত ইসলামই আমাদের ঠিকানা)

আপনার উত্তর যোগ করুন

আপনার উত্তরটি একজন এডমিন রিভিউ করে অনুমোদন করবেন।