আপত্তির জবাব

তাঁর লেখায় ইসলামী সাহিত্য নিয়ে আপত্তি

‘আল্লামা’-র আপত্তি হল, মির্যা সাহেব নাকি বিভিন্ন মিথ্যা উদ্ধৃতি দিয়ে ইসলামী সাহিত্যের চরম বিকৃতি করেছেন।

উত্তর: মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) আল্লাহ্ তা’লার পক্ষ থেকে প্রত্যাদিষ্ট হয়ে এ যুগের মসীহ্ ও মাহদী হয়ে এসেছেন। আমরা তাকে আল্লাহ্ প্রেরিত মহাপুরুষ বলে মান্য করি। তাই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস মির্যা সাহেব খিয়ানত করতেই পারেন না। কেননা আল্লাহ্ তা’লা পবিত্র কুরআনে বলেছেন,

وماكان لنبى أن يغل

( সূরা আলে-ইমরান: ১৬২) নবী কখনও খেয়ানত করতে পারে না।

‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ আপত্তি উত্থাপন করেছেন, মির্যা সাহেব নাকি মুজাদ্দেদে আলফে সানী (রহ.)-এর একটি উদ্ধৃতি দু’স্থানে দু’রকম করে উল্লেখ করেছেন। একস্থানে মির্যা সাহেব মুহাদ্দাস শব্দ লিখেছেন আর অপর স্থানে এ শব্দটি পরিবর্তন করে নবী শব্দ লিখে মুজাদ্দিদে আলফে সানির প্রতি আরোপ করেছেন। এটি ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদের স্পষ্ট প্রতারণা ছাড়া কিছু নয়।

প্রথমত, মির্যা সাহেব রূহানী খাযায়েন ১/৬৫ পৃষ্ঠায় এমন কোন কথা বলেন নি। হ্যাঁ, মির্যা সাহেব তার বিভিন্ন পুস্তকে মুজাদ্দিদে আলফে সানি (রহ.)-এর বিভিন্ন উদ্ধৃতি ও বক্তব্য তুলে ধরেছেন। রূহানী খাযায়েন ১ম খণ্ডের ৬৫২ পৃষ্ঠায়ও মুজাদ্দিদে আলফে সানি (রহ.)-এর বরাতে একটি বক্তব্য রয়েছে। আর সেই বক্তব্য হল, নবী হওয়া ছাড়াও উম্মতের সাধারণ সদস্যরাও আল্লাহ্ তা’লার সাথে বাক্যালাপের সৌভাগ্য পেতে পারে। আর এমন সৌভাগ্যবানদের মুহাদ্দাস বলা হয়। পাঠক, মনে রাখতে হবে এখানে নবী ছাড়া সাধারণ উম্মতীদের কথা বলা হচ্ছে। এখন মির্যা সাহেব রূহানী খাযায়েন ২২/৪০৬ পৃষ্ঠায় যে বক্তব্য রেখেছেন তা পড়লেই পাঠকের কাছে ‘আল্লামা’র প্রতারণা ও বিদ্বেষ স্পষ্ট হয়ে যাবে।

প্রথমে মনে রাখতে হবে, মির্যা সাহেব রূহানী খাযায়েন ২২/৪০৬ অংশে যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তা মুজাদ্দিদ আলফে সানির অবিকল মূল পাঠ নয়। মুজাদ্দিদ আলফে সানির ভাষা ফারসী মির্যা সাহেব মুজাদ্দিদে আলফে সানির বক্তব্যকে উর্দু ভাষায় ভাবানুবাদ করে উপস্থাপন করেছেন। অর্থাৎ মুজাদ্দিদে আলফে সানি (রহ.)-এর বক্তব্যের আলোকে বক্তব্য তুলে ধরেছেন। ‘আল্লামা’র আপত্তি হল, মুজাদ্দেদ আলফে সানি (রহ.) নবী শব্দ ব্যবহার করেন নি। এখন দেখা যাক, মির্যা সাহেব মাকতুবাতে ইমাম রাব্বানীর আলোকে যে কথা বলেছেন তার সাথে ইমাম রাব্বানীর বক্তব্যের মিল পাওয়া যায় কিনা। এখন মাকতুবাত ইমাম রাব্বানীর উদ্ধৃতি দেখে নেই।

মুজাদ্দিদে আলফে সানি (রহ.)-এর উদ্ধৃতির অনুবাদ হল, পবিত্র কুরআনে ব্যবহৃত রূপক আয়াতসমূহ এগুলোর বাহ্যিক অর্থে নয় বরং ব্যাখ্যাকৃত অর্থে গৃহীত হয়ে থাকে। যেমন আল্লাহ্ তালা পবিত্র কুরআনে বলেন, এসবের ব্যাখ্যা আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ জানে না। অতএব বুঝা গেল, রূপক আয়াতগুলো আল্লাহর দৃষ্টিতেও ব্যাখ্যাযোগ্য এবং এসবের বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ প্রকৃত উদ্দেশ্য নয় আর আল্লাহ্ তা’লা জ্ঞানে পরিপক্ক আলেমদেরকেও এসবের ব্যাখ্যার জ্ঞান দিয়ে থাকেন। এরচেয়ে উন্নততর ‘অদৃশ্যের জ্ঞান’ যা কেবল খোদা তা'লারই কর্তৃত্বাধীন এই পর্যায়ের জ্ঞান আল্লাহ্ তালা কেবল তার রসূলদেরই দিয়ে থাকেন। ‘হাত’ অর্থ ‘ক্ষমতা’ আর ‘চেহারা’ অর্থ ‘আল্লাহর সত্তা’- বিষয়টি কখনও এতটুকুর মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং এই উন্নত ব্যাখ্যাসম্বলিত জ্ঞান তিনি কেবল তার একান্ত নৈকট্যপ্রাপ্ত বিশেষ বান্দাদেরকেই প্রদান করে থাকেন। (মকতুবাত ইমাম রাব্বানী: ১ ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৪৬, পত্র নম্বর ৩১০)

এই উদ্ধৃতিতে হযরত ইমাম রাব্বানী মুজাদ্দিদে আলফে সানি (রহ.) স্পষ্টভাবে লিখেছেন, কুরআনের তত্ত্বজ্ঞান বা রহস্যাবলি আল্লাহ্ তা’লা ইলহামের মাধ্যমে উম্মতের মনোনিত বান্দাদের কাছে প্রকাশ করে থাকেন। কিন্তু যাদের কাছে আল্লাহ্ তা’লা তার বিশেষ অদৃশ্য-সংবাদ প্রকাশ করেন তিনি রসূল হয়ে থাকেন। অতএব মির্যা সাহেব মোটেও খিয়ানত করেন নি। একস্থানে নবী-রসূলকে বাদ দিয়ে সাধারণ উম্মতীদের কথা বলা হয়েছে আর অপর স্থানে উম্মতের বিশেষ মনোনিত বান্দাদের কথা বলা হয়েছে যেসব বান্দাদের জন্য মুজাদ্দিদ আলফে সানি (রহ.) নিজে রসূল শব্দ ব্যবহার করেছেন। অতএব ‘আল্লামা’-র আপত্তি ধোপে টেকে না বরং সুগভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ও আমানতদারীর সাথে বিষয়বস্তুকে ফুটিয়ে তোলার কৃতিত্ব মির্যা সাহেবের স্কন্ধেই বর্তায়।

(পুস্তকঃ হে ‘আল্লামা’! - প্রকৃত ইসলামই আমাদের ঠিকানা)

আপনার উত্তর যোগ করুন

আপনার উত্তরটি একজন এডমিন রিভিউ করে অনুমোদন করবেন।