আপত্তির জবাব

তাঁর লেখায় কুরআন মাজীদ সম্পর্কে আপত্তি

‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ সাহেব হযরত মির্যা সাহেবের বিরুদ্ধে কুরআনকে আবমাননা করার অপবাদ দিয়েছেন। এই মিথ্যাচার দিনকে রাত বলার মত একটি বিষয়। পবিত্র কুরআনকে অবমাননা করতে নয় বরং কুরআন শরীফের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে তাঁর আগমন ঘটেছে। তিনি বলেছেন: “কুরআন এক সপ্তাহের মধ্যে মানুষকে পবিত্র করতে সক্ষম যদি এর বাহ্যিক ও অন্তর্নিহিত শিক্ষা থেকে সে বিমুখ না হয়। কুরআন ছাড়া আর কোন্ শাস্ত্র এ দোয়া শিখিয়ে আর আশ্বাস দিয়ে বলে, ‘ইহদিনাস্ সিরাতাল মুস্তাকীম সীরাতাল্লাযীনা আনআমতা আলাইহিম’ অর্থাৎ আমাদেরকে সেই পুরস্কার লাভের পথ প্রদর্শন কর যা পূর্ববর্তী নবী, রসূল, সিদ্দীক, শহীদ ও সালেহদেরকে প্রদর্শন করা হয়েছে। অতএব নিজেদের মনোবল দৃঢ় কর এবং কুরআন শরীফের আহ্বানকে অগ্রাহ্য করো না। কারণ, এটা তোমাদেরকে সেসব আশিস প্রদান করতে চায় যা পূর্ববর্তীদেরকে প্রদান করা হয়েছিল।” (রূহানী খাযায়েন, ১৯শ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৭)
১. আপত্তি: কুরআনকে আমি কাদিয়ানের কাছে অবতীর্ণ করেছি। মির্যা সাহেবের কাছে এই ওহী নাযিল হয়েছে। (তাযকেরাহ ৫৯, দ্র. ৪র্থ এডিশন)

উত্তর: চলুন এ বিষয়ে হযরত সাহেবের সম্পূর্ণ ইলহামটি দেখে নেয়া যাক। ইলহামটি হল,

ইন্না আনযালনাহু কারীবান মিনাল কাদিয়ান। ওয়া বিলহাক্কি আনযালনাহু ওয়া বিল-হাক্কি নাযালা। সাদাকাল্লাহু ওয়া রাসূলুহু ওয়া কানা আমরুল্লাহি মাফউলা। (তাযকেরাহ ৫৯, দ্র. ৪র্থ এডিশন)

এই ইলহামটির ঠিক নিচে মির্যা সাহেবকৃত অর্থ এভাবে দেয়া আছে: “আমি এসব লক্ষণাবলী ও অলৌকিক নিদর্শনাবলীকে এবং এই তত্ত্বজ্ঞান ও সূক্ষ্মতত্ত্বপূর্ণ ইলহাম কাদিয়ানের নিকটে অবতীর্ণ করেছি। আর যথার্থ প্রয়োজনে অবতীর্ণ করেছি এবং প্রয়োজন সাপেক্ষেই অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ ও তাঁর রসূল আগাম সংবাদ দিয়েছিলেন যা পূর্ণ হয়েছে আর আল্লাহ্ যা ইচ্ছা পোষণ করেছেন তা পূর্ণ হবারই কথা।” (তাযকেরাহ, ৪র্থ এ্যাডিশন পৃষ্ঠা ৫৯)

পাঠকবৃন্দ লক্ষ্য করুন, আরবী ইলহামটিতে কুরআন অবতীর্ণ করার কথা বলাই হয় নি। ‘কুরআন’ শব্দটিই এতে নেই। তা সত্ত্বেও মির্যা সাহেবের শত্রুতা মানুষকে কতটা অন্ধ করে দিয়েছে। ‘আল্লামা’ নিজেও ভাল করে জানেন, হযরত মির্যা সাহেবের প্রতি কুরআন অবতীর্ণ হয় নি। বরং শেষ যুগে প্রতিশ্রুত মহাপুরুষের কাছে কুরআনের মাঝে নিহিত ঐশীজ্ঞান ও মারেফাত অবতীর্ণ করার কথা এতে বলা হয়েছে। মির্যা সাহেব নিজে এ ইলহামের অনুবাদ করে দিয়েছেন (উদ্ধৃত মূল পৃষ্ঠাটি ১৪৮ পৃষ্ঠায় দ্রষ্টব্য)। একজন আরবী-উর্দু জানা ‘আল্লামা’ কেমন করে এত প্রাঞ্জল মিথ্যা বানিয়ে জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে পারেন- এটি ভাবতেও অবাক লাগে! সাধারণ বাঙালি মুসলমান আরবী উর্দু জানে না বলে তাদেরকে এত বোকা মনে করার কোন কারণ নেই।

পাঠকবৃন্দ, শুধু মানুষ যেন বিভ্রান্ত না হয় তাই আমরা ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদের এসব আপত্তির উত্তর লিখছি নইলে যার পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রতারণা সাব্যস্ত হয়ে যায় তাকে উত্তর দেয়ার কোন নৈতিক দায়িত্ব প্রতিপক্ষের ওপর বর্তায় না।

হযরত মির্যা সাহেব উক্ত ইলহামের যে ব্যাখ্যা করেছেন তা হল, হাদীসে বর্ণিত হয়েছে শেষযুগের মহাপুরুষ দামেস্কের পূর্বাঞ্চলে শুভ্র মিনারার নিকটে আবির্ভূত হবেন। উক্ত ইলহামে ইনদা কাদিয়ান বলে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে পূর্বাঞ্চলের সেই স্থান হল কাদিয়ান। অর্থাৎ যে স্থান থেকে প্রকৃত ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। (এই ইলহামের ব্যাখ্যা দেখার জন্য দেখুন ইযালায়ে আওহাম পৃষ্ঠা ৭৩)

যেহেতু মির্যা সাহেবের এ ইলহামে পবিত্র কুরআনের নামটি পর্যন্ত উল্লেখ নেই তাই ইলহামটিকে কুরআন অবমাননাকর বলার কোন সুযোগই নেই।
২. আপত্তি: কুরআন আল্লাহর কিতাব ও আমার মুখের কথা। (তাযকেরাহ ৭৭, দ্র. ৪র্থ এডিশন)

উত্তর: এ ইলহামটি সম্পর্কে মসীহ্ মাওউদ (আ.)কে জিজ্ঞেস করা হল, হযূর এই যে ইলহাম হল- কুরআন আল্লাহর কিতাব আর আমার মুখের বাণী- এখানে ‘আমার’ সর্বনামটি কার জন্য প্রযোজ্য অর্থাৎ কার মুখের কথা? তিনি (আ.) বললেন, আল্লাহ্ মুখের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ্ তা’লা বলছেন, আমার মুখের কথা। এধরনের সর্বনামের পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার অনেক উদাহরণ পবিত্র কুরআনে রয়েছে। (বদর পত্রিকা, খণ্ড ৬ নম্বর ২৮ ১১ জুলাই ১৯০৭ পৃষ্ঠা ৬)

অতএব যেখানে মির্যা সাহেব নিজে বলে গেছেন এই ইলহামে ‘আমার’ সর্বনামটি আল্লাহর দিকে আরোপিত তাই আপত্তির কোন সুযোগই নেই। ‘আল্লামা’কে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য ‘ইলতিফাতে যামায়ের’ বা সর্বনাম পদ পরিবর্তন এর উদাহরণ পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট পাওয়া যায়। তাহলে কি পবিত্র কুরআন পড়ে আলেম হন নি? কেননা দেখুন কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি,

সূরা ফাতেহা আমাদের সবারই জানা। সূরা ফাতেহার সূচনাতে সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক প্রভু। তিনি রহমান, রহীম এবং মালিকি ইয়াওমিদ্দীন। এখানে যিনি, তিনি, সব সর্বনাম আল্লাহর দিকে আরোপিত। এরপরে আয়াতে হঠাৎ বলা হল, আমরা তোমারই ইবাদত করি, আর তোমারই কাছে সাহায্য চাই। প্রথম কয়েকটি আয়াত ছিল, গায়েবের সর্বনাম তথা নাম পুরুষ। এরপর হঠাৎ হয়ে গেল মধ্যম পুরুষ বা মুখাতাব-এর সিগা বা সর্বনাম।

আবার দেখুন, সূরা লুকমানের ১১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ তা'লা বলছেন,

خَلَقَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا وَأَلْقَى فِي الْأَرْضِ رَوَاسِيَ أَن تَمِيدَ بِكُمْ وَبَثَّ فِيهَا مِن كُلِّ دَابَّةٍ وَأَنزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَنبَتْنَا فِيهَا مِن كُلِّ زَوْجٍ كَرِيمٍ

অর্থ: তিনি আকাশমণ্ডলিকে সৃষ্টি করেছেন কোন খুঁটি ব্যতিত তোমরা তা দেখছ। আর পৃথিবীতে পর্বতমালা স্থাপন করেছেন যেন এটি তোমাদের নিয়ে পড়ে। আর এতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সকল প্রকার প্রাণি। আর আমি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছি এরপর এর দ্বারা আমি এতে সব ধরনের উদ্ভিদ উদগত করেছি।

পাঠক লক্ষ্য করুন, আয়াত শুরু হচ্ছে ‘তিনি’ দিয়ে কিন্তু এরপরই শুরু হয়ে গেল ‘আমি বৃষ্টি বর্ষণ করি’। ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ কি তাহলে এতে আপত্তি করবেন, আল্লাহ্ আকাশ সৃষ্টি করেছেন, পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, সকল প্রাণি তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন আর মুহাম্মদ (সা.) বলছেন, আমি বৃষ্টি বর্ষণ করেছি। নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক। এমন সংশয় প্রকাশ বা বক্র অর্থ খোদাভীরু কোন আলেম করতেই পারেন না।

‘আল্লামা’ তো আর অল্পবিদ্যার আলেম নন তিনি তো আরবী উর্দু জানা মাদ্রাসা পাশ আলেম। ‘আল্লামা’ নিশ্চয় ইলতেফাতে যামায়েরের বিষয়ে জ্ঞান রাখেন। প্রশ্ন জাগে এতসব জানা সত্ত্বেও তিনি কেন এই অযৌক্তিক আপত্তিটি উত্থাপন করলেন।
৩. আপত্তি: হযরত মির্যা সাহেবের বিরুদ্ধে কুরআন অবমাননার আর একটি অভিযোগ উত্থাপন করে তিনি বলেছেন হযরত মির্যা সাহেব নাকি বলেছেন “অথবা স্বীকার করতেই হবে যে কুরআন শরিফ অশ্লিল গালি দিয়ে ভর্তি এবং কুরআন কঠোর ভাষার রাস্তা ব্যবহার করেছে। (রুহানী খাজায়েন, ৩/১২৫)

উত্তর: যারা পবিত্র ইসলাম, কুরআন এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বিরুদ্ধে একচেটিয়াভাবে অশ্লীল ও অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করে এসেছে তাদের বিরুদ্ধে হযরত মির্যা সাহেব কঠোর ভাষা ব্যবহার করেছেন। ইসলাম, কুরআন এবং মহানবী (সা.)-এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীদের বিরুদ্ধে মির্যা সাহেবের কঠোর অবস্থান নিয়ে আপত্তি করা হয়, কেন মির্যা সাহেব কঠোর ভাষা ব্যবহার করেছেন? এই আপত্তি খণ্ডন করে হযরত মির্যা সাহেব দীর্ঘ উত্তর প্রদান করেছেন। তিনি ইযালায়ে আওহাম গ্রন্থে এর বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। সেখান থেকে খণ্ডিত ও বিকৃত ভাবানুবাদ উপস্থাপন করে ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ সাহেব বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার পায়তারা করছেন। অন্যকে মিছামিছি খুশি করার জন্য সত্য গোপন করাকে বাংলাতে বলা হয় চাটুকারিতা আর আরবীতে বলা হয় মুদাহানাত।

কুরআন শরিফ এই ধরনের চাটুকারিতার ঘোর বিরোধী। সূরা কালামে আল্লাহ্ তা’লা বলছেন,

فَلَا تُطِعِ الْمُكَذِّبِينَ وَدُّوا لَوْ تُدْهِنُ فَيُدْهِنُونَ

অর্থাৎ ‘আর তুমি মিথ্যাবাদীদের অনুসরণ করো না, তারা চায় তুমি নমনীয় হও তাহলে তারাও নমনীয় হবে’ (সূরা কলম: ৯-১০)। হযরত মির্যা সাহেব ইসলামের স্বপক্ষে কলমযুদ্ধে নেমেছিলেন এবং খোদা-প্রদত্ত দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য এ কাজ করছেন। কুরআন শরিফ ভদ্রতা এবং শালীনতা অবলম্বন করা সত্ত্বেও সত্য কথা কখনও গোপন করে নি। নির্ভিকভাবে সত্য উপস্থাপন করেছে। এ কথা উপস্থাপন করতে গিয়ে তিনি (আ.) কুরআন থেকে একের পর এক উদাহরণ দিয়েছেন। আমার পক্ষ থেকে সত্য কথা নির্বিঘ্নে বলা যদি অশালীনতা এবং গালি হয়ে থাকে তাহলে কুরআন শরিফের বিরুদ্ধেও এই একই অভিযোগ বর্তাবে। কিন্তু মির্যা সাহেব বলেছেন, গালিগালাজ এক জিনিষ এবং সত্যের অকপট বর্হিপ্রকাশ ভিন্ন জিনিষ। আমরা প্রশ্ন করতে চাই, খ্রিষ্টান এবং আর্যসমাজী পুরোহিত ও পাদ্রীরা ইসলামের বিপক্ষে যেসব কুরুচীপূর্ণ কথা এবং অশ্লিল কথা বলেছে তার সদুত্তর দিয়ে মির্যা সাহেব কি সঠিক কাজ করেছেন নাকি বেঠিক কাজ করেছেন? যারা আল্লাহ্ এবং তাঁর রসুল এবং তাঁর কুরআন এর বিরুদ্ধে বাজে কথা বলে তাদেরকে কী ধরনের উত্তর দিলে ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ খুশি হবেন। আজ ১২৭ বছর পর মির্যা সাহেবের বিরুদ্ধে আপত্তি করা সহজ, কিন্তু তিনি যে অন্ধকার যুগে ইসলামের আলো পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য লড়াই করেছেন তখন তাঁকে সঙ্গ দেয়ার মত কেউ ছিল না। কলমের যুদ্ধে একা তিনি বাজিমাত করে গেছেন। আপত্তিকারীকে ভদ্রতা এবং শালীনতার মনগড়া মানদণ্ড খণ্ডন করার জন্য হযরত মির্যা সাহেব কুরআনের কঠোর ভাষার উত্তরগুলো তুলে ধরে তার অভিযোগের অপনোদন করেছেন। কুরআনকে অবমাননা করার জন্য করা হয়নি। বরং মুসলমানদের ঈমানী আত্মাভিমান জাগ্রত করার জন্য কুরআন থেকে এই বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। সূরা আনকাবূতে আল্লাহ তা’লা বলেছেন,

وَلَا تُجَادِلُوا أَهْلَ الْكِتَابِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِلَّا الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْهُمْ ...

বলা হয়েছে, ‘তোমরা কিতাবধারীদের সাথে সর্বোত্তম পন্থায় ধর্মীয় বিতন্ডা করবে তবে তাদের মাঝ থেকে যারা অন্যায় করেছে তাদের বিষয়টি ভিন্ন’... (সূরা আনকাবুত: ৪৭)। তবে তাদের মাঝ থেকে যারা অন্যায় করেছে হযরত মির্যা সাহেব কুরআনের এই স্বর্ণশিক্ষা অনুযায়ী কেবল তাদের সীমালঙ্ঘনের পর তাদেরকে কড়া ভাষায় জবাব দিয়েছেন। যে ব্যক্তি কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী আমল করে সে কি কুরআন অবমাননা করে? মির্যা সাহেব কুরআনের শিক্ষা বাস্তবায়ন করেছেন মাত্র।
৪. আপত্তি: কুরআনের অমর্যাদা প্রসঙ্গে তিনি আরেকটি আপত্তি তুলে বলেছেন, হযরত মির্যা সাহেব তার প্রতি অবতীর্ণ ওহীর প্রতি সেভাবে ঈমান রাখেন যেভাবে তিনি কুরআনের প্রতি ঈমান রাখেন।

উত্তর: এতে আপত্তি কীসের? যাকে আল্লাহ্ তা’লা মহানবী (সা.)-এর অনুসরণের কল্যাণে নিজের পক্ষ থেকে ইলহামে ভূষিত করেন এবং সেই সত্য ইলহামপ্রাপ্ত ব্যক্তি যদি আরশের খোদার পক্ষ থেকে ইলহাম লাভ করে থাকেন তাহলে সেই ইলহামের প্রতিও তাঁকে সেভাবে বিশ্বাস করতে হবে যেভাবে কুরআনের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হয়। কেননা উভয়ের উৎসমূল এক ও অভিন্ন।
৫) কুরআন অবমাননার উদাহরণ দিতে গিয়ে আলোচ্য পুস্তকের ৪৪ পৃষ্ঠায় যে পঞ্চম আপত্তিটি উত্থাপন করা হয়েছে সেটি মির্যা সাহেবের বক্তব্যই নয়, তার স্থলাভিষিক্ত কোন খলিফারও বক্তব্য নয়। এর উত্তর দিতে আমরা বাধ্য নই। তবে হ্যাঁ, কুরআন উঠে যাওয়া সম্পর্কে মিশকাতুল মাসাবীহ কিতাবুল ইলমে স্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী বিদ্যমান। কীভাবে ঈমান উঠে যাবে সে সম্পর্কে বুখারী কিতাবুত তাফসীরে স্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে। আর মির্যা বশীর আহমদ এম.এ. সাহেব তার বক্তব্যে এ দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। বলেছেন আল্লাহ্ তা’লা সেই অবক্ষয়প্রাপ্ত যুগে চিকিৎসক হিসেবে হযরত মির্যা সাহেবকে পাঠিয়েছেন। হাদীস দু’টি পরবর্তী আপত্তির উত্তরে দেয়া হয়েছে দেখে নিন।
৬. আপত্তি: হযরত মির্যা সাহেব লিখেছেন, কুরআন ধরাপৃষ্ঠ থেকে উঠে গিয়েছিল। আমি হাদীসের বক্তব্যনুযায়ী তা ঊর্ধ্বোলোক থেকে নিয়ে এসেছি। (রুহানী খাযায়েন ৩/৪৯৩)

উত্তর: হযরত মির্যা সাহেব যেহেতু এস্থলে হাদীসের বরাতে কথা বলেছেন তাই এ বিষয়ে কেবল দু’টি হাদীস উল্লেখ করাই যথেষ্ট হবে। ‘মিশকাতুল মাসাবী’র কিতাবুল ইলমের একটি হাদীস এখানে উল্লেখ করলেই হযরত মির্যা সাহেবের বক্তব্য অনুধাবন করা সহজ হবে। হাদীসটি নিম্নরূপ-

মিশকাত শরীফের হাদীস:

أن يأتي على الناس زمان لا يبقى من الإسلام إلا اسمه ، ولا يبقى من القرآن إلا رسمه ، مساجدهم عامرة وهي خراب من الهدى ، علماؤهم شر من تحت أديم السماء من عندهم تخرج الفتنة وفيهم تعود

“মানুষের উপর এমন এক সময় আসবে, যখন ইসলামের কেবল নাম এবং কুরআনের শুধু অক্ষরগুলো অবশিষ্ট থাকবে। তাদের মসজিদগুলো বাহ্যিকভাবে আড়ম্বরপূর্ণ হবে, কিন্তু হেদায়াতশূন্য থাকবে। তাদের আলেমগণ আকাশের নিম্নস্থ সকল সৃষ্টজীবের মাঝে নিকৃষ্টতম জীব হবে। তাদের মাঝ থেকে নৈরাজ্য মাথাচাড়া দিবে এবং তাদের মধ্যেই তা ফিরে যাবে।” (বায়হাকী, মিশকাত)।

এখানে স্পষ্টভাবে হুযুর (সা.) বলেছেন, এক যুগ আসছে যখন ইসলামের কেবল নাম অবশিষ্ট থাকবে, এর প্রকৃত মর্ম ও শিক্ষা অবশিষ্ট থাকবে না। দ্বিতীয়ত: ধরাপৃষ্ঠ থেকে কুরআনের মর্ম ও প্রকৃত শিক্ষা উবে যাবে অবশিষ্ট থাকবে কেবল এর অক্ষরগুলো অর্থাৎ এর উচ্চারণ নিয়ে মানুষ ব্যতিব্যস্ত থাকবে। মসজিদগুলো সুরম্য অট্টালিকা হবে এবং বাহ্যত জনাকীর্ণও হবে কিন্তু সেগুলো হবে হেদায়াতশূণ্য। তখন অনেক ‘আলেম’ থাকবে, কিন্তু তারা হবে মানুষের বানানো এবং মানুষের স্বীকৃত উলামা। মহানবী (সা.) এ হাদীসে বলেছেন, আকাশের চামড়ার তলে তারা হবে নিকৃষ্টতম জীব। তাদের প্রধানতম লক্ষণ হবে, তাদের কাছ থেকে নৈরাজ্য ছড়াবে এবং তাদের মাঝেই তা ফিরে যাবে।

উপরোক্ত হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হয়, শেষযুগে তথাকথিত আলেমদের কাছে ইসলাম থাকলেও তা হযে কেবল পুঁথিগত ও প্রথাগত একটি বিষয়। আর পবিত্র কুরআনের অক্ষরগুলো ঠিক থাকলেও এর তত্ত্ব ও মর্ম মানুষ উপলব্ধি করবে না।

হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) যে যুগে আগমন করেছিলেন এই হাদীসটি হুবহু সেই যুগের চিত্রায়ন করছে। সে যুগের কবি, সাহিত্যিক ও দার্শনিক সবাই একথা অকপটে স্বীকার করেছেন। আর আজকের যুগের কথা বললে তো এ বিষয়ে কারও দ্বিমতই থাকতে পারে না। কুরআন উঠে যাবে বলতে এদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

‘আর হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী তা আমি পৃথিবীতে নিয়ে এসেছি’- এই বক্তব্যের অর্থ হল, মির্যা সাহেব শেষযুগের প্রত্যাদিষ্ট মহাপুরুষ হয়ে সেই হারানো ঈমানকে পুনরায় পৃথিবীতে নিয়ে এসেছেন। এটিই শেষ যুগের প্রত্যাদিষ্ট মহাপুরুষের জন্য নির্ধারিত কাজ ছিল। নিচের হাদীসটি পড়লে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كُنَّا جُلُوسًا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأُنْزِلَتْ عَلَيْهِ سُورَةُ الْجُمُعَةِ { وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ } قَالَ قُلْتُ مَنْ هُمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَلَمْ يُرَاجِعُهُ حَتَّى سَأَلَ ثَلَاثًا وَفِينَا سَلْمَانُ الْفَارِسِيُّ وَضَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَهُ عَلَى سَلْمَانَ ثُمَّ قَالَ لَوْ كَانَ الْإِيمَانُ عِنْدَ الثَّرَيَّا لَنَا لَهُ رِجَالٌ أَوْ رَجُلٌ مِنْ هَؤُلَاءِ

অনুবাদ: আবূ হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেন- আমরা নবী (সা.)-এর কাছে বসেছিলাম। এ অবস্থায় তাঁর প্রতি নাযিল হল সূরা জুমুআ, যার একটি আয়াত হল - وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ অর্থ “এবং তাদের অন্তর্ভুক্ত অন্য আরেক দলের মাঝেও যারা এখনও তাদের সাথে মিলিত হয়নি (সূরা জুমুআ, আয়াত ০৪)। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! তারা কারা (যাদের মাঝে আপনার আসার কথা)? তিনবার জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও তিনি কোন উত্তর দিলেন না । আমাদের মাঝে সালমান ফারসী (রা.)-ও উপস্থিত ছিলেন। আল্লাহর রসূল সালমান(রা.)-এর ওপর হাত রেখে বললেন, ঈমান সুরাইয়া নক্ষত্রের চলে গেলেও এদের এক বা একাধিক ব্যক্তি তা ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন। (বুখারী: কিতাবুত তাফসীর)

হযরত মির্যা সাহেব পারস্য বংশদ্ভূত সেই প্রতিশ্রুত মহাপুরুষ হবার দাবিদার। তিনি এ জগত থেকে বিলুপ্ত ঈমানকে পুনরুদ্ধার করার জন্য এসেছেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর খলীফাগণও সেই কাজই অব্যাহত রেখেছেন। অতএব হাদীসের ভবিষ্যদ্বাণী তদনুযায়ী তিনি ঈমানকে এবং কুরআনের হারানো জ্ঞানকে উদ্ধার করে গেছেন।

আপত্তি করতে লাইসেন্স লাগে না। কিন্তু প্রশ্ন শুধু একটাই। আল্লাহ্ এবং মুহাম্মদ (সা.) যা বলেছেন মির্যা সাহেব যদি তদনুযায়ীই কথা বলে থাকেন তাহলে এ বিষয়ে আর কোন কথাই থাকতে পারে না। হযরত মির্যা সাহেব বলছেন, কুরআনের শিক্ষা উঠে গেছে। ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদের আপত্তি হল, একথা কীভাবে মির্যা সাহেব বলতে পারেন, আমাদের কুরআন তো উঠে যায় নি। মহানবী (সা.) হাদীসে যে বলেছেন, পবিত্র কুরআন শুধু অক্ষরে থাকবে এর মর্ম থাকবে না। আর বুখারী শরীফের হাদীসে যে মহানবী (সা.) বলেছেন ঈমান উঠে যাবে - মির্যা সাহেব শুধু মহানবী (সা.) এর ভবিষ্যদ্বাণীকৃত সেই যুগকে চিহ্নিত করে দেখিয়েছেন। এটি কুরআন বা ইসলামের অবমাননা নয় বরং এটি মহানবী (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্ণতা যা এক শ্রেণীর আলেম-উলামা হীন স্বার্থ চরিতার্থেমানতে চান না।
ক্রমিক নম্বর ৫-এর পর ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ সাহেব দু'টি প্রশ্ন তুলেছেন, “তাহলে কি আহমদীদের কুরআন থেকে মুসলমানদের কুরআন পৃথক হয়ে গেল? তার মতে, এটি ভিন্ন কুরআন যার জন্য মির্যা সাহেবকে আসতে হয়েছে, আর তাই প্রমাণ হয় এতে আল্লাহর গ্যারান্টি যথেষ্ট ছিল না। (আহমদী বন্ধু: পৃষ্ঠা- ৪৪ দ্রষ্টব্য)

উত্তর: তার এই সুমিষ্ট আপত্তি আমাদেরকে হাসতে বাধ্য করছে। তাকে কে বোঝাবে আল্লাহ তা’লা সূরা হিজরে প্রদত্ত কুরআন সুরক্ষার গ্যারান্টি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে হযরত মির্যা সাহেবকে পাঠিয়েছেন। কুরআন আক্ষরিক অর্থে বিকৃত হবে না বরং কুরআনের শিক্ষা ও মর্মকে বিকৃত করার চেষ্টা যখন করা হবে তার সুরক্ষার জন্য আল্লাহ তা’লা ইমাম মাহদী এবং মসীহ (আ. )-কে পাঠাবেন। তার কাজই হল, কুরআনের প্রকৃত শিক্ষাকে পুনরুদ্ধার করা।
৭. আপত্তি : ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯০৬ এ প্রাপ্ত ইলহামগুলোর মাঝে একটি হল, মা আনা ইল্লা কাল্‌কুরআনে ওয়া সা-ইয়ায্‌হারু আলা ইয়াদাইয়া মা যাহারা মিনাল ফুরকান।

হযরত মসীহ্ মাওউদ (আ.)-কে আল্লাহ তা’লা ইলহাম করে জানিয়েছেন তুমি ঘোষণা দাও- আমি তো কেবল কুরআনের মত এবং অচিরেই আমার মাধ্যমে আমার হাতে সে সব বিষয় প্রকাশিত হবে যা কুরআন দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে।

উত্তর: এ বক্তব্যের বাক্যগুলো পূর্ণাঙ্গিনভাবে তুলে না ধরে উল্টো খণ্ডিত অংশ তুলে ধরে ‘আল্লামা’ বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। ইলহামের মাঝেই এর অর্থ ও মর্ম উল্লিখিত রয়েছে। আর তা হল, আমার মাধ্যমে তা-ই প্রকাশিত হবে যা পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

হযরত মির্যা সাহেবের সারাটা জীবন কুরআনের তত্ত্ব ও মাহাত্ম্য উন্মোচনে নিবেদিত ছিল। তিনি কুরআনের যুক্তি ও শিক্ষা উপস্থাপন করে মিথ্যাকে খণ্ডন করেছেন। তিনি বলেছেন, কুরআন দ্বারা যা সাব্যস্ত সেটাকে গ্রহণ কর আর যা কুরআন বিরোধী বা কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক তা বর্জন কর। একেই বলে কুরআনের প্রকাশ যা মির্যা সাহেবের মাধ্যমে ঘটেছে।
৮. আপত্তি : ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ সাহেবের আপত্তি: মির্যা সাহেব তার উপর নাযিল হওয়া ওহীর সমষ্টিকে নাম দিয়েছে ‘তাযকেরাহ’। অথচ তা কুরআনেরই একটি নাম।

উত্তর: ‘আল্লামা’র জানা উচিত হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.)-এর জীবদ্দশায় তাঁর ওহীর কোন সংকলন প্রকাশিত হয়নি। অতএব এর নাম ‘তাযকিরা’ তিনি কীভাবে রাখবেন? ‘আল্লামা’ দেখছি মিথ্যা বলাকে জায়েযই বানিয়ে ফেলেছেন।

হযরত মির্যা সাহেবের মৃত্যুর অনেক বছর পর তাঁর রচিত বিভিন্ন পুস্তকে এবং প্রকাশিত বিজ্ঞাপন প্রভৃতিতে যেসব ওহী ও ইলহাম ছাপা হয়েছিল সেগুলোকে সংকলন আকারে ছাপিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। এটি কোন ধর্ম বিধানের বই নয় বরং শেষ ও সম্পূর্ণ শরীয়ত আল কুরআনের শিক্ষাকে মহানবী (সা.)-এর অনুকরণে নিজ জীবনে প্রতিফলিত করার পুরস্কার। শরীয়তের শিক্ষা ও বিধান চূড়ান্ত ও শেষ হয়েছে পবিত্র কুরআনের মাধ্যমেই (সূরা মায়েদা : ৪)। এর আত্মিক শিক্ষা পালন করলে এবং মহানবী (সা.)-এর পূর্ণ অনুসরণ করলে আল্লাহর সাথে জীবন্ত সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব। মির্যা সাহেবের প্রতি অবতীর্ণ ওহী-ইলহাম ইসলামের আধ্যাত্মিক বাগানের সুমিষ্ট ফল ছাড়া আর কিছুই নয়। তাঁর প্রতি অবতীর্ণ ওহী ও ইলহামের সংকলনের নাম ‘তাযকিরা’ রাখায় আপত্তি থাকলে ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ সাহেবকে জিজ্ঞেস করি, ইমাম কুরতুবীর লেখার সংকলনের নামও ‘তাযকিরাহ’। এ বিষয়ে তার কোন আপত্তি আমরা শুনি নি কেন? ‘তাযকিরাতুল আউলিয়া’ নামক পুস্তকের বিষয়ে তার আপত্তি নেই কেন? অতএব এ আপত্তি কোনমতেই ধোপে টেকে না।
৯. আপত্তি: তাফসীরের কারণে কুরআনে যে ভুলগুলো সংঘটিত হয়েছে আমি তা চিহ্নিত করতে এসেছি। এক আত্মভোলার কাশফ। (রুহানী খাযায়েন ৩/৪৮২)

উত্তর: সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় হল, যে উদ্ধৃতি তিনি আপত্তি হিসাবে তুলে ধরেছেন তা মির্যা সাহেবের বক্তব্যই নয়। সাধারণ মানুষ উর্দু আরবী পড়তে জানে না দেখে একজন ‘আল্লামা’ এভাবে বিভ্রান্তি ছড়াবেন এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। উক্ত পৃষ্ঠায় খোদাপ্রেমে আসক্ত এক ‘মাজযুব’ ব্যক্তি জামালপুর নিবাসী জনৈক গোলাবশাহ হযরত মির্যা সাহেবের আবির্ভাবের ৩০ বছর পূর্বে তাঁর আগমন সম্বন্ধে আগাম বর্ণনা বা বিবৃতি যথাযথ সাক্ষ্য প্রমাণসহ উপস্থাপন করেছেন। করিম বখশ নামে এক ব্যক্তি তাঁর জীবন সায়াহ্নে এসে আল্লাহ্ নামে শপথ করে লিখিত আকারে গোলাব শাহ নামক খোদাভক্ত ‘মাজযুব’-এর সেই ভবিষ্যদ্বাণীটি সাক্ষীদের সামনে লিখিত আকারে জমা দেয়ার পর হযরত মির্যা সাহেব ১৮৯১ সালে তাঁর লিখিত সাক্ষ্যটি ‘ইযালায়ে আওহাম’ গ্রন্থে ছাপিয়ে দেন। খোদাভক্ত গোলাপ শাহ্ বক্তব্যটি করিম বখশের বর্ণনায় নিম্নরূপ:

ঈসা এখন যুবক বয়সে উপনীত হয়েছেন এবং তিনি লুধিয়ানায় এসে কুরআনের ভুল বের করবেন এবং কুরআনের মানদণ্ডে সিদ্ধান্ত দিবেন।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘মৌলভীরা তাকে অস্বীকার করবে।’ ‘তখন আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করি, কুরআন তো আল্লাহর বাণী, কুরআনেও কি ভুল-ভ্রান্তি আছে?’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘তফসীরের উপর তফসীর হয়ে গেছে এবং কবির ভাষা ছড়িয়ে গেছে। এরপর বললেন, ঈসা যখন আসবেন তখন তিনি কুরআন থেকে ফয়সালা করবেন। আর মৌলভীরা তা অস্বীকার করবে। আর যখন সেই ঈসা লুধিয়ানায় আসবেন তখন ব্যাপক প্লেগের পাদুর্ভাব ঘটবে।’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘ঈসা এখন কোথায়?’ তিনি বললেন, ‘কাদিয়ানে’। আমি বললাম, ‘কাদিয়ান তো লুধিয়ানার মাত্র তিন ক্রোশ দূরে অবস্থিত - সেখানে আবার ঈসা কোথায়?’ তিনি এর উত্তর দিলেন না। আমি তখন জানতাম না গুরুদাসপুর জেলাতে কাদিয়ান নামে একটি গ্রাম আছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ঈসা ইবনে মরিয়ম নবিউল্লাহ্ তো আকাশে আছেন এবং মক্কায় অবতরণ করবেন।’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘ঈসা ইবনে মরিয়ম নবিউল্লাহ মারা গেছেন। এখন তিনি আসবেন না। আমরা বাদশাহ্, মিথ্যা বলব না’।”

উক্ত বর্ণনায় জানা যায়, গোলাব শাহ মাজযূব বলেছেন, আগমনকারী ঈসা এসে মুসলমান ওলামাদের মাঝে প্রচলিত ভুল ধ্যান-ধারণা কুরআন শরীফ থেকে খণ্ডন করবেন। গোলাব শাহ্ সাহেবের উক্ত ভবিষ্যদ্বাণীর তিন স্থানে এই কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য কারণে ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ সে কথা উল্লেখ না করে উক্ত ব্যক্তির খণ্ডিত ও অসম্পূর্ণ বর্ণনাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং বিকৃত বক্তব্যটিকে আবার মির্যা সাহেবের প্রতি আরোপও করেছেন! হে ‘আল্লামা’! আমরা আবার বলছি, কুরআনকে সংশোধন করার জন্য নয় আলেম-উলামাদের মাঝে প্রচলিত ভুল ধ্যানধারণাকে কুরআন দ্বারা খণ্ডন করার কথা উক্ত ব্যক্তির ভবিষ্যদ্বাণীতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। আমাদের ধারণা ছিল, আপনি হযরত মসীহে মাওউদ(আ.)-এর বইগুলো পড়ে তাঁর বিরুদ্ধে কলম ধারণ করেছেন । আপনার এ আপত্তিটি পড়ে মনে হচ্ছে, আপনি তার লেখাটি পড়েও দেখেন নি। আপনি অন্যদের চর্বিত চর্বণ উপস্থাপন করেছেন মাত্র।

আপনার উত্তর যোগ করুন

আপনার উত্তরটি একজন এডমিন রিভিউ করে অনুমোদন করবেন।