আপত্তির জবাব

তাঁর লেখায় নবীদের সম্পর্কে আপত্তি

নবীদের মত পবিত্র আত্মা সম্পর্কে রুচিহীন বক্তব্য- অধ্যায়ের উত্তর

১ ও ২. আপত্তি: ইউরোপের লোকদের মদ এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার কারণ হল, হযরত ঈসা (আ.) মদ পান করত। তা কোন রোগের কারণে বা পুরাতন অভ্যাস থাকার কারণে। (রূহানী খাযায়েন ১৯/৭১) স্মরণ থাকা দরকার যে, তাঁর ঈসা (আ.) কোন পর্যায় মিথ্যা বলার অভ্যাস ছিল। (রূহানী খাযায়েন ১১/২৮৯)

উত্তর : ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদকে এমন একটি আপত্তি উপস্থাপনের জন্য ধন্যবাদ। কেননা উপরোক্ত বক্তব্য যদি মির্যা সাহেব সত্যিই ঈসা (আ.)-এর প্রতি আরোপ করে বলেই থাকেন তাহলে কমপক্ষে মির্যা সাহেবকে আর কখনও খ্রিস্টানদের দালাল বা তাদের রোপিত চারাগাছ বলার সুযোগ থাকছে না। কেননা যে যার দালাল হয় সে তার মালিকের নিন্দা জ্ঞাপন করতে পারে না।

মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.)-এর বিরুদ্ধে নবীদের মর্যাদাহানীর যে অভিযোগ আরোপ করা হয়েছে- এটিও একটি বানোয়াট আপত্তি। মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) কখনও নবীদের কোন ধরনের অসম্মান বা অপমান করেন নি। বরং তিনি তাঁর সব লেখায় নবীদের সম্মান ও মর্যাদাকে সমুন্নত রেখেছেন আর নবীদের বিরুদ্ধে আরোপিত সব অপবাদ থেকে তাঁদের পুতঃপবিত্র ও নিষ্পাপ সাব্যস্ত করেছেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর একটি বক্তব্য তুলে ধরছি। হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) বলেছেন: সমস্ত নবীদের প্রতি ভক্তি ও সম্মান প্রদর্শন করাকে আমি আমার ঈমানের অঙ্গ বলে মনে করি। (মলফুযাত প্রথম খন্ড, ৪২০)

পাঠক! যিনি নিজে বলছেন, ‘সমস্ত নবীদের প্রতি ভক্তি ও সম্মান প্রদর্শন করাকে আমি আমার ঈমানের অঙ্গ বলে মনে করি’- তিনি কীভাবে তাঁদের অপমান ও অপদস্থ করতে পারেন?

আপত্তিকর বক্তব্য হিসেবে উত্থাপিত লেখাটি যুক্তিতর্কের একটি বিশেষ জোরালোরূপ হিসেবে হযরত মির্যা সাহেব অবলম্বন করেছিলেন। অনুরূপ ধারালো বক্তব্য মহানবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে আপত্তিকারীদের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিতে গিয়ে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) সারাটি জীবন প্রদান করেছেন। সমালোচকদের তীর্যক আপত্তির প্রত্যুত্তর তাদেরই স্বীকৃত ঐশী গ্রন্থাবলীর বক্তব্য তুলে ধরে উত্তর প্রদান করাটি ছিল মির্যা সাহেবের একটি অভিনব বৈশিষ্ট। এখানেও সেই রীতিটিই লক্ষনীয়।

তাঁর যুগে ফতেহ মসীহ্ নামের এক খ্রিস্টান পাদ্রি মহানবী (সা.)-কে অপমান করে তাদের কল্পিত ‘ঈশ্বরপুত্র ঈশ্বর যিশুর’ শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে চেয়েছিল। এর প্রত্যুত্তরে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) তাদের ইঞ্জিলের ‘কল্পিত’ ঈশ্বরপুত্র যিশুর স্বরূপ প্রদর্শন করেছেন মাত্র!

এ প্রসঙ্গে হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) তাঁর রচিত নূরুল কুরআন-২ পুস্তকে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন,

“পাঠকদের স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছি, হযরত ইসা (আ.) সম্পর্কে আমার বিশ্বাস খুবই উন্নত আর আমি অন্তর থেকে বিশ্বাস করি, তিনি আল্লাহ্ তা’লার সত্য নবী এবং আল্লাহর প্রিয়ভাজন ছিলেন। আমি আমার তর্কযুদ্ধে প্রতিটি স্থানে খ্রিস্টানদের কল্পিত যিশুকে বুঝিয়েছি আর আল্লাহ্ তা’লার এক নিরীহ বান্দা ইসা ইবনে মরিয়ম যিনি নবী ছিলেন, যার কথা কুরআনে বর্ণিত আছে- আমি আমার এসব সম্বোধনে ঘুনাক্ষরেও তাঁর কথা বলি নি। আর আমি এই রীতিটি টানা চল্লিশ বছর ধরে পাদ্রিদের অকথ্য গালাগালি শুনে অবলম্বন করতে বাধ্য হয়েছি।” (নূরুল কুরআন-২, রূহানী খাযায়েন ৯ম খণ্ড পৃষ্ঠা-৩৭৫)

জানা গেল, পবিত্র কুরআনে বর্ণিত ঈসা (আ.)-কে অবমাননা করা তো দূরের কথা এখানে তাঁর কোন উল্লেখই নেই বরং তাদের কল্পিত খোদার অসারতা তাদের গ্রন্থাদি থেকে তুলে ধরা হয়েছে মাত্র।
৩-৬. আপত্তি : এই চারটি আপত্তির সারাংশ হল, হযরত মির্যা সাহেবের আধ্যাত্মিক মান ও মর্যাদা এত বড় হয় কীভাবে? তিনি মুহাদ্দাসদের চেয়েও বড় মর্যাদার অধিকারী হন কীভাবে? তিনি নবীদের ঈর্ষার পাত্রে পরিণত হন কীভাবে? রসূলুল্লাহর পূর্ববর্তী নবীদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ হন কীভাবে?

উত্তর: সবচেয়ে বড় নবীর গোলামও অন্যান্যদের চেয়ে বড় হবেন- এতে আশ্চর্য হবার কি আছে? হযরত মির্যা সাহেবের দাবীর সারাংশ হল, তিনি আধ্যাত্মিক জগতের সূর্য হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আলোয় আলোকিত পূর্ণাঙ্গিন পূর্ণিমার চাঁদ। এই উপমাটি তিনি নিজেই ব্যবহার করেছেন। যদি এ বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায় তাহলে উপরোক্ত চারটি বক্তব্য আপত্তি নয় বরং যথার্থ মূল্যায়ন বলে সাব্যস্ত হয়। হযরত মুহাম্মদ (সা.) সার্বজনিন নবী এবং রাহমাতুল্লিল আলামীন হয়ে এ পৃথিবীতে আগমন করেছেন। তিনি বিশ্বের সকল ধর্মের অনুসারীদের জন্যই মান্যবর হয়ে এসেছেন। মহানবী (সা.)-এর পূর্বে আর কোন নবী বা রসূল এমন সার্বজনিন ছিলেন না বরং তাঁরা সবাই নিজ নিজ সীমাবদ্ধ গণ্ডীতে সীমাবদ্ধ যুগের জন্য দায়িত্ব পালন করেছেন। আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আধ্যাত্মিক কল্যাণে আল্লাহ্ তা’লা তাঁর অনুসারীদেরকেও বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তা’লা বলেছেন, কুনতুম খায়রা উম্মাতিন উখরিজাত লিন্নাস অর্থাৎ তোমরাই সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত যাদেরকে মানবকল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। মুসলিম উম্মতের মর্যাদাগত অবস্থান বিশ্বের সকল ধর্মের অনুসারীদের শীর্ষে। কেন? কেননা আমরা শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুসারী!

ঠিক তেমনি, হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শিষ্যদের মাঝে যে আধ্যাত্মিক মর্যাদা আল্লাহ্ তা’লা দান করেছেন তার মাঝে সর্বশীর্ষে রয়েছেন প্রতিশ্রুত মসীহ্ ও মাহদী (আ.)। হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পর অনেক ওলী আউলিয়া বুযুর্গ গত হয়েছেন। এসব বুযুর্গদের মাঝে সর্বশীর্ষে অবস্থান লাভ করেছেন রসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর আনুগত্যে ইমাম মাহদী ও প্রতিশ্রুত মসীহ্ মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী। আর একথার প্রমাণ পাওয়া যায় মুহাম্মদ (সা.)-এর বক্তব্য থেকেই। তিনি (সা.) বলছেন, আবু বাকরিন খাইরুন নাসি বা’দী ইল্লা আইয়াকুনা নাবিউন। অর্থাৎ ‘আমার পর কোন নবী না হলে আবু বকর (রা.) উম্মতের মাঝে সর্বোত্তম’ (তাবরানী মু’জামে কাবীর, কানযুল উম্মাল, ৬ষ্ঠ খন্ড পৃ. ১৩৮; দেওবন্দের শিরমনি মুফতি মুহম্মদ শফী রচিত খতমে নবুয়্যত পুস্তকের ১০৩ নম্বর হাদীস দ্রষ্টব্য। বাংলায় অনুদিত খতমে নবুয়্যত পুস্তকের ৩৩৫ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে, এই উম্মতে আবু বকর সর্বোত্তম তবে যদি কেউ নবীর মর্যাদা লাভ করে তাহলে তিনি এই উম্মতের মাঝে সর্বোত্তম বলে বিবেচিত হবেন। তাই রসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর আনুগত্যে শেষযুগে আগমনকারী মহাপুরুষ যাকে নবীজি (সা.) একদিকে ‘আল-মাহদী’ অন্যদিকে ‘নবীউল্লাহ ঈসা’ বলেছেন- তিনিই উম্মতের মাঝে সর্বোত্তম মর্যাদার অধিকারী হবেন। তিনি মুসলমানদের হারানো ঈমান ও ঐক্য ফিরিয়ে দিবেন। উম্মতের মাঝে আগমনকারী প্রতিশ্রুত মহাপুরুষ যাঁর হাতে বয়াত করার জন্য আমাদের প্রিয় রসূল (সা.) বরফের পাহাড় হামাগুড়ি দিয়ে হলেও পার হয়ে যেতে বলেছেন, যাঁকে সালাম পৌঁছানোর নির্দেশ স্বয়ং মহানবী (সা.) দিয়েছেন- উম্মতে মুহাম্মদীয়ার মাঝে তিনিই শ্রেষ্ঠ।

উদ্ধৃত বাক্যে একথাও বলা হয়েছে, ‘কেবল নবীই নয় বরং অনেক আত্মপ্রত্যয়ী নবীর মর্যাদা থেকেও বেড়ে গেছেন।’ এ বিষয়টি বোঝার জন্য আলেম উলামাদের মর্যাদা বর্ণনায় হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর একটি হাদীস প্রথমে জেনে রাখা দরকার। আর তা হল, উলামাউ উম্মাতী কা-আম্বিয়ায়ে বনী ইসরাঈল। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের আলেমরা বনী ইসরাইলের নবীদের সমতুল্য হবেন’। যেক্ষেত্রে সত্যিকার আলেম-উলামা বনী ইসরাঈলী জাতির নবীদের সমতুল্য, সেক্ষেত্রে যিনি এসকল আলেমদের নেতা হয়ে আসবেন তিনি স্বাভাবিকভাবেই বনী ইসরাঈলী নবীদের তুলনায় উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হবেন। আর এতে মহানবী (সা.)-এর শ্রেষ্ঠত্বই প্রমাণিত হয়।

শেষযুগে আগমনকারী প্রতিশ্রুত মসীহ্ ও মাহ্‌দী হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) যখন আল্লাহ্ পক্ষ থেকে আদিষ্ট হয়ে সেই প্রতিশ্রুত মহাপুরুষ হবার দাবী করলেন তখন মুসলমান আলেম-ওলামা তাঁকে গ্রহণ না করে অনেকে উল্টো প্রশ্ন তুলেছেন, কেন তাঁকে মানতে হবে। তখন মহানবী (সা.)-এর আনুগত্যে শেষ যুগে আগমনকারী মহাপুরুষের মান ও মর্যাদার বিষয়টি তিনি স্পষ্ট করেছেন। মির্যা সাহেব এক দাস বা গোলামের উচ্চ মর্যাদা অপরাপর সকল ধর্মের সামনে তুলে ধরে মূল মালিক হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এরই মর্যাদা উন্নত করেছেন। এতে আপত্তির কিছুই নেই।
৭. আপত্তি: দুনিয়াতে কোন নবী এমন আসেননি, যিনি ইজতেহাদী ভুলের শিকার হননি। (রূহানী খাযায়েন ২২/৫৭৩)

উত্তর: আল্লাহ্ তা’লা ইজতেহাদী ভুল করার ক্ষেত্র উন্মুক্ত রেখে ‘উলুহিয়াত’ ও ‘বাশারিয়াতের’ মাঝে স্বাতন্ত্র্য সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্ তা’লা একমাত্র অস্তিত্ব যিনি ‘আলেমুল গায়বি ওয়াশ্ শাহাদাহ’। আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কেউ, তিনি যতবড় নবীই হোন- এই অতুলনীয় গুণের অধিকারী হতে পারেন না। তাই তো আল্লাহ্ তালা হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মুখ দিয়ে ঘোষণা করিয়েছেন,

وَلَوْ كُنْتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ إِنْ أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ

অর্থাৎ ...আর আমি যদি অদৃশ্য সম্বন্ধে জ্ঞাত হতাম তাহলে নিশ্চয়ই আমি প্রচুর ধন-সম্পদ জড় করে নিতাম এবং আমাকে কোন অনিষ্ট স্পর্শও করত না। ঈমান আনয়নকারী লোকদের জন্য আমি যে কেবল এক সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা। (সূরা আরাফ: ১৮৯) অতএব অন্যান্য সাধারণ মানুষের তুলনায় তারা কোটি কোটি গুণ উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তারা মানবীয় দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে নন। এর উদাহরণ সবচেয়ে বড় নবীর জীবন থেকে উদ্ধৃত করে এসেছি (১২ নম্বর পৃষ্ঠায় দেখুন)। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্-এর মাঝে প্রত্যেক মুসলমান এ কথারই ঘোষণা করে। একজন নবী যত বড় মর্যাদারই অধিকারী হন না কেন কেউই আমাদের উপাস্য নন- এ কথায় যেমন তাঁদের অবমাননা হয় না, তেমনি মানুষ রসূল হিসাবে তাদের মানবীয় সীমাবদ্ধতায় বিশ্বাস করলে তাদের কোন অবমাননাও হয় না।
৮. আপত্তি: আমার আগমনের দ্বারা প্রত্যেক নবী জীবন ফিরে পেয়েছে। আর সমস্ত রাসূল আমার জামার মধ্যে গোপন হয়ে আছে। (কবিতার অনুবাদ) (রূহানী খাযায়েন ১৮/৪৭৮)

উত্তর: মহানবী (সা.)-এর পূর্বে যত নবী রসূল এসেছেন তাদের সত্যতার সন্দেহাতীত প্রমাণ জগতের কাছে ছিল না। একমাত্র মহানবী (সা.) এসে সমস্ত নবী রসূলের স্বীকৃতি প্রদান করেছেন বলেই আজ তাঁরা সত্য নবী হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। নবীজি (সা.)-এর এই বিশেষ বৈশিষ্টের কারণে তিনি ‘খাতামান্নাবীঈন’ অর্থাৎ নবীগণের সত্যায়নকারী। মহানবী (সা.)-এর তিরোধানের পর পুনরায় যখন পূর্ববর্তী নবীদের সম্মান ও মর্যাদা ম্লান হবার উপক্রম হয় তখন আল্লাহ্ তা’লা ইমাম মাহদী ও প্রতিশ্রুত মসীহকে পাঠিয়ে তাদের সম্মান ও মর্যাদা ফিরিয়ে দেযার ব্যবস্থা করেন। তাদের চরিত্রে যেসব কালিমা লেপনের চেষ্টা করা হয় হযরত মির্যা সাহেব সেসব কালিমা অপসারণ করে তাদেরকে পবিত্র সাব্যস্ত করেছেন। একারণেই আল্লাহ্ তা’লা তাঁকে ইলহাম করে বলেছেন, তাঁকে ‘জারিউল্লাহে ফী হুলালিল আম্বিয়া’ আখ্যা দিয়েছেন। মহানবী (সা.)-এর অতুলনীয় সাফল্য ও অবস্থান তুলে ধরে হযরত মির্যা সাহেব বলেছেন,

‘সেই ব্যক্তি যিনি সবচেয়ে সম্পূর্ণ এবং পূর্ণ মানব ছিলেন এবং পূর্ণ নবী ছিলেন এবং যিনি পূর্ণ কল্যাণরাজি নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন, যাঁর মাধ্যমে আধ্যাত্মিক পুনরুত্থান ও একত্রিকরণের কারণে পৃথিবীর প্রথম কিয়ামত (পুনরুত্থান) সংঘটিত হয়, যাঁর আগমনে এক মৃত জগৎ জীবন ফিরে পায় সেই মোবারক নবী হলেন হযরত খাতামুল আম্বিয়া, ইমামুল আসফিয়া, খাতামুল মুরসালীন, নবীগণের গৌরব হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম। হে প্রিয় খোদা! এ প্রিয় নবীর প্রতি এমন রহমত ও দরূদ বর্ষণ কর যেমনটি দুনিয়া সৃষ্টি অবধি তুমি কারও প্রতি নাযেল কর নি। এ অসীম মর্যাদাবান নবী পৃথিবীতে আবির্ভূত না হলে ছোট ছোট যত নবী দুনিয়ায় এসেছেন, যেমন ইউনুস, আইয়ুব, মসীহ্ ইবনে মরিয়ম, মালাখি, ইয়াহ্ইয়া, যাকারিয়া প্রমুখ তাঁদের সত্যতার কোন প্রমাণ আমাদের কাছে থাকত না, যদিও তারা সবাই নৈকট্যপ্রাপ্ত, সম্মানিত এবং খোদা তা’লার প্রিয়ভাজন ছিলেন। এ কেবল মহানবী (সা.)-এরই অনুগ্রহ বিশেষ যার ফলে এ নবীগণও পৃথিবীতে সত্যবাদী হিসেবে স্বীকৃত হয়েছেন। হে আল্লাহ্! তাঁর (সা.), তাঁর বংশধর, তাঁর সাহাবীগণ সবার প্রতি তুমি দরূদ, রহমত ও বরকত নাযেল কর (ইতমামুল হুজ্জত, পৃষ্ঠা ২৮)।
৯. আপত্তি: হাদীসের মধ্যে আছে, যদি মূসা ও ঈসা আ. জীবিত থাকত তাহলে আমার আনুগত্য ছাড়া তাদের কোন উপায় ছিল না। কিন্তু আমার কথা হল, মসীহ মওউদের (মির্যা কাদিয়ানী) যামানায় যদি মূসা ও ঈসা আ. হত তাহলে মসীহের (মির্যা সাহেবের) আনুগত্য তাদের অবশ্যই করতে হত। (আল ফযল, ১৮-৩-১৯১৬ কাদিয়ান)

উল্লেখ্য, মির্যা সাহেব উল্লেখ করেছেন যদি মূসা ও ঈসা জীবিত হত... (রূহানী খাযায়েন ১৪/২৭৩)

তিনি এখানে ঈসাকে মৃত প্রমাণ করার জন্য অর্থাৎ নিজের ভ্রান্ত বিশ্বাস প্রমাণ করার জন্য হাদীসের মধ্যে ঈসা আ.-এর নাম বৃদ্ধি করেছে। অথচ নির্ভরযোগ্য হাদীসের কিতাবে তা নেই। প্রমাণ স্বরূপ দেখুন (মুসনাদে আহমাদ, মাসানিদে জাবির রা. মিশকাত পৃষ্ঠা: ৩০ ভারতীয় কপি) এটা মির্যা সাহেবের অনেক জালিয়াতির মধ্যে একটি জালিয়াতী।

উত্তর: ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ! ঈসা (আ.)-কে মৃত প্রমাণ করার জন্য হাদীসের মধ্যে ঈসার নাম বৃদ্ধি করার প্রয়োজন নেই। পবিত্র কুরআনের ত্রিশটি আয়াত দিয়ে হযরত ঈসা (আ.)-এর মৃত্যু সাব্যস্ত। যেমন- আল্লাহ তা’লা এদিক থেকেও তার মৃত্যুর ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। বলছেন-

وَالَّذِينَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ لَا يَخْلُقُوْنَ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ ( أَمْواتٌ غَيْرُ أَحْيَاءِ

অর্থাৎ আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা যাদের ডাকে তারা কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না, বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা সবাই মৃত, জীবিত নয়। (সূরা নহল- ২১, ২২)

এ আয়াতে আল্লাহ তা’লা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, আল্লাহ ছাড়া যাদের উপাসনা করা হয় তারা সবাই মৃত। প্রশ্ন হলো, ঈসা (আ.)-এর উপাসনা হয় কি না? কেউ তাঁর উপাসনা করে কি না? উত্তর হবে, হ্যাঁ করে। এটা সবারই জানা, খৃষ্টানরা তাঁকে ঈশ্বর হিসেবে উপাসনা করে। তাই এই আয়াতের ঘোষণা অনুযায়ী খৃষ্টানদের উপাস্য ঈশ্বরপুত্র ঈশ্বর যিশু অর্থাৎ হযরত ঈসা (আ.) মৃত, জীবিত নেই। এমন আরো অসংখ্য আয়াত রয়েছে যা দ্বারা প্রমাণিত হয় হযরত ঈসা (আ.) মৃত্যুবরণ করেছেন।

বাকী রইল, ‘আল্লামা’ বলছেন, মির্যা সাহেব হাদীসে এই নামটি জালিয়াতী করে বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। দেখুন, তফসীরে ইবনে কাসীরে সূরা আলে ইমরানের ৮৩ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, হাদীসে আছে যদি মুসা ও ঈসা জীবিত থাকত তাহলে তাদের উভয়ের আমার অবশ্যই আনুগত্য করতে হত। এছাড়া সৈয়দ কুতুব শহীদের তাফসীর ফী যিলালিল কুরআনে সূরা আলে ইমরানের ৯৩ নম্বর আয়াতে স্পষ্ট লেখা রয়েছে, কয়েকটি হাদীসে রয়েছে যদি মুসা ও ঈসা জীবিত থাকত তাহলে তাদের উভয়ের আমার অবশ্যই আনুগত্য করতে হত। ১৭ অতএব ‘আল্লামা’ কোন বিষয়ে জ্ঞান না রেখে আপত্তি বা অপবাদ আরোপ করলে এভাবেই লজ্জিত হতে হয়।

আপনার উত্তর যোগ করুন

আপনার উত্তরটি একজন এডমিন রিভিউ করে অনুমোদন করবেন।