আপত্তির জবাব

তাঁর লেখায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সম্পর্কে আপত্তি

রসূল (সা.) সম্পর্কে তাদের রুচিহীন বক্তব্য- অধ্যায়ের উত্তর

হযরত মসীহে মাওউদ (আ.)-এর বিরুদ্ধে সবচেয়ে জঘন্য মিথ্যাচারের মাঝে এই প্রসঙ্গটি চলতি বাজারে সবচেয়ে জনপ্রিয়। কেননা এর মাধ্যমে সরলমনা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আবেগ অনুভূতিকে সবচেয়ে সহজে উস্কে দেয়া যায়। এ বিষয়ে উত্থাপিত আপত্তিগুলো এক এক করে উত্তর দেয়ার আগে একটি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে চাই। আহমদীয়া জামা’তের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাই মহানবী খাতামান নবীঈন হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মত, কলেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসূল্লাহ-য় বিশ্বাসী এবং কিয়ামত দিবসে তাঁর শাফায়াত লাভের প্রত্যাশী। হযরত মির্যা সাহেবের সমস্ত আত্মিক উৎকর্ষ ও মর্যাদা মহানবী (সা.)- এর প্রতি আন্তরিক ভালবাসা ও তাঁর পূর্ণ আনুগত্যের কারণে হয়েছে। এ পুস্তকে বিভিন্ন স্থানে উদ্ধৃত তাঁর লেখাগুলো পড়ে নিলেই এ বিষয়টি দিবালকের মত স্পষ্ট হয়ে যাবে। চতুর্দশ রাতের পূর্ণিমার চাঁদ যত আলোই ছড়াক তার সবটাই ধার করা জ্যোতি, এর মূল উৎস হচ্ছে সূর্য। ঠিক একইভাবে, চতুর্দশ হিজরী শতাব্দীতে আগমনকারী পূর্ণাঙ্গীন উম্মতী তাঁর সবটুকু আলোই লাভ করেছেন আত্মিক জগতের সূর্য ‘সিরাজুম মুনীর’ হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছ থেকে। হযরত মির্যা গোলাম আহমদ (আ.) বলেছেন,

“আমরা যখন ইনসাফের দৃষ্টিতে তাকাই তখন সমগ্র নবুওতের ধারায় কেবল এক ব্যক্তিকেই অসীম, চিরঞ্জীব ও আল্লাহর অতি নৈকট্যপ্রাপ্ত নবী হিসেবে দেখতে পাই-অর্থাৎ সেই নবীকুল সর্দার, রসূলগণের গৌরব, সমস্ত প্রেরিতগণের মাথার মকুট যাঁর নাম মুহাম্মদ মুস্তাফা এবং আহমদ মুজতবা সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম। যাঁর ছায়াতলে দশ দিন অতিবাহিত করে এমন জ্যোতি লাভ করা যায়, যা ইতোপূর্বে হাজার বছরেও পাওয়া যেত না (সিরাজে মুনীর, পৃ. ৭২)।
১. আপত্তি: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দ্বারা দ্বীন প্রচারের কাজ পরিপূর্ণভাবে হয়নি। তিনি পূর্ণ প্রচার করেননি। আমি পূর্ণ করেছি। (রূহানী খাযায়েন ১৭/২৬৩, দ্র. টিকা)।

উত্তর: যেভাবে ‘আল্লামা’ লিখেছেন হযরত মির্যা সাহেব সেভাবে বিষয়টিকে বলেন নি। তিনি লিখেছেন, “যেহেতু মহানবী (সা.)-এর প্রতি অর্পিত দ্বিতীয় আবশ্যকীয় দায়িত্ব ছিল, হেদায়েতের প্রচার ও প্রসারের কাজকে পূর্ণতা দান করা কিন্তু মহানবী (সা.)-এর যুগে প্রচার মাধ্যম ও উপায়-উপকরণ না থাকায় এ কাজ বাস্তবায়ন অসম্ভব ছিল। এজন্যই পবিত্র কুরআনের আয়াত ‘ওয়া আখারীনা মিনহুম লাম্মা ইয়ালহাকু বিহিম’-এর মাঝে হুযূর (সা.)-এর পুনরায় আগমনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। যেন তাঁর প্রতি অর্পিত দ্বিতীয় আবশ্যকীয় দায়িত্ব অর্থাৎ হেদায়েতের পূর্ণ প্রচার ও প্রসারের কাজ সম্পন্ন হয় যা তাঁর হাতেই সম্পন্ন হবার কথা ছিল। প্রাথমিক যুগে উপায়-উপকরণ না থাকায় এটি সম্পন্ন হয় নি। অতএব এই গুরুদায়িত্বকে মহানবী (সা.) তাঁর বুরুযী তথা রূপক আগমনের মাধ্যমে সম্পন্ন করেছেন আর এমন এক যুগে এসে তা সম্পন্ন করেছেন যখন বিশ্বের সকল জাতিতে ইসলামের বাণী পৌঁছানোর উপায়-উপকরণ সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল।” (রূহানী খাযায়েন ১৭শ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৬৩ পাদটিকা দ্রষ্টব্য)

এ বক্তব্য পাঠ করে ভাল করে বুঝতে পারছেন, এতে হযরত মির্যা সাহেব রসূল (সা.)-কে খাটো করেন নি বরং তাঁর (সা.) বুরুযী আগমনের মাধ্যমে রসূলুল্লাহরই আধ্যাত্মিক বিকাশ হিসাবেই নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। অথচ ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ বিষয়টিকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যেন মির্যা সাহেব মহানবী (সা.)-এর বিপরীতে নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন। মুহাম্মদ (সা.) হলেন শরীয়তবাহক শেষ নবী, পূর্ণাঙ্গীন নবী ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। তাঁর মাধ্যমে শরীয়ত পরিপূর্ণতা লাভ করেছে এবং খোদার পক্ষ থেকে ধর্মকে সম্পূর্ণ করা হয়েছে। হযরত মির্যা সাহেব তাঁর অনুসারী হরে তাঁর দাসত্বে সেই শরিয়তের বাণী ও শিক্ষাকে জগতময় ছড়িয়ে দেয়ার ও প্রচারের দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন। বিষয়টি মালিক ও কামলার ন্যায়। মহানবী (সা.) হলেন মালিক। আর একজন কামলা তার মালিকের সম্পদ কাঁধে করে গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে। ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ সাহেব তাঁর দাবী সম্পর্কে জানেন কিন্তু তা সত্ত্বেও এসব বক্তব্য খণ্ডিত ও বিকৃতভাবে জনগণের মাঝে দূরভিসন্ধিমূলকভাবে ছড়াচ্ছেন।
২. আপত্তি: যিল্লি (ছায়া) নবুওয়াত মসীহ মওউদের (মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী) পা-কে পিছনে সরায়নি। বরং সামনে বাড়িয়েছে এবং এত সামনে বাড়িয়েছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাঁধ বরাবর এনে দাঁড় করিয়েছে। (কালিমাতুল ফসল ১১৩)

উত্তর: ‘আল্লামা’ হযরত মসীহে মওউদ (আ.) বা তাঁর খলীফাদের বক্তব্য বা লেখায় আপত্তি করার মত কিছু না পেয়ে শেষে এমন সব পুস্তক বা রচনা থেকে আপত্তি উত্থাপন করছেন যেগুলো আমাদের জন্য হুজ্জত নয়। এ প্রসঙ্গে আমাদের নীতিগত কথা হল, হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.)-এর লিখিত রচনা ও পুস্তকাবলী আমাদের জন্য হুজ্জত এবং তার পরে তার খলীফাগণের রচনাবলি বা তাদের বক্তব্য আমাদের জন্য হুজ্জত। এর বাইরে কে কী মন্তব্য করেছে আর কি বলেছে তার উত্তর দিতে আমরা বাধ্য নই। কেননা সেগুলো তাদের ব্যক্তিগত অভিমত ও বিশ্লেষণ হিসাবে গণ্য হতে পারে। আহমদীয়া জামা’তের বক্তব্য সেটাই যেটা হযরত মসীহে মাওউদ (আ.) বা তাঁর কোন খলীফা বর্ণনা করেছেন।

বাকি রইল উদ্ধৃত বক্তব্যের তাৎপর্য- এ কথা সবারই জানা, ছায়া তার কায়া অনুসারেই হরে থাকে কিন্তু ছায়া নিজে থেকে কোন পরিবর্তন নিজের মাঝে সাধন করতে পারে না। উক্ত উদ্ধৃতিটিকে আপত্তি হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে অথচ এটি হযরত মির্যা সাহেবের সত্যতা প্রমাণ করে। কায়ার সম্পূর্ণ অনুসরণ ও অনুকরণই হল ছায়ার ধর্ম। তাই যেখানে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) মহানবী (সা.)-এর ছায়া হবার দাবী করছেন এর ব্যাখ্যা উপরোক্ত বর্ণনা অনুযায়ী জনসাধারণের না বোঝার কথা নয়। ছায়ার নিজস্ব কোন ইচ্ছাশক্তি থাকে না বরং কায়া যেভাবে চায় সেভাবেই পরিচালিত হয়। মির্যা সাহেবের যিল্লি নবুওতের মূল তাৎপর্য এটিই। ‘কাঁধের সমান দাঁড়িয়েছেন’- একথা দ্বারা প্রমাণ হয় তিনি রসূলুল্লাহ (সা.)-এর শরীয়ত অনুযায়ী পরিচালিত ছিলেন, তাঁর ছাত্র ছিলেন এবং পূর্ণাঙ্গীন অনুসারী ছিলেন। তা না হলে বলা হত, তাঁর মাথা ছাড়িয়ে আরও বড় হয়ে গেছেন।

দেওবন্দের আলেমরা এই স্থুল বিষয়টিও বুঝবেন না-এটা হতে পারে না। ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ নিশ্চয় এমন যিল্লি হবার বিষয়ে তাত্ত্বিক ও মারেফাতের জ্ঞান রাখেন। কিন্তু এসত্ত্বেও তিনি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।
৩. আপত্তি: তোমরা খুব মনোযোগ দিয়ে শোন, এখন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামের তেজোদ্দীপ্ত কিরণ প্রকাশের সময় নেই। অর্থাৎ তাঁর দাপুটে রং-এর কোন খেদমত বাকী নাই। সে তার নির্ধারিত সময় পর্যন্ত দাপট প্রকাশ করেছে। এখন আর সূর্যের কিরণ (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দ্বীন) সহ্য হচ্ছে না। এখন (সূর্য ডুবার পর এবং) পূর্ণিমার রাতের শীতল ও কোমল আলোর প্রয়োজন। যা আহমদের রং (কাদিয়ানী ধর্মমতের রং-এ) আমার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। (রূহানী খাযায়েন ১৭/৪৪৫)

উত্তর: এখানে আল্লামা আব্দুল মজিদ বিকৃতভাবে একটি খণ্ডিত উদ্ধৃতি তুলে আপত্তি করেছেন। এ ক্ষেত্রে পাঠক মূল উদ্ধৃতি পড়লেই বুঝতে পারবেন মির্যা সাহেব মোটেও আপত্তিকর কোন কথা বলেননি।

হযরত মির্য গোলাম আহমদ (আ.) বলেন,

“তোমরা শুনেছ আমাদের নবী (সা.)-এর দু’টি নাম রয়েছে। একটি হলো মুহাম্মদ (স.)। আর এ নাম তওরাতে লেখা রয়েছে। এটা এক প্রতাপ বিকাশী শরীয়ত-যেমনটি এই আয়াত থেকে প্রতিভাত হয়।

مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ ... ذَلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ

দ্বিতীয় নাম আহমদ (সা.)। আর এ নাম ইঞ্জিলে রয়েছে, যা আত্মিক সৌন্দর্য বিকাশী এক ঐশী শিক্ষা। যেমনটি এই আয়াত থেকে প্রতিভাত হয়।

وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِنْ بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ

আর আমাদের নবী (স.) জালাল (প্রতাপ) ও জামাল (স্নিগ্ধতা/ঐশী সৌন্দর্য বিকাশী) দু’টিরই সমন্বিত রূপ ছিলেন। মক্কার জীবন স্নিগ্ধতার রঙে ছিল। আর মদিনার জীবন ছিল প্রতাপ বিকাশী। পরবর্তীতে এই দুই গুণাবলী উন্মতের জন্য এভাবে বণ্টন করা হয় যে, সাহাবায়ে কেরামদের (রা.) প্রতাপ বিকাশী জীবন দান করা হয়। আর আত্মিক সৌন্দর্য বিকাশী জীবনের জন্য মসীহ মাওউদকে মহানবী (স.)-এর বিকাশস্থল আখ্যায়িত করা হয়। এ কারণেই তাঁর সম্পর্কে বলা হয়েছে ইযাউল হারব অর্থাৎ তিনি যুদ্ধ-বিগ্রহ করবেন না। আর এটা পবিত্র কুরআনে খোদা তা’লার অঙ্গীকার ছিল-এই অংশের পূর্ণতার জন্য মসীহ মাওউদ ও তাঁর জামা’তের আত্মপ্রকাশ ঘটানো হবে। যেমনটি ‘ওয়া আখারীনা মিনহুম লাম্মা ইয়ালহাকু বিহিম’-আয়াতে ইঙ্গিত করা হয়েছে আর ‘তাযাআল হারবু আওযারাহা' আয়াতেও এই ইঙ্গিতই রয়েছে। অতএব মন দিয়ে শোন! তেরশ’ বছর পর জামালী অর্থাৎ ঐশী সৌন্দর্য বিকাশী দৃষ্টান্ত প্রদর্শনের জন্য তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। এটা খোদার পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা স্বরূপ যেন তিনি তোমাদের যাচাই করে দেখেন তোমরা উপরোক্ত দৃষ্টান্ত প্রদর্শনে কেমন। তোমাদের পূর্বে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) প্রতাপ বিকাশী জীবনের দৃষ্টান্ত অত্যন্ত প্রশংসনীয়ভাবে প্রদর্শন করেছেন। কেননা, তা এমনই এক যুগ ছিল যখন প্রতিমার সম্মান প্রদর্শনার্থে এবং সৃষ্টি-পূজার সমর্থনে বিশ্বাসী মু’মেন বান্দাদেরকে গরু-ছাগলের মত জবাই করা হতো। আর পাথর, তারকারাজি, উপলক্ষ্য ও উপকরণ এবং অন্যান্য সৃষ্টিকে খোদার আসন দেয়া হয়েছিল। অতএব এটা নিঃসন্দেহে জিহাদের যুগ ছিল। যারা অত্যাচার-নির্যাতনের উদ্দেশ্য তরবারি ধারণ করতো তাদেরকে যেন তরবারির মাধ্যমে হত্যা করা হয়। তাই সাহাবা (রা.) তরবারি ধারণকারীদের তরবারি দ্বারাই নিবৃত্ত করেছিলেন। আর ‘মুহাম্মদ’ নামের মাঝে যে প্রতাপ এবং প্রেমাষ্পদের মহিমা বিকাশী বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান তার বিকাশের ক্ষেত্রে তারা চরম দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। আর ধর্মের সাহায্যের জন্য নিজেদের রক্ত ঢেলে দিয়েছেন। এর পরবর্তীকালে সেই মহা মিথ্যাবাদীদের জন্ম হয় যারা ‘মুহাম্মদ’ নামের প্রতাপ বিকাশী ছিল না। বরং যাদের বেশির ভাগ চোর, ডাকাতের মত ছিল। যারা আমার পূর্বে গত হয়েছে। তারা মিছেমিছি ‘মুহাম্মদী’ নামে আখ্যায়িত হতো। আর সাধারণ মানুষ তাদের স্বার্থপর বলেই মনে করতো।

বর্তমানেও সীমান্ত প্রদেশের কিছু সংখ্যক অজ্ঞ এই একই ধরনের মৌলভী প্রদত্ত শিক্ষায় প্রতারিত হয়ে ‘মুহাম্মদী’ প্রতাপ বিকাশের নামে লুট-পাট করাকে নিজেদের পেশা বানিয়ে রেখেছে। আর প্রতিদিন তারা অন্যায়ভাবে রক্তপাত ঘটায়। কিন্তু তোমরা খুব মনোযোগ দিয়ে শোন! এখন ‘মুহাম্মদ’ নামের প্রতাপ প্রকাশের যুগ নয় অর্থাৎ এখন প্রতাপ বিকাশী কোন সেবা প্রদানের সুযোগ নেই। কেননা সেই প্রতাপ যথোপযুক্তভাবে প্রকাশিত ও বিকশিত হয়ে গেছে। এখন প্রতাপদীপ্ত সূর্য কিরণ সহনীয় নয়। এখন প্রয়োজন চাঁদের স্নিগ্ধ জ্যোতির। আর আহমদ (স.)-এর রঙে রঙিন হয়ে আমি সেই জ্যোতি। আর এখন সেই আহমদ (স.)-এর রঙ প্রকাশের যুগ। অর্থাৎ স্নিগ্ধতা বিকাশী ধর্মীয় সেবা প্রদানের সময়। আর এটি চারিত্রিক উৎকর্ষ প্রদানের যুগ।”

হযরত মির্যা সাহেব, এখানে রসূলুল্লাহ (সা.)-এরই চলমান স্থায়ী কল্যাণ বিকাশের কথা বলেছেন। কেবল ধর্ম-সেবার ধরন ভিন্ন। একটি ছিল দ্ব্যদীপ্যমান সূর্যের প্রখর রশ্মির মত আর বর্তমান যুগটি হচ্ছে পূর্ণিমার কোমল স্নিগ্ধ জ্যোতির ন্যায় সেবা প্রদানের যুগ।

‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.)-এর বিরুদ্ধে এই উদ্ধৃতিকে দাঁড় করানোর জন্য এখানে ইচ্ছাকৃতভাবে কয়েকটি ব্রেকেটে নিজের মনগড়া বক্তব্য সংযোজন করেছেন। আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি এ ধরনের কোন ব্রেকেট লেখক হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) তাঁর লেখায় ব্যবহার করেন নি। উদ্দেশ্য প্রণোদিত এই অপব্যাখ্যা ও বিকৃতির দুরভিসন্ধি কী এটা ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদই বলতে পারবেন। তবে আর যাই হোক উদ্দেশ্য যে অসৎ আশা করি পাঠকদের এটা বুঝতে অসুবিধা হবে না।
৪. আপত্তি: এটা একটি সম্পূর্ণ বাস্তবধর্মী কথা যে, প্রত্যেক ব্যক্তিই (আধ্যাত্মিকতার পথে) উন্নতি করতে পারে এবং উচ্চাসনে সমাসীন হতে পারে। এমনকি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেও সামনে বেড়ে যেতে পারে। (আল-ফযল ১৭-৭-১৯২২)।

উত্তর: আধ্যাত্মিকতার মাঠে দৌড় প্রতিযোগিতায় কোন পক্ষপাতিত্ব নেই। সবার জন্য আল্লাহ্ নৈকট্যপ্রাপ্তির পথ উন্মুক্ত রাখা আছে। উন্নতির কোন সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয় নি। যার ইচ্ছা সে উন্নতির পথে নির্দ্বিধায় ছুটতে পারে। বাঁধা দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আধ্যাত্মিক দৌড়ের ক্ষেত্রে বাজিমাত করে দিয়েছেন বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। কিন্তু জয়ী হবার পর দৌড়ের মাঠ বন্ধ করে দেয়া হয় নি বরং তা উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এ বিষয়টিই উপরোক্ত দৃষ্টান্তের আকারে বুঝিয়েছেন হযরত খলীফাতুল মসীহ্ সানী (রা.)। তবে কেউ যে তাকে ডিঙাতে পারে না এ কথাও স্পষ্ট। কেননা সর্বজ্ঞানী আল্লাহ্ তা’লাই স্পষ্টভাবে মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বলেছেন, তিনি (সা.) হলেন খাতানান্নাবীঈন এবং মুহাম্মদ (সা.) ই একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি উন্নতি করতে করতে সিদরাতুল মুনতাহায় (আত্মিক উন্নতির চরম শিখরে) পৌঁছেছেন। কিন্তু আল্লাহ্ কাউকে বাধা দিয়ে তাঁকে উন্নতি প্রদান করেছেন- বিষয়টি এমন নয় বরং উন্নতির সকল পথ সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকা অবস্থাতেই মুহাম্মদ (সা.) শ্রেষ্ঠ সাব্যস্ত হয়েছেন। এ কথাটিই এখানে বলা হয়েছে।
৫ ও ৬. আপত্তি: আমার আলামত দশ লক্ষ। (রুহানী খাযায়েন ২১/৭২) রসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর মু’জিযা তিন হাজার। (রুহানী খাযায়েন ১৭/১৫৩)

উত্তর: হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দাসত্বে আল্লাহ্ তা’লার নৈকট্যপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসাবে দাবি করেছেন। আর আল্লাহকে এ যুগে লাভ করার একমাত্র পথ হিসেবে মহানবী (সা.)-এর পূর্ণ অনুসরণ ও অনুগমনকে তিনি বার বার তাঁর পুস্তকাদিতে উল্লেখ করেছেন। তাঁর এ বক্তব্য সূরা আলে ইমরানের আয়াতের সাথে হুবহু মিল খায়। সূরা আলে ইমরানের ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ তা’লা বলেন,

قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

তুমি বলে দাও, তোমরা যদি আল্লাহ্‌র ভালোবাসা চাও তাহলে আমার অনুকরণ অনুসরণ কর তাহলে আল্লাহ্ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুণাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।

অতএব মুহাম্মদ (সা.)-এর পর আল্লাহর নৈকট্য লাভের একমাত্র পথ হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আনুগত্য। হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.)-এর দ্যার্থহীন বক্তব্য শুনুন, ‘আমাদের নবী (সা.)-এর পক্ষ থেকে যত মোজেযা প্রকাশিত হয়েছে আর কোন নবীর পক্ষ থেকে এতটা প্রকাশিত হয় নি। আমাদের নবী (সা.)-এর মোজেযা এখনও প্রকাশিত হচ্ছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত এসব মোজেযা প্রকাশিত হতে থাকবে। আর আমার সমর্থনে যেসব মোজেযাই প্রকাশিত হচ্ছে তার সবই মূলত মহানবী (সা.)-এরই মোজেযা’ (তাতিম্মা হাকীকাতুল ওহী: পৃষ্ঠা ৩৫)।

অতএব হযরত মির্যা সাহেবের নিজস্ব কোন নিদর্শন নেই সব নিদর্শনই হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বরকত বা কল্যাণে তিনি প্রাপ্ত হয়েছেন।

হযরত মির্যা সাহেবের প্রত্যেকটি দোয়ার কবুলিয়াতের ঘটনা একটি নিদর্শন। ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী কাদিয়ানে আগত প্রত্যেকটি ব্যক্তি একেকটি নিদর্শন। আল্লাহ্ তা’লা নিজের ইচ্ছা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন বলে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার পূর্ণতায় প্রত্যেকটি সাহায্য সহযোগিতার ঘটনা একেকটি নিদর্শন। প্রাচ্যে ও পাশ্চাত্যে আহমদীয়া জামা’তের বিস্তৃতি ও ব্যাপ্তি একটি নিদর্শন। আল্লাহ্ তা’লার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী প্রত্যেক বিরুদ্ধবাদী নেতা কর্মীর মৃত্যু বা ধ্বংস একেকটি নিদর্শন। ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী প্লেগের আক্রমণে মৃত্যুবরণকারী প্রত্যেক ব্যক্তি একেকটি নিদর্শন। বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংসের প্রতিটি ঘটনা একেকটি নিদর্শন। কিন্তু এসব নিদর্শন তখনই নিদর্শন বলে সাব্যস্ত হবে যখন মির্যা সাহেব নিজে মুহাম্মদ (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী সত্য প্রমাণিত হবেন। আর তখন এসব আর মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.)-এর নিদর্শন থাকবে না বরং সবই মুহাম্মদ (সা.)-এর মহান নিদর্শন বলে প্রমাণিত হবে কেননা দাসের নিজস্ব কোন সম্পত্তি নাই যা আছে সবই মুহাম্মদ (সা.)-এর। মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) বলেন,

সাব হামনে উসসে পায়া শাহেদ হে তু খুদায়া ওহ জিসনে হাক দিখায়া ওহ মাহলাকা এহী হ্যায়।

‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ হযরত মির্যা সাহেবের এসব বক্তব্য খুব ভাল করেই জানেন। কেননা মির্যা সাহেবের সব লেখাই তিনি পড়েছেন বলে তার সমালোচনার হাবভাবে প্রতিয়মান হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও মির্যা সাহেবের রূহানী খাযায়েনের দুই খণ্ডের দু’টি পৃথক উদ্ধৃতিকে এমনভাবে পাশাপাশি তুলে ধরেছেন যেন মানুষ মনে করে মির্যা সাহেব নিজেকে মুহাম্মদ (সা.)-এর বিপক্ষে বড় করে দেখিয়েছেন। অথচ মির্যা সাহেব ইমাম মাহদী হিসাবে নিজেই মহানবী (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণীর জ্বলন্ত নিদর্শন। তাই ইমাম মাহদী হিসেবে তাঁর সকল নিদর্শন মূলত মহানবী (সা.)-এর নিদর্শন বলে গণ্য হযে এবং এতে মহানবী (সা.)-এরই মর্যাদা উন্নীত হতে থাকবে।
৭. আপত্তি: 'আল্লামা' আব্দুল মজিদ সাহেব 'অযথা বিভ্রান্তি' পুস্তকের উল্লেখ করে বলেছেন, মির্যা সাহেব বলেছেন, আলামাত, মোজেযা, কারামাত এবং খকে আদত সব একই (রুহানী খাযায়েন: ২১/৬৩) আর উপরোক্ত পুস্তকের প্রণেতা এর বিপরীত কথা বলেছেন। প্রণেতা বলেছেন, আলামাত আর মোজেযা এক জিনিষ নয়।

উত্তর: ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ খুবই সূক্ষ্মভাবে এখানে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। কেননা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) রুহানী খাযায়েন- ২১/৬৩-এর উক্ত উদ্ধৃতিতে কোথাও ‘আলামত’ শব্দটি ব্যবহার করেন নি। ‘আল্লামা’ ভেবেছেন বাঙালি কি আর উর্দু আরবী পড়ে দেখবে নাকি। মিথ্যার আশ্রয় নিলে এভাবেই লজ্জিত হতে হয়।
৮. আপত্তি: ‘দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে নবুওতের দরজা খোলা’। (হকীকাতুন নবুওয়াহ, পৃ. ২২৮)

উত্তর: পবিত্র কুরআন এক ধরনের নবুওতের পথ রুদ্ধ ঘোষণা করেছে আবার আরেক ধরনের নবুওতের পথ উন্মুক্ত রেখেছে। যে নবুওতের পথ রুদ্ধ সেটি হচ্ছে স্বয়ং স্বনির্ভর শরীয়তবাহী নবুওত। যেমন আল্লাহ তা’লা সূরা মায়েদার একেবারে প্রারম্ভেই ৪ নম্বর আয়াতে বলেছেন,

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا

অর্থাৎ ...আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত পরিপূর্ণ করলাম। আর আমি ইসলামকে তোমাদের জন্য ধর্মরূপে মনোনীত করলাম।... (সূরা মায়েদা: ০৪)

এদ্বারা স্পষ্ট হয়ে গেল, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে শরীয়তবাহী স্বয়ং-সম্পূর্ণ নবুওতের পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু একইসাথে পবিত্র কুরআনে আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্তির পথ এবং তাঁর পক্ষ থেকে এক ধরনের নবী বা রসূল আগমনের পথ খোলা আছে বলে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন, সূরা নিসার ৭০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন,

وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَئِكَ رَفِيقًا

আর যে আল্লাহ্ ও এ রসূলের আনুগত্য করবে এরাই তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে, যাদের আল্লাহ্ পুরস্কার দান করেছেন (অর্থাৎ এরা) নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সালেহদের (অন্তর্ভুক্ত হবে)। আর এরাই সঙ্গী হিসাবে উত্তম। (সূরা নিসা: ৭০)

আরও দেখুন সূরা আরাফ ৩৬ নম্বর আয়াত যেখানে আল্লাহ তা’লা আদম সন্তানদের মাঝে তাঁর পক্ষ থেকে রসূল আসতে পারে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সূরা নিসার আয়াতটিতে কড়া শর্ত আরোপ করে বলা হয়েছে, যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূল হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আনুগত্য করবে কেবল তারাই আধ্যাত্মিকতায় পরমত্ব ও চরমত্ব লাভ করবে। বোঝা গেল, এখন আর নিজ যোগ্যতায় কেউ নবী হতে পারবে না বরং ‘খাতামান নবীঈনের’ পূর্ণ আনুগত্যে মুসলমানরা তা লাভ করতে পারবে। একেই আনুগত্যকারী বা উম্মতী নবুওত বলা হয়। ‘আল্লামা’ মজিদ এবং তার শিক্ষকরাও একথা মানেন, খাতামাননবীঈন (সা.)-এর পর ঈসা নবীউল্লাহ জগতে আসবেন (মসলিম শরীফ, কিতাবুল ফিতান ও ইবনে মাজা শরীফের ফিতনা অধ্যায় দ্রষ্টব্য)। একথাই হকীকাতুন নবুওতে বলা হয়েছে।

সুধী পাঠক! আমরা হকীকাতুন নবুওত পুস্তক থেকে সংশ্লিষ্ট অংশটি তুলে ধরলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। হযরত মির্যা বশীরুদ্দীন মাহমুদ আহমদ (রা.) বলেছেন:

“মহানবী (সা.)-এর পর দুই ধরনের নবুয়‍্যতের দ্বার রুদ্ধ। অর্থাৎ শরীয়তবাহী নবুয়‍্যত এবং স্বাধীন সয়ংসম্পূর্ণ সতন্ত্র নবুয়‍্যত। মহানবী (সা.)-এর কল্যাণে কল্যাণমণ্ডিত হয়ে নবুয়‍্যত লাভ হতে পারে। ...কিন্তু উম্মতে মুহাম্মদীয়ায় নবুয়‍্যত কীভাবে লাভ হতে পারে এটি জানা জরুরী। হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) বলেন, ‘কেউ যদি এই খাতামান্নাবীঈন (সা.)-এর সত্তায় এমনভাবে বিলিন হয়ে একাকার হয়ে যায় এবং এই সত্তা ছাড়া অন্য সব কিছু থেকে মুক্ত হয়ে যায় তাহলে এর ফলে তাঁরই নাম সে লাভ করে ফেলে। আর স্বচ্ছ দর্পনের ন্যায় মুহাম্মদী রূপের পূর্ণ প্রতিবিম্ব তার মাঝে পড়লে খতমে নবুয়্যতের মহর ভঙ্গ না করেও নবী নামে আখ্যায়িত হবে।’ (এক গালাতী কা ইযালা, রূহানী খাযায়েন ১৮শ খণ্ড পৃষ্ঠা ২০৯)

তিনি (রা.) আরো বলেন, ‘প্রতিশ্রুত মসীহ্ নবুয়্যত প্রতিবিম্বস্বরূপ কেননা সে মহানবী (সা.)-এর পূর্ণ বুরুষ বা প্রতিচ্ছায়া হবার কারণে নবুয়‍্যতের মূল উৎস থেকে কল্যাণমণ্ডিত হয়ে নবী নামে আখ্যায়িত হবার যোগ্য সাব্যস্ত হয়ে যায়।’ অতএব, রসূল (সা.)-এর পর একধরনের নবী আসায় কোন আপত্তি হতে পারে না। আর এদিকেই উম্মুল মোমেনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.), মহিউদ্দীন ইবনে আরাবী এবং সাম্প্রতিক কালের মওলানা মুহাম্মদ কাসেম নানুতবী সাহেব ইঙ্গিত করেছেন।
১০. আপত্তি: মুহাম্মদ পুনরায় আগমন করেছেন আমাদের মধ্যে। এবং পূর্বের থেকেও নিজ মর্যাদায় আরও বেশি অগ্রগতি অর্জন করেছেন। যে পূর্ণাঙ্গ মুহাম্মদকে দেখতে চাও সে কাদিয়ানে গোলাম আহমদকে দেখে যাও। (কাব্যের অনুবাদ) (বদর, কাদিয়ান, ২৫-১০-১৯০৬) তাহলে কাদিয়ানী বন্ধুদের নিকট কি মির্যা সাহেব পূর্ণাঙ্গ আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অপূর্ণাঙ্গ। উল্লেখ্য, বদর কাদিয়ানীদের সম্পাদিত উর্দু পত্রিকা।

উত্তর : কাজী আকমল সাহেবের একটি পংক্তি তুলে ধরে পুরনো কাশুন্দি ঘেটেছেন আমাদের ‘আল্লামা’ সাহেব। এই উদ্ধৃতিতে কাজী আকমল সাহেবের কবিতার যে পঙক্তির উল্লেখ করা হয়েছে এই অংশটি হযরত মির্যা বশীর উদ্দীন মাহমুদ আহমদ, খলীফাতুল মসীহ সানি (রা.)-এর সামনে উপস্থাপন করা হলে তিনি বলেছেন, এ কবিতায় ব্যবহৃত শব্দগুলো অপছন্দনীয় এবং রসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর জন্য অবমাননাকর। (আলফজল ১৯শে আগষ্ট ১৯৩৪ পৃষ্ঠা নম্বর ৫)। অতএব ‘আল্লামা’ প্রকৃতপক্ষে যে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন আহমদীয়া জামাতের দ্বিতীয় খলীফা বহু পূর্বেই সে কথা বলে দিয়েছেন। এ নিয়ে আমাদের মাঝে দ্বিমত নেই। প্রায় শত বছর ধরে বিরুদ্ধবাদীদের এই উত্তর দেয়া হচ্ছে ‘আল্লামা’ তাহলে জেনে-বুঝে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন!
১১. আপত্তি: ‘এই ওহীতে আল্লাহ্ আমার নাম মুহাম্মদ রেখেছেন।’ (রুহানী খাযায়েন ১৮ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০৭)

উত্তর: এতে আপত্তির কী আছে? মুহাম্মদ (সা.)-এর পূর্ণ আনুগত্যকারীর নাম যদি স্বয়ং আল্লাহ মুহাম্মদ রেখে দেন এতে আপত্তির করা অবান্তর। বরং আপত্তি তখন হত যখন তিনি মুহাম্মদ নাম রাখতে অস্বীকার করতেন। প্রত্যেক দেশে, প্রত্যেক শহরে অগণিত মানুষের নাম মুহাম্মদ। আত্মীয় স্বজনের মাঝে খোঁজ নিয়ে দেখা যাবে কী বিশাল সংখ্যায় মানুষের নাম মুহাম্মদ।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ২০১৪ সালে যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক নবজাত শিশু-পুত্রদের নাম মুহাম্মদ রাখা হয়েছে (দি গার্ডিয়ান ও দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট, ১লা ডিসেম্বর-২০১৪)। মানুষ মানুষের নাম মুহাম্মদ রাখলে আপত্তি হয় না কিন্তু মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রেমে বিভোর এক প্রেমিকের নাম আল্লাহ্ তা’লা ‘মুহাম্মদ’ রাখলে এটি আপত্তির বিষয় হয়ে দাঁড়ায় কেন? কেননা সর্বজ্ঞানী আল্লাহ্ কারো মাঝে মুহাম্মদী গুণাবলী দেখে তার নাম ‘মুহাম্মদ’ রাখতেই পারেন। কিন্তু যদি মির্যা সাহেব নিজেও নিজের নাম মুহাম্মদ রেখে থাকেন। এতেও অ-আহমদীদের আপত্তি করার কিছু নেই। কেননা নিজের নাম মুহাম্মদ রেখে তিনি নিজেকে মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রেমিক সাব্যস্ত করেছেন। লক্ষ্য করে দেখুন, কোন সনাতনী বা কোন ইহুদী বা খ্রিস্টান কখনও নিজের নাম মুহাম্মদ রাখে না। যে তাঁকে (স.) ভালবাসে কেবল সে-ই এ নাম রাখতে পছন্দ করে। ফা’তাবিরূ ইয়া উলিল আলবাব। অতএব মানুষ তাদের পুত্র সন্তানদের নাম মুহাম্মদ রাখলে দোষের কিছু নেই বরং আমরা গর্ব বোধ করি কিন্তু আল্লাহ্ তার কোন প্রিয় বান্দার নাম মুহাম্মদ রাখলে অনেকের সহ্য হয় না। আশ্চর্যের বিষয়!!

‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ হযরত মির্যা সাহেবের শত্রুতায় এতটাই অন্ধ যার ফলে তিনি কথার মারপ্যাঁচে হযরত সাহেবের প্রতি মিথ্যা আরোপ করতেও কুণ্ঠাবোধ করেন নি। তিনি তার পুস্তকের ৪০/৪১ নম্বর পৃষ্ঠায় একটি উপমা উপস্থাপন করে দেশের এক সফল রাষ্ট্রপতির সাথে পরবর্তীতে আগমনকারী আরেকজনের তুলনা করতে গিয়ে সত্য বিষয়টিকে ঘোলাটে করে ফেলেছেন। হযরত মির্যা সাহেব রসূলের প্রতিবিম্ব হবার দাবী করেছেন। মহানবী (সা.)-কে নিজের প্রতিবিম্ব বলেন নি। রসূলুল্লাহ্ (সা.)-কে কায়া এবং নিজেকে তাঁর ছায়া বলেছেন। রসূলুল্লাহ (সা.)-কে তিনি বলেছেন সূর্য আর নিজেকে বলেছেন চন্দ্র। অতএব বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির উপমাটি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য উল্টোভাবে দেয়া হয়েছে। আর রাষ্ট্রপতির উপামা দেয়াই এখানে রসূল (সা.)-এর শানের পরিপন্থি কেননা আমাদের প্রিয় রসূল (সা.)-এর মর্যাদা জাগতিক রাষ্ট্রপ্রতির চেয়ে শত-কোটিগুণ ঊর্ধ্বে। হযরত মির্যা সাহেবের বক্তব্য শুনুন, ইঁ বাহরে রাওয়াঁ বাখালকে খোদা দাহম এক কাতরায়ে যে বেহরে কামালে মুস্তাফা আসত। তুমি এখন যে নিদর্শন ও ঐশী সমর্থনের প্লাবন বয়ে যেতে দেখছ এটি আমার মুনিব ও নেতা হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মহাসমুদ্রের এক বিন্দু পানি মাত্র। আরও বলেছেন,

ওহ পেশওয়া হামারা জিসসে হে নূর সারা
নাম উসকা হে মুহাম্মদ দিলবার মেরা এহি হ্যায়।
উস নূর পার ফিদা হুঁ উসকা হি ম্যায় হুয়াঁ হুঁ
ওহ হে ম্যায় চীয কিয়া হুঁ বাস ফায়সালা এহী হ্যায়।

‘আল্লামা’ সাহেব নিশ্চিত থাকতে পারেন। আপনি যতই উদাহরণ দিন এই মানদণ্ডে ধরা পড়বে এবং পরাস্ত হবে। মহানবী (সা.)-এর চেয়ে বড় আর কেউ নেই এবং হতেই পারে না।
অপবাদঃ হযরত রসূলে করীম (সঃ)-এর তিন হাজার মু’জেযা, আমার মু’জেযার অংশ দশ লক্ষ (বারাহীনে আহমদীয়া, ৫৭ পৃঃ)।

অপবাদের খণ্ডনঃ মু’জেযা এবং নিদর্শনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। একটি মু’জেযা বহু নিদর্শনের সমষ্টি। কিন্তু একা একটি নিদর্শন মু’জেযা নয়। এখানে লক্ষ্যণীয়, হযরত মির্যা সাহেব নিজের জন্য নিদর্শন শব্দ এবং হযরত নবী করীম (সঃ)-এর জন্য মু’জেযা শব্দ ব্যবহার করেছেন। অপবাদটি উদ্ধৃত হয়েছে বারাহীনে আহমদীয়া হতে। পাঠকদের অবগতির জন্য বলা দরকার যে, বারাহীনে আহমদীয়া পাঁচ খণ্ডে লেখা একটি বিরাটাকারের গ্রন্থ। অপবাদের লক্ষ্যে উদ্ধৃত এই লেখাটি কোন্ খন্ড হতে নেয়া হয়েছে তারও উল্লেখ নেই। ১৮৮০ সনে প্রথম খণ্ড, ১৮৮২ সনে দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড, ১৮৮৪ সনে চতুর্থ খণ্ড এবং ১৯০৫ সনে পঞ্চম খণ্ড প্রকাশিত। হযরত মির্যা সাহেব এই পাঁচ খণ্ডের কেতাবটিতে কোথাও উল্লেখ করেন নি যে, আমার মু’জেযার সংখ্যা (১০) দশ লক্ষ। অপবাদটি সম্পূর্ণ মনগড়া। তিনি লিখেছেন, আমার সত্যতার নিদর্শনাবলীর সংখ্যা দশ লক্ষ। সুতরাং এক্ষেত্রে মু’জেযা আর নিদর্শনের মধ্যে পার্থক্য করা আবশ্যক। মু’জেযার ব্যাপারে তিনি কস্মিনকালেও কোথাও নিজেকে রসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর সাথে তুলনা করেন নি। বরং তিনি নিজেই রসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর অন্তর্গত অনুগত ছিলেন। হযরত মির্যা সাহেবের নিম্নবর্ণিত উদ্ধৃতিগুলো জালিয়াতি ও ধোঁকাবাজী, তা সুষ্ঠুভাবে প্রমাণ করে দিবে।

হযরত মির্যা সাহেব বলেন:

(ক) “আমাদের নবী (সঃ) কর্তৃক যে সকল মু’জেযা প্রদর্শিত হয়েছে, তাঁর পুর্বের কোন নবী দ্বারা তা প্রকাশিত হয় নি। আমাদের নবী (সঃ)-এর মু’জেযা আজ পর্যন্ত প্রকাশিত হচ্ছে এবং কেয়ামত কাল অবধি তা প্রকাশিত থাকবে (তাতিম্মা হাকীকাতুল ওহী, ৩৫ পৃষ্ঠা)।

(খ) হযরত মির্যা সাহেব নিজের জন্য প্রদর্শিত নিদর্শন সম্বন্ধে বলেন, “যা কিছু আমার সমর্থনে প্রকাশিত হয়েছে তা বস্তুতঃ হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এরই মু’জেযার অন্তর্ভুক্ত।”

সুতরাং হযরত মুহাম্মদ (সঃ) হতে (নাউযুবিল্লাহ্) শ্রেষ্ঠ হবার অথবা তাঁকে (সঃ) অবমাননা করার যে অপবাদ দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উস্কানীমূলক। তিন হাজার মু’জেযার যে উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে, তাঁর ব্যাখ্যা হযরত মির্যা সাহেব স্বয়ং দিয়েছেন। তিন হাজার মু’জেযার অর্থ হলো সাহাবাদের সাক্ষ্য দ্বারা সাব্যস্ত মু’জেযাসমুহ, যার মধ্যে ভবিষ্যদ্বাণীসমূহ যোগ করা হয়। নুযূলুল মসীহ্‌র ২৩ পৃষ্ঠায় হযরত মির্যা সাহেব বলেন "যা কিছু আমাকে দেয়া হয়েছে ঐ সব কিছুই তাঁর (সঃ)।”

সুধীবৃন্দ, আমাদের আবেদন উপরোক্ত উদ্ধৃতিগুলি পাঠ করতঃ আহমদীয়া মুসলিম জামাতের উপরে আরোপিত অপবাদগুলি যাচাই করুন এবং সত্যকে অনুধাবন করুন।

হযরত মির্যা সাহেব বলেছেন كل بركة من محمد صلعم অর্থাৎঃ “প্রত্যেক কল্যাণ হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর মাধ্যমেই লাভ করা যায়।” বস্তুতঃ সকল বরকত তাঁরই মাঝে নিহিত। হযরত মির্যা সাহেবের নিদর্শনাবলীর যত লক্ষ্যই হোক না কেন তার সাকল্যটাই বস্তুতঃ হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এরই বদৌলতে।

(পুস্তকঃ অযথা বিভ্রান্তি)
অপবাদঃ দুনিয়াতে এমন কোন নবী হয় নি, যার নাম আমাকে দেয়া হয় নি। আমি হলাম আদম, আমি নূহ, আমি ইব্রাহীম ....আমি হলাম মুহাম্মদ (সঃ) (তাতিম্মা হাকীকাতুল ওহী)।

অপবাদের খণ্ডনঃ হযরত মির্যা সাহেবের উপর এই অপবাদ দেয়া হয় যে, তিনি তাতিম্মা হাকীকাতুল ওহীর ৮৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “দুনিয়াতে এমন কোন নবী অতিবাহিত হয় নি যার নাম আমাকে দেয়া হয় নি। আমি হলাম আদম, আমি নূহ, আমি ইব্রাহীম, আমি হলাম মুহাম্মদ”। আমি উত্তর দিবার পুর্বে হযরত মির্যা সাহেবের লেখা আসল অংশটি তুলে ধরছিঃ

میں آدم هوں ـ میں نوح هوں ـ میں ابراهيم هوں ـ میں اسحاق ھوں - میں یعقوب هوں ـ میں اسماعیل هوں ـ میں موسى ھوں - میں داودھوں - میں عیسی ابن مریم ھوں - میں محمد صلى الله عليه وسلم هوں ـ یعنی بروزی طور پر جیسا کہ خدانے اسی کتاب میں یہ سب نام مجهے دیئے اور میری نسبت جرى الله في حلل الانبياء فرمايا یعنی خدا کا رسول نبیوں کے پیرایه میں سوضروری هے که نبی کاشان مجه میں پائی جائے اور ہر ايك نبي كي ايك صفت کامیری ذریعہ سے ظهور هو - (روحانی خزائن جلد ۲۲ تتمه حقيقة الوحى (٥٢١))

অর্থাৎঃ আমি আদম, আমি নূহ, আমি ইব্রাহীম, আমি ইসহাক, আমি ইয়াকূব, আমি ইসমাঈল, আমি মূসা, আমি দাউদ, আমি ঈসা, ইবনে মরিয়ম, আমি মুহাম্মদ (সঃ) বুরুজীভাবে (প্রতিচ্ছায়া রূপে)। যেভাবে আল্লাহ্‌তাআলা এই কিতাব (লিখার সময়) এই সকল নাম আমাকে দিয়েছেন এবং আমার সম্বন্ধে বলেছেন جرى الله في حلل الانبياء অর্থাৎ তুমি নবীদের পোষাকে খোদার পাহলোয়ান। সুতরাং আবশ্যক ছিল যে, প্রত্যেক নবীর মর্যাদা আমার মধ্যে যেন পাওয়া যায় এবং প্রত্যেক নবীর এক বৈশিষ্ট্য আমার দ্বারা যেন প্রকাশিত হয় (রূহানী খাযায়েন, ২২তম খণ্ড তাতিম্মা হাকীকাতুল ওহী, ৫২১ পৃষ্ঠা)।

(ক) হযরত মির্যা সাহেব তাঁর উক্তিতে নিজেই ব্যাখ্যা দিয়ে দিয়েছেন যে, “নবীদের এই বৈশিষ্ট্যগুলো আমার মধ্যে বুরুজী অর্থাৎ প্রতিচ্ছায়ারূপে আছে।” এবং তা থাকা ইমাম মাহ্‌দীর জন্য আবশ্যক ছিল। এতে হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর কোন অবমাননা নেই। কেননা, এই সব বৈশিষ্ট্য তো হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর অপরিসীম আধ্যাত্মিক শক্তি, বরকত ও কল্যাণবর্ষিতার ফলশ্রুতিস্বরূপই প্রাপ্ত হওয়া গেছে। কারো স্বকীয় অধিকারে পাওয়া যায় নি। হযরত মির্যা সাহেব কোথাও একথা বলেন নি যে, তিনি স্বীয় অধিকার বলে এসব নেয়ামত প্রাপ্ত হয়েছেন।

(খ) উম্মতে মুহাম্মদীয়ার বিশিষ্ট ইমাম ও আধ্যাত্মিক জগতের এক উজ্জল নক্ষত্র হযরত ইমাম বাকের (রহঃ) হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আঃ) সম্বন্ধে বলেছেনঃ

يقول (المهدى) يا معشر الخلائق الاومن اراد ان ينظر الى ابرهيم اسماعيل فها اناذا ابراهيم اسماعيل الا من اراد ان ينظر موسى ويوشع فها اناذا موسى ويوشع الامن اراد ان ينظر الى محمد وامير المؤمنين فها اناذا محمد صلى الله عليه وسلم وامير المؤميين (بحار الانوار جلد ۱۳ ص ۲۰۲)

অর্থাৎঃ ইমাম মাহ্‌দী বলবেন, হে লোক সকল! তোমাদের মধ্যে যদি কেউ ইব্রাহীম এবং ইসমাঈলকে দেখতে চাও তাহলে শুনে নাও আমিই ইব্রাহীম ও ইসমাঈল। তোমাদের মধ্য থেকে যদি কেউ মূসা ও ঈসাকে দেখতে চাও তাহলে সে যেন শুনে নেয়, আমি মূসা ও আমিই ঈসা, তোমাদের মধ্য থেকে যদি কেউ ঈসা ও শামাউনকে দেখতে চায় তাহলে সে যেন শুনে নেয় ঈসা ও শামউন আমি। এবং তোমাদের মধ্য থেকে যদি কেউ হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ও আমীরুল মু’মিনীন (খলীফায়ে রাশেদগণ)-কে দেখতে চায় তাহলে সে যেন শুনে নেয় আমিই মুহাম্মদ (সঃ) এবং আমীরুল মু’মিনীন (বেহারুল আনওয়ার, ১৩ খন্ড, ২০২ পৃঃ)।

হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর একটি হাদীস হযরত ইমাম বাকের (রহঃ)-এর উপরোক্ত ফরমানকে সত্যায়িত করে। হযরত নবী করীম (সঃ) বলেনঃ

عن النعمان بن بشير عن حذيفة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تكون النبوة - فيكم ماشاء الله أن تكون ثم يرفعها لله تعالى ثم تكون خلافة على منهاج النبوة ماشاء الله ان تكون ثم يرفعها الله تعالى ثم تكون ملكا جبرية فتكون ماشاء الله ان تكون ثم يرفعها الله تعالى ثم تكون خلافة على منهاج النبوة ثم سكت - (احمد والبيهقى - المشكوة)

হযরত নু’মান ইবনে বশীর (রাঃ) ও হুযায়ফা (রাঃ) বর্ণনা করেন, হুযুর (সঃ) বলেছেন, আল্লাহ্‌তাআলা যতক্ষণ ইচ্ছা করবেন তোমাদের মাঝে নবুওয়ত স্থায়ী থাকবে [অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত আঁ হযরত (সঃ) দুনিয়ায় জীবিত থাকবেন]। এরপর আল্লাহ্‌তাআলা নবুওয়তকে তুলে নেবেন। তখন যুলুম, অত্যাচার ও উৎপীড়নের রাজত্ব কায়েম হবে। উহা ততক্ষণ পর্যন্ত বর্তমান থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্ চাইবেন, অতঃপর আল্লাহ্‌তাআলা উহা উঠিয়ে নিবেন। অতঃপর শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা লাভ করবে এবং আল্লাহ্‌তাআলার ইচ্ছা অনুযায়ী তা স্থায়ী থাকবে। এরপর আল্লাহ্‌তাআলা তা তুলে নেবেন। এরপর নবুওয়তের পদ্ধতি অনুযায়ী (মাহ্‌দী মা’হুদ ও মসীহ্ মাওউদ কর্তৃক) খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে। এপর হুযূর (সঃ) চুপ হয়ে গেলেন (আহমদ, বায়হাকী, মিশকাত শরীফ)।

উপরোক্ত হাদীসের মাঝে আছে “নবুওয়তের পদ্ধতিতে পুনরায় খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে” এই বাক্যটিকে সঠিকভাবে অনুধাবন করলেই হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আঃ)-এর শান (মর্যাদা) ও উম্মতের মধ্যে তাঁর স্থান কি পর্যায়ের হবে তা পরিষ্কারভাবে বুঝা যায়।

হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রহঃ)-কে “তাযকেরাতুল আওলিয়াতে” খোদাদর্শী ব্যক্তিবর্গের সর্দার, অদ্বিতীয় আলেম ও আল্লাহ্‌র খলীফা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ঐ কিতাবেই লিখা আছেঃ

“একব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করল, “আরশ কী?” তিনি বললেন, “আমি”. সে জিজ্ঞেস করল, “কুরসী (আসন) কী?” তিনি উত্তরে বললেন, “আমি”। জিজ্ঞাসা করা হল, “লওহ কী?” তিনি বলেন, “আমি”। সে জিজ্ঞাসা করল, “সালাম কি?” তিনি বলেন, “আমি”। সে বলল, “আল্লাহ্‌র অনেক সম্মানিত ব্যক্তি আছেন যেমন ইব্রাহীম, মূসা এবং মুহাম্মদ (সঃ)।” তিনি বলেন, “আমি এদের সবই।” লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, “আল্লাহ্‌র বান্দাতো হযরত জিব্রাঈল, ইসরাফিল, মিকাইল আলায়াহেস সালাম।” তিনি উত্তরে বলেন, “আমি সবই” (তাযকেরাতুল আওলিয়া, উর্দু ১৫৬ পৃষ্ঠা)। আহ্‌মদীয়া মুসলিম জামাতের প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে অপবাদকারীদের নিকট আমার আবেদন, তারা হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রহঃ)-এর উপরোক্ত উদ্ধৃতিরও সেই ব্যাখ্যা করুন।

(ঘ) হযরত যুনায়েদ (রহঃ) হযরত আবূ ইয়াযিদ (রহঃ)-এর সম্বন্ধে বলেনঃ

ابویزید منا بمنزلة جبريل من الملائكة

অর্থাৎ : আবূ ইয়াযীদ আমাদের মধ্যে জিব্‌রাঈল-এর মর্যাদা রাখেন। হযরত যুনায়েদ (রহঃ)-এর এই বর্ণনা ও উক্তিকে উপমহাদেশের বিশিষ্ট বুযর্গ ও পীর হযরত দাতাগঞ্জ বখশ (রহঃ) ও কবুল করেছেন এবং উপরোক্ত উক্তিটিকে তাঁর তাসাওউফ এর বিখ্যাত পুস্তক “কাশফুল মাহযুবে” লিপিবদ্ধ করেছেন (কাশফুল মাহযুব উর্দু, ১২২ পৃষ্ঠা যিক্‌র মাশায়েখে তাবা তাবেঈন)।

উপরোক্ত বর্ণনা ও বক্তব্য সম্বদ্ধে হযরত মির্যা সাহেবের বিরুদ্ধে অপবাদ আরোপকারীদের যে ব্যাখ্যা হবে, হযরত মির্যা সাহেবের বেলাতেও এরূপ বক্তব্য ও বর্ণনার জন্য কি সেই ব্যাখ্যা নেওয়া যেতে পারে না?

(ঙ) বড় পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) বলেন,

لما عرج بحبيب الله صلى الله عليه وسلم ليلة المعراج استقبل الله ارواح الانبياء والأولياء عليهم السلام من مقاماتهم لاجل زيارته فلما قرب نبينا على الله عليه وسلم الى العرش المجيد راه عظيما رفيعا لابد للصعود اليه من سلم و مرقاة فارسل الله روحى فوضعت كتفى موضع

المرقات فاذا اراد ان يضع قدميه على رقبتي سال الله تعالى عنى فالهمه هذا ولدك اسمه عبد القادر
(کتاب مناقب تاج الاولياء )

অর্থাৎ: মে’রাজের রাত্রে যখন খোদার বন্ধুকে আকাশে নিয়ে যাওয়া হলো, তখন আল্লাহ্‌তাআলা সকল আম্বিয়া ও ওলীগণের আত্মাগুলোকে তাঁর (সঃ) অভ্যর্থনা ও দর্শনের জন্য পাঠালেন। তারপর যখন হুযুর (সঃ) আল্লাহ্ আরশের নিকট পৌঁছালেন, তখন তিনি (সঃ) দেখলেন যে, “আরশ” অনেক বড় এবং উঁচু যার উপরে সিঁড়ি ব্যতিরেকে উঠা সম্ভবপর নয়. তাঁর (সঃ) সিঁড়ির প্রয়োজন হলো. তখন আল্লাহ্‌আলা আমার (গাউসুল আযম) আত্মাকে পাঠিয়ে দিলেন। সুতরাং আমি নিজ কাঁধকে সিঁড়ির জায়গায় রাখলাম। যখন হুযূর (সঃ) আমার কাঁধে পা রাখলেন তখন তিনি (সঃ) আল্লাহ্‌তাআলাকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এ কে?’ আল্লাহ্‌তাআলা উত্তর দিলেন, ‘সে তোমার ছেলে, যার নাম আব্দুল কাদের’ (মুনাকেব তাজুল আওলিয়া, ৮ পৃঃ)।

এই বর্ণনাতে কি হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর অবমাননা হয় নি? এতে কি সাব্যস্ত হয় না যে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)-এর সাহায্যে পৌঁছেছেন।’

উপরোক্ত উদ্ধৃতিটির ব্যাখ্যা আর কি হতে পারে? এরূপ বিশ্বাস পোষণ করা হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর অবমাননা নয় কি? এর ফয়সালা পাঠকদের উপর ছেড়ে দিলাম।

(পুস্তকঃ অযথা বিভ্রান্তি)
অপবাদঃ হযরত মির্যা সাহেবের উপর এই অপবাদ দেয়া হয়েছে যে, তিনি লিখেছেন, হুযূর (সঃ) খৃষ্টানদের হাতের তৈরী পনির খেয়ে নিতেন, অথচ এ কথা প্রসিদ্ধ যে, সেই পনিরে শূকরের চর্বি মিশ্রিত হতো (পত্রিকা আল্ ফযল)।

উত্তরঃ উপরোক্ত অপবাদটি সম্পূর্ণভাবে উদ্দেশ্যমূলক প্রতারণা মাত্র. আসল বিষয়টি তুলে ধরা হয় নি। হযরত মির্যা সাহেব এক ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তরে তাকে দীর্ঘ পত্রে লিখেন। পত্রটির মধ্যে লিখেনঃ

عیسائیوں کے هاته کا پنیر کھالیتے تھے ۔ حالانکہ مشهورتها که سورکی چربی اس میں پڑتی هے ـ اصول یه ھے جب تك يقين نه هو هر ايك چيز پاك هي ـ محض شك سے کوئی پیز پلید نهیں هوتی -
(منقول از اخبار الفضل ۲۲ فروری ۱۹۲٤)

অর্থাৎ খৃষ্টানদের তৈরী পনির খেয়ে নিতেন। অথচ এ কথা প্রচলিত ছিল যে, তার মধ্যে শূকরের চর্বি মিশ্রিত হ’ত। নিয়ম ইহাই যে, যতক্ষণ পর্যন্ত সুনিশ্চিত হওয়া না যায় (যে, এটা পবিত্র) ততক্ষণ পর্যন্ত প্রত্যেক আহার্য বস্তুই পবিত্র। শুধু সন্দেহের দরুন কোন বস্তু অপবিত্র হয় না (পত্রিকা আল্ ফযল হতে উদ্ধৃত ২২-২-১৯২৪)।

পত্রের উপরোক্ত অংশটি প্রকাশ করে যে, ইসলাম সন্দেহকে প্রশ্রয় দেয় না, শুধু নিশ্চিত বিশ্বাসের উপর জোর দেয়। হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর আমলও তা বলে দেয় যে, নিশ্চিত বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমেই কোন ফয়সালা করা যেতে পারে। কেননা, الدين يسر অর্থাৎ ধর্ম সহজ এবং কুরআন করীমও এই শিক্ষা দেয়।

ان الظن لا يغنى من الحق شيئا

অর্থাৎঃ নিশ্চয় সন্দেহ সতের মোকাবেলায় কোন কাজে আসে না (আন্ নযমঃ ২৯ আয়াত)। হযরত মির্যা সাহেব শূকর-চর্বি মিশ্রিত পনিরের যে কথা উল্লেখ করেছেন, এটা তাঁর নিজস্ব ভাষ্য নয় বরং প্রসিদ্ধ ইসলামী ইতিহাসের বিভিন্ন পুস্তকে এ কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন ‘যুরকানী শরাহ্ আল্ মাওয়াহেবুল্‌লাদ্দুন্নিয়া” চতুর্থ খন্ড ৩৩৫ পৃষ্ঠায় হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর এ ব্যাপারে একটি রেওয়ায়াত রয়েছে। হযরত শেখ যইনুদ্দীন বিন আব্দুল আযীয তাঁর পুস্তক ‘ফাতহুল মুঈন শারাহ্ কুররাতুল আয়েন” এর মধ্যে বাবুস্ সালাতের অন্তর্গত একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন

وجوخ اشتهر عمله بلحم الخنزير ورجبن شامي اشتهر عمله با نفحة الخنزير وقد جاء صلى الله عليه وسلم جبنة من عندهم ولم يسؤل عن ذلك ذكره شيخنافي المنهاج

এই হাদীসটিকে ফাতওয়া ইযহারুল হক নামক পুস্তকেও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ফাতওয়া ইযহারুল হক পুস্তকটি মৌলভী আতা মুহাম্মদ সাহেব ১৮৭৫ সনে লাহোর থেকে ছাপান। এই পুস্তকটি প্রকাশনার ব্যাপারে উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম ও খতীব মৌলভী নযীর আহমদ সাহেব দেহলভীর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। শুধু তাই নয়, তিনি ফতওয়ার এই পুস্তকটিতে নিজের স্বাক্ষরও দিয়েছেন। উপরে বর্ণিত হাদীসের অনুবাদ পুস্তকটিতে এভাবে করা হয়েছেঃ

اور جوخ جو مشهورهے بنانا اس کا ساته چربی سور کے اور پنیر شام کا جناب سرور عليه الصلوة والسلام کے پاس پنیران کے پاس سے پس کھایا آنحضرت صلى الله عليه وسلم نے اس سے اور نہ پوچھا اس سے
(فتوى اظهار الحق ۱۷-۱۸)

অর্থাৎ এবং ‘যূখ’ এর তৈরী সম্বন্ধে প্রসিদ্ধি ছিল যে, ইহা শূকরের চর্বি দিয়ে বানানো হতো। এবং ‘শামে’র (সিরিয়া) তৈরী পনিরের সম্বন্ধে প্রসিদ্ধি ছিল যে, তা শূকরের তরল চর্বি দিয়ে বানানো হতো। হুযুর (সঃ)-এর নিকট এই পনির আনা হলো। সুতরাং তিনি (সঃ) তা খেলেন এবং এর সম্বন্ধে কাউকে জিজ্ঞেস করলেন না। (ফতওয়া ইযহারুল হক, পৃঃ ১৭-১৮)।

উপরোক্ত উদ্ধৃতি দ্বারা ইহাই প্রতীয়মান হয় যে, হযরত মির্যা সাহেব হযরত রসূল করীম (সঃ)-এর অবমাননা করেন নি। সুধীবৃন্দের জন্য হযরত মির্যা সাহেবের লেখা হতে কয়েকটি উদ্ধৃতি পেশ করতঃ হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর প্রতি তাঁর গভীর প্রেম ও ভালোবাসার প্রমাণ দিয়ে এই অধ্যায়টি শেষ করছি।

মির্যা সাহেব বলেছেন।

“আমার মস্তক আহমদ (সঃ) এর চরণধূলায় লুণ্ঠিত, আমার হৃদয় সর্বদা মুহাম্মদ (সঃ)-এর জন্য কুরবান।” (ফার্সী দুরে সমীন)

“খোদার পরে, মুহাম্মদ (সঃ)-এর প্রেমে আমি বিভোর, ইহা যদি কুফরী হয়, খোদার কসম, আমি শক্ত কাফের” (ফার্সী দুরে সমীন)।

“মানব জাতির জন্য জগতে আজ কুরআন ব্যতিরেকে আর কোন ধর্মগ্রন্থ নেই এবং আদম সন্তানের জন্য মুহাম্মদ (সঃ) ভিন্ন কোনই রসূল ও যোজক নেই। অতএব, তোমরা সেই মহা গৌরবসম্পন্ন নবীর সাথে প্রেমসূত্রে আবদ্ধ হতে চেষ্টা কর এবং অন্য কাউকেও তাঁর (সঃ) উপর কোন প্রকারের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করিও না যেন আকাশে তোমরা মুক্তি-প্রাপ্ত বলে পরিগণিত হতে পারো” (কিস্তিয়ে নূহ)।

“খোদা সেই ব্যক্তিকে ভালোবাসেন, যে তাঁর পবিত্র গ্রন্থ কুরআনকে বিধিবদ্ধ আইন বলে স্বীকার করে, তাঁর রসূল হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-কে প্রকৃত খাতামুল আম্বিয়া বলে বিশ্বাস করে এবং নিজেকে তাঁর কল্যাণের ভিখারী বলে জ্ঞান করে” (চশমায়ে মা’রেফত)।

(পুস্তকঃ অযথা বিভ্রান্তি)

আপনার উত্তর যোগ করুন

আপনার উত্তরটি একজন এডমিন রিভিউ করে অনুমোদন করবেন।