আপত্তির জবাব

তাঁর লেখায় আল্লাহ্‌ তা’লা সম্পর্কে আপত্তি

‘আল্লামার’ উত্থাপিত আপত্তি ও অভিযোগসমূহের মাঝে সবচেয়ে বড় ও মারাত্মক অভিযোগ হচ্ছে মূলত দু'টি। ১। হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) নাকি আল্লাহ্ হবার দাবী করেছেন। ২। হযরত মির্যা সাহেব নাকি বলেছেন, আল্লাহ্ আমার হাতে বয়াত করেছেন। (আহমদী বন্ধু, পৃষ্ঠা-৩৭) এর উত্তর দেয়ার আগে দু'টি বাক্যে আমাদের একটি স্পষ্ট ঘোষণা তুলে ধরতে চাই। হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) যদি কোথাও আল্লাহ্ হবার দাবি করে থাকেন বা আল্লাহকে তার বয়াতকারীদের অন্তর্ভুক্ত বলে থাকেন তাহলে আহমদীয়া জামা’ত নিঃসন্দেহে মিথ্যা সাব্যস্ত হবে এবং আমরা সবচেয়ে প্রথমে এমন ভণ্ডদের জামা'ত পরিত্যাগ করব। অতএব মনোযোগ দিয়ে ধৈর্য সহকারে এসব গুরুতর অভিযোগের প্রকৃত স্বরূপ অবলোকন করুন।

১. আপত্তি: ‘এই আল্লাহ্ যার আয়ত্বে ছোট থেকে ছোট বস্তু, তার থেকে মানুষ কোথায় পালাবে? তিনি বলেন, আমি (আল্লাহ্) চোরের মত গোপনে আসব। (রুহানী খাযায়েন ২০/৩৯৬)”- ‘আল্লামা’ আপত্তি করে বলেছেন, মহান আল্লাহকে চোরের সাথে তুলনা করে কাদিয়ানী সাহেব কোন্ মর্যাদা রক্ষা করতে গেলেন? গোপনে আসা কি চোর ছাড়া অন্য কোন উপমা দিয়ে বোঝানো যেত না?

উত্তর: আপত্তিটির প্রথম উত্তর হল, একথাটি মির্যা সাহেবেরই নয়। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত একটি ইলহাম। অতএব ‘আল্লামা’-র উচিৎ আপত্তিটি আল্লাহর কাছে উত্থাপন করা। কিন্তু তিনি যদি এটিকে সত্য ইলহাম হিসেবে মনে না করেন, তাহলে মুসলমান হিসেবে তাকে এ কথা বিশ্বাস করতেই হবে আল্লাহ্‌র প্রতি মিথ্যারোপকারী ভণ্ডদের শাস্তি দিতে এবং ধ্বংস করার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। এটি যদি মির্যা সাহেবের মনগড়া কোন কথা হত, আর আল্লাহ্ যদি এটিকে নিজের জন্য অপমানজনক কোন বিষয় বলে মনে করতেন তাহলে তিনিই মির্যা সাহেবকে ধ্বংস করার ব্যবস্থা করতেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’লা বলেন,

وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ الْأَقَاوِيْلِ لَا خَذْنَا مِنْهُ بِالْيَمِيْنِ ، ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ الْوَتِينَ . فَمَا مِنْكُمْ مِّنْ أَحَدٍ عَنْهُ حُجِزِيْنَ

অর্থাৎ ‘আর সে যদি কোন কথাকে মিথ্যা বানিয়ে আমাদের প্রতি আরোপ করত তাহলে নিশ্চয় আমরা তাকে ডান হাতে ধরতাম এবং আমরা অবশ্যই তার জীবন শীরা কেটে দিতাম। তখন তোমাদের কেউই তাকে রক্ষা করতে পারত না। (সূরা আল হাক্কা: ৪৫-৪৮) আমরা যারা মুসলমান, আমরা জানি ও ঈমান রাখি, হযরত মুহাম্মদ (সা.) সত্যবাদী নবী ও রসূল ছিলেন। আমরা জানি তিনি (সা.) ৪০ বছর বয়সে আল্লাহ্ তা’লার পক্ষ থেকে প্রত্যাদিষ্ট হবার দাবী করেন আর ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। মহানবী (সা.) তাঁর প্রথম ওহী লাভ করার পর ২৩ বছর জীবন লাভ করেছিলেন। মুসলমান আলেমগণ এই মানদণ্ডটিকে আহলে কিতাবদের সামনে মহানবী (সা.)-এর সত্যতার প্রমাণ হিসাবে উপস্থান করে আসছেন যুগ যুগ ধরে। আল্লাহ্ তা’লা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেন, তোমাদের কেউ মিথ্যা দাবীদারকে আমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না। আহলে সুন্নত ওয়াল জামা’তের নির্ভরযোগ্য একটি গ্রন্থ শারাহ্ আকায়েদ নাসফীতে লেখা আছে, নবী ছাড়া অন্য কারো মাঝে এসব বৈশিষ্ট্য পাওয়া অসম্ভব। আর আল্লাহ্ তা’লার প্রতি মিথ্যা আরোপ করার পরও আল্লাহ্ তাকে ২৩ বছর ছাড় দিবেন- এটিও একেবারে অসম্ভব’ (মাবহাসুন নাবুওয়াত পৃষ্ঠা, ১০০)।

এরপর তিনি মানদণ্ড হিসেবে ২৩ বছর কেন নিলেন এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উক্ত শারাহ আকায়েদ নাসফীতে লিখেন, নিশ্চয় মহানবী (সা.) যখন আবির্ভূত হয়েছেন তখন তার বয়স ছিল ৪০ বছর আর যখন তিনি ইন্তেকাল করেছেন তখন তার বয়স ছিল ৬৩ বছর। (মাবহাসুন নাবুওয়াত পৃষ্ঠা, পৃষ্ঠা ৪৪৪) তাই নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে আল্লাহ্ তা’লা নির্ধারিত এই মানদণ্ডে চলুন মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.)-কে যাচাই করে দেখি। মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) ১৮৮০ সালের আগ থেকেই আল্লাহ্ তা’লার পক্ষ থেকে শরীয়ত বিহীন ওহী ও ইলহাম প্রাপ্তির দাবী করেন। আর এ দাবী তিনি বারাহীনে আহমদীয়া পুস্তকে প্রকাশ করে দেন। আর সফল জীবন কাটিয়ে তিনি ইন্তেকাল করেছেন ১৯০৮ সনে। অর্থাৎ মির্যা সাহেব ইলহাম প্রাপ্তির দাবী করার পর ২৮ বছরেরও বেশী জীবন লাভ করেছেন। অতএব পবিত্র কুরআনের এই আয়াত অনুযায়ী হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) তাঁর দাবীতে সত্য প্রমাণিত হন। অনেকে খোদার উপর খোদকারী করতে গিয়ে বলে ফেলেন এমন তো অনেকেই করতে পারে এবং ২৩ বছর জীবন লাভ করতে পারে। যারা এমন কথা বলেন তাদেরকে বলছি, আল্লাহকে ভয় করুন। আমাদের আল্লাহ্ এখনও তেমনই ক্ষমতার অধিকারী যেমনটি তিনি মুহাম্মদ (সা.)-এর সময় ছিলেন। এমন বক্তব্য খোদার বিরুদ্ধে চরম ধৃষ্টতা ছাড়া আর কিছু নয়। এক্ষেত্রে আমাদের চ্যালেঞ্জ শুনুন! পৃথিবীতে এমন কোন মিথ্যা দাবীদার দেখাতে পারবেন না যে আল্লাহ্‌র প্রতি মিথ্যা ওহী ও ইলহাম আরোপ করে আল্লাহ্ নির্ধারিত ২৩ বছর জীবন লাভ করেছে। নবুয়্যতের মিথ্যা দাবীদার অনেকেই গত হয়েছেন, যেকোন একটি উদাহরণ দেখান যে আল্লাহ্ পক্ষ থেকে ওহী ও ইলহাম লাভের মিথ্যা দাবী করেও ২৩ বছর জীবন পেয়েছে। অসম্ভব, কখনও এমনটি হতে পারে না। কেননা আল্লাহ্ তা’লা যিনি সকল ক্ষমতার অধিকারী তিনি বলেছেন, আল্লাহ্ তা’লার প্রতি মিথ্যারোপকারীকে আল্লাহ্ নিজে ধ্বংস করে দেন। অতএব হৃদয়ের চোখ উন্মুক্ত করে দেখুন এই আয়াত কীভাবে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.)-এর সপক্ষে সত্যতার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু আল্লাহ্ মির্যা সাহেবকে ধ্বংস না করে পদে পদেউল্টো তাঁকে এবং তাঁর জামা’তকে সাহায্য ও বিজয় দান করে প্রমাণ করে দিয়েছেন মির্যা সাহেব মিথ্যাচার করেন নি, বরং এটি আল্লাহর পক্ষ থেকেই ইলহাম করা হয়েছে।

এ কথা সর্বজন বিদিত, উপমা দেয়ার ক্ষেত্রে সর্বদাই কোন একটি গুণ বা বৈশিষ্ট্যকে লক্ষ্য করে উপমা দেয়া হয়। যেমন, কাউকে যদি ‘বাঘের বাচ্চা’ বলে উপমা দেয়া হয় তাহলে এর দ্বারা কেবল বাঘের বীরত্বের গুণের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়, অন্যান্য নেতিবাচক বিষয় যেমন, এর হিংস্রতা বা এর পশুত্ব এতে ধর্তব্য হয় না। কেউ যদি বাঘের বাজে দিকগুলোকে মাথায় এনে চিন্তা করে তাহলে এটিও গালির পর্যায়ে পড়তে পারে। একইভাবে অন্যান্য উপমা ও তুলনার বিষয় যাচাই করা কর্তব্য। কাউকে ‘গামা’ বা ‘রুস্তম’ পাহওয়ান বললে সে আনন্দিত হয় ঠিকই কিন্তু সে যদি বংশ পরিচয় বা বাপের পরিচয় পাল্টে দেয়ার কথাটি ভাবে তাহলে উপমা প্রদানের মূল উদ্দেশ্যই ভেস্তে যাবে। লক্ষ্য করুন, আল্লাহ্ তা’লা পবিত্র কুরআনে সূরা বাকারার ২৪৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন,

من ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهُ لَهُ أَضْعَافًا كَثِيرَةً

অর্থ, ‘কে আছে যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দিযে যেন তিনি তার জন্য এটিকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেন?’ এ আয়াতে কি আল্লাহ্ তা’লা নিজেকে অভাবী সাব্যস্ত করছেন? না, বরং ঋণগ্রহিতা হিসেবে এখানে আল্লাহর একটি বিশেষ দিক তুলে ধরা হচ্ছে। ঋণ যেমন মানুষ ফিরে পায়, তেমনই তোমরাও অর্থাৎ আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ ব্যায়কারীরাও আল্লাহ্‌র পথে ব্যায়কৃত সম্পদ অবশ্যই ফেরৎ পাবে। কেবল একথা বোঝানোর জন্য ঋণ প্রদানের কথা বলা হয়েছে। ঠিক একইভাবে, হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, হাশরের মাঠে আল্লাহ তাঁর কোন এক বান্দাকে উদ্দেশ্য করে বলবেন, “আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম- তোমরা আমাকে খাবার দাও নি, আমি পিপাসার্ত ছিলাম- তোমরা আমাকে পানি পান করাওনি, আমি নগ্ন ছিলাম- তোমরা আমাকে বস্ত্র দাও নি, আমি অসুস্থ ছিলাম- তোমরা আমাকে সেবা কর নি।” (মুসলিম, অধ্যায়: আল-বিররু ওয়াস-সিলাহ ওয়াল আদাব, অনুচ্ছেদ: ফাযলি ইয়াদাতিল-মারীয)

‘আল্লামা’, এখন বলুন উপরোক্ত হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ নিজের সম্বন্ধে কি এগুলোর চেয়ে ভাল কোন উপমা খুঁজে পান নি? ক্ষুধার্ত আর পিপাসার্ত হবার কথা না হয় বাদই দিলাম, কিন্তু তৃতীয় উপমাটি বাহ্যিক অর্থে আল্লাহ্র ঘোরতর অবমাননা নয় কি? অথচ সবার জানা কথা, আল্লাহ্ তা'লা উপরোক্ত সমস্ত দোষ- দুর্বলতা থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র।

ঠিক একইভাবে চোরের মত সংগোপনে আসার উদাহরণ আল্লাহ্ এজন্যই দিয়েছেন, চোর একেবারে নীরবে নির্জনে আর নিভৃতে আসে এবং পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে সংগোপনে আসে। সবার অলক্ষ্যে আসার নাম হল চোরের মত আসা। উপরোক্ত উদাহরণ দিয়ে এটিই বুঝানো হয়েছে, এর চেয়ে বাড়তি কিছু নয়। সংগোপনে অকস্মাৎ ঐশী নিদর্শনাবলীর প্রকাশিত হবার বিষয়টিকে এভাবে বলা হয়েছে মাত্র।

(পুস্তকঃ হে ‘আল্লামা’! - প্রকৃত ইসলামই আমাদের ঠিকানা)
২. 'আল্লামা' আব্দুল মজিদের পরবর্তী আপত্তিটি আরও ‘অভিনব’। তার মতে, হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) নাকি রূহানী খাযায়েন ১৮শ খণ্ডের ২২৭ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘আল্লাহ্ আমার হাতে বয়াত গ্রহণ করেছেন’ (আহমদী বন্ধু ইসলামই তোমার আসল ঠিকানা- ৩৭ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

উত্তর: ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ মির্যা সাহেবের ‘সব বই পড়ে এবং গবেষনা করে’ যে আপত্তিটি উত্থাপন করেছেন, এমন কোন দাবীই মির্যা সাহেব করেন নি!

প্রিয় পাঠক, রূহানী খাযায়েন ১৮শ খণ্ডের ২২৭ নম্বর পৃষ্ঠায় হযরত মির্যা গোলাম আহমদ (আ.) তাঁর কয়েকটি আরবী ইলহাম প্রকাশ করেছেন। খোদার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত এসব ইলহামের মাঝে একটি বাক্য হল, ‘ইন্নি বায়া’তুকা বায়া’নী রাব্বী’। এ থেকে ‘আল্লামা’ যে বিকৃত অর্থ বের করেছেন তা মোটেও ধোপে টেকে না। কেননা ইলহামপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্বয়ং এর সাথেই এর অনুবাদ প্রকাশ করে দিয়েছেন। ২২৭ নম্বর পৃষ্ঠা থেকেই এসব ইলহামের অনুবাদ আরম্ভ হয়ে পরবর্তী পৃষ্ঠা অর্থাৎ ২২৮ নম্বর পৃষ্ঠায় গিয়ে শেষ হয়েছে। যে কোন নিরপেক্ষ খোদাভীরু ব্যক্তি উক্ত ইলহামের অর্থ বোঝার জন্য বা দাবীকারকের দাবী জানার জন্য ‘মুলহাম্’ তথা সেই ইলহামপ্রাপ্ত ব্যাক্তিরই দ্বারস্থ হতে বাধ্য। কিন্তু বিদ্বেষ ও শত্রুতা মানুষকে কখনও কখনও এতঅন্ধ করে দেয় যার কারণে, সে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এক্ষেত্রেও অনুরূপ ঘটনাই ঘটেছে। আরবী শব্দ ‘বায়উন’ অর্থ ‘ব্যবসা’ তথা ‘লেনদেন’। এ ইলহামে সে শব্দটিই ব্যবহৃত হয়েছে। হযরত মির্যা গোলাম আহমদ (আ.) নিজে এ ইলহামের অর্থ প্রকাশ করে লিখেছেন: “আমি তোমার সাথে একটি লেনদেন করেছি। অর্থাৎ, একটি জিনিষ আমার ছিল যার অধিকারী তোমাকে করা হয়েছে আর তোমার কাছে একটি জিনিষ ছিল যার অধিকারী হয়েছি আমি। তুমিও এই ব্যবসার স্বীকারোক্তি দিয়ে বল, ‘খোদা আমার সাথে একটি লেনদেন করেছেন।’ যারা আধ্যাত্মিক জগতের সামান্য ছোঁয়াও রাখেন তারা ভালভাবে জানেন, আল্লাহ্‌র কাছে নিজেকে সঁপে দেয়াই হচ্ছে ইসলাম ধর্মের মূল শিক্ষা। এর বিনিময়ে আল্লাহ তা’লা নিজের সন্তুষ্টি তথা ‘জান্নাত’ দান করেন। একথার ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ্ তা’লা কুরআন শরীফে স্পষ্টভাবে বলেছেন,

إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ

অর্থাৎ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বাসী মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জীবন ও ধন- সম্পদ কিনে নিয়েছেন- এর বিনিময়ে তাদেরকে জান্নাত দেয়ার শর্তে’ (সূরা তওবা, আয়াত ১১১)। এ আয়াতের শেষে বিশ্বাসী মুমিনদের একাজটিকে স্পষ্ট ভাষায় একটি ‘ব্যবসা’ বা লেনদেন হিসেবে উল্লেখ করে আল্লাহ তা’লা বলছেন,

فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُم بِهِ وَذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

তোমরা তোমাদের এই ব্যবসার কারণে আনন্দিত হও যা তোমরা তাঁর সাথে করেছ। আর এটিই হল মহাসাফল্য।’ ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদকে জিজ্ঞেস করি, যে ব্যক্তি নিজ জীবনে আল্লাহর পক্ষ থেকে এই পূর্বঘোষিত মহাসাফল্য লাভের সুসংবাদ পেয়েছেন তাঁর বিরোধিতা করা কি আপনার মত একজন আলেমের সাজে? নাকি ‘তাজ্‌আলূনা রিযকাকুম আন্নাকুম তুকায্‌যিবূন’ কথাটি আপনার জন্যও প্রযোজ্য? একদিকে এত গভীর আধ্যিাত্মিক বিষয়টিকে এড়িয়ে যাবার চালাকি, অপরদিকে ইলহামের অর্থ বিকৃত করার ধৃষ্টতা! আল্লাহ্‌র ভয় বলতে কি কিছুই অবশিষ্ট নেই?

(পুস্তকঃ হে ‘আল্লামা’! - প্রকৃত ইসলামই আমাদের ঠিকানা)
৩ ও ৪. আপত্তি: একবার আমার প্রতি ইলহাম হল, আল্লাহ্ নিজের ওয়াদা মত কাদিয়ানে অবতীর্ণ হবেন (তাযকেরাহ পৃ: ৩৫৮, ৪র্থ এডিসন চতুর্থ)। [আহমদী বন্ধু, পৃষ্ঠা নম্বর ৩৭]

উত্তর: কাদিয়ানে আল্লাহ্ অবতরণ করবেন- এতে আপত্তির কী আছে? যেখানে আল্লাহর প্রত্যাদিষ্ট মহাপুরুষ আগমন করেন সেখানে তো আল্লাহ্ নাযিল হবেনই হবেন। বরং এটা না হলে আপত্তি হত, এ কেমন প্রত্যাদিষ্ট ব্যক্তি যার কাছে আল্লাহ্ নাযিল হন না? আল্লাহ্‌র নাযিল হবার অর্থ ঐশী নিদর্শনাবলির প্রকাশ এবং তাঁর প্রত্যাদিষ্টের পক্ষে ঐশী সমর্থন। মুসলিম শরীফের কিতাবুল ফিতানের হাদীসে একথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, শেষ যুগে আগমনকারী মসীহর প্রতি আল্লাহ ইলহাম ও ওহী করবেন। অর্থাৎ সত্য মসীহ ও মাহদী আল্লাহর নিদর্শন ও ওহীপ্রাপ্ত হবেন। একথাই আলোচ্য ইলহামে আরেকভাবে বর্ণিত হয়েছে। শুধু প্রতিশ্রুত মসীহর বেলায় কেন, সাধারণ মুসলমানদের কাছেও আল্লাহ প্রতি রাতের শেষ প্রহরে নাযিল হন বলে সহীহ হাদীসে উল্লেখ আছে (বুখারী শরীফ)। সাধারণ বান্দাদের কাছে প্রতিরাতে আল্লাহর অবতরণ যদি আপত্তির কারণ না হয়ে থাকে তাহলে, প্রতিশ্রুত মসীহ ও মাহদীর বিষয়ে আপত্তি কেন?

(পুস্তকঃ হে ‘আল্লামা’! - প্রকৃত ইসলামই আমাদের ঠিকানা)
ক্রমিক নম্বর ৫ ও ৬-এ তার আপত্তি হচ্ছে, মির্যা লিখেছেন, “স্বপ্নে দেখলাম, আমি খোদা এবং বিশ্বাস করলাম আসলেই তাই। (রুহানী খাযায়েন ৫/৫৬৪)” উক্ত উদ্ধৃতি তুলে ধরে এই বক্তব্য অবমাননাকর এবং রুচিহীন বলে আপত্তি উত্থাপন করা হয়েছে। (আহমদী বন্ধু- ইসলামই তোমার আসল ঠিকানা: ৩৭ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)

উত্তর: হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) রচিত ‘আয়েনায়ে কামালাতে ইসলাম’ গ্রন্থের ৫৬৪ নম্বর পৃষ্ঠায় আরবী অংশে হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) একটি স্বপ্নের উল্লেখ করেছেন। চলুন, প্রথমে তাঁর লেখা আরবী অংশের অনুবাদটি দেখে নেয়া যাক।

আমি স্বপ্নে নিজেকে আল্লাহ্ হিসাবে দেখেছি এবং দৃঢ় প্রত্যয় জন্মাল আমিই তিনি। আর আমার নিজস্ব কোন ইচ্ছা, চিন্তা বা আচরণ অবশিষ্ট থাকল না, আর আমি একটি কানায় কানায় পরিপূর্ণ একটি পাত্রের মত হয়ে গেলাম বরং এমন একটি বস্তুর মত হয়ে গেলাম যাকে আরেক সত্তা বগলদাবা করে এমনভাবে নিজের মাঝে লুকিয়ে ফেলেছে যার ফলে তার নিজস্ব কোন অস্তিত্ব বা গন্ধ বলে কিছুই রইল না আর সে তাঁর মাঝে বিলিন হয়ে গেল…’

‘...আর আমার আল্লাহ্-রূপে নিজেকে দেখার অর্থ হচ্ছে কায়ার দিকে ছায়ার প্রত্যাবর্তন। খোদা-প্রেমিকদের সাথে এরকম ঘটনা অহরহ ঘটেই থাকে। এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা হল, আল্লাহ যখন কোন মঙ্গল সাধনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তখন যেভাবে তাঁর ইচ্ছা পরিকল্পনা ও প্রজ্ঞা চায়, সেভাবে তা পূর্ণ করার লক্ষে আমাকে তাঁর উদ্দেশ্য ও একত্ববাদের বিকাশস্থলে পরিণত করেন। সৎকর্মশীল, কুতুব ও সিদ্দীকদের সাথে তিনি এ ধরনেরই আচরণ করে থাকেন।’

হযরত মির্যা সাহেব শেষে গিয়ে বলছেন, “এই ঘটনার মাধ্যমে আমি ‘ওয়াহদাতুল ওয়াজুদ’ (সর্বেশ্বরবাদ) মতবাদে বিশ্বাসীদের ধারণাকে বুঝাই না আবার এর মাধ্যমে আমি ‘হুলুলিয়্যিন’ (অর্থাৎ আক্ষরিকভাবে খোদা কারো মাঝে প্রবিষ্ট হয়ে যান এমন) মতবাদে বিশ্বাসীদের ধারণাকেও বুঝাচ্ছি না বরং এ ঘটনাটি ঠিক তেমনই যেমনটি মহানবী (সা.)-এর একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে অর্থাৎ নফল ইবাদতের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে বুখারী শরীফে যে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে-সে কথাই বুঝিয়েছি।”

পাঠকবৃন্দ, এ পুরো বিষয়টি হযরত মির্যা সাহেবের স্বপ্নে দেখা একটি দৃশ্য। হযরত মির্যা সাহেব তার দেখা স্বপ্ন তুলে ধরেছেন এবং এর পাশাপাশি এর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অর্থ ও ব্যাখ্যাও প্রদান করেছেন। স্বপ্নের দৃশ্যকে ভিত্তি করে হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) নিজেকে কোথাও আল্লাহ্ বলে ঘোষণা দেন নি বরং তিনি নিজেকে আল্লাহ্ শক্তি ও পরিকল্পনার বিকাশস্থল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। শুধু তাই নয়, নিজেকে তিনি একটি কানায় কানায় পরিপূর্ণ পাত্র হিসাবে উপস্থাপন করেছেন যার নিজের কোন ইচ্ছা বা বাসনা অবশিষ্ট নেই। নিজেকে আরেক অস্তিত্বের পূর্ণাঙ্গীণ অধীনস্থ হিসাবে উল্লেখ করেছেন যেভাবে কোন বস্তুকে কেউ পূর্ণরূপে আয়ত্বে নিয়ে নেয়। আর এটি স্পষ্ট করার জন্য তিনি ‘বগলদাবা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। আর শেষে গিয়ে নিজেকে আল্লাহ্ অস্তিত্বে বিলীন এক ইবাদতকারী বান্দা হিসেবে উল্লেখ করে বুখারী শরীফের সেই বিখ্যাত হাদীসটির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন যে হাদীসে নফল ইবাদতের মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীসের উল্লেখ করে তিনি স্বপ্নের ব্যাখ্যাটি নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। সেই হাদীসটি হল,

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন: আল্লাহ্ তা’লা বলেন, ... আমার বান্দা নফল ইবাদত করতে করতে আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। এমন কি অবশেষে আমি তাকে আমার এত প্রিয় বানিয়ে নেই যেন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে। আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমি তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই, যার মাধ্যমে সে হাঁটে…’ (বুখারী, কিতাবুর রিকাক, বাবুত তাওয়াযু ; ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনুদিত বুখারী শরীফের ১০ম খণ্ড পৃষ্ঠা-৭৩ হাদীস নম্বর- ৬০৫৮ দ্রষ্টব্য)।

সম্মানিত পাঠক! আল্লাহকে ভয় করে বলুন, এ লেখার মাঝে মির্যা সাহেব আল্লাহ্ হবার দাবী করেছেন নাকি আল্লাহ্‌র সত্তায় বিলীন এক নগণ্য বান্দা হবার দাবি করেছেন? আল্লাহ্ স্বপ্নযোগে তাঁর প্রিয় বান্দাকে যে দৃশ্য দেখান তার জন্য কি বান্দাকে দায়ী করা যেতে পারে? যদি স্বপ্নে দেখা দৃশ্যাবলি সম্পর্কে এদেশের আলেম-উলামার আপত্তি থেকে থাকে তাহলে আমাদের বিনীত প্রশ্ন, সূরা ইউসুফের শুরুতেই উল্লেখ আছে, হযরত ইউসুফ (আ.) স্বপ্নে দেখেছিলেন, এগারটি তারা এবং চন্দ্র-সূর্য তাকে সেজদা করছে (সূরা ইউসুফ: ৫)।

সকল মুসলমান জানে সেজদা কেবল আল্লাহকেই করা যায়। বলুন, হযরত ইউসুফ (আ.) কি তবে খোদা হবার তথা উপাস্য হবার দাযী করেছেন? কক্ষনো না! একথা সবাই জানে, হযরত ইউসুফ (আ.)-এর স্বপ্নটির একটি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাখ্যা রয়েছে।

অতএব মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.)-ও তার স্বপ্নের মাধ্যমে খোদা হবার দাবী করেন নি বরং খোদার মহান অস্তিত্বের পক্ষ থেকে এই স্বপ্নে সূক্ষ্ম একটি ভবিষ্যদ্বাণী জানানো হয়েছে।

মূলত এই স্বপ্নের মাধ্যমে আল্লাহ্ তা’লা জানিয়েছেন, হে গোলাম আহমদ! তুমি তোমার আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে আমার এত নৈকট্য লাভ করেছ যার ফলে, তুমি আমার মহান অস্তিত্বের বিকাশস্থলে পরিণত হয়ে গেছ। আমি আমার ইচ্ছা ও পরিকল্পনা এ যুগে তোমার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করব। আর বাস্তবে তা-ই হয়েছিল।

স্বপ্নের ব্যাখ্যা সম্বলিত ইবনে সিরিন (রহ.)-এর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ তা’বীরুর রুইয়া-এ মানবীয় রূপে আল্লাহকে প্রত্যক্ষ করার অর্থ দেয়া আছে। এই গ্রন্থানুযায়ী এ ধরনের দৃশ্য দেখার অর্থ হল, আধ্যাত্মিক উন্নতি ও ঐশী সমর্থন লাভ হবে।

আমরা নিশ্চিত ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদের মত বিজ্ঞপ্রাজ্ঞ ব্যক্তি মির্যা সাহেবের বইটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়েছেন। আহমদীদের বিষয়ে তার মন্তব্য একথাই প্রমাণ করে। তিনি উদ্ধৃত পুস্তকের ৫৬৪ নম্বর পৃষ্ঠা পড়েছেন আর ৫৬৬ নম্বর পৃষ্ঠা পড়েন নি- এটি হতেই পারে না। নিশ্চয়ই তিনি পড়ে থাকবেন। সেক্ষেত্রে পৃষ্ঠা নম্বর ৫৬৪-এর ভগ্নাংশ উল্লেখ করে বাকি অংশটুকু জনসমক্ষে উল্লেখ না করা ইচ্ছাকৃতভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করা নয় কি?

(পুস্তকঃ হে ‘আল্লামা’! - প্রকৃত ইসলামই আমাদের ঠিকানা)
৭. আপত্তি: আমাকে বলা হল: তুমি যে কাজের ইচ্ছা কর তা তৎক্ষণাৎ হয়ে যায়। (রূহানী খাযায়েন ২২/১০৮)

উত্তর: এই ইলহামটি হযরত মসীহ মাওউদ (আ.)-এর দোয়া গৃহীত হবার দিকে ইঙ্গিত করছে। যারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেন তারা নিদর্শন হিসেবে তাঁর পক্ষ থেকে দোয়ার কবুলিয়াত লাভ করে থাকেন। একেই ফানা ফিল্লাহ্-র স্তর বা পর্যায় বলা হয়। এই মকামে পৌঁছলে বান্দার আর নিজস্ব কোন বা বাসনা অবশিষ্ট থাকে না বরং তার সকল ইচ্ছা ও বাসনা মহাক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ নিজ অধিনস্থ করে নেন। যেমন বদরের যুদ্ধে যদিও মহানবী (সা.) কঙ্কর ছুড়ে মেরেছিলেন কিন্তু পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তা’লা বলেন, ওয়া মা রামায়তা ইয্‌ রামায়তা ওয়ালাকিন্নাল্লাহা রামা। (সূরা আনফাল: ১৮) যদিও বাহ্যিকভাবে তুমি কঙ্কর নিক্ষেপ করেছিলেন কিন্তু আমি ঘোষণা দিচ্ছি প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই তা ছুড়েছিলেন। অর্থাৎ আল্লাহ্‌র অস্তিত্বে বিলিন ‘ফানাফিল্লাহ’ ব্যক্তি সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর অধিনস্ত হয়ে যাওয়ায় আল্লাহ্ তার সদিচ্ছা পূর্ণ করে দেন। একথাই আল্লাহ্ তা’লা ইলহামের মাধ্যমে মির্যা সাহেবকে জানিয়েছেন।

(পুস্তকঃ হে ‘আল্লামা’! - প্রকৃত ইসলামই আমাদের ঠিকানা)
৮. আপত্তি: এবং কিছু নবীর বইতে আমার ব্যাপারে রূপকার্থে ফেরেশতা শব্দ এসেছে। দানিয়েল নবী তার কিতাবে আমার নাম মিকাইল রেখেছেন। আর ইব্রানী ভাষায় মিকাইল অর্থ খোদার মত। (রূহানী খাযায়েন ১৭/৪১৩) কাদিয়ানী ভাইরা বলবেন কি, সেই নবীদের বইগুলোর নাম ও পৃষ্টা নম্বর কত? মির্যা সাহেবকে মিথ্যার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য উদ্ধৃতিগুলো প্রকাশ করা কাদিয়ানীদের জন্য জরুরী। মিকাইলের প্রকৃত অর্থ ‘আল্লাহর বান্দা’। এখানে “আল্লাহর মত” বলে মির্যা সাহেব ভুল করেছেন। যেমন তিনি সফরকে চতুর্থ মাস বলে ভুল করেছেন। (রূহানী খাযায়েন ১৫/২১৮)

উত্তর: ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদের পাণ্ডিত্য দেখে আফসোস হচ্ছে। মির্যা সাহেব লেখেছেন ইব্রানী ভাষায় মিকাইল-এর অর্থ খোদার মত আর ‘আল্লামা’ অন্য অভিধান থেকে অনেক গবেষণা করে বের করেছেন, মিকাইলের অর্থ আল্লাহর বান্দা। অভিধান বের করার জ্ঞানও যদি না থাকে তাহলে অন্যের পাণ্ডিত্য বিচার করতে কেন এলেন। যদি অবিধান বের করা শিখে ফেলতেন তাহলে আর এভাবে লজ্জিত হতে হত না। ইব্রানী বা হিব্রু ভাষায় মিকাইল অর্থ খোদার মত। ইব্রানী তথা হিব্রু ভাষার অভিধানে মিকাইল-এর অর্থ কী দেয়া আছে দেখুন।
SH4317
4317 Miyka'el me-kaw-ale’
from 4310 and (the prefix derivative from) 3588 and 410; who (is) like God; Mikael, the name of an archangel and of nine Israelites:—Michael.

উক্ত হিব্রু অভিধানে স্পষ্ট মিকাইলের অর্থ ‘যে আল্লাহর মত’ করা হয়েছে।

অতএব ‘আল্লামা’ আল্লাহ্ প্রেরিত পুরুষের বিরোধিতায় আল্লাহর শাস্তির পাত্র হয়ে যাবেন না।

বাকি রইল দানিয়েল নবীর কোন বইয়ে এর উল্লেখ আছে? ‘আল্লামা’ নিশ্চয় বাইবেল পড়েছেন। বাইবেলেরে পুরাতন নিয়মের দানিয়েল অংশে ১২ অধ্যায়ে লিখিত আছে-

দানিয়েল নবী বলছেন, ‘সেই সময় তোমার লোকদের রক্ষাকারী মহান স্বর্গদূত মীখায়েল তোমাদের পক্ষে দাঁড়াবেন। এমন একটা কষ্টের সময় উপস্থিত হবে যা তোমার জাতির আরম্ভ থেকে সেই সময় পর্যন্ত কখনও হয় নি। ... পৃথিবীর মাটিতে ঘুমিয়ে থাকা অসংখ্য লোক তখন জেগে উঠবে। ...কিন্তু তুমি, দানিয়েল, শেষ সময় না আসা পর্যন্ত এই ভবিষ্যদ্বাণীর বইটা বন্ধ করে তার কথাগুলো সীলমোহর করে রাখ। সেই সময়ের মধ্যে অনেকে যেখানে সেখানে যাবে এবং জ্ঞানে বৃদ্ধি হবে।... সেদিন থেকে নিয়মিত উৎসর্গ বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং সর্বনাশা ঘৃণার জিনিষ স্থাপন করা হবে সেই দিন থেকে একহাজার দু'শো নব্বই দিন হবে। সেই লোক ধন্য যে অপেক্ষা করে এবং একহাজার তিনশো পয়ত্রিশ দিন পর্যন্ত স্থির থাকে।” (দানিয়েল ১২:১১-১২)

১২৯০ থেকে ১৩৩৫-এর একটি সংখ্যা উপরোক্ত ভবিষ্যদ্বাণীতে উল্লেখ করা হয়েছে। আর আশ্চর্যজনক হলেও সত্য বাস্তবে হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) ১২৯০ হিজরী সনেই প্রথম ইলহাম লাভ করেছিলেন। আর ১২৯০ থেকে ১৩৩৫ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যেই তাঁর জামা’তের বিকাশ, প্রচার ও প্রসার ঘটেছে।

শুধু হযরত দানিয়েল (আ.)-ই নন হযরত ঈসা (আ.)-ও ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছেন:

“আমি তোমাদের বলছি, যে পর্যন্ত তোমরা এ কথা না বলবে, যিনি প্রভুর নামে আসছেন তার গৌরব হোক। সেই পর্যন্ত আর তোমরা আমাকে দেখতে পারবে না।” (মথি ২৩:৩৯)

তিনি আরো বলেন: “সেই সাহায্যকারী পবিত্র আত্মাকে পিতা আমার নামে পাঠিয়ে দেবেন” (যোহনের ১৪ অধ্যায়ের ২৫-২৬ শ্লোক)। অতএব ‘আল্লামা’র আপত্তি কোন ভাবেই ধোপে টেকে না।

(পুস্তকঃ হে ‘আল্লামা’! - প্রকৃত ইসলামই আমাদের ঠিকানা)
৯. আপত্তি: ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদের আপত্তি হল, ‘আমি (আল্লাহ্) তোমাকে একজন ছেলের সংবাদ দিচ্ছি যার সাথে খোদা প্রকাশিত হবে। কেমন যেন আসমান থেকে খোদা অবতীর্ণ হবে। (রুহানী খাযায়েন ২২/৯৮-৯৯)

উত্তর: ‘আল্লামা’ আপনি এত জ্ঞানী পণ্ডিত হয়ে সাধারণ একটা উর্দু-আরবী বাক্যের অনুবাদ করতে অক্ষম- এটাও কি আমাদের বিশ্বাস করতে হবে? হযরত ইমাম মাহদী (আ.) অমুসলিমদের দাবীর প্রেক্ষিতে ইসলামের সপক্ষে একটি নিদর্শন চেয়ে হুশিয়ারপুরে চিল্লা করেছিলেন। উক্ত চিল্লার ফলে তিনি যে ঐশী সুসংবাদ লাভ করেছিলেন ১৮৮৬ সনের ২০শে ফেব্রুয়ারী তিনি তা প্রকাশ করেন। এই ভবিষ্যদ্বাণীতে প্রতিশ্রুত পুত্রের বিভিন্ন গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে। এরই একটি কর্তিত অংশ আপনি উদ্ধৃত করে ভুল অনুবাদ করেছেন। মূল ইলহামটির উদ্ধৃত অংশের সঠিক রূপ হচ্ছে:

‘মাযহারুল হাক্কি ওয়াল উলা কা আন্নাল্লাহা নাযালা মিনাস্ সামা’। অর্থাৎ তিনি সত্যের বিকাশস্থল হবেন মনে হবে যেন আল্লাহ্ আকাশ থেকে নেমে এসেছেন।

এ কথার অর্থ অত্যন্ত স্পষ্ট। প্রতিশ্রুত পুত্র হযরত মুসলেহ মাওউদ (রা.)-এর যাবতীয় ধর্মসেবার কাজ আল্লাহর সাহায্যপুষ্ট হয়ে সম্পাদিত হবে। তাঁর কার্যকলাপে ঐশী সাহায্য সহযোগিতার এত বেশী নিদর্শন প্রকাশিত হবে যেন আল্লাহ্ স্বয়ং ঊধ্বলোক থেকে ধরাপৃষ্ঠে নেমে এসেছেন বলে মনে হবে। বাস্তবে এমনটিই হয়েছিল। বাহান্ন বছরের খিলাফতকালে বাহ্যত অসম্ভব কাজকে সম্ভব করে দেখানো- এটাই আল্লাহর অবতরনের বহিঃপ্রকাশ। এছাড়া বুখারী শরীফসহ অন্যান্য সহীহ্ হাদীস গ্রন্থসমূহেও প্রতি রাতে আল্লাহ্ এই পৃথিবীতে নেমে আসার কথা সকলেরই জানা। আল্লাহ্‌র কোন পুণ্যবান বান্দা যদি তাঁর সাহায্যপুষ্ট হয়ে কাজ করে এতেও আপত্তি! ‘আল্লামা’ কি এমন কোন মসীহ্ বা মাহদীর অপেক্ষায় রত যার খলীফাদের সাথে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবে না?

(পুস্তকঃ হে ‘আল্লামা’! - প্রকৃত ইসলামই আমাদের ঠিকানা)
১০. আপত্তি: ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ কাজি মোহাম্মদ ইয়ার সাহেবের একটি বর্ণনা আপত্তি হিসেবে তুলে ধরেছেন, যাতে হযরত মসীহ মওউদ (আ.)-এর একটি কাশফের উল্লেখ রয়েছে। বর্ণনাকারীর বর্ণনাটি এরকম: ‘হযরত মসীহ্ মাওউদ (আ.) একবার নিজের অবস্থা প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, কাশফের অবস্থা এভাবে চেপে বসল যে, নিজেকে মহিলা মনে হল। আর আল্লাহ্ তা’লা পৌরষত্বের শক্তি আমার উপর প্রকাশ করছে। জ্ঞানীদের জন্য ইশারাই যথেষ্ট।’ (ইসলামী কুরবানী ট্রাক্ট নম্বর ৩৪)

উত্তর: হযরত মসীহ্ মাওউদ (আ.) নিজে কখনও একথা বর্ণনা করেন নি বা এমন কোন কাশফ বা দিব্য-দর্শনের কথা প্রকাশ করে যান নি। অন্য কারো বর্ণনা মির্যা সাহেবের বিরুদ্ধে আপত্তি হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে না। উক্ত কাশফের বর্ণনা আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের কোন খলীফাও করেন নি। অতএব, এদিক থেকেও এই আপত্তি ধোপে টেকে না। কথায় বলে ডুবন্ত ব্যক্তি খরকুটা ধরে বাঁচতে চায়। আপত্তিকারী ‘আল্লামা’-র দশাও ঠিক এমনই। আহমদীয়া জামা’তের পবিত্র প্রতিষ্ঠাতা হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.)-কে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করার জন্য এখন তিনি পাগলের প্রলাপের আশ্রয় নিয়েছেন।

সবার অবগতির জন্য জানানো হচ্ছে 'ইসলামী কুরবানী ট্রাক্ট' হযরত মির্যা সাহেবের বা তাঁর কোন খলীফার লিখিত কোন পুস্তক বা বক্তব্য নয় এবং এ পুস্তিকাটি আহমদীয়া জামা’ত কর্তৃক প্রকাশিতও নয়। ‘ইসলামী কুরবানী ট্রাক্ট’ পুস্তিকাটি লিখেছেন কাজি মোহাম্মদ ইয়ার সাহেব।

কাজি মোহাম্মদ ইয়ার সাহেব কে ছিলেন? তিনি ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তি। কাজি মোহাম্মদ ইয়ার সাহেবের ভারসাম্যহীন হবার কথা কেবল আমরা এখন বলছি না বরং গোড়া থেকেই প্রাথমিক পর্যায়ের ছোট বড় সব আহমদী তাকে মানসিকভাবে রোগাক্রান্ত বলেই জানতেন।

‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ উক্ত উদ্ধৃতির মূল কপি যখন ছাপালেন তখনও একটু কষ্ট করে এর পরের কয়েকটি লাইন পড়ে দেখেন নি। তা না হলে তিনি এ আপত্তি নিশ্চয়ই ছাপাতেন না। ‘আহমদী বন্ধু' পুস্তকের শেষের দিকে ৭৭/৭৮ পৃষ্ঠায় ইসলামী ‘কুরবানী ট্রাক্ট’ লিফলেটটির উদ্ধৃত পৃষ্ঠার প্রতিলিপি ছেপে দেয়ার জন্য ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদকে ধন্যবাদ, কেননা আপত্তি হিসাবে উদ্ধৃত লাইনটির নীচের লাইনেই স্বয়ং লেখকের এমন বক্তব্য বিদ্যমান যার দ্বারা তার মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হবার বিষয়টি স্পষ্ট প্রতিয়মান হয়।

‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ খুব ভালভাবে জানেন, বর্ণনা গ্রহণ করার সময় বর্ণনাকারীর গ্রহণযোগ্যতা একটি প্রধানতম শর্ত। এক্ষেত্রে প্রত্যেক রাবী বা বর্ণনাকারীর নৈতিক ও মানসিক যোগ্যতা বিচার করা হয়। শত-সহস্র হাদীসের গ্রহণযোগ্যতা বিচার করার জন্য ‘আসমাউর রিজালের’ নীতি ও শর্ত প্রয়োগ করবেন কিন্তু মির্যা সাহেবের বিরুদ্ধে আপত্তি করতে গিয়ে ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ এটি বেমালুম ভুলে যাবেন- এটি কেমন বিচার?

(পুস্তকঃ হে ‘আল্লামা’! - প্রকৃত ইসলামই আমাদের ঠিকানা)

আপনার উত্তর যোগ করুন

আপনার উত্তরটি একজন এডমিন রিভিউ করে অনুমোদন করবেন।