আহ্মদীয়া মুসলিম জামা’ত-এর পরিচিতি
بسم الله الرحمن الرحيم
لا إله إلا الله محمد رسول الله
আল্লাহ্ ছাড়া কোন উপাস্য নাই, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহ্র রসূল
আমাদের ধর্ম বিশ্বাস
নিখিল বিশ্ব আহমদীয়া মুসলিম জামা'তের পবিত্র প্রতিষ্ঠাতা হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) বলেন:
“আমরা মুসলমান। এক-অদ্বিতীয় খোদা তা’লার প্রতি ঈমান রাখি এবং লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ্ কলেমায় আমরা বিশ্বাসী। আমরা কুরআনকে খোদার কিতাব এবং তাঁর রসূল খাতামুল আম্বিয়া হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লামকে মানি। আমরা ফিরিস্তা, কিয়ামত অর্থাৎ পুনরুত্থান দিবস, জান্নাত ও জাহান্নামে বিশ্বাসী। আমরা নামায পড়ি ও রোযা রাখি এবং কিবলামুখী হই। যা কিছু আল্লাহ্ ও রসূল (সা.) ‘হারাম’ তথা নিষিদ্ধ আখ্যা দিয়েছেন সেগুলোকে হারাম জ্ঞান করি এবং যা কিছু ‘হালাল’ তথা বৈধ করেছেন সেগুলোকে হালাল আখ্যা দেই। আমরা শরীয়তে কোন কিছু সংযোজনও করি না, বিয়োজনও করি না এবং এক বিন্দু পরিমাণও কম-বেশী করি না। যা কিছু রসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর মাধ্যমে আমরা পেয়েছি - আমরা এর হিকমত বুঝি বা না বুঝি কিংবা এর অন্তর্নিহিত তত্ত্ব নাইবা উদ্ধার করতে পারি- আমরা তা গ্রহণ করি। আমরা আল্লাহ্ ফযলে বিশ্বাসী, একত্ববাদী মুসলমান। (‘নূরুল হক’, খণ্ড ১, পৃ. ৫)
আহমদীয়াত - খাঁটি ইসলামের অপর নাম
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী শেষ যুগে মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য এবং হারানো ঈমান পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে প্রতিশ্রুত মসীহ্ ও ইমাম মাহ্দী (আ.) আল্লাহ্ তা’লা কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে ভারতের পাঞ্জাবের কাদিয়ানে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি হলেন পারস্য বংশোদ্ভূত হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.)। তিনি ১৮৮২ সনে মহান আল্লাহ্ পক্ষ থেকে প্রত্যাদিষ্ট ও মনোনীত হন এবং ইসলামের খাঁটি শিক্ষা পুনরুজ্জীবিত ও পুনর্বাসিত করার জন্য ১৮৮৯ (১৩০৬ হিজরী) সনে ঐশী আদেশের ভিত্তিতে আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৮ (১৩২৬ হিজরী) সনে তাঁর মৃত্যুর পর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ঐশী খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়।
ঐশী খিলাফতই ইসলামের উন্নতির মূলমন্ত্র
সেই ঐশী খিলাফতের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে পঞ্চম খলীফার যুগ চলছে। তাঁর পবিত্র নাম হযরত মির্যা মাসরূর আহমদ (আই.)। বর্তমানে এই ঐশী জামা’ত বিশ্বের ২০৭টি দেশে সুপ্রতিষ্ঠিত। এ জামা’ত একক ঐশী নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণভাবে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে রত।
বাংলাদেশের মাটিতে এই ঐশী জামা’ত ১৯১২ সালের শেষে প্রতিষ্ঠিত হয়। আল্লাহ্ তা'লার যুগ-খলীফা হযরত মির্যা মাসরূর আহমদ (আই.) খলীফাতুল মসীহ্ আল-খামেস
অশেষ কৃপায় গত ২০১৩ ও ২০১৪ সনে আহমদীয়া মুসলিম জামা'ত, বাংলাদেশ তাদের শতবার্ষিকী পালন করেছে।
মহানবী (সা.)-এর আদেশ অনুযায়ী ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর নিকট বয়াতকারী আহমদী তরীকার মুসলমানরা আজ সারা পৃথিবীতে এক মহান আধ্যাত্মিক জিহাদে রত। আপনি কি বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে রসূল (সা.)-এর খাঁটি উম্মত হবার এবং নিজ ঈমানী দায়িত্ব পালন করেছেন?
আমাদের দাবির মূল ভিত্তি হচ্ছে হযরত ঈসা (আ.)-এর মৃত্যু
আল্লাহ্ তা’লা কুরআন শরীফে বলেছেন,
وَمَا مُحَمَّدُ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ
অর্থ: আর মুহাম্মদ একজন রসূল ছাড়া আর কিছুই নন। নিশ্চয় তার পূর্বের সব রসূল গত হয়ে গেছেন। [সূরা আলে ইমরানঃ ১৪৫]
‘মানুষ মাত্রই মরণশীল’- এই চিরন্তন নিয়ম এবং কুরআনের উপরোক্ত আয়াত ও অন্যান্য স্থানের ঘোষণা অনুযায়ী হযরত ঈসা (আ.) স্বাভাবিকভাবে মারা গেছেন।
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ثُمَّ إِلَيْنَا تُرْجَعُونَ
অর্থ: প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। এরপর আমাদের দিকেই তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে। [সূরা আনকাবুতঃ ৫৮]
অতএব ভবিষ্যদ্বাণীতে উল্লিখিত আগমনকারী ঈসা নবীউল্লাহ্, ঈসার গুণে গুণান্বিত রূপক এক ঈসা ছাড়া অন্য কেউ নন। আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের পবিত্র প্রতিষ্ঠাতা হযরত মির্যা গোলাম আহমদ (আ.) আল্লাহ্র আদেশে সেই রূপক ঈসা হবার দাবি করেছেন।
আগমনকারী ইমাম মাহ্দীর-ই আরেক নাম ঈসা ইবনে মরিয়ম
মহানবী (সা.) স্পষ্টভাবে বলেছেন,
وَ لَا الْمَهْدِيُّ إِلَّا عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ
অর্থ: ‘প্রতিশ্রুত মাহ্দী (আ.) আগমনকারী ঈসা ইবনে মরিয়ম ছাড়া অন্য কেউ নন।’ [ইবনে মাজাহ, বাব শিদ্দাতুয্ যামান]
মূসায়ী মসীহ্ এবং মুহাম্মদী মসীহ্ এক ব্যক্তি নন, দুই স্বতন্ত্র ব্যক্তি
উপরোক্ত হাদীস স্পষ্ট বলছে, প্রতিশ্রুত ঈসা পূর্বের ঈসা নন বরং ইমাম মাহ্দীরই একটি পরিচয় হল, তিনি রূপক অর্থে ঈসা ইবনে মরিয়ম। বুখারী শরীফেও উভয় মসীহ্ (আ.)-এর পৃথক পৃথক দৈহিক গড়ন বর্ণিত হয়েছে। একজনের গায়ের রং লাল-ফর্সা; অপরজনের গায়ের রং গধুম বর্ণ। একজনের মাথার চুল কোঁকড়ানো; অপরজনের মাথার চুল সরল-সোজা। অতএব পূর্বের ঈসা (আ.) এবং শেষ যুগে আগমনকারী ঈসা (আ.) দু’জন আলাদা ব্যক্তি। [বুখারী, কিতাবুল আম্বিয়া]
খাতামান নবীঈন হযরত মুহাম্মদ (সা.)
‘নবী মোর পরশমণি নবী মোর সোনার খনি
নবী নাম জপে যেজন সেইতো দু'জাহানের ধনী।’
عَنْ عَرْبَاضِ بْنِ سَارِيَّةِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ لَخَاتَمُ النَّبِيِّينَ وَإِنَّ آدَمَ لَمُنْجَدِلْ فِي طِيْنِتِهِ
মহানবী (সা.) বলেছেন: ‘আমি নিশ্চয়ই তখনও আল্লাহ্র বান্দা ও খাতামান নবীঈন ছিলাম যখন আদম (আ.) কর্দমাক্ত অবস্থায় তাঁর সৃষ্টির সূচনায় ছিলেন।’ [মুসনাদ আহমদ, হাদীসঃ ১৭২৮০] মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) হলেন ‘খাতামান নবীঈন’। আরবী ভাষায় ‘খাতাম’ শব্দের যত অর্থ আছে সব অর্থেই আমরা মহানবী (সা.)-কে ‘খাতামান নবীঈন’ বলে মান্য করি। সর্বশেষ শরীয়ত বাহক নবী হিসেবেও তিনি ‘শেষ নবী’ আর নবুওতের উৎকর্ষের শেষ মার্গ অর্জনকারী হিসেবেও তিনিই ‘শেষ নবী’। আমরা ‘খাতামান নবীঈন’ উপাধির সেই ব্যাখ্যাই মান্য করি যা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) বর্ণনা করে গেছেন (দুরে মনসুর)। দেওবন্দী মাদ্রাসা ও মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা মুহাম্মদ কাসেম নানুতবী সাহেব তাহযীরুন্নাস পুস্তকে ‘খতমে নবুওতের’ যে বিশ্লেষণ প্রদান করেছেন তার সাথে আমরা সম্পূর্ণ একমত।
শেষ যুগের মসীহ্ ও মাহ্দী কোথায়?
কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী শেষ যুগের অর্থাৎ ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর যুগের অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে। সেগুলো স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে। যেমন: - মুসলমানদের মাঝে অনৈক্য ও দলাদলি।
মিথ্যা ও দুর্নীতির সর্বগ্রাসী প্রাদুর্ভাব।
ত্রিত্ববাদী খ্রিস্টান তথা দাজ্জালের সর্বগ্রাসী আগ্রাসন।
মারণাস্ত্রধারী পরাশক্তি তথা ইয়াজুজ-মাজুজের উত্থান।
সুদ, মদ, জুয়া ও ব্যভিচারের ছড়াছড়ি।
আকাশের আবরণ উন্মোচিত, মহাকাশ বিজ্ঞানে অভূতপূর্ব উন্নতি।
বন্য জীবজন্তু জড়ো করে দেশে দেশে চিড়িয়াখানা স্থাপন।
পুস্তক-পুস্তিকার ব্যাপক প্রকাশনা , মুদ্রণ জগতে অভূতপূর্ব বিপ্লব।
নর্তকী ও গায়িকাদের প্রাধান্য।
উঁচু উঁচু অট্টালিকা নির্মাণের প্রতিযোগিতা ইত্যাদি ইত্যাদি।
একই রমযানে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ ইমাম মাহ্দীর সত্যতার অকাট্য প্রমাণ
إِنَّ لِمَهْدِيْنَا آيَتَيْن لَمْ تَكُوْنَا مُنْذُ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَنْكَسِفُ القَمَرُ لِأَوَّلِ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ وَتَنْكَسِفُ الشَّمْسُ فِي النِّصْفِ مِنْهُ وَلَمْ تَكُونَا مُنْذُ خَلَقَ الله السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ
অর্থ: ‘নিশ্চয় আমার মাহ্দীর জন্য এমন দু’টি লক্ষণ আছে যা আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি অবধি অন্য কারও সত্যতার নিদর্শন স্বরূপ প্রদর্শিত হয় নি। একই রমযানে (চন্দ্রগ্রহণের) প্রথম রাতে চন্দ্রগ্রহণ ও (সূর্যগ্রহণের) মধ্যম দিনে সূর্যগ্রহণ হবে। আর আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি অবধি এ দু’টি নিদর্শন কারও জন্য অনুষ্ঠিত হয় নি।’ [দারকুতনী, কিতাবুল ঈদাইন, বাব সালাতুল কুসূফ ওয়াল খুসূফ] এসব লক্ষণ প্রকাশিত হয়েছে এবং ১৮৯৪ ও ১৮৯৫ সনে হাদীসে উল্লিখিত একই রমযানের নির্ধারিত তারিখে চন্দ্র-সূর্য গ্রহণও অনুষ্ঠিত হয়েছে। তখন একমাত্র হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.)-ই প্রতিশ্রুত মসীহ্ ও মাহ্দী হবার দাবীদার ছিলেন। একথা সমসাময়িক পত্র-পত্রিকা ছাড়াও এদেশের প্রখ্যাত সুরেশ্বরীর পীর সৈয়দ আহমদ আলী তাঁর ১৯১৬ সালে প্রথম প্রকাশিত ‘মদিনা কলকি অবতারের ছফিনা’ এবং ‘ছফিনায়ে ছফর’ গ্রন্থেও উল্লেখ করেছেন। তাই দাবীদারের সত্যতা অকাট্যভাবে প্রমাণিত।
ইমাম মাহ্দী (আ.)-কে মানার গুরুত্ব
মহানবী (সা.) ইমাম মাহ্দী (আ.) প্রসঙ্গে বলেছেনঃ
فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَبَايِعُوهُ وَلَوْ حَبُوا عَلَى الثَّلْجِ فَإِنَّهُ خَلِيفَةُ اللَّهِ الْمَهْدِيُّ
অর্থঃ ‘যখন তোমরা তাঁর সন্ধান পাবে তাঁর হাতে বয়াত করবে, যদি বরফের পাহাড়ের উপর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়েও যেতে হয়। নিশ্চয় তিনি আল্লাহ্র খলীফা, আল্-মাহ্দী।’ [সুনানে ইবনে মাজা, বাব খুরূজুল মাহ্দী]
ঐশী খিলাফত: মুসলিম ঐক্যের একমাত্র পথ
পবিত্র কুরআন ও মহানবী (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী শেষ যুগের প্রতিশ্রুত মসীহ্ ও মাহ্দী যথাসময়ে এসে গেছেন। তাঁর পবিত্র নাম হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.)। তিনি দোয়া, ভালোবাসা, অকাট্য যুক্তি ও নিদর্শন বলে ইসলামের আধ্যাত্মিক বিজয়ের সূচনা করে গেছেন। তাঁর মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠিত খিলাফতের অধীনে এই বিজয়যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আদেশ করেছেন,
تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَ إِمَامَهُمُ
অর্থ: ‘তোমরা মুসলমানদের ঐশী জামা’ত ও এদের ইমামকে আঁকড়ে ধর।’ [বুখারী, কিতাবুল মানাকিব]
আল্লাহ্র অশেষ কৃপায় আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত একক ঐশী নেতৃত্বের অধীনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন ভাষায় পবিত্র কুরআনের অনুবাদ প্রকাশ, খাঁটি ইসলামী শিক্ষা প্রচার ও মসজিদ নির্মাণ, মিশন ও লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠাসহ ইসলামকে সুদৃঢ় করার বহুমুখী কাজে নিয়োজিত। চলুন আমরা আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূলের খাতিরে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে নিজেদের ঈমানী দায়িত্ব পালন করি।
لا إله إلا الله محمد رسول الله
আল্লাহ্ ছাড়া কোন উপাস্য নাই, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহ্র রসূল
আমাদের ধর্ম বিশ্বাস
নিখিল বিশ্ব আহমদীয়া মুসলিম জামা'তের পবিত্র প্রতিষ্ঠাতা হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) বলেন:
“আমরা মুসলমান। এক-অদ্বিতীয় খোদা তা’লার প্রতি ঈমান রাখি এবং লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ্ কলেমায় আমরা বিশ্বাসী। আমরা কুরআনকে খোদার কিতাব এবং তাঁর রসূল খাতামুল আম্বিয়া হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লামকে মানি। আমরা ফিরিস্তা, কিয়ামত অর্থাৎ পুনরুত্থান দিবস, জান্নাত ও জাহান্নামে বিশ্বাসী। আমরা নামায পড়ি ও রোযা রাখি এবং কিবলামুখী হই। যা কিছু আল্লাহ্ ও রসূল (সা.) ‘হারাম’ তথা নিষিদ্ধ আখ্যা দিয়েছেন সেগুলোকে হারাম জ্ঞান করি এবং যা কিছু ‘হালাল’ তথা বৈধ করেছেন সেগুলোকে হালাল আখ্যা দেই। আমরা শরীয়তে কোন কিছু সংযোজনও করি না, বিয়োজনও করি না এবং এক বিন্দু পরিমাণও কম-বেশী করি না। যা কিছু রসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর মাধ্যমে আমরা পেয়েছি - আমরা এর হিকমত বুঝি বা না বুঝি কিংবা এর অন্তর্নিহিত তত্ত্ব নাইবা উদ্ধার করতে পারি- আমরা তা গ্রহণ করি। আমরা আল্লাহ্ ফযলে বিশ্বাসী, একত্ববাদী মুসলমান। (‘নূরুল হক’, খণ্ড ১, পৃ. ৫)
আহমদীয়াত - খাঁটি ইসলামের অপর নাম
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী শেষ যুগে মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য এবং হারানো ঈমান পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে প্রতিশ্রুত মসীহ্ ও ইমাম মাহ্দী (আ.) আল্লাহ্ তা’লা কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে ভারতের পাঞ্জাবের কাদিয়ানে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি হলেন পারস্য বংশোদ্ভূত হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.)। তিনি ১৮৮২ সনে মহান আল্লাহ্ পক্ষ থেকে প্রত্যাদিষ্ট ও মনোনীত হন এবং ইসলামের খাঁটি শিক্ষা পুনরুজ্জীবিত ও পুনর্বাসিত করার জন্য ১৮৮৯ (১৩০৬ হিজরী) সনে ঐশী আদেশের ভিত্তিতে আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৮ (১৩২৬ হিজরী) সনে তাঁর মৃত্যুর পর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ঐশী খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়।
ঐশী খিলাফতই ইসলামের উন্নতির মূলমন্ত্র
সেই ঐশী খিলাফতের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে পঞ্চম খলীফার যুগ চলছে। তাঁর পবিত্র নাম হযরত মির্যা মাসরূর আহমদ (আই.)। বর্তমানে এই ঐশী জামা’ত বিশ্বের ২০৭টি দেশে সুপ্রতিষ্ঠিত। এ জামা’ত একক ঐশী নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণভাবে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে রত।
বাংলাদেশের মাটিতে এই ঐশী জামা’ত ১৯১২ সালের শেষে প্রতিষ্ঠিত হয়। আল্লাহ্ তা'লার যুগ-খলীফা হযরত মির্যা মাসরূর আহমদ (আই.) খলীফাতুল মসীহ্ আল-খামেস
অশেষ কৃপায় গত ২০১৩ ও ২০১৪ সনে আহমদীয়া মুসলিম জামা'ত, বাংলাদেশ তাদের শতবার্ষিকী পালন করেছে।
মহানবী (সা.)-এর আদেশ অনুযায়ী ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর নিকট বয়াতকারী আহমদী তরীকার মুসলমানরা আজ সারা পৃথিবীতে এক মহান আধ্যাত্মিক জিহাদে রত। আপনি কি বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে রসূল (সা.)-এর খাঁটি উম্মত হবার এবং নিজ ঈমানী দায়িত্ব পালন করেছেন?
আমাদের দাবির মূল ভিত্তি হচ্ছে হযরত ঈসা (আ.)-এর মৃত্যু
আল্লাহ্ তা’লা কুরআন শরীফে বলেছেন,
وَمَا مُحَمَّدُ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ
অর্থ: আর মুহাম্মদ একজন রসূল ছাড়া আর কিছুই নন। নিশ্চয় তার পূর্বের সব রসূল গত হয়ে গেছেন। [সূরা আলে ইমরানঃ ১৪৫]
‘মানুষ মাত্রই মরণশীল’- এই চিরন্তন নিয়ম এবং কুরআনের উপরোক্ত আয়াত ও অন্যান্য স্থানের ঘোষণা অনুযায়ী হযরত ঈসা (আ.) স্বাভাবিকভাবে মারা গেছেন।
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ثُمَّ إِلَيْنَا تُرْجَعُونَ
অর্থ: প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। এরপর আমাদের দিকেই তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে। [সূরা আনকাবুতঃ ৫৮]
অতএব ভবিষ্যদ্বাণীতে উল্লিখিত আগমনকারী ঈসা নবীউল্লাহ্, ঈসার গুণে গুণান্বিত রূপক এক ঈসা ছাড়া অন্য কেউ নন। আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের পবিত্র প্রতিষ্ঠাতা হযরত মির্যা গোলাম আহমদ (আ.) আল্লাহ্র আদেশে সেই রূপক ঈসা হবার দাবি করেছেন।
আগমনকারী ইমাম মাহ্দীর-ই আরেক নাম ঈসা ইবনে মরিয়ম
মহানবী (সা.) স্পষ্টভাবে বলেছেন,
وَ لَا الْمَهْدِيُّ إِلَّا عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ
অর্থ: ‘প্রতিশ্রুত মাহ্দী (আ.) আগমনকারী ঈসা ইবনে মরিয়ম ছাড়া অন্য কেউ নন।’ [ইবনে মাজাহ, বাব শিদ্দাতুয্ যামান]
মূসায়ী মসীহ্ এবং মুহাম্মদী মসীহ্ এক ব্যক্তি নন, দুই স্বতন্ত্র ব্যক্তি
উপরোক্ত হাদীস স্পষ্ট বলছে, প্রতিশ্রুত ঈসা পূর্বের ঈসা নন বরং ইমাম মাহ্দীরই একটি পরিচয় হল, তিনি রূপক অর্থে ঈসা ইবনে মরিয়ম। বুখারী শরীফেও উভয় মসীহ্ (আ.)-এর পৃথক পৃথক দৈহিক গড়ন বর্ণিত হয়েছে। একজনের গায়ের রং লাল-ফর্সা; অপরজনের গায়ের রং গধুম বর্ণ। একজনের মাথার চুল কোঁকড়ানো; অপরজনের মাথার চুল সরল-সোজা। অতএব পূর্বের ঈসা (আ.) এবং শেষ যুগে আগমনকারী ঈসা (আ.) দু’জন আলাদা ব্যক্তি। [বুখারী, কিতাবুল আম্বিয়া]
খাতামান নবীঈন হযরত মুহাম্মদ (সা.)
‘নবী মোর পরশমণি নবী মোর সোনার খনি
নবী নাম জপে যেজন সেইতো দু'জাহানের ধনী।’
عَنْ عَرْبَاضِ بْنِ سَارِيَّةِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ لَخَاتَمُ النَّبِيِّينَ وَإِنَّ آدَمَ لَمُنْجَدِلْ فِي طِيْنِتِهِ
মহানবী (সা.) বলেছেন: ‘আমি নিশ্চয়ই তখনও আল্লাহ্র বান্দা ও খাতামান নবীঈন ছিলাম যখন আদম (আ.) কর্দমাক্ত অবস্থায় তাঁর সৃষ্টির সূচনায় ছিলেন।’ [মুসনাদ আহমদ, হাদীসঃ ১৭২৮০] মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) হলেন ‘খাতামান নবীঈন’। আরবী ভাষায় ‘খাতাম’ শব্দের যত অর্থ আছে সব অর্থেই আমরা মহানবী (সা.)-কে ‘খাতামান নবীঈন’ বলে মান্য করি। সর্বশেষ শরীয়ত বাহক নবী হিসেবেও তিনি ‘শেষ নবী’ আর নবুওতের উৎকর্ষের শেষ মার্গ অর্জনকারী হিসেবেও তিনিই ‘শেষ নবী’। আমরা ‘খাতামান নবীঈন’ উপাধির সেই ব্যাখ্যাই মান্য করি যা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) বর্ণনা করে গেছেন (দুরে মনসুর)। দেওবন্দী মাদ্রাসা ও মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা মুহাম্মদ কাসেম নানুতবী সাহেব তাহযীরুন্নাস পুস্তকে ‘খতমে নবুওতের’ যে বিশ্লেষণ প্রদান করেছেন তার সাথে আমরা সম্পূর্ণ একমত।
শেষ যুগের মসীহ্ ও মাহ্দী কোথায়?
কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী শেষ যুগের অর্থাৎ ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর যুগের অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে। সেগুলো স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে। যেমন: - মুসলমানদের মাঝে অনৈক্য ও দলাদলি।
মিথ্যা ও দুর্নীতির সর্বগ্রাসী প্রাদুর্ভাব।
ত্রিত্ববাদী খ্রিস্টান তথা দাজ্জালের সর্বগ্রাসী আগ্রাসন।
মারণাস্ত্রধারী পরাশক্তি তথা ইয়াজুজ-মাজুজের উত্থান।
সুদ, মদ, জুয়া ও ব্যভিচারের ছড়াছড়ি।
আকাশের আবরণ উন্মোচিত, মহাকাশ বিজ্ঞানে অভূতপূর্ব উন্নতি।
বন্য জীবজন্তু জড়ো করে দেশে দেশে চিড়িয়াখানা স্থাপন।
পুস্তক-পুস্তিকার ব্যাপক প্রকাশনা , মুদ্রণ জগতে অভূতপূর্ব বিপ্লব।
নর্তকী ও গায়িকাদের প্রাধান্য।
উঁচু উঁচু অট্টালিকা নির্মাণের প্রতিযোগিতা ইত্যাদি ইত্যাদি।
একই রমযানে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ ইমাম মাহ্দীর সত্যতার অকাট্য প্রমাণ
إِنَّ لِمَهْدِيْنَا آيَتَيْن لَمْ تَكُوْنَا مُنْذُ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَنْكَسِفُ القَمَرُ لِأَوَّلِ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ وَتَنْكَسِفُ الشَّمْسُ فِي النِّصْفِ مِنْهُ وَلَمْ تَكُونَا مُنْذُ خَلَقَ الله السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ
অর্থ: ‘নিশ্চয় আমার মাহ্দীর জন্য এমন দু’টি লক্ষণ আছে যা আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি অবধি অন্য কারও সত্যতার নিদর্শন স্বরূপ প্রদর্শিত হয় নি। একই রমযানে (চন্দ্রগ্রহণের) প্রথম রাতে চন্দ্রগ্রহণ ও (সূর্যগ্রহণের) মধ্যম দিনে সূর্যগ্রহণ হবে। আর আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি অবধি এ দু’টি নিদর্শন কারও জন্য অনুষ্ঠিত হয় নি।’ [দারকুতনী, কিতাবুল ঈদাইন, বাব সালাতুল কুসূফ ওয়াল খুসূফ] এসব লক্ষণ প্রকাশিত হয়েছে এবং ১৮৯৪ ও ১৮৯৫ সনে হাদীসে উল্লিখিত একই রমযানের নির্ধারিত তারিখে চন্দ্র-সূর্য গ্রহণও অনুষ্ঠিত হয়েছে। তখন একমাত্র হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.)-ই প্রতিশ্রুত মসীহ্ ও মাহ্দী হবার দাবীদার ছিলেন। একথা সমসাময়িক পত্র-পত্রিকা ছাড়াও এদেশের প্রখ্যাত সুরেশ্বরীর পীর সৈয়দ আহমদ আলী তাঁর ১৯১৬ সালে প্রথম প্রকাশিত ‘মদিনা কলকি অবতারের ছফিনা’ এবং ‘ছফিনায়ে ছফর’ গ্রন্থেও উল্লেখ করেছেন। তাই দাবীদারের সত্যতা অকাট্যভাবে প্রমাণিত।
ইমাম মাহ্দী (আ.)-কে মানার গুরুত্ব
মহানবী (সা.) ইমাম মাহ্দী (আ.) প্রসঙ্গে বলেছেনঃ
فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَبَايِعُوهُ وَلَوْ حَبُوا عَلَى الثَّلْجِ فَإِنَّهُ خَلِيفَةُ اللَّهِ الْمَهْدِيُّ
অর্থঃ ‘যখন তোমরা তাঁর সন্ধান পাবে তাঁর হাতে বয়াত করবে, যদি বরফের পাহাড়ের উপর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়েও যেতে হয়। নিশ্চয় তিনি আল্লাহ্র খলীফা, আল্-মাহ্দী।’ [সুনানে ইবনে মাজা, বাব খুরূজুল মাহ্দী]
ঐশী খিলাফত: মুসলিম ঐক্যের একমাত্র পথ
পবিত্র কুরআন ও মহানবী (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী শেষ যুগের প্রতিশ্রুত মসীহ্ ও মাহ্দী যথাসময়ে এসে গেছেন। তাঁর পবিত্র নাম হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.)। তিনি দোয়া, ভালোবাসা, অকাট্য যুক্তি ও নিদর্শন বলে ইসলামের আধ্যাত্মিক বিজয়ের সূচনা করে গেছেন। তাঁর মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠিত খিলাফতের অধীনে এই বিজয়যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আদেশ করেছেন,
تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَ إِمَامَهُمُ
অর্থ: ‘তোমরা মুসলমানদের ঐশী জামা’ত ও এদের ইমামকে আঁকড়ে ধর।’ [বুখারী, কিতাবুল মানাকিব]
আল্লাহ্র অশেষ কৃপায় আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত একক ঐশী নেতৃত্বের অধীনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন ভাষায় পবিত্র কুরআনের অনুবাদ প্রকাশ, খাঁটি ইসলামী শিক্ষা প্রচার ও মসজিদ নির্মাণ, মিশন ও লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠাসহ ইসলামকে সুদৃঢ় করার বহুমুখী কাজে নিয়োজিত। চলুন আমরা আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূলের খাতিরে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে নিজেদের ঈমানী দায়িত্ব পালন করি।
আপনার উত্তর যোগ করুন
আপনার উত্তরটি একজন এডমিন রিভিউ করে অনুমোদন করবেন।