আপত্তির জবাব

মুসলমান আলেমদের মুনাফেকী চাল

সুতরাং ইহা তো হইল এই সকল লোকের নিজেদের ভূমিকা এবং তাহাদের অতীত, যাহারা আজ লম্ফঝম্প দিছে আহমদীয়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনিতে। কিন্তু হযরত মসীহ মওউদ আলাইহেস সালাতু ওয়াস সালাম কেবলমাত্র ইহাই জরুরি মনে করেন নাই যে, ইসলামের মহান আদর্শের দাবী অনুসারে একটি সদাশয় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করিবেন; বরং এইরূপ কোন কোন অজুহাতও ইহার পশ্চাতে ছিল, যাহা স্বয়ং বিরুদ্ধবাদীদের সৃষ্ট। একদিকে তো এই আলেমেরা মুসলমানদিগকে হযরত মসীহ মওউদ আলাইহেস সালাতু ওয়াস সালামের বিরুদ্ধে উস্কানী দিত যে, তিনি (আঃ) ইংরেজদের প্রশংসা করেন এবং জেহাদ অস্বীকার করেন, যখন কিনা এই সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদ করা উচিত এবং ইহাকে শেষ করিয়া দেওয়া উচিত এবং ইহাকে ধ্বংস ও বরবাদ করিয়া দেওয়া উচিত। অন্যদিকে তাহারা ইংরেজদের প্রশংসায় ঐ সকল কথা লিখিত ছিল, যাহা আমি শুনিয়াছি। তৃতীয়তঃ তাহারা ইংরেজদের নিকট গোপনে এবং লিখিতভাবেও দরখাস্ত পেশ করিতেছিল যে এই ব্যক্তি (অর্থাৎ হযরত মসীহ মওউদ আলাইহেস সালাতু ওয়াস সালাম—অনুবাদক) খুবই বিপদজনক ব্যক্তি। তাহার কথায় বিশ্বাস করিও না। সে ইমাম মাহদী হওয়ার দাবীকারক, সে খুনী মাহদী এবং সে ইংরেজ রাজত্ব ধ্বংস করার জন্য দাঁড়াইয়া আছে। মুসলমান আলেমরা এতখানি মুনাফেক, যালিম ও মিথ্যাবাদী যে, একদিকে তাহারা মুসলমানদের নিকট এই কথা ঘোষণা করিতেছে যে, এই ব্যক্তি ইংরেজদের লাগানো বৃক্ষ এবং অন্যদিকে তাহারা ইংরেজদিগকে এই সংবাদ পৌঁছাইতেছে যে, সে তো তোমাদের জাতির শত্রু এবং তোমাদিগকে ধ্বংস ও বরবাদ করার জন্য দাঁড়াইয়া আছে। অতএব তাহাকে বিনাশ করিয়া দাও।
বস্তুতঃ মৌলবী মুহাম্মাদ হোসাইন বাটালবী সাহেব তাহার ‘এশায়াতুস্ সুন্নাহ’ পত্রিকার ষোড়শ সংখ্যার টাকায় চার নম্বর পৃষ্ঠায় লিখেন:
“এই ব্যক্তির (অর্থাৎ মির্যা গোলাম আহমদ সাহেব কাদিয়ানী—গ্রন্থকার) প্রবঞ্চক হওয়ার দলিল এই যে তিনি অনৈসলামিক ইংরেজ সরকারকে প্রাণে মারিয়া দেওয়াকে এবং তাহাদের ধন-সম্পদ লুণ্ঠন করাকে হালাল ও বৈধ বলিয়া মনে মনে জানে। (কতই না জোরালো দলিল ‘মনে মনে জানে’!) অতএব এই ব্যক্তির উপর ভরসা করা সরকারের উচিত নয় এবং তাহার সম্বন্ধে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরী। অন্যথা এই কাদিয়ানী মাহদী দ্বারা এইরূপ ক্ষতি সাধিত হওয়ার আশংকা রহিয়াছে, যেইরূপ ক্ষতি সুদানী মাহদী দ্বারাও সাধিত হয় নাই।” ইহাই ছিল হযরত মসীহ মওউদ আলাইহেস সালাতু ওয়াস সালামের ঐ মানসিক ছবি, যাহা তাহাদের হৃদয়ে প্রতিভাত হইতেছিল।
মুন্সী মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ সাহেব ইংরেজদিগকে সম্বোধন করিয়া হযরত মসীহ মওউদ আলাইহেস সালাতু ওয়াস সালাম সম্বন্ধে সতর্ক করিয়া বলেন:
“এই ধরনের বিভিন্ন কুরআনী আয়াত তিনি নিজ শিষ্যদিগকে শুনাইয়া শুনাইয়া সরকারের সহিত যুদ্ধ করার জন্য তাহাদিগকে প্রস্তুত করিতে চাহিতেছেন!” (লাহোর ইসলামিয়া ইষ্টিম প্রেস হইতে ১৯০৫ খৃষ্টাব্দে প্রকাশিত "শাহাদাতে কুরআনী” এর ২০ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।
বিরুদ্ধবাদীদের এই সকল বক্তব্য ইংরেজগণ নিতান্ত সরল অন্তঃকরণে সত্য বলিয়া ধরিয়া লইয়াছিলেন। বস্তুতঃ ঐ যুগের একমাত্র ইংরেজী পত্রিকা, যাহাকে খুবই নির্ভরযোগ্য মনে করা হইত এবং যাহা দীর্ঘদিন চলিয়াছিল (অর্থাৎ সিভিল এণ্ড মিলিটারী গেজেট, লাহোর), উহাতে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশিত হইয়াছিল এবং উক্ত সম্পাদকীয়তে ইংরেজ জাতিকে হযরত মসীহ মওউদ আলাইহেস সালাতু ওয়াস সালামের বিরুদ্ধে উস্কানী দেওয়া হইয়াছিল এবং সরকারকে সতর্ক করা হইয়াছিল যে, এই ব্যক্তি অত্যন্ত বিপদজনক লোক। ইহার কথা বিশ্বাস করিও না। ইহার শান্তি-প্রিয়তা কেবলমাত্র লোক দেখানো ব্যাপার। অন্যথা সে ইংরেজ সরকারকে ধ্বংস ও বরবাদ করিয়া ছাড়িবে।

আপনার উত্তর যোগ করুন

আপনার উত্তরটি একজন এডমিন রিভিউ করে অনুমোদন করবেন।