খাতাম অর্থ কি?
আরবী ‘খাতাম’ শব্দের ‘তে’ অক্ষরে যখন যবর থাকে অর্থাৎ খাতাম হয় তখন এটি ইসমে আলা বা করণ বাচ্যের বিশেষ্য পদ, যার অর্থ মোহর, আংটী (আংটীর দ্বারাও মোহরের কাজ করা হত)। আর যখন ‘তে’ অক্ষরে যের থাকে অর্থাৎ খাতেম হয় তখন এটি কর্তৃবাচ্যের বিশেষ্য পদ বা ইসমে ফায়েল, যার অর্থ মোহরকারী বা শেষকারী। অতএব পবিত্র কোরআনে যেহেতু ‘তে’ অক্ষরে যবর সহ ‘খাতামান্নাবীঈন’ এসেছে এজন্য এর অর্থ হবে ‘নবীদের মোহর।’ কোরআন শরীফের নির্ভরযোগ্য প্রামাণিক অভিধান মুফরাদাতে রাগেবে আছে, ‘খতম’ ও ‘তাবয়া’ দু'টি পৃথক বিষয়, প্রথম শব্দটি মূল ও ধাতুগতভাবে মোহরের ছাপের ন্যায় কোন বস্তুর ক্রিয়া সম্পাদন করাকে বুঝায়। এটিই খতম শব্দের ধাতুগত মৌলিক অর্থ এবং ‘তাবয়া’ শব্দের অর্থ মোহর-ছাপের প্রাপ্ত ফল, এটি খতমের মৌলিক অর্থের ক্রিয়া. আরবী সাহিত্যে খাতাম শব্দের অর্থ শ্রেষ্ঠও হয়। যেমন খাতামুশ শুয়ারা, খাতামুল ফুকাহা, খাতামুল মোহদ্দেছীন বলতে যথাক্রমে শ্রেষ্ঠ কবি, শ্রেষ্ঠ আইনজ্ঞ এবং শ্রেষ্ঠ মোহাদ্দেছকে বুঝায়। আঁ-হযরত (সাঃ)ও অনুরূপ শব্দ ব্যবহার করেছেন, যেমন তিনি হযরত আব্বাছ (রাঃ) সম্বন্ধে বলেন, “নবুওয়তে আমি যেমন খাতামান্নবীঈন, হিজরতে আপনি তদ্রূপ খাতামুল মুহাজেরীন” (কঞ্জুল উম্মাল)। অন্যত্র বলেছেন, “আনা খাতামুল আম্বিয়ায়ে ওয়া আনতা ইয়া আলী খাতামুল আওলিয়া” (তফছিরে সাফী) অর্থাৎ আমি খাতামুল আম্বিয়া এবং হে আলী তুমি খাতামুল আওলিয়া। এখানে আঁ-হযরত (সাঃ) হযরত আব্বাস (রাঃ)-কে খাতামুল মুহাজেরীন এবং হযরত আলীকে (রাঃ) খাতামুল আওলিয়া বলতে নিশ্চয়ই শেষ মোহাজের ও শেষ ওলী বোঝান নাই। কেননা, হযরত আব্বাস (রাঃ)-এর পর আরো লক্ষ লক্ষ মোহাজের মুসলমানদের মধ্যে হয়েছেন এবং হবেনও। হযরত আলী (রাঃ)-এর পরও অসংখ্য ওলী আল্লাহ্ এই উম্মতে জন্ম নিয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও যে জন্ম নিবেন তা অস্বীকার করার উপায় নেই। অতএব এসব স্থলে আঁ-হযরত (সাঃ) যে খাতাম শেষ অর্থে ব্যবহার করেন নি তা অতি স্পষ্ট। তিনি যে অর্থে খাতামুল মোহাজেরীন এবং খাতামুল আওলিয়া ব্যবহার করেছেন ঠিক সেই অর্থেই নিজেকে খাতামুল আম্বিয়া বলেছেন।
এখানে আর একটি বিষয় উল্লেখ করা একান্ত প্রয়োজন যে, খাতামান্নবীঈন আয়াত নাযেল হওয়ার পাঁচ বৎসর পর নবীপুত্র ইব্রাহীম যখন মারা গেলেন তখন মহানবী (সাঃ) জানাযা পড়ে বললেন, “লাও আশা লাকানা ছিদ্দিকান নবীয়া” অর্থাৎ “সে জীবিত থাকলে অবশ্যই সত্য নবী হ’ত” (ইবনে মাজা’ কিতাবুল জানায়েজ) এই হাদীস যে সহী তাতে কোন সংশয় নেই (দেখুন শেহাব আলাল বায়জবী, জিলদ ৭, পৃঃ ১৭৫)। এই হাদীসের ব্যাখ্যায় হানাফী ফেরকার প্রসিদ্ধ ইমাম হযরত আলী আল কারী (রাহঃ) লিখেছেন “তাঁর (ইব্রাহীমের) নবী হওয়া খোদার বাক্য খাতামুন্নবীঈনের বিরোধী নয়। কেননা, খাতামুন্নবীঈনের আসল তাৎপর্য হল রসূল করীমের (সাঃ) পর এমন কোন নবী আসবেন না যিনি তার শরীয়তকে মনছুখ করবেন এবং তাঁর উম্মত হতে হবেন না” (মওজুয়াতে কবীর)।
দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মৌলানা মোহাম্মদ কাশেম নানুতবী সাহেব লিখেছেন, “আঁ-হযরত (সাঃ) নবুওয়তের মৌলিক গুণে গুণান্বিত ছিলেন এবং তিনি ভিন্ন অন্যান্য নবীদের নবুওয়ত আঁ-হযরত (সাঃ)-এর কল্যাণপ্রসূত, কিন্তু তাঁর নিজের নবুওয়ত অন্যের কল্যাণে নয়। এইভাবে তাঁর উপর নবুওয়ত মোহরাবদ্ধ হয়ে যায়; বস্তুতঃ তিনি যেমন আল্লাহ্ নবী তদ্রূপ নবীগণেরও নবী” (তাহজিরুন্ নাস)।
(পুস্তকঃ খাতামান্নবিঈন ও আহমদীয়া মুসলিম জামাত - আলহাজ্জ আহমদ তৌফিক চৌধুরী)
এখানে আর একটি বিষয় উল্লেখ করা একান্ত প্রয়োজন যে, খাতামান্নবীঈন আয়াত নাযেল হওয়ার পাঁচ বৎসর পর নবীপুত্র ইব্রাহীম যখন মারা গেলেন তখন মহানবী (সাঃ) জানাযা পড়ে বললেন, “লাও আশা লাকানা ছিদ্দিকান নবীয়া” অর্থাৎ “সে জীবিত থাকলে অবশ্যই সত্য নবী হ’ত” (ইবনে মাজা’ কিতাবুল জানায়েজ) এই হাদীস যে সহী তাতে কোন সংশয় নেই (দেখুন শেহাব আলাল বায়জবী, জিলদ ৭, পৃঃ ১৭৫)। এই হাদীসের ব্যাখ্যায় হানাফী ফেরকার প্রসিদ্ধ ইমাম হযরত আলী আল কারী (রাহঃ) লিখেছেন “তাঁর (ইব্রাহীমের) নবী হওয়া খোদার বাক্য খাতামুন্নবীঈনের বিরোধী নয়। কেননা, খাতামুন্নবীঈনের আসল তাৎপর্য হল রসূল করীমের (সাঃ) পর এমন কোন নবী আসবেন না যিনি তার শরীয়তকে মনছুখ করবেন এবং তাঁর উম্মত হতে হবেন না” (মওজুয়াতে কবীর)।
দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মৌলানা মোহাম্মদ কাশেম নানুতবী সাহেব লিখেছেন, “আঁ-হযরত (সাঃ) নবুওয়তের মৌলিক গুণে গুণান্বিত ছিলেন এবং তিনি ভিন্ন অন্যান্য নবীদের নবুওয়ত আঁ-হযরত (সাঃ)-এর কল্যাণপ্রসূত, কিন্তু তাঁর নিজের নবুওয়ত অন্যের কল্যাণে নয়। এইভাবে তাঁর উপর নবুওয়ত মোহরাবদ্ধ হয়ে যায়; বস্তুতঃ তিনি যেমন আল্লাহ্ নবী তদ্রূপ নবীগণেরও নবী” (তাহজিরুন্ নাস)।
(পুস্তকঃ খাতামান্নবিঈন ও আহমদীয়া মুসলিম জামাত - আলহাজ্জ আহমদ তৌফিক চৌধুরী)
আপনার উত্তর যোগ করুন
আপনার উত্তরটি একজন এডমিন রিভিউ করে অনুমোদন করবেন।