আপত্তির জবাব

দেওবন্দী ও আহলে হাদীসই প্রকৃতপক্ষে ইংরেজদের স্বরোপিত বৃক্ষ

অতএব পাকিস্তানের জনগণকে ইহা বুঝানোর প্রয়োজন রহিয়াছে যে, আহমদীয়া জামাতের অবস্থান কি? ইহা পরীক্ষা করিয়া দেখুন। যদি আপনারা একতরফা মিথ্যা অপবাদ স্বীকার করিয়া নেন, তাহা হইলে দেখিবেন যে, ইহারাতো কাহাকেও ছাড়ে নাই। যদি আপনারা ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন, তাহা হইলে ঐতিহাসিক ঘটনাতো সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ্য ভাষায় এই কথা বলিতেছে যে, যদি আজ পৃথিবীতে ইংরেজদের কোন স্বরোপিত বৃক্ষ থাকে তবে উহা হইল দেওবন্দী ও আহলে-হাদীস, অর্থাৎ আহলে হাদীসের ঐ ফেরকা, যাহারা নজদী সরকার প্রতিষ্ঠার সময় তাহাদের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ইহাদিগকে ওহাবীও বলা হয়। এই ফেরকা ইংরেজদের নিকট হইতে সাহায্য ও শক্তি লাভ করিয়া একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করিতে কৃতকার্য হইয়া ছিল। ইহা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।

আমার মতে এতদসত্ত্বেও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ হইতে ইহাদিগকে ইংরেজদের বৃক্ষ বলা অসমীচিন ও অসংগত কাজ হইবে। এই জন্য এই ঐতিহাসিক ঘটনা সত্ত্বেও আমি ইহাদিগকে ইংরেজদের বৃক্ষ বলি না। কারণ এই যে, ইহা একটি স্বাধীন ধর্মীয় আন্দোলন ছিল। ইহার সাহায্যে ফায়দা উঠাইয়া ইংরেজদের দ্বারা প্রভাবান্বিত একটি সরকার প্রতিষ্ঠিত করা হইয়া ছিল। এই সন্ধির মধ্যে ইহা অন্তর্ভুক্ত ছিল যে, ভবিষ্যতে তোমাদের পররাষ্ট্রনীতি স্বাধীন থাকিবে না। বরং তোমরা শতকরা একশত ভাগ আমাদের পররাষ্ট্রনীতির অধীনে থাকিবে এবং আভ্যন্তরীণভাবে তোমরা অমুক অমুক বিষয়ে স্বাধীন থাকিবে। ইহার দরুন আমরা তোমাদিগকে এতগুলি রাইফেল দিব এবং এত হাজার পাউণ্ড দিব এবং তোমাদের অমুক অমুক অধিকার থাকিবে। সুতরাং এই সকল লোক তাড়াহুড়া করিয়া যে সকল অবৈধ কাজ করে, আমাদের তাহা করা উচিত নহে। বরং উত্তর দেওয়ার সময়েও বিচার বিবেচনা প্রয়োগ করা উচিত। এই জন্য ইহারা নিজের মুখে স্বীকার করিয়া নিলেও আমার মতে ফেরকার দিক হইতে দেখিলে ইহাই দেখা যাইবে যে, অন্যান্য জাতি এইভাবে ফেরকার ভিত্তি স্থাপন করে নাই। তাহাদের নিজেদের একটি স্বাধীন ইতিহাস রহিয়াছে। মাওলানা মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব সাহেব শিরক্‌-এর বিরুদ্ধে জেহাদ আরম্ভ করিয়াছিলেন এবং অতঃপর ইহার উপর জোর দিতে দিতে চরম সীমার অন্য প্রান্তে পৌঁছিয়া গেলেন। কিন্তু ওহাবী আন্দোলনকে যখন অপরপক্ষ এই কারণে ইংরেজদের স্বরোপিত বৃক্ষ বলে যে, ইহারা একটি ঐতিহাসিক যুগে ইংরেজদের সমর্থন লাভ করিয়াছিল, তখন ইহা বলা সমীচিন হয় না। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ হইতে ইহারা স্বাধীন। কিন্তু ইংরেজরা নিশ্চয়ই তাহাদের নিকট হইতে ফায়দা লুটিয়াছে এবং আজও লুটিতেছে এবং বিগত দিনেও লুটিতেছিল। কংগ্রেসের যুগে হিন্দুরাও ইহাদের দ্বারা স্বার্থ হাসিল করিতে থাকে। সুতরাং ইহারা নিশ্চয়ই তাহাদের এজেন্ট ছিল এবং এখনও এজেন্টরূপে কাজ করিতেছে। ঐ একই ষড়যন্ত্র চলিতেছে এবং ইহারা ঐ একই মানুষ, যাহারা অন্যদের এজেন্ট হইয়া যায়। কিন্তু ইহা ঠিক নহে যে, ইহাদের ধর্মীয় মতবাদের ভিত্তি ইংরেজরা স্থাপন করিয়াছে।

আপনার উত্তর যোগ করুন

আপনার উত্তরটি একজন এডমিন রিভিউ করে অনুমোদন করবেন।