আপত্তির জবাব

ভারতবর্ষে ইংরেজদের স্বার্থ

সর্বপ্রথমে যাহা অনুসন্ধান করিয়া দেখা উচিত, তাহা হইল এই যে, ভারতবর্ষে ইংরেজদের স্বার্থ কি ছিল? ইহা সুস্পষ্ট যে, ভারতবর্ষে বৃটিশ সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় করার চাইতে অন্য কোন অধিক স্বার্থ ইংরেজ সরকারের ছিল না। ইংরেজ সরকারের স্বার্থ কি, তাহা নিজেদের অনুমানের পরিবর্তে ইহা কি উত্তম হইবে না যে, ইংরেজ সরকারের কর্মকর্তাদের নিজেদের ভাষায় তাহাদের স্বার্থ সম্বন্ধে আমি আপনাদের নিকট বর্ণনা দেই? কেননা ইংরেজদের স্বার্থ তো ইংরেজরাই উত্তম জানিত। ইংরেজদের স্বার্থ তো ঐ সকল লোকই উত্তম জানিত, যাহারা ইংরেজ সরকারের সহিত ছিল এবং ক্ষমতার উৎসে অধিষ্ঠিত ছিল। আজিকার আহরার বা গতকালের আহরাররা কি জানে যে, ইংরেজদের স্বার্থ কি ছিল? সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত না ইংরেজদের স্বার্থ সম্বন্ধে তাহাদের নিকট হইতে জানা যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত তাহাদের স্বার্থ সম্বন্ধে আমরা কিছু জানিতে পারি না। বস্তুতঃ লর্ড লরেন্স খুবই একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ভারতের ভাইসরয়ও ছিলেন। ইংল্যাণ্ডের স্বার্থ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তাহার উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল। লর্ড লরেন্সের জীবনী সম্বন্ধে লিখিত “Lord Lawrence’s Life” নামক বইটি খুবই প্রসিদ্ধ একটি বই। ইহার দ্বিতীয় খণ্ডের ৩১৩ পৃষ্ঠায় তাহার কিছু ধারণার বর্ণনা দিতে গিয়া বইটির গ্রন্থকার লিখেনঃ-

“লর্ড লরেন্স বলেনঃ- ‘আমাদের সাম্রাজ্যকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য খৃষ্টান ধর্মকে ভারতবর্ষে বিস্তার দান করার চাইতে অধিক অন্য কোন বস্তু বিবেচ্য হইতে পারে না’।”

পাঞ্জাব, যেখানে কাদিয়ান অবস্থিত এবং আল্লাহতায়ালা হযরত মসীহ মওউদ আলাইহেস সালাতু ওয়াস সালামকে ইসলামের প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ করার জন্য মা’মুররূপে প্রেরণ করিয়াছেন, সেখানকার লেফট্যান্যান্ট গভর্ণর স্যার ডোনাল্ড ম্যাকলিয়ড এই ব্যাপারে তাহার অভিমত নিম্নোক্ত ভাষায় ব্যক্ত করেন:

“আমি নিজের এই দৃঢ় বিশ্বাসের অভিব্যক্তি করিতে চাহিতেছি যে, যদি আমরা ভারতবর্ষে নিজেদের সাম্রাজ্যকে রক্ষা করিতে চাই, তাহা হইলে আমাদিগকে সর্বাত্মক চেষ্টা করা উচিত যাহাতে এই দেশ খৃষ্টান হইয়া যায়।” (The Mission by R. Clark P. 47 London 1904)

অনুরূপভাবে ঐ যুগের ভারতীয় মন্ত্রী স্যার চার্লস উড এই ঘোষণা করিয়াছিলেনঃ-

“আমি বিশ্বাস করি যে প্রত্যেক ঐ নতুন খৃষ্টান, যে ভারতবর্ষে খৃষ্ট–ধর্ম গ্রহণ করে, তাহার সহিত ইংল্যান্ডের ঐক্যের নূতন যোগসূত্র হইয়া যায় এবং সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় করার জন্য একটি নতুন বাহন হইয়া যায়।” (The Mission P. 234)

১৮৬২ খৃষ্টাব্দে হযরত মসীহ মওউদ আলাইহেস সালাম যৌবনের প্রান্তের দিনগুলি অতিবাহিত করিতেছিলেন। ঠিক ১৮৬২ খৃষ্টাব্দেই ইংল্যান্ডের প্রধান মন্ত্রী লর্ড পামারস্টোন এই ব্যাপারে তাহার অভিমত নিম্নোক্ত ভাষায় ব্যক্ত করেনঃ-

“আমি মনে করি যে, আমরা সকলে নিজেদের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে একমত যে, ইহা কেবল আমাদের কর্তব্যই নয়, বরং স্বয়ং আমাদের স্বার্থও এই বিষয়ের সহিত জড়িত যে, যতখানি সম্ভব আমরা খৃষ্ট–ধর্মের প্রচারকে জোরদার করি এবং ভারতবর্ষের প্রান্তে প্রান্তে ইহাকে বিস্তার দান করি।” (The Mission P. 25+)

সুতরাং ভারতবর্ষে ইহাই ছিল ইংরেজ সরকারের স্বার্থ। আজ এই কথা বলা হইতেছে যে, স্বার্থের হেফাযত আহমদীয়া জামা’তের উপর ন্যস্ত করা হইয়াছে। কিন্তু ইহা ঐ যুগ ছিল, যখন কিনা খুবই তীব্র গতিতে ভারতবর্ষের উত্তর হইতে দক্ষিণ প্রান্ত এবং পূর্ব হইতে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত খৃষ্ট–ধর্ম প্রচারকগণের একটি জাল ছড়াইয়া দেওয়া হইয়াছিল। ইহা ঐ যুগ ছিল, যখন কিনা মুসলমানগণের আত্মরক্ষার শক্তি সম্পূর্ণরূপে শেষ হইয়া গিয়াছিল এবং এমন কেহ ছিল না, যে নাকি মুসলমানগণের পক্ষে খৃষ্টধর্মের মোকাবেলা করে এবং ঐ সকল পাদ্রীর জালকে ছিন্ন করিতে পারে।

আপনার উত্তর যোগ করুন

আপনার উত্তরটি একজন এডমিন রিভিউ করে অনুমোদন করবেন।